কল্পবিজ্ঞানে পৃথিবী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অ্যাপোলো ১৭-এর (১৯৭২) মহাকাশচারীদের তোলা পৃথিবীর এই বিশেষ ছবিটি দ্য ব্লু মার্বেল নামে পরিচিত। এই ছবিটি এবং এটির অনুরূপ ছবিগুলি সম্ভবত কথাসাহিত্যের একটি বিষয় রূপে পৃথিবীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছিল।[১]:১৩৮

কথাসাহিত্যের একটি সুবিশাল অংশের প্রেক্ষাপট বা বিষয়বস্তু হল পৃথিবী। কথাটি কল্পবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও সত্য, যদিও সেখানে এর বিপরীত রীতিটিই সহজলক্ষ্য। ক্ষেত্রবিশেষে পৃথিবীর আকৃতির বাস্তববিরুদ্ধ বর্ণনাও (সমতল বা শূন্যগর্ভ পৃথিবী) দেওয়া হয়ে থাকে। অল্পসংখ্যক রচনায় এক মূর্ত ও জীবন্ত পৃথিবীকেও উপস্থাপনা করা হয়েছে। সুদূর ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে রচিত গল্প-উপন্যাসগুলিতে পৃথিবীকে দেখা যায় হয় মহাকাশচারী মানবসভ্যতার একটি কেন্দ্র রূপে অথবা এক ছায়াপথীয় সাম্রাজ্যের অসংখ্য বসবাসযোগ্য গ্রহের একটি হিসেবে, আবার কখনও বা দেখা যায় পৃথিবী বাস্তুতান্ত্রিক বিপর্যয় বা পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে অথবা অন্য কোনও উপায়ে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে।[২][১]

সম্পর্কিত শব্দভাণ্ডার[সম্পাদনা]

বহু কল্পবিজ্ঞান রচনায় পৃথিবীর নামটি কম জনপ্রিয়, বরং গ্রহটিকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘পৃথিবী’ শব্দের লাতিন প্রতিশব্দ ‘টেরা’ বা ‘টেলাস’ নামে।[১]:১৩৯[৩] ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার কল্পবিজ্ঞানে পৃথিবীর অধিবাসীরা উল্লিখিত হয়েছে বিভিন্ন নামে। যেমন, আর্থলিংস (Earthlings), আর্থারস (Earthers), আর্থবর্ন (Earthborn), আর্থফোক (Earthfolk), আর্থিয়ানস (Earthians), আর্থিজ (Earthies, এটি প্রায়শই নিন্দাসূচক শব্দ হিসেবে প্রযুক্ত হয়), আর্থমেন ও আর্থউইমেন (Earthmen ও Earthwomen), আর্থপার্সনস (Earthpersons), আর্থসাইডারস (Earthsiders), সোলারিয়ানস (Solarians), টেল্যুরিয়ানস (Tellurians) বা টেরানস (Terrans)।[৪]:৪১, ৪৩–৪৮, ১৯২, ২৩৩–২৩৪, ২৩৭–২৩৮

সেই সঙ্গে কল্পবিজ্ঞানের শব্দভাণ্ডারে পৃথিবীতে একটি মহাকাশযানের অবতরণ অর্থে পৃথিবীপাতের (Earthfall) মতো শব্দও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে; এবং “পৃথিবী গ্রহের বা এই গ্রহের পরিবেশের সদৃশ” ধারণাটি বোঝাতে আর্থ-টাইপ (Earth-type), আর্থলাইক (Earthlike), আর্থনর্ম(অ্যাল) (Earthnorm(al)) ও টেরেস্ট্রিয়াল (terrestrial) শব্দগুলিও ব্যবহৃত হয়েছে।[৪]:৪১, ৪৩–৪৮, ১৯২, ২৩৩–২৩৪, ২৩৭–২৩৮

