সৃজনবাদ ও নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কারকে সৃষ্টিতত্ববাদ এবং বুদ্ধিদীপ্ত নকশার সমালোচকরা প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে। এ আবিষ্কার দিয়ে তারা বিভিন্ন প্রিন্ট আর্টিকেল ও ওয়েবসাইটে সৃষ্টিতত্ববাদীদের চ্যলেঞ্জ করেন। এইসব ব্যাকটেরিয়া অভিজাত এনজাইম উৎপাদন করতে পারে, যার ফলে এরা নাইলন ম্যানুফেকচারের 'উপজাত' কে খেতে পারে, ১৯৩০ সালে নাইলন আবিষ্কারের পুর্বে এই উৎসেচকের কোনো অস্তিত্বই ছিলো না।[১] সৃষ্টিতত্ববাদের সমালোচকরা এই আবিষ্কারকে সৃষ্টিতত্ববাদীদের দাবী:- পরিব্যক্তির ফলে জিনোমে কোনো নতুন তথ্য যুক্ত হয় না ও প্রোটিন এতটাই জটিল; কার্যত প্রাকৃতিক নির্বাচন ও মিউটেশনের ফলে এর বিবর্তন অসম্ভব; এর বিপক্ষে যায় বলে উল্লেখ করেন। সৃষ্টিতত্ববাদীরা এর উত্তর তাদের নিজেদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করে, কিন্তু এর প্রতিউত্তরে তাদের সমালোচকরা আরো সক্রিয়ভাবে সমালোচনা করে।

সৃজনবাদের সমালোচনা[সম্পাদনা]

সৃজনবাদের সমালোচক দের মধ্যে আমেরিকার জাতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা কেন্দ্র ও নিউ মেক্সিকান ফর সায়েন্স & রিজন (এনএমএসআর) প্রতিষ্ঠান এই আবিষ্কারকে প্রথম ব্যবহার করে বলে;- গবেষণাগুলো সৃজনবাদী এবং বুদ্ধিদীপ্ত নকশার প্রবক্তাদের দাবীগুলোকে বাতিল করে দিয়েছে।[২][৩] বুদ্ধিদীপ্ত নকশার দাবীকারীদের একটি যুক্তি ছিলো; র‍্যাণ্ডম মিউটেশন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন জিনোমে কখনোই নতুন তথ্য যুক্ত করতে পারে না এবং মিউটেশনের ফলে কোনো প্রয়োজনীয় প্রোটিন যেমনঃ এনজাইম তৈরীর সম্ভাবনা বলতে গেলে একেবারেই নেই।[৪][৫]

এনএমএসআরের প্রেসিডেন্ট পদার্থবিজ্ঞানী ডেভ থমাস এ প্রসঙ্গে বলেন জিন ডুপ্লিকেশন এবং ফ্রেম শিফট মিউটেশন র‍্যাণ্ডম মিউটেশনের শক্তিশালী উৎস।[৬] সৃজনবাদী ড্যান বাটেনের বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে এনএমএসআর বলে, বাটেনের যুক্তি অনুসারে যদি এই জিনসমূহ প্লাজমিডের অংশ হয় ও বা, তারপরেও এটা সেই মিউটেশনকে নির্দেশ করে, যার ফলে নাইলোনেজ (এটা হচ্ছে সেই এনজাইম যার মাধ্যমে নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া নাইলনের উপজাতকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে) উৎসেচকের সৃষ্টি হয়েছে।[৭]

সৃষ্টিবাদ[সম্পাদনা]

সৃজনবাদী[সম্পাদনা]

সৃজনবাদের প্রবক্তারা যেমনঃ Answers in Genesis এবং Creation Ministries International; ডন বাতেনের পোস্টকে বিশ্লেষিত করেই প্রতিক্রিয়া জানায়, তাদের বিবৃতিতে বলা হয়; এই জিন প্লাসমিডের অংশ এবং এই ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে; ব্যাকটেরিয়াতে অবস্থিত প্লাসমিড একটি পরিকল্পিত বৈশিষ্ট্যের কারণে তৈরী, যা ব্যাকটেরিয়াকে, নতুন খাদ্য উৎসের সাথে নিজের অভিযোজন করতে অথবা রাসায়নিক কেমিক্যালের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অনুমতি দান করে। বাটেন উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন;

It seems clear that plasmids are designed features of bacteria that enable adaptation to new food sources or the degradation of toxins. The details of just how they do this remains to be elucidated. The results so far clearly suggest that these adaptations did not come about by chance mutations, but by some designed mechanism.[৮]

 অর্থাৎঃ এটা দেখেই বুঝা যায় যে, ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্লাজমিড হলো পরিকল্পিত বৈশিষ্ট্য, যা নতুন খাবারের উৎসের সাথে নিজেকে অভিযোজিত করতে অথবা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে ব্যাকটেরিয়াকে সক্ষমতা দান করে। কীভাবে এটা হয়, তা বর্তমানে ব্যাখ্যা করা যায় এবং এ ফলাফল থেকে এটাই দেখা যায় যে, এই মিউটেশন শুধুমাত্র ভাগ্যের খেলা নয় বরং এটি পরিকল্পিত কলাকৌশলেরই অংশ।

