শুভা টোলে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শুভা টোলে
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাসেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, মুম্বাই ক্যালিফোর্নিয়া ইন্স্টিটিউট অফ টেকনোলজি, ইউএসএ
পেশাস্নায়ুবিজ্ঞানী
নিয়োগকারীটাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান
দাম্পত্য সঙ্গীসন্দীপ ত্রিবেদী
সন্তান

শুভা টোলে (জন্ম আগস্ট-১৯৬৭) ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান-এর একজন ভারতীয় স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক। শুভা তাঁর গবেষণায় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মস্তিষ্কের বিকাশ এবং বিবর্তনের বিষয় অনুসন্ধান করেছেন এবং তিনি তাঁর কাজের জন্য অনেক প্রশংসা অর্জন করেছেন। তিনি এমন একটি জিন আবিষ্কার করেছিলেন যা হিপ্পোক্যাম্পাস, অ্যামিগডালা এবং মস্তিষ্কের কর্টেক্সের যথাযথ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ; তাঁর এই আবিষ্কারের জন্যে তিনি ২০১৪ সালে জীবনবিজ্ঞান বিভাগে ইনফোসিস পুরস্কার জিতেছিলেন। ২০১০ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান গবেষণা পুরস্কার শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার জয় করেন।

ব্যক্তিগত জীবন এবং শিক্ষা[সম্পাদনা]

শুভার জন্ম ১৯৬৭ সালের ৩১শে আগস্ট। তাঁর মা অরুণা পি.টোলে ছিলেন একজন 'অকুপেশনাল থেরাপিস্ট' যিনি ক্যান্সার রোগীদের জন্য সহায়ক যন্ত্রাদি এবং নকল অঙ্গ তৈরি করতেন[১] এবং তাঁর বাবা ছিলেন ভারত সরকারের ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের অধীনে একটি ইনস্টিটিউট 'সমীর'-এর পরিচালক[২]। তাঁর পরিবারের পাশাপাশি, শুভার স্কুলও তাঁর বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসাকে লালন করেছিল। প্রাথমিক শিক্ষার পরে, শুভা ডাক্তারি পড়তে না গিয়ে, মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে জীবন বিজ্ঞান এবং জৈব-রসায়ন পড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ এই কলেজ থেকেই স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর এবং গবেষণার জন্যে শুভা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে যোগদান করেন। সফলভাবে এম এস এবং পিএইইচডি শেষ করার পরে, শুভা শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন[৩]। ১৯৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য এক দশকেরও বেশি সময় কাটিয়ে শুভা অবশেষে ভারতে ফিরে আসেন এবং টাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান-এ কাজ শুরু করেন। তাঁর গবেষণা মূলত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মস্তিষ্ক বিবর্তন সংক্রান্ত; এ বিষয়ে তিনি বহু গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন এবং নবীন গবেষকদের আকৃষ্ট করার জন্যে অনেকগুলি ব্লগ লিখেছেন।[৪]

পিএইচডি করার সময়ই, শুভার সাথে পরিচয় হয় সন্দীপ ত্রিবেদীর, যিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করছিলেন। শুভা এবং সন্দীপ ১৯৮৯ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। অবশেষে ১৯৯৯ সালে তাঁরা তাঁদের মাতৃভূমিতে গবেষণার আশায় ভারতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। টাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে, শুভা নিজের গবেষণাগার তৈরি করেন। শুভা এবং সন্দীপের দুই পুত্র বর্তমান- অভয় এবং নিখিল।[৫]

কর্মজীবন ও গবেষণা[সম্পাদনা]

পিএইচডি অর্জনের পরে শুভা শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্তন্যপায়ী মস্তিষ্কের বিকাশের বিষয়ে অধ্যয়ন করার জন্য পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলো হিসেবে যোগদান করেন। বেশ কছুদিন সেখানে পছন্দের বিষয় নিয়ে গবেষণা করার পরে, শুভা এবং তাঁর স্বামী সন্দীপ- দুজনেরই ইচ্ছা হয় নিজের মাতৃভূমিতে গবেষণা করার।