কোনও গ্রহের অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে সেটিকে পৃথিবী-সদৃশ করে তোলার ধারণাটি পৃথিবীকরণ (ইংরেজিতে terraforming) নামে পরিচিত। পৃথিবীকরণের ধারণাটি বিকশিত হয়েছে কল্পবিজ্ঞান ও বাস্তব বিজ্ঞান উভয় ধারাতেই। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ১৯৬১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সেগান শুক্র গ্রহের পৃথিবীকরণের প্রস্তাব দেন। এটিকে এই ধারণার প্রথম বিবরণগুলির অন্যতম মনে করা হয়।[৫] ‘টেরাফর্মিং’ শব্দটি প্রথম প্রবর্তন করেন জ্যাক উইলিয়ামসন ১৯৪২ সালে অ্যাস্টাউন্ডিং সায়েন্স ফিকশন পত্রিকায় প্রকাশিত কল্পবিজ্ঞান ছোটোগল্প "কলিশন অরবিট"-এ।[৬][৭][৪]:২৩৫[৮] যদিও জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পৃথিবীকরণের ধারণাটি তার আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। উদাহরণস্বরূপ অক্টেভ বেলিয়ার্ডের "একবিংশ শতাব্দীতে এক প্যারিসবাসীর এক দিন" বইটির নাম করা যায়। এই বইটিতে চাঁদের পরিবেশ বাসযোগ্য করে তোলার ধারণাটি উল্লিখিত হয়েছিল।[৯] প্রকৃতপক্ষে সম্ভবত পৃথিবীকরণের ধারণাটিরও আগে উদ্ভাবিত হয়েছিল জেনোফর্মিং-এর ধারণাটি – অর্থাৎ এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভিনগ্রহীরা পৃথিবীকে নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে তাদের বাসযোগ্য করে তোলে। এইচ. জি. ওয়েলসের ধ্রুপদি কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস দ্য ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস-এ (১৮৯৮) এর একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[১০]

বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

সাধারণভাবে বলতে গেলে কল্পবিজ্ঞান সহ কথাসাহিত্যের একটি সুবৃহৎ অংশের প্রেক্ষাপট পৃথিবী।[২]:২২৬, ২২৮ পৃথিবী যেখানে শুধুমাত্র কাহিনির অবশ্যম্ভাবী প্রেক্ষাপট বলেই উপেক্ষণীয় নয়, সেখানে বেশ কয়েকটি বিষয়বস্তুকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।[১]:১৩৭

পৃথিবী[সম্পাদনা]

কল্পবিজ্ঞানের অনেক গল্প-উপন্যাসেরই প্রেক্ষাপট বহিঃস্থ মহাকাশ, আবার অনেক কাহিনিরই ঘটনাস্থল পৃথিবী; এই পার্থক্য কল্পবিজ্ঞান লেখকদের মধ্যে বিতর্কের একটি বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬২ সালে জে. জি. ব্যালার্ডের লেখা হুইচ ওয়ে টু ইনার স্পেস? প্রবন্ধটির নাম করা যায়। “বহিঃস্থ মহাকাশ অভিযান”-এর কয়েকজন সমালোচক “পার্থিব” ধারণাগুলি ও সমসাময়িক পাঠকদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার নিকটবর্তী চিত্রকল্পের গুরুত্বটিকে নির্দেশ করেন।[২]:২২৮[১১] যদিও এটা মনে করা হয় যে “কথাসাহিত্যে [একটি গ্রহের] নিজ অধিকারে স্বচ্ছন্দে বিষয়বস্তু হওয়ার ক্ষেত্রে তা বেশিই বড়ো এবং সেটির জীবনকাল অতি দীর্ঘ”, তবুও অনেক লেখকই এই বিষয়টি নিয়ে কাহিনি রচনায় আগ্রহী হন।[ক][১]:১৩৮[১২] কোনও কোনও গল্প-উপন্যাসে পৃথিবীকে দেখানো হয়েছে গাইয়া অনুসিদ্ধান্ত, যুক্তিগোলকওমেগা বিন্দুর মতো সম্পূর্ণতাবাদী ‘বৃহৎ চিত্র’ ধারণার দ্বারা প্রভাবিত এবং মহাকাশ থেকে পৃথিবীর আলোকচিত্র গ্রহণের ফলে জনপ্রিয়তা প্রাপ্ত একটি সত্ত্বা হিসেবে।[১]:১৩৮ অন্যান্য রচনায় পৃথিবীর ধারণাটিকে দেখা হয়েছে দেবী গাইয়া হিসেবে[খ] (গ্রিক পুরাণ থেকে গৃহীত ধারণা; কল্পবিজ্ঞানে আরেক গুরুত্বপূর্ণ যে ভূদেবীর নাম বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছেন তিনি হলেন রোমান দেবী টেরা বা টেলাস[৪]:৪১)। এই ধারণাগুলিকে জুড়ে কয়েকটি রচনায় পৃথিবীকে একটি প্রায়-জৈব এবং চেতন সত্ত্বা রূপেও দেখানো হয়েছে। এই ধরনের রচনার ধ্রুপদি উদাহরণ হল আর্থার কোনান ডয়েলের হোয়েন দ্য ওয়ার্ল্ড স্ক্রিমড (১৯২৮) ও জ্যাক উইলিয়ামসনের বর্ন অফ দ্য সান (১৯৩৪)।[২]:২২৭

