ডিসিপ্লিনা আরকানি
ডিসিপ্লিনা আরকানি (Disciplina arcani)(এটি একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ "গোপনীয়তার নিয়মানুবর্তিতা" বা "আরকানের নিয়মানুবর্তিতা") হল প্রারম্ভিক খ্রিস্টধর্মের ৪র্থ ও ৫ম শতকের একটি রীতি, যেখানে খ্রিস্টধর্মের অধিকতর ঘনিষ্ঠ মতবাদ্গুলোকে যত্নের সহিত অ-খ্রিস্টান, এমনকি অনেক খ্রিস্টীয় পথে চলা মানুষের থেকেও সরিয়ে রাখা হয়েছিল যাতে তারা ধীরে ধীরে খ্রিস্টধর্মের শিক্ষাগুলো গ্রহণ করতে পারে এবং সরল ভুল বোঝাবুঝির কারণে ধর্মবিরুদ্ধ কাজ না করে বসে। (তাই, ক্যাটেচুমেনদেরকে খ্রিস্টীয় মতবাদগুলোতে প্রবেশাধিকারদেয়া হয়নি। ক্যাটেচুমেন হল তারা যারা খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে কিন্তু তাদের তখনও অভিসিঞ্চিত বা বাপটাইজড করা হয়নি)।[১]
ইতিহাস[সম্পাদনা]
খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে খ্রিস্টানরা নির্দ্বিধায় পৌত্তলিক গোষ্ঠীর সাথে অভিসিঞ্চন্ন এবং ইউক্যারিস্টের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করত। উদাহরণস্বরূপ জাস্টিন মার্টার মুক্তভাবে পৌত্তলিক শ্রোতাদেরকে ইউচারিস্টের আচার সম্পর্কে বলেছেন। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে ডিসিপ্লিনা আরকানির নিয়মের উদ্ভব ঘটে। কেউ কেউ টার্টুলিয়ানকে এই অনুশীলনের প্রথম দিকের সাক্ষী হিসাবে প্রস্তাব দিয়েছেন, যদিও সাম্প্রতিক বিদ্বানরা মনে করেন টারটুলিয়ান মনে করতেন খৃষ্টান শিক্ষাগুলি প্রকাশ্যে এবং জনসমক্ষে শেখানো উচিত।[২] পরে, তৃতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, আলেকজান্দ্রিয়ার ওরিজেন তার কনট্রা সেলসাম গ্রন্থে পৌত্তলিক দার্শনিক সেলসাসের খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনার জবাব বা কৈফিয়ত দিয়েছিলেন। সেলসাস খ্রিস্টধর্মকে গ্রেকো-রোমান রহস্যবাদের মতো গোপনীয়তার ধর্ম বলে অভিযুক্ত করেছিলেন এবং অরিজেন জবাব দিয়েছিলেন যে, খ্রিস্ট ধর্মের বিশিষ্ট মতবাদগুলি, যেমন কুমারী থেকে জন্ম, ক্রুশবিদ্ধকরণ, পুনরুত্থান, দুষ্টদের শাস্তি এবং ন্যায়বানদের পুরস্কার সমগ্র বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত, কিন্তু সামান্য কিছু বিষয় আছে যেগুলোকে অবশ্যই নিজেদের মধ্যেই গোপন রাখতে হবে। ওরিজেনের সময়ের কাছাকাছি সময়ে রোমের হিপোলিটাস অভিসিঞ্চনের অনুষ্ঠানের নিয়ে তার বিবরণের শেষে লিখেছিলেন:
যদি কোনও কিছুর ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার হয়, তাহলে যারা অভিসিঞ্চিত হয়েছে বিশপ তাদের কাছে গোপনে ব্যাখ্যা করবেন। যারা খ্রিস্টান নয় তাদেরকে অভিসিঞ্চিত করার আগ পর্যন্ত বলা হয়না। এটি সেই সাদা পাথর, যার বিষয়ে জন বলেছিলেন; "একটি নতুন নাম এর উপরে লেখা হয়েছে যা সেই পাথরটির গ্রহীতা ছাড়া আর কেউ জানে না। ( এপি. ট্রেড. ২৩:১৪ বা Ap. Trad. 23:14)
চতুর্থ শতাব্দীর এবং পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমার্ধের মধ্যে, ডিসিপ্লিনা আরকানি এর অনুশীলন সর্বজনীন হয়ে উঠেছিল এবং রোম ( অ্যামব্রোজের লেখায়), জেরুজালেম ( সাইরিল এবং এজেরিয়ার লেখায়), মিশর, কনস্ট্যান্টিনোপল, কাপ্পাডোকিয়া, উত্তর আফ্রিকা প্রভৃতি স্থানে এটি সত্যায়িত হয়েছিল। প্রমাণ রয়েছে যে খ্রিস্টানরা ধর্মীয় সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তুগুলো বজায় রাখতে সচেতন ছিলেন, যাদের মধ্যে একটি ছিল লিটারজিকাল ইউক্যারিস্ট বা খ্রিস্টের নৈশভোজনের অনুষ্ঠানের পূর্বে গীর্জার যেসব সদস্যের অভিসিঞ্চন হয়নি তাদেরকে সরিয়ে দেয়া। সুতরাং, গির্জায় প্রচলিত বিধিবদ্ধ উপাসনা ও অনুষ্ঠান বা লিটার্জিতে অভিসিঞ্চিত খ্রিস্টান এবং ক্যাটেচুমেনদের পৃথক করা হত। বাইজান্টাইন লিটার্জি বা গির্জার অনুষ্ঠানে ডিয়াকন প্রায়ই "দরজা! দরজা!" বলে চিৎকার করতেন, যার অর্থ হচ্ছে তিনি বলতে চাচ্ছেন যাদের অভিসিঞ্চন হয়নি তারা যাতে গির্জার ক্রিয়াকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে না পারে। কিছু বিষয় নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে একটি হতে পারে, বাইরের লোকেরা যাতে খ্রিস্টীয় আচারসমূহকে ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করার জন্য ব্যবহার করতে না পারা, বা ঘৃণা থেকে গুরুত্বপূর্ণ আচারগুলোকে ব্যবহার না করা। তাছাড়া তারা এও ভেবেছিল যে, খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে শেখার আগে অভিসিঞ্চিত হওয়া দরকার, যাতে খ্রিস্টীয় শিক্ষা অধিকতর কার্যকরী এবং সফল হয় [১]
আরো দেখুন[সম্পাদনা]
- দেবত্বারোপন ( থিওসিস )
- গুহ্য খ্রিস্টধর্ম
- গূঢ়তত্ত্ববাদ
- অতিন্দ্রীয়বাদী ধর্মতত্ত্ব
- পিতৃতত্ত্ব
- পবিত্র রহস্যবাদ
- খ্রিস্টীয় অনুধ্যান
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ Yarnold 1994।
- ↑ Bremmer 2014।
গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]
- Bremmer, Jan (২০১৪)। Initiation into the Mysteries of the Ancient World। Walter de Gruyter। আইএসবিএন 9783110376999।
- Yarnold, Edward (১৯৯৪)। The Awe-inspiring Rites of Initiation: The Origins of the RCIA। Liturgical Press। আইএসবিএন 9780814622810।
External links[সম্পাদনা]
- The Discipline of the Arcane by Tommaso Palamidessi
- The Discipline of the Secret The Catholic Encyclopedia