পারধী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাহুল্য জীবনে অচেনা আঁধার,বাহিরে শুধু চাকাচিকের বাহাররহস্যের অন্তরালে।

পারধী ভারতের একটি হিন্দু উপজাতি। এই উপজাতির বেশিরভাগ লোক মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশে বাস করেন তবে গুজরাট এবং অন্ধ্র প্রদেশেও এদের অল্প সংখ্যক বসতি দেখা যায়। পারধী শব্দটি মারাঠি (রাজ্য ভাষা) শব্দ পারধ থেকে এসেছে যার অর্থ শিকার। সংস্কৃত শব্দ ' পাপর্ধি ' যার অর্থ শিকার করা বা শিকার করা খেলা, তার সাথেও পারধী শব্দের সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হয়। ভারতের কিছু অংশে পারধীরা মেওয়ারেস নামে পরিচিত। তাদের আরও বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন অ্যাডভিচিঞ্চার, ফাঁস পারধী, ফাঁসে পারধী, ল্যাঙ্গোলি পারধী, বাহেলিয়া বা বহেলিয়া, চিতা পারধী, শিকারি, তকঙ্কর, টাকিয়া পারধী ইত্যাদি। পারধী উপজাতি ভাঘরি পারধী এবং ফেজ পারধীর মতো দলে বিভক্ত।।এরা আবার পাল পারধী, গাভ পারধী, তকাঙ্কর, তকারির মতো উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত। এদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত উপাধিগুলির মধ্যে রয়েছে চৌহান (চভান), রাঠোড় এবং সোলাঙ্কে। [১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পারধীরা রাজপুতদের বংশধর। পারধীদের রাজপুত উতসের তথ্য নিশ্চিত করা যায় তাদের ব্যবহৃত রাজপুত বংশের নাম এবং তাদের ব্যবহৃত রাজস্থানী উপভাষা থেকে। তাদের নাম সাধারণত 'সিংহ প্রত্যয় দিয়ে শেষ হয়। পারধীদের সাধারণ উপাধি কিছু আছে যেমন সালুনখে, রাঠোড়, সিন্দিয়া, চৌহান (চবন)। তারা পাওয়ার, শিন্দে এবং দাভাদে-এর মতো মারাঠা উপাধিও গ্রহণ করেছে। এই সম্প্রদায়ের উদ্ভব মূলত রাজস্থান থেকে। রাজস্থান থেকে তারা গুজরাট হয়ে মহারাষ্ট্র ও অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পরেছে ও বসতি স্থাপন করেছেন।[২]

বিস্তার[সম্পাদনা]

১৯০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ভারতে পারধীদের মোট জনসংখ্যার ছিল ১২,২১৪ যার মধ্যে ৬,৩২০ জন পুরুষ এবং ৫,৮৯৪ জন মহিলা। একই সময়ে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে ভোপাল, রাইসেন এবং সেহোরে পারধী লোকেদের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৮৩১ জন। সেই রাজ্যে বাহেলিয়া ও চিতারাও পারধীদের সাথে একই শ্রেনীভুক্ত ছিলেন। ১৯৮১ সালের আদমশুমারি অনুসারে তাদের মোট সংখ্যা দাড়ায় ৮,০৬৬। গুজরাটে ১৯৮১ সালের আদমশুমারি অনুসারে সেই রাজ্যে পারধী জনসংখ্যা ৮১৪ জন। মহারাষ্ট্রে পারধী জনসংখ্যা হল ৯৫,১১৫ জন (শুমারি তথ্য, ১৯৮১)। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে মহারাষ্ট্রে পারধীদের মোট জনসংখ্যা দাড়ায় ১৫৯,৮৭৫ জন। তারা প্রধানত অমরাবতী (২০,৫৬৮) আকোলা (১৭,৫৭৮) বুলধানা (১৬,৪২৮) জলগাঁও (১৬,৮৪৯) ইয়াভাতমাল (৮,১২৯) ওসমানাবাদ (৯,৯৫৯), পুনে (৭,২৩০) এবং অন্যান্য জেলাগুলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে। মুম্বাইয়ের পারধী জনসংখ্যার তথ্য আদমশুমারির নথিতে সঠিকভাবে পাওয়া যায় না।[২]

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

পারধীদের সংস্কৃতির সাথে রাজপুত সংস্কৃতির খুব মিল। তাদের সংস্কৃতি গুজরাটি এবং রাজস্থানী সংস্কৃতির মিশ্রণ। তারা রাজপুত ও গুজরাতি রীতি অনুসরনে বিয়ের মিছিল রাখে। তারা হিন্দু ধর্মের শাক্ত প্রথা ও রীতিনীতির অনুসারী এবং রাজপুতদের মত তাদের কিছু কুলদেবী আছে। তারা মৌলি মাতা, কালিকা মাতা, সপ্তশ্রুঙ্গী মাতা, ভাদেখান মাতা এবং খোডিয়ার মাতাকে তাদের কুলদেবী হিসেবে পূজা করে। দশেরা তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। তারা কুলদেবীদের খুশি করার জন্য একটি ভেড়া বা ছাগল বলি দেয় যা পরে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই পশু বলি রাজপুত সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যাইহোক, রাজপুতদের তুলনায় পারধীদের পশু বলির পদ্ধতি ভিন্ন। রাজপুতরা বলির ঝাটকা পদ্ধতি ব্যবহার করে যখন পারধীরা হালাল পদ্ধতির মতো একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে, যা সাধারণত মুসলমানদের সাথে যুক্ত।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. History of Paradhis ambedkar.org
  2. Ganga, Shodh। Ethnography of Pardhi adivasis (পিডিএফ) (গবেষণাপত্র)। Chapter III।