বিষয়বস্তুতে চলুন

চরম আবহাওয়া: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
৩৫ নং লাইন: ৩৫ নং লাইন:


মধ্য-অক্ষাংশ অঞ্চলে ফসল চাষের সময় হঠাৎ ও অপ্রত্যাশিতভাবে তুষারপাত বা শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে, ফসলের বৃদ্ধির শুরুর দিকে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ গাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তীব্র ঠান্ডার কারণে গাছ মারা যেতে পারে এবং ফসল নষ্ট হতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি খাদ্য সংকটও দেখা দিতে পারে। অতীতে বহুবার শৈত্যপ্রবাহের কারণে [[দুর্ভিক্ষ]] দেখা দিয়েছে। তীব্র ঠান্ডার কারণে মাটি শক্ত এবং হিমায়িত হয়ে যায়, যার ফলে গাছপালার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ইতিহাসে 'Year Without a Summer' বা '[[গ্রীষ্মবিহীন বর্ষ]]' (১৮১৬) এর ঘটনা উল্লেখযোগ্য। [[আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের প্রকারভেদ|আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের]] ফলে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর পরিমাণ কমে যায় এবং এর ফলে গ্রীষ্মকালেও তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই কারণে ১৮১০-এর দশকে বেশ কয়েকবার ফসল নষ্ট হয়।
মধ্য-অক্ষাংশ অঞ্চলে ফসল চাষের সময় হঠাৎ ও অপ্রত্যাশিতভাবে তুষারপাত বা শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে, ফসলের বৃদ্ধির শুরুর দিকে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ গাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তীব্র ঠান্ডার কারণে গাছ মারা যেতে পারে এবং ফসল নষ্ট হতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি খাদ্য সংকটও দেখা দিতে পারে। অতীতে বহুবার শৈত্যপ্রবাহের কারণে [[দুর্ভিক্ষ]] দেখা দিয়েছে। তীব্র ঠান্ডার কারণে মাটি শক্ত এবং হিমায়িত হয়ে যায়, যার ফলে গাছপালার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ইতিহাসে 'Year Without a Summer' বা '[[গ্রীষ্মবিহীন বর্ষ]]' (১৮১৬) এর ঘটনা উল্লেখযোগ্য। [[আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের প্রকারভেদ|আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের]] ফলে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর পরিমাণ কমে যায় এবং এর ফলে গ্রীষ্মকালেও তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই কারণে ১৮১০-এর দশকে বেশ কয়েকবার ফসল নষ্ট হয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে, অস্বাভাবিকভাবে তীব্র শীতের আবহাওয়া বেশি ঘনঘন হতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় (যেমন [[২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর আমেরিকার শৈত্যপ্রবাহ]]) এরকমটা ঘটতে পারে। আর্কটিক অঞ্চলে [[জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব|জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই পরিস্থিতি]] তৈরি হতে পারে।<ref>{{cite news|url=https://www.bbc.com/news/science-environment-58425526|title=Climate change: Arctic warming linked to colder winters|date=2 September 2021|work=BBC News|access-date=20 October 2021|archive-url=https://web.archive.org/web/20211020112818/https://www.bbc.com/news/science-environment-58425526|archive-date=20 October 2021|url-status=live}}</ref><ref>{{cite journal|last2=Agel|first2=Laurie|date=3 September 2021|title=Linking Arctic variability and change with extreme winter weather in the United States|pages=1116–1121|doi=10.1126/science.abi9167|pmid=34516838|last1=Cohen|first1=Judah|last3=Barlow|first3=Mathew|last4=Garfinkel|first4=Chaim I.|last5=White|first5=Ian|journal=Science|volume=373|issue=6559|bibcode=2021Sci...373.1116C|s2cid=237402139}}</ref> তবে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে সম্পর্ক এখনও বিতর্কিত।<ref>{{cite web|last1=Irfan|first1=Umair|date=18 February 2021|language=en|title=Scientists are divided over whether climate change is fueling extreme cold events|url=https://www.vox.com/22287295/texas-uri-climate-change-cold-polar-vortex-arctic|url-status=live|archive-url=https://web.archive.org/web/20211023071224/https://www.vox.com/22287295/texas-uri-climate-change-cold-polar-vortex-arctic|archive-date=23 October 2021|access-date=24 October 2021|website=Vox}}</ref> JRC PESETA IV প্রকল্পটি ২০২০ সালে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তীব্র শীতের তীব্রতা এবং ঘনত্ব কমবে। এর ফলে মৃদু শীতের আবহাওয়ায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে মৃত্যুহারও কমবে।<ref>{{cite web|title=Climate change impacts of heat and cold extremes on humans|url=https://ec.europa.eu/jrc/sites/default/files/11_pesetaiv_heat_and_cold_sc_august2020_en.pdf|url-status=live|archive-url=https://web.archive.org/web/20210821182617/https://ec.europa.eu/jrc/sites/default/files/11_pesetaiv_heat_and_cold_sc_august2020_en.pdf|archive-date=21 August 2021|access-date=25 October 2021}}</ref> এমনকি, যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এককভাবে শীতের তীব্র আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এবং সম্ভবত কিছু অঞ্চলে এই ঘটনা ঘন ঘন হতে পারে। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, "বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সাথে সাথে উত্তর গোলার্ধে দুর্বল তীব্র শীতের ঘটনার (ECE) পুনরাবৃত্তি, অভিক্ষেপ এলাকা এবং মোট ভূমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। যাইহোক, শক্তিশালী ECE-এর পুনরাবৃত্তি, অভিক্ষেপ এলাকা এবং মোট ভূমির পরিমাণ কোন উল্লেখযোগ্য প্রবণতা দেখায় না, বরং সাইবেরিয়া এবং কানাডায় এগুলো ক্রমবর্ধমান।"<ref>{{Cite journal|last2=Wang|first2=Xiaoxia|date=2023-05-13|title=Contrast responses of strong and weak winter extreme cold events in the Northern Hemisphere to global warming|pages=4533–4550|language=en|doi=10.1007/s00382-023-06822-7|issn=1432-0894|last1=He|first1=Yongli|last3=Zhang|first3=Boyuan|last4=Wang|first4=Zhanbo|last5=Wang|first5=Shanshan|journal=Climate Dynamics|volume=61|issue=9–10|bibcode=2023ClDy...61.4533H|s2cid=258681375}}</ref>


=== ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ===
=== ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ===

১৪:০৪, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

চরম আবহাওয়ার একটি উদাহরণ হল ঘূর্ণিঝড় বা টর্নেডো১৯৯৯ সালে একটি টর্নেডো আঘাত হেনেছিল ওকলাহোমার আনাদার্কোতে, সেসময় সেখানে ব্যাপক টর্নেডোর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল।

চরম আবহাওয়া বলতে বোঝায় অপ্রত্যাশিত, অস্বাভাবিক, বৈরী, বা মৌসুম-বহির্ভূত আবহাওয়াকে; অর্থাৎ, ঐতিহাসিক পরিসরে যা দেখা গিয়েছে তার চরমসীমায় অবস্থিত আবহাওয়া।[১][২] চরম আবহাওয়া পরিমাপ করা হয় একটি স্থানের অতীত আবহাওয়ার রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে। এগুলিকে একটি সম্ভাব্যতা ঘনত্ব ফাংশনের সবচেয়ে অস্বাভাবিক দশ শতাংশের মধ্যে (১০তম বা ৯০তম শতকরা হিসাবে) সংজ্ঞায়িত করা হয়।[৩] চরম আবহাওয়ার প্রধান ধরনগুলির মধ্যে রয়েছে তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ, এবং ভারী বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের মত ঘটনা, যেমন ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। চরম আবহাওয়ার প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি, খরা, বন্যা এবং ভূমিধসবৈরী আবহাওয়া হলো এক ধরণের চরম আবহাওয়া যা জীবন ও সম্পত্তির জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।

জলবায়ু পরিবর্তন কিছু চরম আবহাওয়ার ঘটনার ঘনত্ব ও তীব্রতা বৃদ্ধি করছে।[৪] মানুষের কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে চরম আবহাওয়া এবং অন্যান্য ঘটনার সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত হওয়া যায় অস্বাভাবিক গরম বা শীতের ঘটনার ক্ষেত্রে । এছাড়াও, ভারী বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়া এবং খরার তীব্রতা বৃদ্ধির ব্যাপারেও কিছু নিশ্চয়তা রয়েছে।[৫] বর্তমানের তথ্যপ্রমাণ এবং জলবায়ু মডেলগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে চরম আবহাওয়ার ঘটনা আরো মারাত্মক হয়ে উঠবে। এর ফলে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি, অর্থনৈতিক ব্যয় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব আরো তীব্র হবে।