বাটেনের এই বিশ্লেষণকে তার সমালোচকরা বাতিল করে দেয়। NMSR তাদের বিবৃতিতে বলে যে, জিন ডুপ্লিকেশন ও ফ্রেম শিফট মিউটেশন, যার ফলে নাইলোনেস বাড়ে; তা র‍্যাণ্ডম মিউটেশনের শক্তিশালী উৎস। বাটেনের প্রস্তাবিত জিন প্লাসমিডের অংশ হোক বা না হোক।[৭] আইয়ান মুসগ্রিভের TalkOrigins Archive এর একটি পোস্টে বলেন, ব্যাকটেরিয়া প্লাজমিডে অনেক জিন ধারণ করতে পারে, স্বতন্ত্রভাবে তা জেনোবায়োটিক হ্যাণ্ডলিং অথবা বিপাকীয় ফাংশনে জড়িত থাকে। তিনি Pseudomonas এ বিবৃতিতে বলেন, জেনোবায়োটিক ডিগ্রেডেশন জিন প্লাসমিডেই থাকে। জেনোবায়োটিক হ্যাণ্ডলিং জিন এর মিউটেশনের ফলেই প্রায় সম্পুর্ণভাবে একটি জেনোবায়োটিক হ্যাণ্ডলিং এনজাইম তৈরী হয়। মুসগ্রেভ;- নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞান লেখকের লেখাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করায় বাটেনেরও সমালোচনা করেন।[৯]

বুদ্ধিদীপ্ত নকশা[সম্পাদনা]

সংবাদ মাধ্যম এমএসএনবিসির বিজ্ঞান লেখক কার থান (Ker Than) একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। সম্পাদকীয়তে তিনি বলেন, নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপাদিত নাইলোনেস উৎসেচকের বিবর্তন নিঃসন্দেহে সৃজনবাদীদের সুনির্দিষ্ট জটিলতা নামক দাবীকে মিথ্যা প্রমাণ করে দেয়। কারণ নাইলোনেসের ফাংশন একই সাথে জটিল (complex) ও সুনির্দিষ্ট (specified)।[১০] বুদ্ধিদীপ্ত নকশার প্রবক্তা উইলিয়াম ডেমবস্কি এর প্রতিউত্তরে একটি প্রশ্ন তুলেন, তিনি তার পোস্টে বলেন, জিনগত পরিবর্তনের ফলে তৈরী হওয়া নাইলোনেসকে সুনির্দিষ্ট জটিলতা হিসেবে বিবেচনা করা কতটুকু যুক্তিসংগত?[১১] কেনেথ মিলার একজন জীববিজ্ঞানী ও ক্যাথলিক খ্রিষ্টান হওয়া সত্ত্বেও বিবর্তনতত্বের সমর্থক হিসেবে সুপরিচিত। তিনি বলেন; এতদিন ধরে সৃজনবাদীরা দাবী করে আসছেন আমরা বুদ্ধিদীপ্ত নকশা বা বিবর্তন কোনোটাই প্রকৃতিতে চোখের সামনে সংগঠিত হতে দেখি না, তাই বিবর্তনবাদ ও নকশা উভয়ই বিশ্বাসের ব্যাপার-স্যাপার। কিন্তু নাইলোনেস উৎসেচকের বিবর্তনকে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে পুনপ্রতিলিপন করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এখান থেকে এটাই বুঝা যায় যে, বিবর্তন সংগঠিত হওয়ার পাশাপাশি, বিবর্তনকে পর্যবেক্ষণও করা যায়।[১২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Kinoshita, S., Kageyama, S., Iba, K., Yamada, Y. and Okada, H. Utilization of a cyclic dimer and linear oligomers of ε-aminocapronoic acid by Achromobacter guttatus K172, Agric. Biol. Chem. 116, 547-551 (1981), FEBS 1981
  2. New Proteins Without God's Help[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] – William M. Thwaites
  3. Evolution and Information: The Nylon Bug
  4. Claim CB101_2
  5. (CB102)
  6. Dave Thomas's New Mexicans for Science and Reason article about nylon eating bacteria
  7. update to New Mexicans for Science and Reason website.
  8. Don Batten "The adaptation of bacteria to feeding on nylon waste" Creation Ministries International
  9. Musgrave, Ian Nylonase Enzymes, TalkOrigins Archive Post of the Month, April 2004
  10. Why scientists dismiss 'intelligent design', Ker Than, MSNBC, Sept. 23, 2005
  11. "Why Scientists Should NOT Dismiss Intelligent Design by William Dembski"। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১৭ 
  12. Miller, Kenneth R. Only a Theory: Evolution and the Battle for America's Soul (2008) pp. 80-82