মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
অবস্থান
মানচিত্র
সৈয়দ মুজতবা আলী সড়ক, মৌলভীবাজার, সিলেট

তথ্য
ধরনসরকারি, দ্বৈত শাখা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়
নীতিবাক্যজ্ঞানই আলো
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দ
বিদ্যালয় বোর্ডসিলেট শিক্ষা বোর্ড
শিক্ষাবিষয়ক কর্তৃপক্ষমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর
প্রধান শিক্ষকমোহাম্মদ ফজলুর রহমান
কর্মকর্তা৪৯
শ্রেণী৩য়-১০ম
লিঙ্গবালক
শিক্ষার্থী সংখ্যাপ্রায় ১৫৩১
ভাষাবাংলা
ক্যাম্পাস১১.৫৭ একর
ডাকনামগভর্নমেন্ট স্কুল
ওয়েবসাইটwww.mbghs.edu.bd

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাদেশের অর্ন্তগত মৌলভীবাজার জেলা সদরে অবস্থিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি মৌলভীবাজার শহরের সৈয়দ মুজতবা আলী সড়কে ১৪.৫৭ একর বিশিষ্ট সুবিশাল জায়গা নিয়ে অবস্থিত।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়ের সামনের ফটক।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৭৮৫ সালের জুন মসে বর্তমান মৌলভীবাজার শহরে মিডল ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ছয় বছর পর এটি উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত হয় ।১৮১৪ সালে আসাম সরকার বিদ্যালয়টি সরকারীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং তখন থেকেই তা মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচয় লাভ করে। ১৯৩৮ খ্রিঃ পর্যন্ত মৌলভীবাজার অঞ্চলে ( দক্ষিণ সিলেট মহকুমা)এন্ট্রাস পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল সিলেট।১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ট্রাস পরীক্ষার কেন্দ্রের স্বীকৃতি পায় এবং ঐ বৎসর সর্বপ্রথম ছাত্ররা উক্ত কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে সমর্থ হয়নি।

বিবরণ[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষের তিনতলা মূলভবন (বামে) এবং প্রশাসনিক ভবন(ডানে)।

ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ে রয়েছে দুটি তিনতলা ভবন, চারটি একতলা ভবন, চারটি টিন-শেডের ভবন।বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর অধ্যয়ন পরিচালিত হয়। সাধারণত প্রতি শ্রেণীতে ক (A), খ (B), এই দুইটি শাখা রয়েছে।দুইটি শাখাই দিবা ও প্রভাতী শ্রেণীতে পরিচালিত হয়।বিদ্যালয়টিতে প্রভাতি শাখা ও দিবা শাখা পরিচালনার জন্য প্রধান শিক্ষক একজন হলেও আলাদা দুজন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন এবং আলাদা শিক্ষকমণ্ডলীও রয়েছেন। এমনকি দুই শাখার জন্য আলাদা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ও স্টাফ রয়েছেন।বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখেই স্বাগত জানায় দুইটি ফুলের বাগান।বিদ্যালয়ে রয়েছে ল্যাবরেটরী, মসজিদ, ছাত্র মিলনায়তন এবং সমন্বিত অন্ধ ছাত্র প্রকল্পের কার্যালয়। একটি খেলার সুবিশাল মাঠ এবং মাঠের পাশেই প্রধান শিক্ষকের বাসভবন, অন্ধ ছাত্রদের ছাত্রাবাস এবং অনাবাসিক ছাত্রদের জন্য ছাত্রাবাস রয়েছে, স্কুলের মূল গেটের অপর পার্শ্বে রয়েছে একটি বিশালাকায় উপ-দ্বিতল একটি সুদৃশ্য অডিটরিয়াম (যাহা সাইফুর রহমান অডিটোরিয়াম নামে পরিচিত)।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই একটি পাঠাগার রয়েছে যাহা বর্তমানে মূল ভবনের পেছনে নতুন ভবনে অবস্থিত, যাতে রয়েছে প্রায় ৪৮০০টি বই। এছাড়া ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োজনে বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষা সহায়ক ল্যাবরেটরি, কম্পিউটারের একটি আলাদা ল্যাবরেটরি।ব্যতিক্রমবাদে প্রতিদিন ক্লাস শুরুর আগে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সকল শ্রেণীর ছাত্রদের এবং শিক্ষকদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে কোরআন (সূরা ফাতিহা) তেলাওয়াত, সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য গীতা পাঠ, বিদ্যালয়ের শপথ বাক্যে পাঠ এবং জাতীয় সংগীত সমস্বরে গাওয়াসহ শারীরিক কসরত অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য পোষাকের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণী হইতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রদের পোশাক হচ্ছে সাদা রঙ্গের প্যান্ট কালো বেল্টসহ, সাদা শার্ট শোল্ডার বেল্টসহ ও সাদা কেডস, শীতকালে খয়েরি রঙ্গের ভি গলা আকৃতির ফুল সোয়েটার। এছাড়া বিদ্যালয় থেকে ব্যাজ দেয়া হয়।

