জেরুসালেম অবরোধ (৫৯৭ খ্রিস্টপূর্ব)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জেরুসালেম অবরোধ
মূল যুদ্ধ: ইহুদি–ব্যাবিলনীয় যুদ্ধ (৬০১–৫৮৭ খ্রিস্টপূর্ব)

নেবুচাদনেজার কালপঞ্জিতে জেরুসালেম অবরোধের উল্লেখ (এবিসি ০৫)
তারিখআনু. ৫৯৭ খ্রিস্টপূর্ব
অবস্থান
ফলাফল ব্যাবিলনীয় বিজয়
ব্যাবিলন জেরুসালেম দখল ও ধ্বংস করে
বিবাদমান পক্ষ
যিহূদা নব্য-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
যিহোয়াকিম  
যিহুদীয়া
দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার
শক্তি
খুব কম অজ্ঞাত
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অনেককে হত্যা করা হয়, বাকিদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়। অজ্ঞাত

জেরুসালেম দখল হল ৫৯৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনের রাজা সম্রাট দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার পরিচালিত একটি সামরিক অভিযান। ৬০৫ খ্রিস্টপূর্বে তিনি ফারাও নিকোকে কারচেমিশের যুদ্ধে পরাজিত করে পরবর্তীকালে যিহূদা রাজ্য দখল করেন। নেবুচাদনেজার কালপঞ্জি অনুসারে যিহূদার রাজা যিহোয়াকিম ব্যাবিলনীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, কিন্তু নেবুচাদনেজার জেরুসালেম দখলে নিয়ে সিদিকিয়কে এর শাসক করেন।

অবরোধ[সম্পাদনা]

জেরুসালেমের ধ্বংসযজ্ঞ এড়াতে, যিহূদার রাজা যিহোয়াকিম নিজের শাসনকালের তৃতীয় বছরে মিশরকে বাদ দিয়ে ব্যাবিলনের কাছে নিজের আনুগত্য প্রদান করেন। তিনি কর হিসেবে জেরুসালেমের রাজস্ব, মন্দিরের কিছু শিল্পকর্ম এবং জিম্মি হিসেবে রাজকীয় পরিবারের সদস্য ও অভিজাত ব্যক্তিদের ব্যাবিলনে প্রেরণ করতেন।[১] ৬০১ খ্রিস্টপূর্ব সালে, যিহোয়াকিমের চতুর্থ শাসন বর্ষে, নেবুচাদনেজার মিশর অভিযানে ব্যর্থ হোন এবং বিরাট ক্ষতির শিকার হোন। এই ব্যর্থতার ফলে যিহূদা সহ লেভান্তের অনেক রাজ্য বিদ্রোহ করে এবং রাজা যিহোয়াকিম কর পাঠানো বন্ধ করে দিয়ে মিশরের পক্ষ নেয়।[২]

নেবুচাদনেজার শীঘ্রই সেসব বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন। নেবুচাদনেজার কালপঞ্জি অনুযায়ী,[৩] নেবুচাদনেজার জেরুসালেমে অভিযান পরিচালনা করেন যা ঘটনাক্রমে ৫৯৭ খ্রিস্টপূর্বে ঘটে কালপঞ্জিতে উল্লেখ রয়েছে:

[নেবুচাদনেজারের] সপ্তম বর্ষে [৫৯৮ খ্রিস্টপূর্ব] খিসলেভ মাসে [নভেম্বর/ডিসেম্বর] ব্যাবিলনের রাজা তার সেনাবাহিনীকে একত্রিত করেন, এবং হাট্টিদের ভূমি (সিরিয়া/ফিলিস্তিন) আক্রমণ করার পর, তিনি যিহূদার শহরে অবরোধ পরিচালনা করেন। আদার মাসের দ্বিতীয় দিবসে [১৬ মার্চ] তিনি শহরটি জয় করেন এবং রাজাকে [যিহুদীয়া] বন্দী করেন। তার স্থলে তিনি নিজের পছন্দের একজন রাজাকে [সিদিকিয়] স্থলাভিষিক্ত করেন, এবং রাজস্ব পাওয়ার পর, তিনি ব্যাবিলনের দিকে ফিরে যান।[৪]

যিহোয়াকিম অবরোধের সময় সম্ভবত ১০ মার্চ, ৫৯৮ খ্রিস্টপূর্ব তারিখে,[৫] বা কিসলেভে,[৬] কিংবা তেভেত মাসে মারা যান।[৭] নেবুচাদনেজার জেরুসালেম শহর এবং এর মন্দির লুট করেন, এবং নতুন রাজা যিহুদীয়া, যার বয়স ছিলো হয় ৮ বা ১৮ বছর, এবং অন্যান্য বিশিষ্ট নাগরিক এবং কারিগরদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়।[৮] যিহিষ্কেলের পুস্তকে দেওয়া তারিখ থেকে বছর গণনা অনুসারে নেবুচাদনেজারের ফিরে যান ৫৯৭ খ্রিস্টপূর্বের নিসান মাসে।[৯]

