মেঘালয়ের খনি দুর্ঘটনা

স্থানাঙ্ক: ২৫°৩৩′৩৭″ উত্তর ৯২°১১′৩৭″ পূর্ব / ২৫.৫৬০২৯১৩° উত্তর ৯২.১৯৩৬৮১৩° পূর্ব / 25.5602913; 92.1936813
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মেঘালয়ের খনি দুর্ঘটনা
তারিখ১৩–২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ (২০১৮-১২-১৩ – ২০১৮-১২-২৮)
অবস্থানমেঘালয়, ভারত
স্থানাঙ্ক২৫°৩৩′৩৭″ উত্তর ৯২°১১′৩৭″ পূর্ব / ২৫.৫৬০২৯১৩° উত্তর ৯২.১৯৩৬৮১৩° পূর্ব / 25.5602913; 92.1936813

মেঘালায় খনন দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে এবং এই দুর্ঘটনায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কসানের একটি কয়লা খনিতে ১৫ জন শ্রমিক আটকা পড়ে। পাঁচ জন খনি শ্রমিক পালাতে সক্ষম হলেও অবশিষ্ট ১৫ জন খনি শ্রমিক আটকে পড়েন এবং তাদের উদ্ধার প্রচেষ্টা ১৭ জানুয়ারী ২০১৯ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।[১][২][৩] জৈন্তিয়া পাহাড় জেলায় প্রায় ৩৭০ ফুট (১১২ মিটার) গভীরতায় কয়লার খনিতে খননকারীরা আটকা পড়ে। নিকটবর্তী লিটন নদীর জল দ্বারা পূর্ণ ছিল এমন একটি সংলগ্ন খনি কাটার পর খনিটি জলে প্লাবিত হয়েছিল।[৪][৫][৬]

খননকারীরা আটকে পড়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরে জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং রাজ্য দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনীর কর্মীরা উদ্ধারের কর্মকাণ্ড শুরু করে। জেলা প্রশাসনের সহায়তার অনুরোধের পর কোল ইন্ডিয়া, কিরোলসকার ব্রাদার্স, ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর দলগুলি খনি শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকাজে যোগ দেয়।

পটভূমি[সম্পাদনা]

২০১৪ সালে, মেঘালয়ের এর সর্বমোট কয়লা উৎপাদন প্রায় ৬ মিলিয়ন টন ছিল।[৭] ২০১৪ সালে ভারতে পরিবেশগত সমস্যাগুলি পরিচালনাকারী সরকারি সংস্থা জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) মেঘালয়য় কয়লা খনির খনন নিষিদ্ধ করার আদেশ জারি করে, বিশেষ করে 'ইঁদুর-গর্ত' পদ্ধতির মাধ্যমে খনির খনন কাজ নিষিদ্ধ করে।[৪][৭]

তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, কয়লা খনি মালিকদের অনুরোধে পরবর্তী আদেশে, জাতীয় গ্রীন ট্রাইব্যুনাল এবং ভারতের সুপ্রীম কোর্ট ১৭ এপ্রিল ২০১৪ সালে আদেশ কার্যকর করার পূর্বে কয়লা খনন ও পরিবহনের অনুমতি দেয়। ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে সুপ্রীম কোর্ট আবারো একটি আদেশ জারি করে যে নিষেধাজ্ঞা আগে কয়লা খনির পরিবহনের অনুমতি ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।[৭] তবে এনজিটি ও বিরোধী খনির কর্মীরা উল্লেখ করেছেন যে নতুন অবৈধ কয়লা খনন এখনও চলছে।[৭][৮] ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ অঞ্চলে অবৈধ কয়লা খনির প্রমাণ সংগ্রহ করার কারণে দু'জন কর্মীকে আক্রমণ করা হয়েছিল।[৯]

উদ্ধার প্রচেষ্টা[সম্পাদনা]

উদ্ধার অভিযান শুরু হয় ১৩ ডিসেম্বর। খনি শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং রাজ্য দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনীর ১০০ জনের বেশি কর্মী নিযুক্ত করা হয়।[১০] খনি থেকে ১২,০০,০০০ লিটার জল পাম্প করে বের করা হয়েছে তবে উদ্ধার অভিযানের সময় এই জল পাম্প কোন কাজে আসেনি বৃষ্টির জব্য এবং নদী থেকে জল খনিতে প্রবাহিত হচ্ছিল।[৩] এছাড়াও ডুবুরীদের খনি মধ্যে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু শুধুমাত্র ৪০ ফুট গভীরতা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল তারা।[১১] সোনার সিস্টেম এবং ক্যামেরা খনি সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।[১০]

২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোল ইন্ডিয়াকে স্থানীয় প্রশাসন থেকে পাম্প এবং অন্যান্য সহায়তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোল ইন্ডিয়ার থেকে কেবলমাত্র ২০ ডিসেম্বরে যোগাযোগ ছিল।[১২] ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বরে ভারতীয় বিমানবাহিনী এই অভিযানে যোগ দেয়, এই স্থানটিতে এয়ারিফটিং পাম্পগুলি যুক্ত করা হয়। কোল ইন্ডিয়া এবং কিরোলসকার ব্রাদার্সের দলগুলিও দক্ষতা প্রদান করছে।[১৩][১৪] ২৯ ডিসেম্বর ভারতীয় নৌবাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি ডুবুরীদের দল উদ্ধার কাজে যোগ দেয়।[১৫][১৬]

