মিনতি মিশ্র (নৃত্যশিল্পী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মিনতি মিশ্র
জন্ম
মিনতি দাস

১৯২৯ (1929)
মৃত্যু৬ জানুয়ারি ২০২০(2020-01-06) (বয়স ৯০–৯১)
পেশাশাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯৫৬-১৯৯০
দাম্পত্য সঙ্গীনিত্যানন্দ মিশ্র
সন্তানপুত্র
পিতা-মাতাবসন্ত কুমার দাস
পুরস্কারপদ্মশ্রী
সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার
ওড়িশা সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার

মিনতি মিশ্র (১৯২৯ - ৬ই জানুয়ারী ২০২০) ছিলেন একজন ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী এবং অভিনেত্রী। তিনি ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য ওড়িশিতে দক্ষতার জন্য সুপরিচিত। [১][২]। ভারত সরকার ২০১২ সালে মিনতিকে চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী দ্বারা সম্মানিত করে।[৩]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

মিনতি মিশ্র (বিবাহ-পূর্ব নামঃ মিনতি দাস[৪]) ১৯২৯ সালে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের কটক শহরে স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বসন্ত কুমার দাসের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন তিন ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ[৫]। তিনি অল্প বয়স থেকেই নাচ এবং গানে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। অজিত ঘোষ এবং বনবিহারী মাইতির অধীনে বিষয়ভিত্তিক নাচ এবং গুরু কবিচন্দ্র কালীচরণ পটনায়েকের অধীনে ওড়িশি নৃত্যের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন মিনতি। ১৯৫০ সালে মিনতি ওড়িশির প্রখ্যাত গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের অধীনে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেছিলেন।

১৯৫৪ সালে মিনতি মিশ্র ওড়িশা সরকারের বৃত্তি নিয়ে রুক্মিণী দেবী অরুন্দলের কলাক্ষেত্রে যোগদান করেন এবং কুট্টি সারদা ও পেরিয়া সারদার অধীনে এক বছর ভরতনাট্যমে প্রশিক্ষণ নেন[৬]। পরের বছর, তিনি পান্ডা ওয়ালুর পিল্লাই চুক্কালিঙ্গম এবং মীনাক্ষি সুন্দরম পিল্লাইয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফ্রি আর্টস-এ যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে তাঁর প্রথম প্রকাশ্য মঞ্চানুষ্ঠান পরিবেশিত হয়; পরের তিন বছর ভারতের বিভিন্ন বড় শহরে তিনি নৃত্যানুষ্ঠান করেন। ১৯৫৯ সালে তাঁকে আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশন সুইজারল্যান্ডে আমন্ত্রণ জানায় এবং জুরিখ, লুসার্ন, জেনেভা এবং উইন্টারথারে তিনি অনুষ্ঠান করেন[৫]। তিন বছর পরে, তিনি নাট্যশাস্ত্রের একটি গবেষণাপত্রের জন্য জার্মানির মারবার্গের ফিলিপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারততত্বে ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন[৭]। ১৯৬৩ সালে, তাঁকে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে অনুষ্ঠান পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রিত করা হয়েছিল।

কর্ম জীবন[সম্পাদনা]

মিনতিদেবী পাঁচটি ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র সূর্যমুখী ১৯৬৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল, তারপরে জীবন সাথী, সাধনা এবং অরুন্ধতী। চারটি ছায়াছবিই ওড়িয়া ভাষার শ্রেষ্ঠ ছায়াছবি বিবেচিত হওয়ার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল[৮][৯][১০][১১]। তিনি ১৯৬৩ সালে একটি বাংলা চলচ্চিত্র 'নির্জন সৈকতে'-তেও অভিনয় করেছিলেন, যেখানে তিনি কেলুচরণ মহাপাত্রের নৃত্য পরিকল্পনায় ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেছিলেন[১২]। চলচ্চিত্রের কর্মজীবন ছাড়াও তিনি আকাশবাণীতে একজন এ গ্রেড শিল্পীও ছিলেন এবং হিন্দুস্থানী কণ্ঠ সঙ্গীতের জন্য 'সঙ্গীত প্রভাকর' উপাধি প্রাপ্ত ছিলেন[৫][১৩]