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ঐতিহ্যগতভাবে মধ্যেহ্নকালীন বিরোতির সময় ছাত্রদের মধ্যে টিফিন দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।বিদ্যালয় মাসিক বেতনের সাথে অতিরিক্ত কিছু টাকা সংগ্রহ করা হয়, যা দিয়ে ছাত্রদের জন্য টিফিন দেয়া হয়।

খেলাধুলা[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়ের সুবিশাল মাঠ।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শারীরিক শিক্ষাসহায়ক পাঠ্যক্রম রয়েছে এবং প্রতি সপ্তাহে একটি পি.টি. ক্লাস বাধ্যতামূলক অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য দুটো মাঠ রয়েছে, যার একটি মূল ভবন দিয়ে ঘেরা, যাকে ভিতরের মাঠ বলা হয়, আর অন্যটি মুল সীমানার বাহিরে, যাকে বড় মাঠ বলা হয়। বাইরের মাঠটিতে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে বড় ধরনের উন্নয়ন কাজ করানো হয়। এই মাঠটি বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আন্তশ্রেণী ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন আন্তঃজেলা ও আন্তঃবিভাগ প্রতিযোগিতা আয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, দাবা, কাবাডি, টেবিল টেনিস, ভলিবল, হ্যান্ডবল দল, যারা বিভিন্ন খেলাধুলায় বিদ্যালয়ের পক্ষ হইতে নিয়মিত অংশ গ্রহণ করে আসছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রদের খেলাধুলায় কৃত্বিতের মধ্যে রয়েছে উপজেলা, জেলা, আন্ত:অঞ্চলে বিভিন্ন খেলায় গৌরভ উজ্জ্বলময় কৃতিত্ব। যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল ২০০৭-২০১৪ পর্যন্ত টানা সাতবারের হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়ন, ২০১৪ সালে ফুটবলে উপজেলা চ্যাম্পিয়ন, ২০১২ সালে দাবাতে জেলা চ্যাম্পিয়ন, ২০১১ সালে ভলিবলে উপজেলা চ্যাম্পিয়ন ও জেলাতে রানার্স আপ, ২০১০ সালে বাস্কেটবলে উপজেলা চ্যাম্পিয়ন, ২০০৯ সালে কাবাডিতে জেলা ও উপজেলা চ্যাম্পিয়ন প্রভৃত।

সহশিক্ষা কার্যক্রম[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়ের প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি পাঠক্রমে যোগ করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের মুক্তবুদ্ধির ও মুক্তচিন্তার চর্চার জন্য বিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আন্তঃসংগঠন। বিদ্যালয়ের আন্তঃসংগঠনের মধ্যে স্কাউট, রেডক্রিসেন্ট এবং বিএনসিসি'র কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য। এই তিন সংগঠন, বিশেষ করে বিএনসিসি কোরের সদস্যবৃন্দ প্রতি বছর বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে থাকে। এই তিন বাহিনী বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অন্তর্বর্তি শৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ও বিশেষ পরিস্থিতি, দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।