আকৃতি[সম্পাদনা]

‘অভ্যন্তরীণ জগতে’র মানচিত্র, উইলিয়াম ব্র্যাডশর দ্য গডেস অফ অ্যাটভাটাবার (১৮৯২) থেকে

খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দ নাগাদই আর্কিমিডিসএরাতোস্থেনেস কর্তৃক পৃথিবীর গোলকাকার প্রমাণিত হয়েছিল। তাই আধুনিক সাহিত্যে পৃথিবীকে সমতল হিসেবে প্রদর্শন প্রায় করা হয় না বললেই চলে। তবে এই ধারার ব্যতিক্রমগুলির মধ্যে রয়েছে টেরি প্রেচেটের ডিস্কওয়ার্ল্ড নামক প্রহসনমূলক ধারাবাহিকটি (যা অনুপ্রাণিত হয়েছে হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্বের ধারণা থেকে) এবং এস. ফাওলার রাইটের উপন্যাস বিয়ন্ড দ্য রিম (১৯৩২) প্রভৃতি ইচ্ছাকৃতভাবে প্ররোচক রচনা।[১]:১৩৭–১৩৮[২]:২২৬ এছাড়াও রয়েছে শূন্যগর্ভ পৃথিবীর কাল্পনিক বিবরণ। উদাহরণস্বরূপ এডগার অ্যালান পোর দ্য ন্যারেটিভ অফ আর্থার গর্ডন পিম অফ ন্যানটাকেট (১৮৩৮) উপন্যাসটির নাম করা যায়। এটি অনুপ্রাণিত হয়েছিল জন ক্লিভেস সিমেস জুনিয়ারের মডেলটির দ্বারা, যে মডেলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে খোলা জায়গার দেখানো হয়েছিল।[১]:১৩৭ অল্প কয়েকজন লেখক আবার অপর এক পুরনো প্রান্তিক তত্ত্ব প্রতি-পৃথিবীর ধারণাটিকে নিজেদের রচনায় তুলে এনেছিলেন। এই প্রতি-পৃথিবী হল সৌরজগৎের একটি প্রকল্পিত বস্তু, যা একই কক্ষপথে পৃথিবীর বিপরীত দিক থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।[গ][২]:২২৭

গ্রহীয় প্রযুক্তিবিদ্যা[সম্পাদনা]

বৃহৎ পরিসরে গ্রহীয় প্রযুক্তিবিদ্যার ধারণাগুলির মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর আক্ষিক আনতির সমন্বয়সাধন[ঘ] বা কক্ষপথ থেকে পৃথিবীর অপসারণ[ঙ][১]:১৩৮–১৩৯ কয়েকটি রচনায় ভূপ্রযুক্তিবিদ্যার ধারণাটি উঠে এসেছে। এই শব্দটির মাধ্যমে সাধারণত জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত সমস্যাগুলির সমাধানে বৃহৎ পরিসরে গৃহীত প্রকল্পগুলিকে বোঝায়। উল্লেখ্য, ভূপ্রযুক্তিবিদ্যার বিষয়টি জলবায়ু কথাসাহিত্যের অনেক রচনায় উল্লিখিত একটি বিষয়।[১৪] চরম ক্ষেত্রে পৃথিবীকে সম্পূর্ণভাবে অপচয়িত হতে এবং এটির সমগ্র ভর ডাইসন গোলকের মতো অতিনির্মাণ গঠনে পুনঃব্যবহৃত হতে দেখা যায়।[চ][২]:২২৭