মিনতি দেবী ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ভুবনেশ্বরের উৎকল সংগীত মহাবিদ্যালয়ের[১৪] অধ্যক্ষ ছিলেন[১৩][১৫]। সেখানে তাঁর কার্যকালে এই প্রতিষ্ঠানটি পাঠ্যক্রমকে প্রথাগত রীতির মধ্যে নিয়ে আসে, ওড়িশি নৃত্য ও সংগীতের প্রশিক্ষণকে প্রথাগত পড়াশোনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে এবং নৃত্যের নাট্য ও অভিনয় বিভাগকে পাঠ্যক্রমের মধ্যে নিয়ে আসে। এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে, মিনতিদেবী ওড়িশির প্রথম প্রজন্মের গুরু যেমন পঙ্কজ চরণ দাস এবং দেবপ্রসাদ দাস প্রমুখের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন[১৬]

অবসর[সম্পাদনা]

১৯৮০ সালে স্বামী নিত্যানন্দ মিশ্রের মৃত্যুর পর, তিনি নৃত্য পরিবেশনা থেকে সরে আসেন এবং ১৯৯০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন। এর পরে, তিনি সুইজারল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং বাকি জীবন কানাডা, ভারতসুইজারল্যান্ডে নৃত্য উৎসব, বক্তৃতা এবং নৃত্য কর্মশালায় তাঁর সময় উৎসর্গ করেছিলেন[৫]

তিনি ২০২০ সালের ৬ই জানুয়ারী সুইজারল্যান্ডে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[১৭]

চলচ্চিত্রের তালিকা[সম্পাদনা]

তাঁর অভিনীত ছায়াছবির তালিকা:[১৭]

বছর চলচ্চিত্র ভাষা পরিচালক
১৯৬৩ সূর্যমুখী ওড়িয়া প্রফুল্ল সেনগুপ্ত
১৯৬৩ জীবন সাথী ওড়িয়া প্রভাত মুখোপাধ্যায়
১৯৬৩ নির্জন সৈকতে বাংলা তপন সিংহ
১৯৬৪ সাধনা ওড়িয়া প্রভাত মুখোপাধ্যায়
১৯৬৭ <i id="mwmg">অরুন্ধতী</i> ওড়িয়া প্রফুল্ল সেনগুপ্ত
১৯৬৭ ভাই Bhauja ওড়িয়া সারথি

পুরস্কার ও স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

মিনতি দেবী ১৯৭৫ সালে ওড়িশা সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারের প্রাপক ছিলেন। তিনি কলিঙ্গ শাস্ত্রীয় সংগীত পরিষদ পুরস্কার এবং ২০০০ সালে, সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০১২ সালে, ভারত সরকার তাঁকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী দ্বারা ভূষিত করেছিল।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "60 years of Odissi"The Hindu। ২৪ মার্চ ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৪ 
  2. "TOI"। TOI। ২৬ জানুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৪ 
  3. "Padma Shri" (পিডিএফ)। Padma Shri। ২০১৪। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৪ 
  4. Ashok Mohanty (২০১১)। My Life, My Work। Allied Publishers। পৃষ্ঠা 412। আইএসবিএন 9788184246407 
  5. "Radhu Babu Bio"। Radhu Babu। ২০১৪। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৪ 
  6. "Peria Sarada"। Narthaki। ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪ 
  7. "Urvasi Dance"। Urvasi Dance। ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪ 
  8. "Suryamukhi"। Directorate of Film Festivals। ২০১৪। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪ 
  9. "Jeeban Sathi"। Directorate of Film Festivals। ২০১৪। ২ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪ 
  10. "Sadhana"। Directorate of Film Festival। ২০১৪। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪ 
  11. "15th National Film Awards" (পিডিএফ)Directorate of Film Festivals। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  12. "Nirjana Saikate"। Nirjana Saikate। ২৮ নভেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪ 
  13. "Radhu Babu Intro"। Radhu Babu। ২০১৪। ৫ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৪ 
  14. "USM"। USM। ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  15. "Radhu Babu Achievements"। Radhu Babu। ২০১৪। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৪ 
  16. "Deb Prasad Das"। Narthaki। ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪ 
  17. "Eminent Odissi dancer Minati Mishra passes away at 91 in Switzerland"The New Indian Express। ৬ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]