চলন্ত রাস্তা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চলন্ত রাস্তা পরিবহন পদ্ধতিতে এক নতুন ধারণা যা পরিবেশবান্ধব এবং এই ধারণা একটি শহরকে শুধু যানজটমুক্ত রাখতে সহায়তা করবে না এর স্থাপনা ব্যয় কম, রক্ষণাবেক্ষণ প্রচলিত পদ্ধতির চাইতে সহজ এবং পরিবহন খাতের সার্বিক ব্যয় কমে আনবে।

চলন্ত রাস্তাঃ ধারণা[সম্পাদনা]

নিঃসন্দেহে বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন শহরের প্রধানতম সমস্যা বায়ু দূষণ এবং যানজট। বায়ু দূষণের যে প্রধানতম কারণ তা হলো জ্বালানী তেলে চালিত মোটরযান। আর যানজট এমন এক পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছে যে ঢাকা শহরের প্রতিদিন বার লক্ষ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বছরে অপচয় হচ্ছে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। হয়তো এই রকম বা এর কাছাকাছি যানজট সংকট পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে রয়েছে। হতে পারে কোন শহরের সংকট এর চাইতেও তীব্র। বর্তমান পরিবহন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সড়ক-মহাসড়কে নতুন এক পরিবহন পদ্ধতির ধারণা উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর নাম দেয়া হয়েছে “চলন্ত রাস্তা”।

এই পদ্ধতি বাস্তবায়নে যে সকল সুবিধা পাওয়া যাবে তা হল-

ক। চলন্ত রাস্তা একটি পরিবেশবান্ধব পরিবহন ধারণা।

খ। শহর যানজটমুক্ত থাকার সম্ভাবনা তৈরি করবে।

গ। বিদ্যুৎ তথা জ্বালানী খরচ কমবে।

ঘ। পরিবহন খাতের বার্ষিক সার্বিক ব্যয় কমে আসবে।

ঙ। বাস্তবায়ন খরচ কম এবং সাধারণ কারিগরি দক্ষতায় বাস্তবায়ন সম্ভব।

চলন্ত রাস্তা ধারণাটি ঢাকাসহ পৃথিবীর যে কোন শহরেরই বাস্তবায়নযোগ্য এবং এর গুরুত্ব বিশ্বব্যাপী। চলন্ত রাস্তা ধারণাটিতে প্রচলিত ধারণার বাইরে এসে নতুন এক বিকল্প ধারণাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। বর্তমান পরিবহন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনায় এনে নতুন এক পথের অনুসন্ধান করা হয়েছে। কারণ ঢাকাসহ পৃথিবীর অনেক শহরেই প্রচলিত পদ্ধতিতে সংকট সমাধানের কোন সম্ভাবনার পথ খোলা নেই। প্রচলিত পদ্ধতির সাথে “চলন্ত রাস্তা”, এই দুই পদ্ধতি যুক্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে।

চলন্ত রাস্তাঃ পদ্ধতি[সম্পাদনা]

এটা সত্য যে মোটরযানকে উপরে ওঠানো এবং নামানো এক জটিল প্রক্রিয়া। এর চাইতে অনেক সহজ প্রক্রিয়া হল মানুষকে উপরে ওঠানো এবং নিচে নামানো। চলন্ত রাস্তা ধারণায় কোন মোটরযান নয়, মানুষকে উপরে ওঠানো এবং নামানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। অবস্থানগতভাবে চলন্ত রাস্তা প্রতিষ্ঠায় দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। একজিস্টিং মূল রাস্তার মাঝ বরাবর এবং দুই পাশ বরাবর। মূল রাস্তার ৩ মিটার উপরে একটি কংক্রিটের কাটামোতে চলন্ত রাস্তা এক বা একাধিক লেইনে স্থাপিত হবে এবং চলমান থাকবে। চলন্ত রাস্তা নির্মাণ পদ্ধতিতে রাস্তার ছাদ এবং মূল কাঠামো স্থির থাকবে। একটি আচ্ছাদনের ভেতরে চলন্ত রাস্তা ছোট চাকাসহ নিচের পাটাতন, বসার আসন, পাশের স্বচ্ছ হালকা দেয়াল, অন্যান্য যন্ত্রাংশ চলমান থাকবে। কোন শহর এলাকার জন্য চলন্ত রাস্তার নির্ধারিত গতি হতে পারে ৩০ থেকে ৫০ কিমি/ঘণ্টা। হাইওয়েতে নির্ধারিত গতি হতে পারে ১০০ থেকে ১৪০ কিমি/ঘণ্টা। শহর এলাকায় চলন্ত রাস্তা প্রতি দুই মিনিট পরপর ১০ সেকেন্ডের জন্য থামবে। চলন্ত রাস্তার দৈর্ঘ ১ থেকে ১০০ কিমি যাই হোক না কেন পুরো রাস্তাই একই সাথে চলতে থাকবে। থামলে পুরো রাস্তাই থেমে যাবে। সে অর্থে পুরো রাস্তাকেই বলা যেতে পারে একটি অখণ্ড চলন্ত যান।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্রসিং-এ একটি চলন্ত রাস্তা ওপর চলন্ত রাস্তাকে ক্রস না করে ইউটার্ন করে উৎসের দিকে চলে যাবে। অর্থাৎ এক সাইডের চলন্ত রাস্তা ইউটার্ন করে বিপরীত সাইডে বিপরীত দিকে চলতে চলমান থাকবে। তবে কিছু কিছু ক্রসিং-এ ভিন্ন দিক থেকে আসা চলন্ত রাস্তা পরস্পরকে ক্রস করার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