পৃথিবীর পরিসমাপ্তি[সম্পাদনা]

সায়েন্স ফিকশন কোয়ার্টারলি পত্রিকার গ্রীষ্ম ১৯৪০ সংখ্যার প্রচ্ছদে পৃথিবী ধ্বংসের ছবি।

পৃথিবীর ভবিষ্যতের বিভিন্ন রূপ কল্পিত হয়েছে। কোনও কোনও গল্প-উপন্যাসের উপজীব্য এই গ্রহটির পরিসমাপ্তির কাহিনি; এগুলি সকল আকারেই লিখিত হয়েছে – কয়েকটি কেন্দ্রীভূত হয়েছে ‘জাঁকালো শোকপালনে’র উপর; [ছ] অন্যগুলি অনেকটা স্ল্যাপস্টিক কমেডির অনুরূপ;[জ] আবার কোনও কোনও রচনায় জ্যোতির্বিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের বিষয়গুলিকে পর্যালোচনার একটি সুযোগ হিসেবে পৃথিবীর পরিসমাপ্তির বিবরণকে গ্রহণ করা হয়েছে।[ঝ][১৫][১]:১৩৯ জলবায়ু কথাসাহিত্যের বর্গটিতে প্রায়শই নিকট ও সুদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফলগুলিকে বিষয়বস্তু হিসেবে তুলে আনা হয়, এই ফলাফল অ্যানথ্রোপোজেনিক হতে পারে,[ঞ] বা বিপর্যয়মূলকও হতে পারে।[ট][১৪][২]:২২৭ অন্যান্য রচনায় (প্রায়শই প্রলয় ও প্রলয়োত্তর কথাসাহিত্যমুমূর্ষু পৃথিবী বর্গে) দেখা যায়, পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে অথবা অন্ততপক্ষে ভাবী প্রজন্মগুলির জন্য গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে; এই ধরনের বহু রচনারই প্রেক্ষাপট তাই পতিত জমিতে পরিণত হওয়া এক পৃথিবী।[ঠ] এই সকল বর্গের কোনও কোনোও রচনায় জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কথাসাহিত্যের বিষয়বস্তুও মিশে যায়, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার পরিণামে উদ্ভূত পরিবেশগত বিপর্যয়কে সাধারণভাবে মানব সভ্যতার ধ্বংসের এক সূচক হিসেবে গ্রহণ করা হয় (অন্যান্য কাহিনিতে দেখা যায় যে পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে মানুষের যুদ্ধবিগ্রহ, ভিনগ্রহীদের আক্রমণ,[ড] বা অন্য কোনও রকম মানব-সৃষ্ট কারণ[ঢ] বা আকস্মিক বিপর্যয়ের ফলে)।[১৪][১৭][১৮][২]:২২৭–২২৮ বিপর্যয়ের সময়টি অথবা বিপর্যয়োত্তরকালের প্রেক্ষাপটে রচিত এমন অনেক রচনাই পরিবেশ-সংক্রান্ত উদ্বেগগুলির রূপক, বা অন্য ক্ষেত্রে লেখকেরা মানবজাতির যে বিষয়গুলি নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন সেগুলি সম্পর্কে সতর্ক করতে চেয়েছেন।[২]:২২৭[১৮]

অনেক গ্রহের মধ্যে একটি[সম্পাদনা]

