ফোরকানিয়া মাদ্রাসা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষার প্রাথমিক রুপ। এসকল মাদ্রাসায় ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান করা হয়। ফোরকানিয়া মাদ্রাসাকে বাংলাদেশসহ বাঙালী সম্প্রদায়ে নূরানি মক্তব বা নূরানি মাদ্রাসা বলেও অভিহিত করা হয়। ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় কুরআন তিলাওয়াত শেখা, আরবি বর্ণমালা শেখা, নামাজের ফরজ, ওয়াজিব শেখা, নামাজের নিয়মাবলী শেখা প্রভৃতি ইসলামের মৌলিক জ্ঞানের চর্চা প্রদান করা হয়। এই ধরনের মাদ্রাসাকে ইসলামি শিক্ষার অ-প্রাতিষ্ঠানিক রুপ মক্তবের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ফোরকানিয়া মাদ্রাসাকে ইসলামের পুরোপুরি প্রাথমিক শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলা হয়ে থাকে।

ফোরকানিয়া শব্দের মূল শব্দ ফুরকান যার অর্থ বিশিষ্ট, অনবদ্য বা প্রামাণিক। পবিত্র আল কুরআনের আরেক নাম আল ফুরকান বলা হয়ে থাকে, কারণ কুরআন শরীফ সুস্পষ্টভাবে মিথ্যা থেকে সত্যকে পৃথক করে থাকে। ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় এই সত্য-মিথ্যা পার্থক্যকারী আল-কুরআনের আলোকে ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান মুসলিম শিশুদের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। প্রাথমিক স্তরের যেসব মাদ্রাসায় কুরআন পাঠ ও আবৃত্তি শেখানো হয় সেগুলিকে বলা হয় দারসে কুরআন। সাধারণত স্থানীয় কোন মসজিদে বা বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত কোন স্থানীয় মাদ্রাসাগুলো ছোটদের প্রাথমিক পর্যায়ের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা মোয়াজ্জিন বা কোন ইসলামি শিক্ষিত ব্যক্তি বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে এই ধরনের মাদ্রাসায় শিক্ষা বিতরণ করে থাকে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ইসলামি প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিলো, নবী মুহাম্মাদ ইসলাম প্রচারের সাথে সাথেই। ফোরকানিয়া মাদ্রাসা তখন মসজিদের সাথে সংযুক্ত থেকে শিশুদের শিক্ষা প্রদান করতো।[১] সাধারণত এসব মাদ্রাসার ব্যয় নির্বাহের স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মুসলিম ব্যক্তিরাই করতো। ১০ শতকে সুন্নি ইসলামের আইন বিশেষজ্ঞ ইবনে হাজার আল হায়তামি মক্তব ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।[২][৩]

১১ শতকের দিকে মুসলিম দার্শনিক ইবনে সিনা তার একটি বইয়ে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে কর্মরত শিক্ষকদের দিক নির্দেশনার জন্য শিশুদের প্রশিক্ষণ ও বেড়ে তোলায় শিক্ষকের ভূমিকা নামে একটি অধ্যায় রচনা করেন। তিনি ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় কি ধরনের শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে, সেসবের একটি নির্দেশনা দিয়েছিলো। তিনি এর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা নামে দুটি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন।[১] প্রাথমিক শিক্ষায় ইসলামের প্রাথমিক মৌখিক জ্ঞান, কুরআন-হাদিসের প্রাথমিক শিক্ষা, আরবি ভাষার প্রাথমিক ধারণা, ইসলামের প্রাথমিক দাবীগুলোর সাথে পরিচিতি ঘটনো প্রভৃতি বিষয়াদি শেখানো হয়।[১] আর মাধ্যমিক স্তরে ১৪ বছর পর্যন্ত ইসলামি সাহিত্যের ধারণা, ইসলামি নীতিবিজ্ঞানের ধারণা, কুরআন ও হাদিসের মূলনীতি আলোচনা, ইসলামি আদব ও আচার ব্যবহার প্রভৃতিসহ নানা বিষয় শেখানো হয়। এবং এই স্তরে শিক্ষার্থীদের এমন একটি বিষয়ের প্রতি ধারণা দেওয়া হয়, যাতে সে তার ভবিষ্যত কর্মজীবনের জন্য পথ খুজে নিতে পারে।[৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. M. S. Asimov, Clifford Edmund Bosworth (১৯৯৯), The Age of Achievement: Vol 4, Motilal Banarsidass, পৃষ্ঠা 33–4, আইএসবিএন 81-208-1596-3 
  2. Francis Robinson (২০০৮), "Review: Law and Education in Medieval Islam: Studies in Memory of Professor George Makdisi, Edited by Joseph E. Lowry, Devin J. Stewart and Shawkat M. Toorawa", Journal of the Royal Asiatic Society, Cambridge University Press, 18 (01): 98–100, ডিওআই:10.1017/S1356186307007912 
  3. R. Kevin Jaques (২০০৬), "Review: Law and Education in Medieval Islam: Studies in Memory of Professor George Makdisi, Edited by Joseph E. Lowry, Devin J. Stewart and Shawkat M. Toorawa", Journal of Islamic Studies, Oxford University Press, 17 (3): 359–62, ডিওআই:10.1093/jis/etl027 
  4. Edmund Burke (জুন ২০০৯), "Islam at the Center: Technological Complexes and the Roots of Modernity", Journal of World History, University of Hawaii Press, 20 (2): 165–186 [178–82], ডিওআই:10.1353/jwh.0.0045