সিরাকুসিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৭৯৮ সালে আঁকা সিরাকুসিয় (কাল্পনিক)

সিরাকুসিয়া (গ্রিক: Συρακουσία,Syrakousía) হলো প্রাচীন গ্রীকে তৈরী বৃহত্তম পরিবহন জাহাজ। দাবী করা হয় যে, এটি প্রাচীন যুগের সবচেয়ে বৃহত্তম জাহাজ। দৈর্ঘ্যে এটি ছিলো ১১০ মিটার বা ৩৬০ ফুট।[১] সিসিলির নৌ-বন্দর কাঠামো সিরাকুসিয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো না। মিশরের টলেমি সাম্রাজ্যের আলেক্সান্দিরায় উদ্দেশ্যে এটি একবার যাত্রা করেছিলো সিসিলির সিরাকিউস থেকে। জাহাজটি টলেমি তৃতীয় ইয়ারগেটসকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিলো।[২]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

সিরাকুসিয়া জাহাজটির নকশা করেন বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস। ২৪০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে হিয়েরো দ্বিতীয় এর আদেশে তৈরী করেন করিন্থের আর্কিয়াস। জাহাজের ধারণক্ষমতা ছিলো প্রায় ১৬০০ থেকে ১৮০০ টন বস্তু এবং ১৯৪২ জন যাত্রী।[৩] এছাড়া ক্যাটাপুল্টসহ (সামরিক যন্ত্র) প্রায় ২০০ জন সৈন্যও যাতায়াত করতে পারতো। টলেমি তৃতীয়কে উপহার হিসেবে দেওয়ার পর জাহাজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আলেকজান্দ্রেয়া (গ্রিক: Αλεξάνδρεια)।[২][৪]

এই জাহাজের আলোচনা, সেইসাথে সম্পূর্ণ এথেনিয়াসের (প্রাচীন গ্রিক লেখক, তিনি সিরাকুসিয়ার বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করে, যা এখন হারিয়ে গেছে) সম্পূর্ণ বিবরণ ছিলো।[৩]

জাহাজ নির্মাণের আলোচনায় দেখা যায়, সেখানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিলো জাহাজের কাঠামোকে সমুদ্রক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য।[২]

গঠন[সম্পাদনা]

জাহাজের বাইরের চেহারা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তবে এথেনিয়াস বর্ণনা করেন যে জাহাজের বাকি অংশের চেয়ে উপরের ডেকটি বেশি চওড়া ছিলো।[২] উপরন্তু, উপরের ডেকে আটটি টাওয়ার ছিলো। এর মধ্যে দুইটি তীরন্দাজী এবং চারটি ব্যবহৃত হতো সশস্ত্র সৈন্যের জন্য।[২] জাহাজের উপরে যুদ্ধ করার উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম ছিল। সেখানে একটি দৈত্যকার ক্যাটাপুল্ট ছিল। ক্যাটাপুল্ট হলো আর্কিমিডিসের তৈরী একটি গুলতি নিক্ষেপণ যন্ত্র।[২]

সুযোগ-সুবিধা[সম্পাদনা]

যাত্রী পরিবহনের হিসেবে সিরাকুসিয়া জাহাজটি টাইটানিকের সমতুল্য।[৫] সিরাকুসিয়ার উদ্ভাবনী নকশা এবং অতিকায় আকার বিশিষ্ট হওয়ায় এতে ছিলো একটি বাগান এবং গরম পানিসহ স্নানাগার। এছাড়া বিভিন্ন বিনোদনমূলক স্থান তৈরি করা হয়েছিলো।[২] জাহাজের নিম্ন স্তরে ছিলো নাবিক এবং ক্রু এবং বোর্ডে সোইন্যদের জন্য স্থান সংরক্ষিত ছিল। জাহাজের উপরের স্তরে ছিলো যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য ছিল।[১][২] এথেনিয়াসের মতে, জাহাজটি হাতির দাঁত এবং মার্বেলের মতো সামগ্রী ব্যবহার করে সুন্দরভাবে সজ্জিত করা হয়েছিল। এর সমস্ত জনসমাগমের স্থান ইলিয়াডের গল্পকে চিত্রিত করে মোজাইক দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছিল।[১][২][৬] জাহাজটিতে একটি লাইব্রেরি, একটি ড্রয়িং রুম এবং যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য একটি জিমন্যাসিয়াম, পাশাপাশি এফ্রোডাইটের জন্য একটি ছোট মন্দির ছিল।[১][২]

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

টলেমির ছেলে সিরাকুসিয়াকে ছাড়তে চেয়েছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তিনি একটি বিশাল যুদ্ধ জাহাজ, তেসারাকন্তারেস নির্মাণের আদেশ দেন। তেসারাকন্তারেস ছিলো ৪২০ ফুট লম্বা এবং ৪০০০ এরও বেশি লোক ও ২৮৫০ জন সৈন্য বহন করতে পারতো।[৭] যাইহোক, প্লুটার্কের বর্ণনা অনুসারে জাহাজটি ছিলো অচল।[৮]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Hirshfeld, Alan (২০০৯)। Eureka man: the life and legacy of Archimedes। Walker Publishing Company Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১১ 
  2. Athenaeus of Naucratis। "Deipnosophistae"Book 5, Chapter 40। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১১ 
  3. Casson, Lionel (১৯৭১)। Ships and Seamanship in the Ancient World। JHU Press। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১১ 
  4. Humphrey, John W.; Oleson, John P (১৯৯৮)। Greek and Roman technology: a sourcebook: annotated translations of Greek and Latin texts and documents। TJ International। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১১ 
  5. Superships (2007). Ancient Discoveries. The History Channel. Season 3, episode 4.
  6. Burn, Lucilla (২০০৪)। Hellenistic art: from Alexander the Great to Augustus। The British Museum Press। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১১ 
  7. Lionel Casson (১৯৯৫)। "Chapter 6"। Ships and Seamanship in the Ancient WorldJohns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 108–109। আইএসবিএন 0801851300 
  8. Lionel Casson (১৯৯৫)। "Chapter 6"। Ships and Seamanship in the Ancient World। Johns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 140। আইএসবিএন 0801851300 

আরও পড়া[সম্পাদনা]

  • ফিক মিজার, আন্দ্রে ওয়েজনার স্লেসভিক: "সিরাকুসিয়া" (এথেনিয়াস ভি। 207 এবি) নির্মাণের উপর ", দ্য ক্লাসিকাল কোয়ার্টারলি, নিউ সিরিজ, ভলিউম। 46, নং ২ (1996), পিপি।   575-578
  • জিন ম্যাকিনটোশ তুর্ফা, অ্যালউইন স্টেইনমায়ার জুনিয়র: "দ্য সিরিয়াসুসিয়া এন্ড দ্য জায়েন্ট কারগো ওয়েসেল", দ্য ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ নটিকাল আর্কিওলজি, ভলিউম। 28, নং ২ (1999), পিপি।   105-125

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]