নেবুচাদনেজার যিহুদীয়ার চাচা সিদিকিয়কে যিহূদার পুতুল রাজা হিসেবে বসান। যিহুদীয়াকে ব্যাবিলনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল।[১০] সিদিকিয়ের শাসনকে বিভিন্ন সূত্র ধরে ৫৯৭ খ্রিস্টপূর্বের নিসান মাসের কয়েক সপ্তাহ আগে বা পরে দেখানো হয়ে থাকে।[১১][১২][১৩]

কালানুক্রমীয় টীকা[সম্পাদনা]

১৯৫৬ সালে ডোনাল্ড ওয়াইজম্যান দ্বারা প্রকাশিত ব্যাবিলনীয় কালপঞ্জি প্রতিষ্ঠিত করে যে সম্রাট দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার ৫৯৭ খ্রিস্টপূর্ব সালের ১৬ই মার্চ তারিখে প্রথমবারের মত জেরুসালেম দখল করেন।[১৪] ওয়াইজম্যানের প্রকাশনার পূর্বে, ই.আর. থিয়েল বাইবেলীয় লেখাপত্র থেকে জেরুসালেম দখলের তারিখ ৫৯৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বসন্তে নির্ধারণ করেন,[১৫] তবে উইলিয়াম এফ. অলব্রাইটদের মতন অন্যান্য গবেষকগণ এর তারিখ প্রায়শউ ৫৯৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্দেশ করেন।[১৬]

বাইবেলীয় বিবরণ[সম্পাদনা]

এই অবরোধের ঘটনাটি ইহুদিদের হিব্রু বাইবেল, তথা খ্রিস্টানদের পুরাতন নিয়মের রাজাবলি ২ ২৪:১০-এ বর্ণিত রয়েছে। জেরুসালেম প্রস্থান ছিলো ইহুদিদের নির্বাসন ও অভিবাসনের সূচনা।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. C. Hassell Bullock (মে ২০০৭)। An Introduction to the Old Testament Prophetic Books। পৃষ্ঠা 340। আইএসবিএন 9781575674360 
  2. The Divided Monarchy c. 931–586 BC
  3. Geoffrey Wigoder, The Illustrated Dictionary & Concordance of the Bible Pub. by Sterling Publishing Company, Inc. (2006)
  4. No 24 WA21946, The Babylonian Chronicles, The British Museum
  5. Horn, Siegfried H. (১৯৬৭)। "The Babylonian Chronicle and the Ancient Calendar of the Kingdom of Judah" (পিডিএফ)Andrews University Seminary StudiesV (1): 21। 
  6. Lipschits, Oded (২০০২)। "'Jehoiakim Slept with his Fathers...' (II Kings 24:6) – Did He?" (পিডিএফ)Journal of Hebrew Scriptures4: 23। আইএসএসএন 1203-1542ডিওআই:10.5508/jhs.2002.v4.a1অবাধে প্রবেশযোগ্য। ২ জুন ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০২১ 
  7. Green, Alberto R. (১৯৮২)। "The fate of Jehoiakim"Andrews University Seminary Studies20 (2): 106। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (pdf) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০২১ 
  8. The Oxford History of the Biblical World, ed. by Michael D Coogan. Published by Oxford University Press, 1999. pg 350
  9. Young, Rodger C. (মার্চ ২০০৪)। "When Did Jerusalem Fall?" (পিডিএফ)Journal of the Evangelical Theological Society47 (1): 32ff। 
  10. Britannica.com, Zedekiah
  11. Thompson, John Arthur (১৯৮০)। The Book of Jeremiah। Wm. B. Eerdmans Publishing। পৃষ্ঠা 729 
  12. Hayes, John H.; Hooker, Paul K. (২০০৭)। A New Chronology for the Kings of Israel and Judah and Its Implications for Biblical History and Literature। Wipf and Stock Publishers। পৃষ্ঠা 95। 
  13. Thiele, Edwin R. (১৯৭০)। The Mysterious Numbers of the Hebrew Kings। Kregel Academic। পৃষ্ঠা 192। 
  14. D. J. Wiseman, Chronicles of Chaldean Kings in the British Museum (London: Trustees of the British Museum, 1956) 73.
  15. Edwin Thiele, The Mysterious Numbers of the Hebrew Kings, (1st ed.; New York: Macmillan, 1951; 2d ed.; Grand Rapids: Eerdmans, 1965; 3rd ed.; Grand Rapids: Zondervan/Kregel, 1983). আইএসবিএন ০-৮২৫৪-৩৮২৫-X, 9780825438257, 217.
  16. Kenneth Strand, "Thiele's Biblical Chronology As a Corrective for Extrabiblical Dates," Andrews University Seminary Studies 34 (1996) 310, 317.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]