কোকেই

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হোসো'র ছয় কুলপতি ১১৮৯

কোকেই ছিলেন কামাকুরা (Kamakura) যুগের একজন ভাস্কর (সক্রিয়তার কালঃ ১১৭৫- ১২০০ খ্রিস্টাব্দ)। হাইন যুগ- এ প্রতিষ্ঠা পাওয়া বিখ্যাত ভাস্কর জোশো'র কাজের ধরনের প্রভাব- কোকেই এর কাজে দেখা যায়। নারা'র (Nara) দুইটি টেম্পল তোদাই- জি (Tōdai-ji) এবং কোফুকু- জি (Kōfuku-ji) পুনঃনির্মাণকালে কেই স্কুল এর(Kei School) নেতৃত্বে ছিলেন কোকেই।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

হাইন যুগের (Heian period) বিখ্যাত ভাস্কর জোশো'র সরাসরি উত্তরপুরুষ হলেন কোকেই। জোশো'র কাজের রীতি দ্বারা কোকেই সরাসরি প্রভাবিত ছিলেন। উত্তরকালে জোশো'র কর্মপদ্ধতির একটি স্থায়ী রূপ দেবার পেছনে জোশো'র যে কয়জন উত্তরপুরুষ, শিষ্য ছিলেন তার মধ্যে কোকেই একজন। তিনি কেই স্কুল (Kei school) এর সংগঠক ছিলেন; যেখানে তার ছেলে, শিষ্যগণ এবং সহকারীগণ একসাথে কর্মরত ছিলেন। এই স্কুলে কর্মরত ছিলেন এমন স্মরণীয় সদস্য হলেন আনকে'ই (Unkei), কায়-কেই (Kaikei) এবং জোকেই (Jōkei)। ১১৮৮-১১৮৯ সালে জাপান এর নারা'র (Nara) টেম্পল তোদাই- জি (Tōdai-ji) এবং কোফুকু- জি (Kōfuku-ji) পুনঃনির্মাণকালে নেতৃত্বের পুরোভাগে থাকার জন্য কোকেই অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি এবং তার সহকারীগণ নানেন্দো (Nanendō; দক্ষিণাঞ্চলের অষ্টকোণী হল) এর কাজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। 'চারজন স্বর্গীয় অভিভাবক এবং ছয়জন বার্তাবাহক' এমন বিষয়কে সামনে রেখে তৈরীকৃত মূর্তি, কোকেই'কে তার কাজের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার দাবি রাখে। এর মূল অংশ দৈত্যাকৃতি ফুকুকেনজাকু কানন (Fukūkenjaku Kannon) ১১৮৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়; যা মূলত ৭৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তৈরী হয়েছিল এবং একটি অগ্নি দূর্ঘটনায় বিলীনপ্রায় হয়ে যায়। যদিও এটি পুনঃস্থাপন কাজ তবুও এতেও কোকেই এর ছাপ সুস্পষ্ট।

কোকেই'কৃত সরাসরি কাজের বিবরণ এবং তার মেধার মূল্যায়ন পাওয়া যায় মূলত ফুজিওয়ারা (Fujiwara) সেনানায়ক কেনজেন (Kanezane) এর লেখায়। এই কেনজেন'ই মন্দির (টেম্পল) পুনঃনির্মাণের দায়িত্ব সরাসরি গ্রহণ করেন। কেনজেনের বর্ণনায় কোকেই'কে একজন প্রতিভাধর এবং নৈতিকতায় পূর্ণ মানুষ হিসেবে দেখা যায়।

কর্মরীতি[সম্পাদনা]

কোকেই'র কাজে মূলত তার পূর্বপুরুষ জোশো'র প্রভাব সুস্পষ্টভাবে বর্তমান। উদাহরণস্বরূপ কোকেই'র ফুকুকেনজাকু কানন (Fukūkenjaku Kannon) এর কথা বলা যায়। এই কাজে জোশো'র কর্মপদ্ধতিগত অনুপাত; যেমন 'বিস্তৃতভাবে ছড়ানো পা' আদতে ত্রিভূজাকার ফিগার এর সাথে চতুর্ভূজাকৃতি মুখের গঠনে সাহায্য করে। ভাস্কর্যের এই জ্যামিতিক অনুপাত স্পষ্টভাবেই জোশো'র রীতি। একইভাবে ভাস্কর্যের ড্রপারি'র ভাঁজগুলোও গতানুগতিক জ্যামিতিক নকশা'র আদলে গড়িত।

যাই হোক, কোকেই এর কাজের মৌলিকতার বৈশিষ্ট্য বলতে বাস্তবতা'র স্ফূরণ। ভাস্কর্যের নাটকীয়তা ছাড়িয়ে স্থূল বাস্তবতার দিকে ঝুঁকবার প্রয়াস কোকেই এর কাজে লক্ষ্য করা যায় যা কি না কেই স্কুল (Kei school) এর কাজকে সরাসরি প্রভাবিত বা পুনঃগঠন করেছে। তিনি তার কাজে স্ফটিকাকারে (crystal) খচিত করার মাধ্যমে ভাস্কর্যে আরোও জীবন্ত এবং চাকচিক্যতা আনেন; উদাহরণস্বরূপ কাননে'র (Kannon) কথা বলা যায়। কাজটিতে মুখায়বের কাজ এবং পোশাকের নিখুঁত বর্ণনা (Detail) অনুযায়ী গভীর ভাঁজের মাধ্যমে ভাস্কর্যকে আরোও বাস্তবিক করে তোলে। ঠিক এই জায়গাতে কোকেই জোশো'র কাজের উত্তরসূরী হয়েও মৌলিকতা অর্জন করেন। ভাস্কর্যের মস্তকে পৃথক পৃথক চুলের ভাঁজের মতন নিখুঁত কাজের মাধ্যমে তার কাজের বাস্তবতার উপস্থিতি সে সময়কার ইতিহাসে দেড়শত (১৫০ বছর) বছরে প্রথম ছিল। পূর্ববর্তী ভাস্করদের স্থাপত্যে ক্ষণস্থায়ী রেশ (ephemeral-looking) এর বিপরীতে কোকেই এর কাজ আরোও বস্তুগ্রাহ্য, নিখুঁত এবং বাস্তব।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • Grapard, Allan G. (1992). The Protocol of the Gods: A Study of the Kasuga Cult in Japanese History. Berkeley: University of California Press.
  • Mason, Penelope (2005). History of Japanese Art. 2nd ed, rev. by Dinwiddie, Donald. Upper Saddle River, New Jersey: Pearson Education Inc.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]