ট্রয়ের ঘোড়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
Trojan horse after the Vergilius Vaticanus.
Detail from The Procession of the Trojan Horse in Troy by Domenico Tiepolo (1773), inspired by Virgil's ঈনীড

ট্রয়ের ঘোড়া বা ট্রয়ের অশ্ব হচ্ছে ট্রয় বা ইলিয়ন নগরের পতনের বিখ্যাত গ্রিক উপকথার সংগে জড়িত কাঠের ঘোড়া। কথিত আছে যে, গ্রিকরা একটি অতিকায় কাঠের ঘোড়া তৈরি করে তার ভিতরে সৈনিকদের লুকিয়ে রেখে ঘোড়াটা ট্রয় নগরের কাছে এনে দাঁড় করায়। ট্রয়বাসীরা ঘোড়াটাকে শহরের ভিতরে নিয়ে আসে; রাত্রে সৈন্যরা ঘোড়ার পেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে নগরের দরজা খুলে দেয় এবং গ্রিকরা শহরে প্রবেশ করে তা দখল করে।

সাহিত্যে বিবরণ[সম্পাদনা]

Sinon is brought to Priam, from folio 101r of the Roman Vergil

এই বিরাট ঘোড়াটি তিন দিনে তৈরি করেছিলেন এপিয়াস নামের একজন দক্ষ ছুতার। ঘোড়াটি ফেলে রেখে পলায়নের ভান করে গ্রিকরা জাহাজে করে ওডিসিয়ুসের পরিকল্পনা মতে একজন লোক রেখে দেয়া হয়, যে ট্রয়বাসীদের বোঝায় যে, এই ঘোড়াটি তাদের অপরাজয়ের স্মারক হিসাবে উপহার দেয়া হয়েছে। ঘোড়ার গায়ে খোদাই করে লেখা হয়, "For their return home, the Greeks dedicate this offering to Athena"। এরপর গ্রিকরা তাদের তাবুগুলোকে পুড়িয়ে ফেলে এবং নিকটবর্তী টেনিডোস দ্বীপে রাতের আঁধারে চলে যায়। সাইনন নামে এক গ্রিক সৈন্য আলো জ্বালিয়ে তাদের সংকেত দেবার জন্য থাকে। [১] ওডিসিয়ুস সাইননকে শিখিয়ে পড়িয়ে রেখে গেছে। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলও রাজা প্রায়ামের কাছে। ওডিসিয়ুসের শেখানো গল্প গড়গড় করে সে বলে গেল। আরও বলল আমাকে বলি দেয়ার সমস্ত ব্যবস্থাই পাকা হয়ে গেছিল, কিন্তু ঐ রাত্রে আমি শিবির থেকে পালাতে সমর্থ হই, এবং জংগলের ভেতর পালিয়ে থাকি। গ্রিকরা চলে যাবার পর আমি বেরিয়ে আসি। সাইননের বানানো কাহিনী সকলে সরলমনে বিশ্বাস করল। রাজা তাকে অভয় দিলেন। কৃতজ্ঞতার ভান করে সাইনন গল্পের দ্বিতীয় অংশটি জানাল। সে বলল, "এই কাঠের ঘোড়াটিকে গ্রিকরা রেখে গেছে দেবী এথিনার প্রতি অর্ঘ্যস্বরূপ। তবে এর পেছনে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। তারা চায় ট্রয়বাসীরা এটিকে ধ্বংস করুক যাতে দেবী এথিনা ট্রয়ের উপর ক্রুদ্ধ হন। আর তাছাড়া, নগরীর অভ্যন্তরে যে এথিনার মন্দির সেখানে ঘোড়াটি নিয়ে গেলে দেবী তো গ্রিকদের বদলে ট্রয়বাসীদের প্রতিই অনুগ্রহ দেখাবেন"। এই চতুর গল্পের ঈপ্সিত ফল ফলল সংগে সংগে। আর এভাবেই সফল হলও ওডিসিয়ুসের ধূর্ত কৌশল। দশ বছরের যুদ্ধে যা সম্ভব হয়নি, সেই দুঃসাধ্য সাধন হলও একটি ধাপ্পার মাধ্যমে।[২]

উৎফুল্ল ট্রয়বাসী কাঠের ঘোড়াটিকে টেনে নিয়ে গেল এথিনার মন্দির চত্বর পর্যন্ত। মধ্যরাতে অন্ধকার মন্দির চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা কাঠের ঘোড়ার পেটের দিকে খুলে গেল একটি দরজা। বেরিয়ে এলো পঞ্চাশ জন দুর্ধর্ষ গ্রিকযোদ্ধা, তাদের নেতা মহাবীর ওডিসিয়ুস। তারা পা টিপে টিপে নগরীর মূল ফটকের দ্বার খুলে দিলে বাইরে অপেক্ষমাণ গ্রিকবাহিনী ঢুকে পড়ল ঘুমন্ত নগরীতে। তারা বিভিন্ন ভবনে একসাথে লাগিয়ে দিল আগুন। পরাজিত হলও ট্রয়বাসীরা। একদা ইউরোপ মহাদেশের সবচেয়ে সম্পদশালী নগরী ট্রয় একরাতের মধ্যে পরিণত হলও ধ্বংস স্তুপে। অনাদিকাল ধরে মানুষ স্মরণ করবে ট্রয়ের সেই ভয়াল কালো রাত্রের কথা। সেই রক্তমাখা ট্রয় নগরী থেকে দেবী আফ্রোদিতির সহায়তায় পালিয়ে বেঁচেছিলেন আরেক বীর ঈনিয়াস যিনি পরে নতুন সভ্যতা গড়ে তুলেছিলেন।[২]

চিত্রসমূহ[সম্পাদনা]

ট্রয়ের ঘোড়ার তিনটি ধ্রুপদী চিত্র পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bibliotheca, Epitome, e.5.15
  2. খোন্দকার আশরাফ হোসেন, চিরায়ত পুরান, ফ্রেন্ডস বুক কর্নার, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০০২, পৃষ্ঠা-১৯২-৯৩।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

উইকিমিডিয়া কমন্সে ট্রয়ের ঘোড়া সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।