ফুটপাত থেকে চলন্ত রাস্তায় ওঠার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে সুবিধামত স্থানে সিঁড়ি এবং ফুটওভারব্রিজ থাকবে। চলন্ত রাস্তা একজিস্টিং মূল রাস্তা থেকে ৩ মিটার উপরে স্থাপিত হবার কারণে চলন্ত রাস্তার নিচ দিয়ে এবং এক্সজিস্টিং যে অংশ চলন্ত রাস্তার আওতায় আসবে না সেই স্থান দিয়ে সাধারণ মোটরযান চলাচল করবে।

চলন্ত রাস্তাঃ প্রয়োজনীয়তা এবং ভিন্নতা[সম্পাদনা]

বিগত শত বছরে পরিবহন ব্যবস্থার ব্যপক পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তন যেমন আমরা বিচিত্র যানবহন পেয়েছি তেমনি রাস্তা নির্মাণেও এসেছে ব্যপক পরিবর্তন। মানুষ প্রয়োজনে যানবাহন তৈরী করেছে, আবার যান চলাচলের জন্য পথ তৈরি করতে হয়েছে। প্রয়োজনে পথকে প্রশস্ত করতে হয়েছে। এক সময় প্রসস্থ পথেও সঙ্কুলান না হওয়ায় মাটির নিচে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। উড়ন্ত সেতু, উড়ন্ত রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

কিন্তু আমরা চাইলেই সব শহরে মাটির নিচে রাস্তা তৈরি করতে পারব না। পারব না বিভিন্ন ক্রসিং এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে বা উড়াল সড়ক নির্মাণ করতে। সেই পরিমাণ জায়গা নেই। আর কোন শহরে জায়গা থাকলেও উড়াল সেতু বা উড়াল সড়ক আমরা কয় স্তরে নির্মাণ করতে সক্ষম হব? ৬, ৭, ৮? তারপর? আমাদের মানতেই হবে যে সমস্ত অগ্রযাত্রারই সীমাবদ্ধতা আছে এবং শেষ আছে।

চলন্ত রাস্তা মাটির নিচের কোন স্থাপনা নয় এবং মাটির উপরের এমন কোন স্থাপনা নয় যা এলভেটেড এক্সপ্রেসের মত অনেক স্তরে বিন্যস্থ থাকবে এবং অনেক জায়গার প্রয়োজন হবে। চলন্ত রাস্তায় জায়গার অপচয় কম হবে। এ ছাড়া প্রচলিত পরিবহন পদ্ধতিতে রাস্তা এবং মোটরযানের অস্তিত্ব স্বতন্ত্র কিন্তু চলন্ত রাস্তা এমন এক স্থাপনা যা নিজেই চলমান থাকবে এবং প্রচলিত পরিবহনের পদ্ধতির সকল সুবিধা যাত্রীসকলকে প্রদান করতে সক্ষম হবে। নিঃসন্দেহে চলন্ত রাস্তা প্রকল্পে প্রচলিত পরিবহন পদ্ধতির বাইরে রয়েছে সুনির্দিষ্ট ভিন্নতা।

চলন্ত রাস্তাঃ উদ্ভাবন এবং ধারণা উপস্থাপন[সম্পাদনা]

চলন্ত রাস্তা নিয়ে প্রথম কনসেপ্ট পেপার উপস্থাপিত হয় ২২ আগস্ট ২০১৭ তারিখে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, বাংলামোটর, ঢাকা, বাংলাদেশে। এরপর অডিও ভিস্যুয়াল প্রেজেন্টেশনসহ দ্বিতীয়বার আবু সাইয়ীদ ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন একই স্থানে ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭।

২৪-২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ভাস্কর্য গ্যালারীতে আবু সাইয়ীদ চলন্ত রাস্তার মডেল প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]