শুভা ভারতে উন্নয়নমূলক স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণা নিয়ে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন; তদানীন্তন সময়ে ভারতে এবিষয়ে কোন গবেষণা হত না। তিনি ভেবেছিলেন যে ভারতে এসে কাজ করার মাধ্যমে তিনি ভারতীয় শিক্ষার্থীদের এরকম একটি অত্যাধুনিক গবেষণা ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ দিতে পারবেন। যখন তিনি টাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ বিষয়ে গবেষণার জন্যে নিজের গবেষণাগার স্থাপনের প্রস্তাব পেয়েছিলেন, তখন তিনি এবং তাঁর স্বামী পাকাপাকি ভাবে ভারতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৯ সালে স্বামীর সাথে ভারতে ফিরে আসার পর, শুভা তাঁর গবেষণাগার স্থাপন করতে পরবর্তী কয়েক বছর সময় নেন।

ভারতে তাঁর গবেষণাগার স্থাপনের সময় তিনি অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে শুরু করেছিলেন। যদিও সরঞ্জাম ও উপকরণগুলির দাম ব্যয়বহুল ছিল, অর্থাগম তার জন্যে সমস্যা ছিল না কারণ, গবেষণাটি মর্যাদাপূর্ণ ওয়েলকাম ট্রাস্ট সিনিয়র আন্তর্জাতিক ফেলোশিপ দ্বারা সু-অর্থায়িত হয়েছিল। যাইহোক, যেহেতু মুম্বাইতে উপকরণ আনতে দীর্ঘ ভ্রমণের সময় লাগত সেহেতু অন্যান্য সমস্যাগুলিও ছিল যেমন কখনও কখনও বিনষ্টযোগ্য জিনিসগুলি হিমায়িত করার জন্য পর্যাপ্ত শুকনো বরফ থাকত না আবার কখনও কখনও উপকরণগুলি তাঁর কাছে পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যেত[২]। যাইহোক, এই প্রতিবন্ধকতাগুলি পূরণ করা এবং অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছিল এবং ২০০০ সালে তার গবেষণাগার থেকে প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

শুভা তাঁর কাজের জন্য অনেক অনুদান এবং পুরস্কার পেয়েছেন। কয়েকটি বড় স্বীকৃতির মধ্যে রয়েছে ওয়েলকাম ট্রাস্ট সিনিয়র ইন্টারন্যাশনাল বৃত্তি(১৯৯৯)), ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের স্বর্ণজয়ন্তী বৃত্তি(২০০৫), ভারত সরকার জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের জাতীয় মহিলা জৈব-বৈজ্ঞানিক পুরস্কার (২০০৮), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সোসাইটি ফর নিউরোসায়েন্স (২০০৮) এর নিউরোসায়েন্সেস ইন ইনোভেশন (রেইন অ্যাওয়ার্ড) জন্য গবেষণা পুরস্কার এবং ভারতের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান গবেষণা পুরস্কার- শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার (২০১০)[৩]। ২০০৮ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি তাঁকে সাবটিকাল বর্ষের (ভ্রমণ, বিদ্যার্জনের উদ্দেশ্যে অধ্যাপকদের বিশেষ ছুটি) জন্য ওয়েলকাম ট্রাস্ট ফ্লেক্সিবল ভ্রমণ পুরস্কারের অনুদানও দিয়েছিল, যা তিনি তাঁর পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্যে নিয়েছিলেন[৬]। ২০১৪ সালে, হিপ্পোক্যাম্পাস গঠনের সাথে জড়িত প্রক্রিয়া এবং জিনগুলি ব্যাখ্যা করার ৫৫ লক্ষ টাকার ইনফোসিস পুরস্কার অর্জন করেছিলেন শুভা [৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Meet India's best scientist, Shubha Tole 
  2. Science of life 
  3. Infosys Prize 
  4. Do not precompromise on your dreams: Dr.Shubha Tole 
  5. String Duet 
  6. Shubha Tole 
  7. http://www.infosys-science-foundation.com/prize/laureates/2014/shubha-tole.asp

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]