মায়াবী কেটযাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কেটযালের গায়ের রঙ ঘন সবুজ, বুকের কাছে রক্তের মত লাল, রয়েছে বিশাল লম্বা লেজ। এই লম্বা লেজ থেকেই পাখিটির নামকরণ। নাহুয়াটল ভাষায় কেটযাল অর্থ ‘লম্বা চমৎকার লেজের পালক’।

কেটযাল
পুরুষ কেটযাল
বাসার দ্বারে স্ত্রী কেটযাল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পাখি
বর্গ: Trogoniformes
পরিবার: Trogonidae
গণ: Pharomachrus
প্রজাতি: P. mocinno
(De La Llave, 1832)
গণসমূহ
P. m. costaricensis

P. m. mocinno

Range of P. mocinno

মায়াবী কেটযাল (ইংরেজিঃ Resplendent Quetzal) ( /ˈkɛtsəl/) (Pharomachrus mocinno) ট্রোগন ফ্যামিলির পাখি। এটি পাওয়া যায় চিয়াপাস, মেক্সিকো থেকে পশ্চিম পানামা অব্দি। (unlike the other quetzals of the genus Pharomachrus, which are found in South America and eastern Panama). It is well known for its colorful plumage. There are two subspecies, P. m. mocinno and P. m. costaricensis.

গুয়েতেমালার জাতীয় পাখি কেটযাল। জাতীয় প্রতীক এ পাখিটির নামেই গুয়েতেমালার মুদ্রার নামকরণ। প্রাচীন কালে কেটযালের লম্বা লেজকেই মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হত। তবে এর জন্য পাখিটিকে কখনো হত্যা করা হত না। জীবিত পাখি ধরে লেজের পালক তুলে ছেড়ে দেয়া হত।

লৌকিক উপকথা[সম্পাদনা]

Male leaving nest hole

গুয়েতেমালার গহীন বনে কিশে নামক এক উপজাতির বসবাস ছিল। তাদের গোত্রের সর্দার চাকিক। বহুদিন ধরে নিঃসন্তান থাকার পর চাকিকের স্ত্রী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। ছেলের নাম রাখা হয় কেটযাল। সবাই সর্দারের ছেলেকে পেয়ে খুব খুশি। ধীরে ধীরে সে যোগ্য একজন বীর যোদ্ধা হয়ে উঠতে থাকে। তারপর আসে কেটযালকে যোদ্ধা ঘোষণা করার দিন। সেদিন বিরাট এক উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসবে অভিজ্ঞ একজন জ্ঞানী এলেন কেটযালের ভাগ্য গণনা করতে। তিনি বলেন, ‘তোমার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে, কেটযাল। তুমি কিশে ইন্ডিয়ানদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবে।’ এরপর তিনি কেটযালকে পাখির পালকের একটি বিশেষ হার দেন এবং তাকে সবসময় গলায় পরে থাকার নির্দেশ দেন।

একজন মানুষ কীভাবে চিরকাল বেঁচে থাকে তা বুঝতে না পারলেও সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসবে অংশ নেয়। সবাই খুব খুশি ছিল শুধু একজন বাদে। সর্দার চাকিকের ছোট ভাই চিরুমা। বহুদিন সর্দারের কোন সন্তান না হওয়ায় সে ধরে নিয়েছিল চাকিকের পরে সেই হবে গোত্রের সর্দার। কিন্তু কেটযালের জন্মের পর তার সেই স্বপ্ন কখনোই পুরন হওয়া সম্ভব নয়, যদি না কেটযালকে সরিয়ে দেয়া যায়। উৎসবের পর যোদ্ধাদের সবাইকে যুদ্ধে যেতে হলো। তারা তাদের তীর-ধনুক নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সকলে বীরের মত লড়াই করে। তবুও অনেক কিশে যোদ্ধা তীরের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। চিরুমা লক্ষ্য করলো, একটি তীরও কেটযালকে আঘাত করতে পারছে না। সে যেন কোন জাদুমন্ত্র বলে রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে। চিরুমা ভাবলো, ‘নিশ্চয়ই ওই পালকের হার ওকে রক্ষা করছে। ওই হার আমাকে নিতেই হবে’। যুদ্ধ শেষে গভীর রাতে যখন সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন, চিরুমা কেটযালের কক্ষে গিয়ে ওর গলা থেকে হার চুরি করলো। ‘এখন আর কেটযাল চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবে না। আমিই হব পরবর্তী সর্দার’। পরদিন কেটযাল যখন বনের ভিতর হাঁটছিল, চিরুমা গাছের আড়াল থেকে তাকে লক্ষ্য করে তীর ছোঁড়ে। বুকে তীরের আঘাতে কেটযাল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কেটযালের বুকের রক্তে বনভূমি লাল হয়ে গেল। চিরুমা ভাবলো কেটযাল তার রাস্তা থেকে সরে গেছে। তখনি হঠাৎ কেটযাল এক চমৎকার পাখি হয়ে মাটি ছেড়ে উঠলো যার পালকের রঙ ঘাসের মত সবুজ আর বুকের কাছে কেটযালের রক্তের মত লাল রঙ। চিরুমা আগে কখনো এত সুন্দর পাখি দেখেনি। সে অবাক হয়ে পাখিটির দিকে তাকিয়ে রইলো। তখনি হঠাৎ গাছের পেছন থেকে একটি জাগুয়ার চিরুমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে শেষ করে দেয়।

চিরুমার লোভের কারণে সে কখনোই কিশেদের সর্দার হতে পারেনি। কেটযাল পাখি হয়ে চিরকাল কিশেদের মাঝে থেকে তাদের রক্ষা করেছে। সেই থেকে গুয়েতেমালাবাসী এখনো কেটযালকে পবিত্র হিসেবে গণ্য করে। কেটযাল তাদের কাছে শক্তির প্রতীক যা সকল অশুভ শক্তির হাত থেকে তাদের দেশকে সর্বদা রক্ষা করে।

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Pharomachrus mocinno"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2013.2প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৩