২৭ ডিসেম্বরে মিডিয়া রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল যে, খনি থেকে আসা "ক্ষতিকারক গন্ধ" -এর উপস্থিতি উল্লেখ করে এনডিআরএফের ডুবুরীদের বিবৃতির ভিত্তিতে খনি শ্রমিকরা মরে যেতে পারে। এনডিআরএফ শীঘ্রই স্পষ্ট করে জানিয়েছিল যে এর অর্থ এই নয় যে খনি শ্রমিকদের মারা গিয়েছিল এবং অন্যান্য কারণে যেমন "জমা জল" থেকে গন্ধ আসতে পারে।[১৪][১৭]

ভারতের সুপ্রীম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করার পর, সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা আদালতের কাছে জানায় যে উদ্ধারকাজ প্রচেষ্টা অতিরিক্ত অসুবিধা ছিল, কারণ ৩৫৫ ফুট খনির যেখানে খনি শ্রমিকরা আটকা পড়েছে সেই স্থানের কোন মানচিত্র ছিল না। নিকটবর্তী নদী থেকে খনিতে প্রবাহিত জলও উদ্ধারকাজকে আরো কঠিন করে তোলে।[১৮][১৯]

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা রাজ্যে খনি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং রাজ্যে অবৈধ খননের ঘটনা স্বীকার করেন।[৯][২০] মেঘালয় পুলিশ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে কয়লা খনি মালিককে গ্রেফতার করে।[১০] কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন।[১১][২১]

ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করার পর সুপ্রিম কোর্ট ৩ জানুয়ারী ২০১৯ সালে বলেছেন:[২২][২৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Karmakar, Rahul (১৩ ডিসেম্বর ২০১৮)। "13 feared dead in Meghalaya coal mine"The Hinduআইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  2. "Meghalaya mine collapse: Have sought powerful pumps, they will arrive soon, says Coal India"The Indian Express। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  3. "Rescue Ops On, but No Update on Trapped Miners in Flooded Meghalaya Mine"The Weather Channel। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  4. Editorial (২৭ ডিসেম্বর ২০১৮)। "No lessons learnt: on Meghalaya mining disaster"The Hinduআইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  5. "Tests confirm Lytein river water entered coal mine"The Shillong Times। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  6. "Families of miners trapped in Meghalaya seek miracle"The Times of India। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  7. Saha, Abhishek (২৮ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Meghalaya: Mining ban, moving allowed, in between the tragedy"The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  8. Mukhim, D Banjop (২৬ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Rat-Hole Mining Rampant in Meghalaya Despite NGT Ban"The Wire। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  9. Siangshai, Sannio (২৪ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Race to save trapped 'rat-hole' miners"BBC। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  10. IANS (১৫ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Sonar system fails to detect trapped coal miners in Meghalaya"Business Standard India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  11. Shali, Pooja (২৭ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Not giving up but huge logistical challenge to rescue trapped miners: Meghalaya CM"India Today। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  12. Parashar, Utpal; Mohanty, Debabrata (২৮ ডিসেম্বর ২০১৮)। "IAF plane with 20 pumps lands, 200-km drive next to reach trapped miners"Hindustan Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  13. Nair, Arun (২৮ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Meghalaya Rescue Operation Live Updates: Air Force, Coal India Teams To Reach Today"NDTV। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  14. PTI (২৭ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Meghalaya mining mishap: Kirloskar Brothers offer high power pumps to drain water from mine"Livemint। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  15. Ghosh, Aditi (২৯ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Meghalaya Rescue Operation Updates: Navy Divers, High-Pressure Pumps To Reach Site Today"NDTV। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৯ 
  16. "Navy divers to join rescue operation for trapped Meghalaya miners"The Times of India। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৯ 
  17. Naqvi, Sadiq (২৭ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Meghalaya mining accident: Foul smell in mine as water stagnates, pumps will take '4 more days to arrive'"Hindustan Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  18. "With No Blueprints, Meghalaya Mine Rescue Difficult: Centre To Top Court"NDTV। PTI। ৪ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-০৫ 
  19. "Absence of blueprint posing hurdles in rescue of trapped Meghalaya miners: Centre tells Supreme Court"Hindustan Times। HT Correspondent। ৪ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-০৫ 
  20. Choudhury, Ratnadip (১৫ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Meghalaya Admits To Illegal Coal Extraction After 13 Get Trapped In Mine"NDTV। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  21. "'15 trapped miners gasp for air...': Rahul Gandhi takes a shot at PM Modi"Hindustan Times। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  22. ""Every Second Counts": Top Court On Rescue Of Trapped Meghalaya Miners"NDTV। Edited by Shylaja Varma with inputs from Agencies। ৩ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-০৪ 
  23. "'Not satisfied' with rescue ops, Supreme Court seeks Centre response"Hindustan Times। HT Correspondent। ৩ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-০৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]