ভজন সোপরি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পণ্ডিত ভজন সোপরি
২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ভজন সোপরি
প্রাথমিক তথ্য
জন্মনামভজনলাল সোপরি
জন্ম(১৯৪৮-০৬-২২)২২ জুন ১৯৪৮
শ্রীনগর, জম্মু-কাশ্মীর ব্রিটিশ ভারত
উদ্ভবকাশ্মীর উপত্যকা
মৃত্যু২ জুন ২০২২(2022-06-02) (বয়স ৭৩)
গুরুগ্রাম, হরিয়ানা, ভারত
ধরনভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত এবং সুফিয়ানা ঘরানা
পেশাসঙ্গীতজ্ঞ
বাদ্যযন্ত্রসন্তুর
কার্যকাল১৯৬৩ - ২০২২

পণ্ডিত ভজন সোপরি (২২ জুন ১৯৪৮ - ২ জুন ২০২২) [১] ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় সন্তুর বাদক। বিশ্বের নানা প্রান্তে ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতকে সঙ্গীতরসিকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং "সন্তুর-সন্ন্যাসী" নামে পরিচিত ছিলেন। [২][৩]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

ভজনলাল সোপরির জন্ম ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন ভারতের  জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের শ্রীনগরে,  কাশ্মীর উপত্যকার সোপর হতে আগত সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ পরিবারে। পরিবারটি ছয় প্রজন্ম ধরে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুফিয়ানা ঘরানার জন্য পরিচিত ছিল। পণ্ডিত শঙ্কর পণ্ডিতের প্রপৌত্র ছিলেন ভজনলাল। পিতা শম্ভুনাথ সোপরি ও পিতামহ সংসারচন্দ্র সোপরি উভয়েই ছিলেন সন্তুর বাদক। ভজনলাল প্রথমে পিতামহ ও পরে পিতার কাছে সন্তুর বাদন  শেখেন। [৪][৫][৬][৭] তিনি মাত্র দশ বৎসর বয়সে প্রয়াগ সঙ্গীত সমিতিএলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। [৬]

সঙ্গীত জীবন[সম্পাদনা]

ভজনলাল প্রথমে পিতামহ ও পরে পিতার কাছে সন্তুর বাদন শিখে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে মাত্র পাঁচ বৎসর বয়সেই  মঞ্চে অবতীর্ণ হন। ভজনলালই ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপর সর্বপ্রথম সন্তুরের ব্যবহার করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে  সঙ্গীত শিক্ষা দিয়েছেন। তার পরিবেশিত যন্ত্রসঙ্গীত ভারতে বেতারে সম্প্রচারিত হয়েছে এবং বেলজিয়াম, মিশর, ইংল্যান্ড, জার্মানি, নরওয়ে, সিরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশের সঙ্গীতপিপাসু শ্রোতারা  উপভোগ করেছেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি আকাশবাণীতে যুক্ত হন এবং নিয়মিতই সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। ভজন সোপরি কেবল সন্তুর বাদক ছিলেন না, মৌলিক সুরস্রস্টা হিসাবেও প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়া, সঙ্গীতের 'নাদ' অর্থাৎ 'ধ্বনি' এবং 'নাদ যোগ' তথা 'ধ্বনি চিকিৎসা'র উপর গবেষণার কাজও করেছিলেন। কয়েকটি ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি 'মিউজিক থেরাপি' বা 'শব্দ চিকিৎসা'র উপর 'ডক্টর টু পেসেন্ট' , 'নাদ যোগ অন দ্য সন্তুর' শীর্ষক অ্যালবাম প্রকাশ করে।

মিউজিক একাডেমি, সামাপা[সম্পাদনা]