ফলাফল[সম্পাদনা]

শিক্ষা কার্যক্রমের ফলাফল এই বিদ্যালয়ের বরাবই ঐতিহ্যগত। পূর্বের শিক্ষা পদ্ধতি থেকে বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে এ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাফল্যে প্রশংসনিয়।[১] ২০০১, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালের এসএসসিতে পাশের হার যথাক্রমে ৭৮.৩২%, ৭৭.৭৮%, ৭৫.৩২%, ৬৯.০১%, ৮৬.৬১%, ৮৪.৭৫%, ৮৩.০৯%, ৯১.৮৭%, ৯৬.৫৮%, ৯৯.১৫%, ৯৯.২৪%, ৯৯.২৮%, ৯৮.৯২% এবং ৯৬.৮৫%।[২] ২০০২ সালে এসএসসিতে ১ জন, ২০০৪ সালে এসএসসিতে ৯ জন,২০০৫ সালে এসএসসিতে ১৭ জন,২০০৬ সালে এসএসসিতে ১০ জন, ২০০৭ সালে এসএসসিতে ১৬ জন, ২০০৮ সালে এসএসসিতে ১৪ জন, ২০০৯ সালে এসএসসিতে ৪৭ জন, ২০১০ সালে এসএসসিতে ২৭ জন, ২০১১ সালে এসএসসিতে ৩৬ জন, ২০১২ সালে এসএসসিতে ৩৯ জন, ২০১৩ সালে এসএসসিতে ৪৯ জন, ২০১৪ সালে এসএসসিতে ৫৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করে।২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সিলেট বোর্ডের প্রথম ২০টি স্কুলের মধ্যে স্কুলটি স্থান করে নেয়। [৩]

অনুষ্ঠানাদি[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়ের দ্বিতল বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম(সাইফুর রহমান অডিটোরিয়াম)

বিদ্যালয়ে প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসব ও জাতীয় দিবসে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা। মিলাদ মাহফিল এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের জন্য থাকে বিভিন্ন পুরস্কার। এছাড়া বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন চ্যারিটি প্রোগ্রাম, বই মেলা, রেড ক্রিসেন্টের রক্ত সংগ্রহ অভিযান, আন্তঃস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতাও বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।প্রতি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাবধানে নবাঙ্কুর নামে একটি বিদ্যালয়ের বার্ষিকী প্রকাশিত হয়।এছাড়াও প্রতি বছর নবম-দশম শ্রেণীরা শিক্ষার্থীরা এসএসসিতে অংশগ্রহণকারী বিদায়ী ছাত্রদের বিদায় উপলক্ষে আয়োজন করে থাকে বিদায় সংবর্ধনা ।এ সকল বিদায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে বিভিন্ন উপহার সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরী করা টিন-শেডের শ্রেণীকক্ষ

অন্যান্য[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়ে প্রতি শুক্রবার বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের(বাউবি)ক্লাস পরিচালিত হয়।বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হয়। জেলার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের শাখা এ বিদ্যালয়ে রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন প্রয়োজনেও (জানাযার নামায আদায় ইত্যাদি) স্থানীয় লোকজন এবং প্রশাসন বিদ্যালয়ের বড় মাঠটি ব্যবহার করে থাকেন। বিদ্যালয়ের মসজিদটি স্থানীয় জনসাধারনের নামাযের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন কৃতিশিক্ষার্থী:
  2. নবাঙ্কুর, বার্ষিকী ২০১৩, মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত, পৃ. ১৪৪-১৫১; সংগ্রহের তারিখ: ডিসেম্বর ০৭, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ।
  3. [১]কালের কণ্ঠ। ২০১৪। সংগৃহীত হয়েছে: ৩০ অক্টোবর, ২০১৪।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • [২], অফিশিয়াল ফেইসবুক পৃষ্ঠা ।