ব্যবসার অনুমতিপত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ব্যবসার অনুমতিপত্র(ইং: ট্রেড লাইসেন্স) বলতে সরকার বা সরকারি সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ব অনুমতিপত্রকে বোঝায় যাতে কোন ব্যক্তি বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সরকারের আইনি এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত ভৌগোলিক এলাকাতে ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়। সাধারণত স্থানীয় সরকার এই অনুমতিটি দেন। অনেক সময় একই আইনি এখতিয়ারভুক্ত ভৌগোলিক এলাকাতে ব্যবসা করার জন্য একাধিক সরকারি সংস্থার কাছ থেকে একাধিক অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। শুধু অনুমতিপত্রই নয়, নিবন্ধনপত্র এবং সনদেরও প্রয়োজন হতে পারে।

সাধারণত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও তার ভৌত অবস্থানের উপরে বৈধভাবে ব্যবসা করার অনুমতিপত্রের ধরন নির্ভর করে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর সংখ্যা, মালিকানার ধরন (একক মালিকানা নাকি কর্পোরেশন), ইত্যাদি ভেদেও অনুমতিপত্র ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যদি ব্যবসার অনুমতিপত্র না থাকে, তাহলে সরকারি সংস্থাসমূহ কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করতে পারে এমনকি সেটিকে বন্ধ করে দিতে পারে।

বাংলাদেশে ব্যবসার অনুমতিপত্র[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের ব্যবসার অনুমতিপত্র ধারণাটিকে "ট্রেড লাইসেন্স" পরিভাষা দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স (ইংরেজি: trade license) হল বৈধভাবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত অনুমতি বা লাইসেন্স। যেকোনো ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমেই ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে হবে। ব্যবসায় উদ্যোক্তার আবেদনের ভিত্তিতে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এটি শুধুমাত্র ব্যবসার উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা যাবে এবং এটি হস্তান্তরযোগ্য নয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে, কোন ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য হতে, ব্যাংক ঋণ পেতে এরকম নানান ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য ব্যবসার অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই ব্যবসায়ের অবস্থান অনুসারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ নির্বাচন করতে হবে। তারপরে ব্যবসার সঠিক ক্যাটাগরি নির্ধারণ করতে হবে এবং ট্রেড লাইসেন্স আবেদন ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স করার প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

প্রথমেই ব্যবসার নাম নির্বাচন করতে হবে। আপনার পছন্দকৃত নামটি পূর্বে বরাদ্দ দেয়া না থাকলে আপনি ঐ নামে লাইসেন্স পাবেন। আবেদন ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে তার সাথে ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, দোকান বা অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্রের কপি ও ভাড়ার রশিদ অথবা ব্যবসা বা দোকান নিজস্ব জায়গায় হলে হোল্ডিংস ট্যাক্স পরিশোধের রশিদসহ আঞ্চলিক প্রধান কর কর্মকর্তা (ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে) বরাবর আবেদন করতে হবে। পরবর্তীতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে এবং নির্দিষ্ট লাইসেন্স ফি পরিশোধ সাপেক্ষে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। সাধারনভাবে ট্রেড লাইসেন্স পেতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগে, আবার অনেক ক্ষেত্রে সরেজমিনে পরিদর্শনের প্রয়োজন হলে ৭ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ[সম্পাদনা]

ট্রেড লাইসেন্স সাধারনত সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইস্যু করা হয়ে থাকে। ঢাকায় আবেদনের জন্য কর্তৃপক্ষ নির্বাচন একটু জটিল প্রক্রিয়া। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুটি অংশে বিভক্ত। একটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অপরটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন আবার পাঁচটি আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি যে অঞ্চলে পড়েছে, ঐ অঞ্চলের আঞ্চলিক কর্মকর্তার অফিসে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্সের ক্যাটাগরি এবং ফি[সম্পাদনা]

ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ক্যাটাগরি নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে, ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরি নির্বাচনের জন্য ট্রেড লাইসেন্স গেজেট ২০১৬ তে উল্লেখিত ক্যাটাগরি থেকে পছন্দমতো ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। অপরদিকে, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে, স্থানীয় অফিস থেকে ক্যাটাগরি তালিকা সংগ্রহ করে তা থেকে পছন্দমতো ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের ফি গেজেট অনুসারে নির্ধারিত হবে অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভার ক্ষেত্রে এটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে থাকে। ফি এর সাথে ১৫% ভ্যাট, সাইনবোর্ড চার্জ এবং লাইসেন্স বই এর মূল্য যোগ হবে।

ট্রেড লাইসেন্স করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র[সম্পাদনা]

  • ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, অফিস বা দোকান নিজস্ব জায়গায় হলে ইউটিলিটি বিল এবং হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ এবং ভাড়া হলে অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের কপি
  • পার্টনারশিপ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে, ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে পার্টনারশিপ চুক্তিপত্র
  • লিমিটেড কোম্পানি হলে, মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস এবং সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন
  • ফ্যাক্টরি বা কারখানার ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে, প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি বা কারখানার পার্শ্ববর্তী স্থান ও স্থাপনার নকশা এবং ওই স্থাপনার মালিকের অনাপত্তিপত্র
  • শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, উপরে উল্লেখিত কাগজপত্রের সাথে পরিবেশের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র এবং ফ্যাক্টরি বা কারখানার পার্শ্ববর্তী স্থাপনা বা স্থানের সম্পূর্ণ বিবরণ এবং নকশা
  • সিএনজি স্টেশন অথবা কোন দাহ্য পদার্থের ব্যবসার ক্ষেত্রে, ফায়ার সার্ভিসের ছারপত্র, বিস্ফোরক সনদ এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র
  • প্রাইভেট হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতিপত্র
  • ছাপাখানা অথবা আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনারের অনুমতিপত্র
  • রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে মানবসম্পদ রফতানি অধিদপ্তর প্রদত্ত লাইসেন্স
  • অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্ষেত্রে অস্ত্রের লাইসেন্স
  • ওষুধ অথবা মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে ড্রাগ লাইসেন্স
  • ট্রাভেলিং এজেন্সির ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম[সম্পাদনা]

নতুন ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করার ক্ষেত্রে সময়সীমা হয় সাধারনত ১ বছর। তবে যদি ট্রেড লাইসেন্স আগেই ইস্যু করা থাকে, সেক্ষেত্রে নবায়ন করার সময় এটিকে সর্বোচ্চ ৫ বছর মেয়াদ অব্ধি নবায়ন করা যেতে পারে। ট্রেন্ড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ৩ মাসের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা বাধ্যতামূলক। যদি ৩ মাস পরেও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা না হয় সেক্ষেত্রে সরকারি আইন অনুযায়ী শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা অত জটিল কিছু না। তাই আইন মেনে সময়ের আগেই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা উচিত। যেভাবে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা যায়ঃ

ধাপ-১ঃ ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ যদি শেষ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে সেই লাইসেন্সটি নিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে নিযুক্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

ধাপ-২ঃ লাইসেন্স নবায়ন করার সময় একটি নির্দিস্ট ফি প্রদান করতে হয়। লাইসেন্স তৈরির সময় যে ফি লেগেছিলো প্রত্যেকবার নবায়ন করার সময় একই পরিমানে ফি প্রদান করতে হয়। লাইসেন্স নবায়ন করার ক্ষেত্রে সেই ক্যাটাগরি অনুযায়ী লাইসেন্সের ফি ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

ধাপ-৩ঃ লাইসেন্স ফি প্রদানের পর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন হবে। সেই নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স টি সংগ্রহ করতে হবে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]