সুদূর ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে রচিত অনেক রচনায় পৃথিবী একটি ছায়াপথী সাম্রাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা বৃহত্তর সভ্যতার অনেকগুলি জনবসতিপূর্ণ গ্রহের একটি মাত্র। পৃথিবীর সাতন্ত্র্যের ধারণাটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিয়ে অনুরূপ অনেক গ্রহই পাওয়া যায় বা সৃষ্ট হয় এই সব রচনায় (যা স্পেস অপেরার একটি সাধারণ বিষয়)।[ণ][১]:১৩৯ কোনও কোনও গল্প-উপন্যাসে পৃথিবীকে জ্ঞাত মহাবিশ্বের একটি কেন্দ্র, অথবা অন্ততপক্ষে ছায়াপথের প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে দেখানো হয়।[ত][২]:২২৭ অন্যান্য ক্ষেত্রে, প্রধানত বিস্মৃত একটি সেকেলে জগৎ হিসেবে পৃথিবীর গুরুত্ব খুবই কম।[থ][১]:১৩৯[২]:২২৭[১৯] ক্লিফোর্ড ডি. সিমাকের সেমেটারি ওয়ার্ল্ড (১৯৭৩) উপন্যাসে পৃথিবী হল গ্রহ-আকারের একটি কবরখানা এবং গর্ডন আর. ডিকসনের কল হিম লর্ড (১৯৬৬) উপন্যাসে পৃথিবী একটি জাদুঘর।[২]:২২৭ চরম ক্ষেত্রে, কোনও কোনও রচনায় দেখা যায় যে পৃথিবী সাধারণভাবে একটি হারানো জগৎ, যার ফলে তা পরিণত হয়েছে একটি পৌরাণিক স্থানে এবং যে অল্প কয়েকজন পৃথিবীর কিংবদন্তির কথা জানে তারাও এটির বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে।[দ] এই ধরনের কোনও কোনও রচনার একটি প্রধান বিষয়বস্তু হল ভবিষ্যতের সভ্যতা বা অসমসাহসী অভিযাত্রীর দলের ‘হারানো আঁতুরঘর’ বা পৃথিবী অনুসন্ধান।[ধ] শেষত, কোনও কোনও গল্প লেখা হয়েছে পৃথিবী আবিষ্কারকারী ভিনগ্রহীদের দৃষ্টিকোণ থেকে।[ন][২]:২২৮[২২]

এক ভিন্ন ইতিহাস[সম্পাদনা]

কোনও কোনও রচনায় পৃথিবীর ভবিষ্যতের পরিবর্তে অতীতকে ফিরে অথবা সম্ভবত পাশ দিয়ে দেখা হয়। এখানে কল্পবিজ্ঞানের সঙ্গে ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের এবং সেই সঙ্গে প্রাগৈতিহাসিক কথাসাহিত্যের উপাদান মিশে যায়। এটি হয় নির্দিষ্টভাবে বিকল্প ইতিহাস বর্গটির মাধ্যমে, [প] এবং সেই সঙ্গে সময় ভ্রমণের মাধ্যমেও (যেমন গ্যারি ওয়েস্টফালের মতে, অধিকাংশ সময় ভ্রমণকারীই মহাকাশের পরিবর্তে অনেক বেশি পরিমাণে সময়ের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে এবং পৃথিবীর অতীত ও ভবিষ্যতে উপনীত হয়)।[২]:২২৬

