তাওহাকি ভ্যালিস

১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে গৃহীত গ্যালিলিও আলোকচিত্রে তাওহাকি ভ্যালিস। উপত্যকাটি ছবির ডানদিকে মোটামুটি উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত। উত্তর দিকটি উপরে। বাঁদিক থেকে সূর্যালোক এসে ভূখণ্ডটিকে উজ্জ্বল করেছে।

তাওহাকি ভ্যালিস (ইংরেজি: Tawhaki Vallis) হল বৃহস্পতির প্রাকৃতিক উপগ্রহ আইয়োর একটি অগভীর উপত্যকা। আইয়োর অগ্রণী গোলার্ধে পশ্চিম মিডিয়া রিজিওতে বিষুবীয় সমভূমি অঞ্চলে ০.৫° উত্তর ৭২.৮° পশ্চিম / 0.5; -72.8 স্থানাংকে এটি অবস্থিত। উপত্যকাটির দৈর্ঘ্য ১৯০ কিলোমিটার, প্রস্থ ০.৫ থেকে ৬ কিলোমিটার এবং গভীরতা ৪০ থেকে ৬৫ মিটার। অগভীরতা এবং ঔজ্জ্বল্য বা বর্ণ বৈচিত্র্যের অভাবের কারণে তাওহাকি ভ্যালিসকে ১৯৯৯ সালের ২৬ নভেম্বর আইয়োর মুখোমুখি হওয়ার পর গ্যালিলিও মহাকাশযান থেকে কেবল একটি একক, উচ্চ ব্যাপনস্থল-সম্বন্ধীয় রেজোলিউশন পর্যবেক্ষণেই দেখা গিয়েছিল। উপত্যকাটির উত্তর ও দক্ষিণ সীমা পর্যবেক্ষণের উত্তর উপান্ত ও গোধূলি টার্মিনেটর দ্বারা বিচ্ছিন্ন। তাই পরিমাপকৃত দৈর্ঘ্যের তুলনায় তাওহাকির দৈর্ঘ্য বেশি। ২০০৬ সালে নিকটবর্তী আগ্নেয়গিরি তাওহাকি প্যাটারা ও মাওরি বজ্রপাতের দেবতা তাওহাকির নামানুসারে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন এই উপত্যকাটির নামকরণ করে।

তাওহাকি ভ্যালিসের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যে এটি সম্ভবত একটি লাভা প্রণালী, যা তাপীয় ক্ষয়সাধনের মাধ্যমে মিডিয়া রিজিও সমভূমিতে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। প্রণালীটি হল ব্রেইডেড, প্রণালীর মধ্যভাগে কয়েকটি উঁচু দ্বীপও বিদ্যমান। প্রণালীর প্রস্থের পরিবর্তনের কারণ সম্ভবত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য অথবা সমভূমির ভূত্বকের নিম্নাংশের গুণাবলি। প্রণালীর তলদেশ যেহেতু পার্শ্ববর্তী সমভূমির থেকে নিচু, সেই হেতু প্রণালীর মধ্য দিয়ে একবার প্রবাহিত হওয়া লাভা শীতলায়িত লাভা থেকে গঠিত হওয়ার পরিবর্তে তাপীয় ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। প্রণালীর দুই ধারে উঁচু পাড়ের অনুপস্থিতির মাধ্যমেই তাওহাকি ভ্যালিস যে একটি লাভা প্রবাহের পরিবর্তে একটি লাভা প্রণালী এই তত্ত্ব সমর্থিত হয়। এর জন্য প্রবাহিত লাভাকে ২০০-কিলোমিটার দীর্ঘ প্রণালীতে বিকিরণমূলক ও পরিবহণমূলক শীতলায়ন থেকে অন্তরিত হতে হয়। যদিও প্রণালীটির চ্যাপ্টার তলদেশ এবং নিকটে জ্বালামুখ গহ্বরমালার অনুপস্থিতিও তাওহাকি ভ্যালিসকে চাঁদের হেডলি রিলের মতো একটি পতিত লাভা টিউব হওয়া থেকে নিবারিত করে। লাভার উপাদান ও ভূত্বকের নিম্নাংশের ভিত্তিতে তাওহাকি ভ্যালিস সম্ভবত ৪০০-৬০০ দিনের একটি পর্যায়ে (অতি-ম্যাফিক সমভূমির উপর প্রবাহিত অতি-ম্যাফিক লাভার ক্ষেত্রে), ১০-৬০ দিনের একটি পর্যায়ে (সালফার সমভূমির উপর প্রবাহিত সালফার লাভার ক্ষেত্রে) অথবা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের একটি পর্যায়ে গঠিত হয়, যখন উচ্চ-তাপমাত্রার লাভা ভূত্বকের নিম্নাংশে অতিকতর শীতলতর বিন্দুতে প্রবাহিত হয় (যেমন যখন প্রধানত সালফার গঠিত সমভূমির উপর অতি-ম্যাফিক লাভা প্রবাহিত হয়)। এতটা দীর্ঘপথ প্রবাহিত হওয়ার জন্য লাভার তরল অবস্থায় থাকার প্রয়োজনীয়তা এবং এই ধরনের প্রণালী গঠনের জন্য অগ্ন্যুৎপাতের নির্দিষ্ট সময়কালের কথা চিন্তা করে বলা যায়, শেষোক্ত সম্ভাবনাটিরই (একটি শীতলতর গলন তাপমাত্রায় সালফারের উপর উচ্চ-তাপমাত্রার লাভা) সম্ভাব্যতা অধিক।

তাওহাকি ভ্যালিসের অনুরূপ প্রণালী জামামা ও এমাকং প্যাটারার কাছেও পর্যবেক্ষিত হয়েছে। এই প্রণালীগুলি স্পষ্টতই সংশ্লিষ্ট আগ্নেয়গিরিগুলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু প্রাপ্ত ছবিগুলির ভিত্তিতে এ কথা জানা যায় না যে, তাওহাকি প্যাটারায় কোনও অগ্ন্যুৎপাত তাওহাকি ভ্যালিসের উৎপত্তির জন্য দায়ী কিনা।