জম্মু ও কাশ্মীর এবং ভারতের বাকি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগসূত্র স্থাপনে ভজন সোপরিই মূলব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত হন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষন ও প্রচারে দিল্লিতে গঠিত  সামাপা ( SaMaPa) তথা (সোপরি একাডেমি ফর মিউজিক অ্যান্ড পারফর্মিং আর্টস) নামে একটি সঙ্গীত একাডেমির পরিচালক ছিলেন তিনি।[৮] "সামাপা" (SaMaPa) এর মাধ্যমে সমাজ ও  কারাগারের সাজা প্রাপ্ত বন্দীদের সঙ্গীতের মাধ্যমের এক মানসিক বন্ধন সৃষ্টির চেষ্টা করেন। একাডেমির মাধ্যমে তিনি বেশ কিছু সঙ্গীতশিল্পীকে প্রশিক্ষিত করেছেন, কিছু পুরাতন বাদ্যযন্ত্রও পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এজন্য, ২০১১ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে 'জাতীয় ডোগরি পুরস্কার' প্রদান করে। [৯] ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে  ভজন সোপরিও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ভারতীয় সংস্কৃতি বিশেষকরে কাশ্মীরের সংস্কৃতির ঐতিহ্যে উৎসাহ প্রদানে একাদশ বার্ষিক সঙ্গীত সম্মেলনে  "সামাপা পুরস্কার" প্রদান ঘোষণা করেন। [১০]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

পণ্ডিত ভজন সোপরি ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।[১১] ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী, [১২] ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে বাবা আলাউদ্দিন খান পুরস্কার লাভ করেন।[১৩]এছাড়াও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অবদানের জন্য ২০১১ খ্রিস্টাব্দে এমএন মাথুর পুরস্কারে ভূষিত হন[১৪] ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য সরকার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে। [১৫]

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

পণ্ডিত ভজন সোপরি বিগত এক বৎসরকাল কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন। কিছুদিন আগে নতুন দিল্লির কাছে গুরুগ্রামের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন বৃহস্পতিবার  বিকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরদিন নতুন দিল্লির লোধি রোড শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। [১৬] তার দুই পুত্র- সৌরভ ও অভয়।  অভয় রুস্তুম সোপরিও একজন খ্যাতনামা সন্তুর বাদক। [১৭]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Bhajan Sopori"Indian Arts। ২৪ জুন ২০১২। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. "Sangeet Natak Akademi Awards – Hindustani Music – Instrumental"। Sangeet Natak Akademi। ১৯ মে ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০০৯ 
  3. "প্রয়াত 'সন্তুর-সন্ন্যাসী' পণ্ডিত ভজন সোপরি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০১ 
  4. Kumar, Anuj (২০২২-০৬-০২)। "Pandit Bhajan Sopori, saint of santoor, passes away"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১১ 
  5. Shuchismita। "'Saint of the Santoor' Pandit Bhajan Sopori passes away"Greater Kashmir (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১১ 
  6. "Bhajan Lal Sopori"Planet Radio City। ২৪ জুন ২০১২। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. "Santoor Player Abhay Rustom Sopori plays tomorrow"Mumbai Mirror। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১। ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  8. "J&K to be Cultural Capital of the country"Ground report। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২। ৭ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১২ 
  9. "Trinidad envoy jams with Kashmiri Sufi band"Thaindian। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১১। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১২ 
  10. "Santoor Maestro Bhajan Sopori announces SaMaPa awards"Indian Express। ১৮ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৮ 
  11. "Sangeet Natak Akademi Awards – Hindustani Music – Instrumental"। Sangeet Natak Akademi। |আর্কাইভের-ইউআরএল= এর |আর্কাইভের-তারিখ= প্রয়োজন (সাহায্য) তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০০৯  একের অধিক |access-date= এবং |সংগ্রহের-তারিখ= উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)
  12. "Padma Awards"। Ministry of Communications and Information Technology (India)। ২১ মে ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০০৯ 
  13. "Pandit Bhajan Sopori awarded again"Indian Express। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০২০ 
  14. "Bhajan Sopori gets M N Mathur Award"Early Times। ৩ মার্চ ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০২০ 
  15. "State awards for Jammu and Kashmir announced"Only Kashmir। ২৬ জানুয়ারি ২০১৬। ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ 
  16. Kumar, Anuj (২০২২-০৬-০২)। "Pandit Bhajan Sopori, saint of santoor, passes away"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১১ 
  17. Shuchismita। "'Saint of the Santoor' Pandit Bhajan Sopori passes away"Greater Kashmir (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১১