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. উদাহরণস্বরূপ ক্যামিলে ফ্ল্যামারিয়নের লুমেন (১৮৮৭), ডেভিড ব্রিনের আর্থ (১৯৯০) বা টেরি প্র্যাচেট, ইয়ান স্টিউয়ার্টজ্যাক কোহেনের দ্য সায়েন্স অফ ডিস্কওয়ার্ল্ড (১৯৯৯) বইগুলির নাম করা যায়।[১]:১৩৮[১২]
  2. যেমন অন্যান্য উদাহরণের সঙ্গে ১৯৯০ সালের কার্টুন ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ারস[২]:২২৭
  3. উদাহরণস্বরূপ জন নর্ম্যানের টার্নসম্যান অফ গোর (১৯৬৬) উপন্যাসটির নাম করা যায়।[২]:২২৭
  4. উদাহরণ, ন্যাট শ্যাশনারের আর্থস্পিন (১৯৩৭)[১]:১৩৮–১৩৯
  5. উদাহরণ, হোমার এয়ন ফ্লিন্টের দ্য প্ল্যানেটার (১৯১৮), নেইল বেলের দ্য সেভেনথ বাওল (১৯৩০), এডমন্ড হ্যামিলটনের থান্ডারিং ওয়ার্ল্ডস (১৯৩৪), ফ্রিৎজ লেইবারের আ পেইল অফ এয়ার (১৯৫১), ফ্রেডেরিক পোলসি. এম. কর্নব্লাথের উলফবেন (১৯৫৭), রজার ম্যাকব্রাইড অ্যালেনের দ্য রিং অফ ক্যারন (১৯৯০)[১]:১৩৮–১৩৯লিউ সিজিনের দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ (২০০০)। শেষোক্ত উপন্যাসটি অবলম্বনে ২০১৯ সালে একটি জনপ্রিয় চীনা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।[১৩]
  6. উদাহরণ, কার্ল টি. ফ্লোকের কনজার্ভেশন অফ মাস (১৯৮২)[২]:২২৭
  7. জর্জ সি. ওয়ালিসের' দ্য লাস্ট ডেজ অফ আর্থ (১৯০১), এডমন্ড হ্যামিলটনের রিকুইয়েম (১৯৬২)[১৫][১]:১৩৯
  8. ডগলাস অ্যাডামের দ্য রেস্তোরাঁ অ্যাট দি এন্ড অফ দ্য ইউনিভার্স (১৯৮০)[১৫][১]:১৩৯
  9. ফ্র্যাংক বেকন্যাপ লং-এর দ্য ব্লু আর্থম্যান (১৯৩৫) বা ব্রায়ান ডব্লিউ. অলডিসের হটহাউস (১৯৬২) [১৫][১]:১৩৯
  10. যেমন, জর্জ টার্নারের দ্য সি অ্যান্ড সামার (১৯৮৭), জন বার্নেসের মাদার অফ স্টর্মস (১৯৯৪), কিম স্ট্যানলি রবিনসনের সায়েন্স ইন দ্য ক্যাপিটল ধারাবাহিক, যার প্রথম উপন্যাস ফর্টি সাইনস অফ রেইন (২০০৪)।[১৪]
  11. যেমন, ফ্রেড হয়েলের দ্য ব্ল্যাক ক্লাউড (১৯৫৭), ফিলিপ জোস ফার্মারের ফ্লেশ (১৯৬০), ভ্যাল গেস্টের দ্য ডে দি আর্থ কট ফায়ার (১৯৬১), জন ক্রিস্টোফারের দ্য ওয়ার্ল্ড ইন উইন্টার (১৯৬২) ও জে. জি. ব্যালার্ডের দ্য ড্রওনড ওয়ার্ল্ড (১৯৬২)।[১৫][১৪]
  12. যেমন, কেভিন রেনল্ডসের ওয়াটারওয়ার্ল্ড (১৯৯৫)[২]:২২৭
  13. যেমন, কারেল ক্যাপেকের ওয়ার উইথ দ্য নিউটস (১৯৩৬); ডগলাস অ্যাডামসের দ্য হিচহাইকার’স গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি (১৯৭৮) বা ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র টাইটান এ.ই.[২]:.২২৭–২২৮
  14. যেমন, পিয়েরস অ্যান্টনির রিংস অফ আইস (১৯৭৪),[২]:২২৭–২২৮ হাজিমে ইয়াতাতের কাউবয় বেবপ (১৯৯৮)।[১৬]
  15. জেমস ব্লিশের আর্থম্যান, কাম হোম (১৯৫৩) [১]:১৩৯
  16. যেমন, জিন রডেনবেরির স্টার ট্রেক (১৯৬৫); আরও দেখুন: টেরান ফেডারেশন[২]:২২৭
  17. যেমন, পল আন্ডারসনের দ্য চ্যাপ্টার এন্ডস (১৯৫৪),[১]:১৩৯[২]:২২৭ বা ইয়োশিকি তানাকার লেজেন্ড অফ দ্য গ্যালাক্টিক হিরোজ (১৯৮২) [১৯]
  18. যেমন, আইজ্যাক অ্যাসিমোভের ফাউন্ডেশন ধারাবাহিক (১৯৪২)[১]:১৩৯
  19. যেমন, ই. সি. টাবের ডুমারেস্ট সাগা (১৯৬৭),[১]:১৩৯ কেইকো তাকেমিয়ার টুওয়ার্ড দ্য টেরা (১৯৭৭)[২০]গ্লেন এ. লারসেনের ব্যাটেলস্টার গ্যালাক্টিকা (১৯৭৮)[২১]
