ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
জন্ম(১৮৯৪-১০-০৫)৫ অক্টোবর ১৮৯৪
মৃত্যু৫ ডিসেম্বর ১৯৬১(১৯৬১-১২-০৫)
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
পেশাভারতীয় অধ্যাপক
পরিচিতির কারণসমাজবিজ্ঞানী
দাম্পত্য সঙ্গীছায়া মুখোপাধ্যায়
সন্তানকুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
পিতা-মাতাভূপতিনাথ মুখোপাধ্যায়(পিতা)
এলোকেশী দেবী (মাতা)

ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (৫ অক্টোবর, ১৮৯৪ – ৫ ডিসেম্বর, ১৯৬১), ডি পি মুখার্জি নামে পরিচিত, ভারতীয় অধ্যাপক ও সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন। সমাজতত্ত্ব ও মার্কসবাদ বিষয়ের উপর কাজে ও বক্তৃতায়  দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করেন। সাহিত্য সমালোচনায় তিনি 'মার্কসীয় নন্দনতাত্ত্বিকদের পুরোধা' অভিধায় পরিচিত ছিলেন।[১]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

ধূর্জটিপ্রসাদের জন্ম বৃটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির হুগলি জেলার চাতরায়। পিতার নাম ভূপতিনাথ মুখোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম এলোকেশী দেবী। তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভাটপাড়ার কাছে নারায়ণপুর গ্রামে। পিতা বারাসতের আইনজীবী ছিলেন। তাই ধূর্জটিপ্রসাদের শৈশবের পড়াশোনা বারাসত গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে। এখান থেকেই তিনি ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পাশ করেন।[২]

শিক্ষা এবং কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ধূর্জটিপ্রসাদ রিপন কলেজ (বর্তমানের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ইতিহাসে এম.এ এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিতে এম.এ পাশের পর কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। নতুন  লক্ষৌ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি অর্থনীতির ও সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন এবং তিন দশকের (১৯২২ - ৫৪) বেশি সময় অধ্যাপনা করেন। পরে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.জাকির হোসেনের আহ্বানে তিনি  আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দেন।

ধূর্জটিপ্রসাদ তার সময়কালে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম ছিলেন। পূরণচাঁদ জোশী, ত্রিলোকী নাথ মদন, অশোক মিত্র অওধ কিশোর সরন, ভি বি সিং প্রমুখ তার ছাত্রদের জীবনে ও ভাবনায় আদর্শ হতে পেরেছিলেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতি বিষয়ক এক সাপ্তাহিকের প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে তিনি "লাইট উইদাউট হিট" বা 'তাপ ব্যতীত আলো' শীর্ষক এক প্রবন্ধ লেখেন।[৩]

১৯৩৭-৪০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে গোবিন্দ বল্লভ পন্থ নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ সরকারের ডিরেক্টর অফ ইনফরমেশন পদে কাজ করেন এবং ব্যুরো অফ ইকোনমিক্স এন্ড স্ট্যাটিস্টিক্স গঠন করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি এক বছরের জন্য যুক্তপ্রদেশ সরকারের লেবার এনকোয়ারি কমিটির সদস্য হন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইকনমিক ডেলিগেট হয়ে সোভিয়েত রাশিয়া যান। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি নেদারল্যান্ডসের ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সে সমাজতত্ত্ব বিভাগে ভিজিটিং প্রফেসরপদে কাজ করার জন্য আমন্ত্রিত হন।  ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে অক্টোবর হতে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই মে তিনি সেখানে "সোসিওলজি অফ কালচার" (সংস্কৃতির সমাজবিজ্ঞান) বিষয়ে বক্তৃতা দেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে বান্দুং সম্মেলনে যোগ দেন এবং তিনদিন এশিয়ার দেশগুলির ইকনমিক কো-অপারেশন সেমিনারে বক্তৃতা করেন।

ধূর্জটিপ্রসাদ সমাজতত্ত্ব ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।[৪] ধূর্জটিপ্রসাদের সাহিত্য, সঙ্গীত ও কলা বিষয়ে গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন ঔপন্যাসিক প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচকও ছিলেন।

তিনি রাধাকমল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অল ইন্ডিয়া সোশিওলজিক্যাল কনফারেন্স গঠন করেন এবং এর প্রথম সম্মেলন হয় ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ধূর্জটিপ্রসাদ গলায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে চিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ড যান। উপশম হলেও তার কণ্ঠস্বরের বিশেষ ক্ষতি হয়। তা সত্বেও, তিনি ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে থাকেন এবং অবসরের পর দেরাদুনে চলে যান। শেষে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ৫ ই ডিসেম্বর কলকাতায় প্রয়াত হন।

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

মুখার্জি ঊনিশটি বই লিখেছিলেন। তারমধ্যে দশটি বাংলায় এবং নয়টি ইংরেজিতে। সেগুলি হল:

বাংলা গ্রন্থ
  • সুর ও সঙ্গতি (১৯৩৫)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে সহ-রচিত।
  • অন্তঃশীলা (১৯৩৫)
  • আবর্ত (১৯৩৭)
  • মোহানা (১৯৩৪)
  • আমরা ও তাঁহারা (১৯৩১)
  • মনে এলো
  • ঝিলিমিলি
  • চিন্তসি (১৯৩৪)
  • কথা ও সুর (১৯৩৮)
ইংরেজি গ্রন্থ
  • Basic Concepts in Sociology (সমাজবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণাসমূহ, ১৯৩২)
  • Personality and the Social Sciences (ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক বিজ্ঞান, ১৯২৪)
  • Indian Music: An Introducton (ভারতীয় সঙ্গীত: পরিচিতি, ১৯৪৫)
  • Modern Indian Culture: A Sociological Study (আধুনিক ভারতীয় সংস্কৃতি: একটি সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা, ১৯৪২)
  • Problems of Indian Youth (ভারতীয় তরুণদের সমস্যা, ১৯৪২)
  • Views and Counterviews (মতামত এবং পাল্টা মতামত, ১৯৪৬)
  • On Indian History (ভারতের ইতিহাসে, ১৯৪৪)
  • Diversities (বৈচিত্র্য)
  • Realist (বাস্তববাদী)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. চক্রবর্তী, অঞ্জন (মার্চ ১, ২০১৪)। "The Sociological Imagination of Dhurjati Prasad Mukerji: Beyond Hermeneutics and Positivism": 63–74। জেস্টোর 24479178 – JSTOR-এর মাধ্যমে। 
  2. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৩২০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  3. পুলিন বি নায়ক, Economic and Political Weekly (অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সাপ্তাহিক), খণ্ড ৫৫, সংখ্যা নং ৩২-৩৩, ০৮ আগস্ট ২০২০
  4. "প্রথম ডিপি মুখার্জী স্মৃতি লেকচার, মদন, টিএন (১৯৭৭) "Dialectic of Tradition and Modernity in the Sociology of D. P. Mukerji", সোসিওলজিক্যাল বুলেটিন, খণ্ড ২৬, নং ২, ইনস্টিটিউট অফ ইকোনমিক গ্রোথ, দিল্লি।" (পিডিএফ)। নভেম্বর ২০, ২০২০।