  20. এডমন্ড হ্যামিলটনের দ্য ডেড প্ল্যানেট (১৯৪৬); হাল ক্লিমেন্টের আইসওয়ার্ল্ড (১৯৫৩),[২]:২২৮ আইয়ান এম. ব্যাংকসের দ্য স্টেট অফ দি আর্ট (১৯৯১)[২২]
  21. যেমন, টেরি প্রেচেট ও স্টিফেন ব্যাক্সটারের লং আর্থ ধারাবাহিক[২৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. স্টেবলফোর্ড, ব্রায়ান এম. (২০০৬)। সায়েন্স ফ্যাক্ট অ্যান্ড সায়েন্স ফিকশন: অ্যান এনসাইক্লোপিডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস। পৃষ্ঠা ১৩৭–১৩৯। আইএসবিএন 978-0-415-97460-8  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে ":12" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  2. ওয়েস্টফাল, গ্যারি (২০০৫)। "আর্থ"। ওয়েস্টফাল, গ্যারি। দ্য গ্রিনউড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ সায়েন্স ফিকশন অ্যান্ড ফ্যান্টাসি: থিমস, ওয়ার্কস, অ্যান্ড ওয়ান্ডারস (ইংরেজি ভাষায়)। গ্রিনউড পাবলিশিং গ্রুপ। পৃষ্ঠা ২২৬–২২৭। আইএসবিএন 978-0-313-32951-7 
  3. "থিমস: টেরা: এসএফই: সায়েন্স ফিকশন এনসাইক্লোপিডিয়া"ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ.এসএফ-এনসাইক্লোপিডিয়া.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪ 
  4. প্রুচার, জেফ (২০০৭-০৫-০৭)। ব্রেভ নিউ ওয়ার্ডস: দি অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ সায়েন্স ফিকশন (ইংরেজি ভাষায়)। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-988552-7 
  5. সেগান, কার্ল (১৯৬১)। "দ্য প্ল্যানেট ভেনাস"। সায়েন্স১৩৩ (৩৪৫৬): ৮৪৯–৫৮। ডিওআই:10.1126/science.133.3456.849পিএমআইডি 17789744বিবকোড:1961Sci...133..849S 
  6. "সায়েন্স ফিকশন সাইটেশনস: টেরাফর্মিং"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-১৬ 
  7. পিংকাস, কারেন; উডস, ডেরেক (২০১৯)। "ফ্রম দি এডিটরস: টেরাফর্মিং"ডায়াক্রিটিকস৪৭ (৩): ৪–৫। আইএসএসএন 1080-6539এসটুসিআইডি 230227506 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1353/dia.2019.0023 
  8. "থিমস: টেরাফর্মিং: এসএফই: সায়েন্স ফিকশন এনসাইক্লোপিডিয়া"ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ.এসএফ-এনসাইক্লোপিডিয়া.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪ 
  9. বার্ডিনি, থিয়েরি (২০১৪-০১-০২)। "ডিকম্পিকালচারস: ডিকম্পোজিশন অফ কালচার অ্যান্ড কালচারস অফ ডিকম্পোজিশন"গ্রিন লেটারস১৮ (১): ৯–২১। আইএসএসএন 1468-8417এসটুসিআইডি 144624019ডিওআই:10.1080/14688417.2014.890529 
  10. "থিমস: জেনোফর্মিং: এসএফই: সায়েন্স ফিকশন এনসাইক্লোপিডিয়া"ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ.এসএফ-এনসাইক্লোপিডিয়া.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪ 
  11. "থিমস: ইনার স্পেস: এসএফই: সায়েন্স ফিকশন এনসাইক্লোপিডিয়া"ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ.এসএফ-এনসাইক্লোপিডিয়া.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২১ 
  12. "টেরি প্র্যাচেট অ্যান্ড দ্য রিয়েল সায়েন্স অফ ডিস্কওয়ার্ল্ড"দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৫-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২০ 
  13. "দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ইন নাও দ্য সেকেন্ড-হাইয়েস্ট গ্রসিং মুভি ইন চাইনিজ হিস্ট্রি"শাংহাইস্ট (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০২-১৮। ২০১৯-০২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২০ 
  14. "থিমস: ক্লাইমেট চেঞ্জ : এসএফই: সায়েন্স ফিকশন এনসাইক্লোপিডিয়া"ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ.এসএফ-এনসাইক্লোপিডিয়া.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২০ 
  15. "থিমস: এন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড: এসএফই: সায়েন্স ফিকশন এনসাইক্লোপিডিয়া"ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ.এসএফ-এনসাইক্লোপিডিয়া.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২০  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "sfend" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  16. Rigsby, Jared (২০২০-০৬-৩০)। "কাউবয় বেবপ: হোয়াট হ্যাপেনড টু আর্থ?"জেনর বম্ব (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪ 
  17. "থিমস: ডাইং আর্থ: এসএফই: সায়েন্স ফিকশন এনসাইক্লোপিডিয়া"ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ.এসএফ-এনসাইক্লোপিডিয়া.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২০ 
  18. "থিমস: রুইনড আর্থ: এসএফই: সায়েন্স ফিকশন এনসাইক্লোপিডিয়া"ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ.এসএফ-এনসাইক্লোপিডিয়া.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২০ 
  19. "লেজেন্ড অফ দ্য গ্যালাক্টিক হিরোজ: ১০ থিংস ইউ নেভার নো অ্যাবাউট দিস লং-রানিং অ্যানিমে"সিবিআর (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৫-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪This theme can also be seen in how detailed the backstory is given for why Earth is marginal in the series's current setting. 
  20. জ্যাকসন, পল (২০১১)। "দ্য পাস্ট প্রেজেন্টস দ্য ফিউচার: টুওয়ার্ড দ্য টেরা"মেকামেডিয়া: ৩৯০–৩১২। আইএসএসএন 1934-2489এসটুসিআইডি 123163950জেস্টোর 41511587ডিওআই:10.1353/mec.2011.0001 
  21. ম্যুর, জন কেনেথ (২০১৫-০৯-১৫)। অ্যান অ্যানালিটিক্যাল গাইড টু টেলিভিশনস ব্যাটেলস্টার গ্যালাক্টিকা (ইংরেজি ভাষায়)। ম্যাকফারল্যান্ড। পৃষ্ঠা ১৬। আইএসবিএন 978-1-4766-0656-9 
  22. ক্রিস্টি, মাইক (১৯৯০)। ""দ্য স্টেট অফ দি আর্ট" বাই আইয়ান এম. ব্যাংকস (বুক রিভিউ)"ফাউন্ডেশন৮০প্রোকুয়েস্ট ১৩১২০৩৫৯০৯ 
  23. লেসি, লরেন জে. (২০১৪-০৩-০৮)। "হেটেরোটোপিয়ান পসিবলিটিজ ইন সায়েন্স ফিকশনস বাই স্টিফেন ব্যাক্সটার, টেরি প্রেচেট, স্যামুয়েল ডেলানি অ্যান্ড উরসুলা কে. লে গুইঁ"। বার্নার্ডো, সুসান এম.; পালুম্বো, ডোনাল্ড ই.; সুভিলান, সি. ডব্লিউ.। এনভায়রনমেন্টস ইন সায়েন্স ফিকশন: এসেজ অন অল্টারনেটিভ স্পেসেস (ইংরেজি ভাষায়)। ম্যাকফারল্যান্ড। পৃষ্ঠা ২৩–২৬। আইএসবিএন 978-1-4766-1503-5