চরম আবহাওয়া মানব সমাজ এবং প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক বীমা কোম্পানি মিউনিখ রি অনুমান করে যে, ২০১৫ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রত্যক্ষ ক্ষতির পরিমাণ ৯০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ছিল।[৬] কতগুলো মানবিক কর্মকাণ্ড এই ক্ষয়ক্ষতির প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেমন, অনুপযুক্ত নগর পরিকল্পনা, জলাভূমি ধ্বংস করা এবং বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে বাড়িঘর নির্মাণ।

সংজ্ঞা

চরম আবহাওয়া বলতে এমন অস্বাভাবিক আবহাওয়া ঘটনাকে বোঝায়, যা যেকোনো নির্দিষ্ট এলাকায় তুলনামূলকভাবে ঐতিহাসিক অনুসরণে একেবারে চরম পর্যায়ে থাকে।[৭]:২৯০৮ IPCC ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদন (IPCC Sixth Assessment Report) চরম আবহাওয়া ঘটনাকে নিম্নোক্তভাবে সংজ্ঞায়িত করে:

"কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থান এবং বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এমন একটি [আবহাওয়ার] ঘটনা যা বিরল। 'বিরল' এর সংজ্ঞা পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু একটি চরম আবহাওয়া ঘটনা সাধারণত পর্যবেক্ষণ থেকে অনুমানকৃত একটি সম্ভাব্যতা ঘনত্ব ফাংশনের (probability density function) ১০ম বা ৯০তম শতাংশের মতো বিরল বা তার চেয়ে বিরল হয়ে থাকে।"[৮]:২৯০৮

তুলনামূলকভাবে, বৈরী আবহাওয়া (Severe Weather) আবহাওয়ার যে কোনো দিক যা জীবন, সম্পত্তির জন্য ঝুঁকি তৈরি করে বা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। সুতরাং, বৈরী আবহাওয়া হলো এক ধরনের চরম আবহাওয়া।

প্রকারভেদ

বিভিন্ন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী ভিত্তিতে চরম আবহাওয়ার সংজ্ঞা আলাদা হতে পারে, যার ফলে এই সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফলও পরিবর্তিত হয়।[৯]

তাপপ্রবাহ

২০০৩ সালের ইউরোপীয় তাপপ্রবাহ

তাপপ্রবাহ বোঝায় একটি সময়কাল যেখানে অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ তাপমাত্রা ও তাপ-সূচক (heat index) দেখা যায়। ভৌগোলিক অবস্থানের সাথে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে তাপপ্রবাহের সংজ্ঞা পরিবর্তিত হয়।[১০] অত্যধিক গরম প্রায়শই উচ্চ মাত্রার আর্দ্রতার সাথে যুক্ত হয়ে আসে, তবে তা মারাত্মকভাবে শুষ্কও হতে পারে।[১১]

হারিকেন, টর্নেডো ও বজ্রঝড়ের মতো অন্যান্য বৈরী আবহাওয়ার মত দৃশ্যমান না হওয়ায়, তাপপ্রবাহ চরম আবহাওয়ার কম পরিচিত রূপগুলোর একটি।[১২] মারাত্মক গরম আবহাওয়া জনসংখ্যা এবং ফসলের ক্ষতি করতে পারে, এর কারণ সম্ভাব্য পানিশূন্যতা বা হাইপারথার্মিয়া, হিট ক্র্যাম্পস, তাপ সম্প্রসারণ এবং হিট স্ট্রোক। শুষ্ক মাটি ক্ষয়প্রবণ হয়ে উঠলে কৃষির জন্য উপযোগী জমির পরিমাণ হ্রাস পায়। শুষ্ক উদ্ভিদের জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ার সাথে সাথে দাবানলের প্রাদুর্ভাব ঘনঘন দেখা দিতে পারে। জলাশয়ের বাষ্পীভবন সামুদ্রিক প্রাণীকুলের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে, কারণ এটি তাদের বাসস্থানের আকার এবং পানিতে উপস্থিত পুষ্টির পরিমাণও কমিয়ে দেয়। পশুসম্পদ এবং অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যাও হ্রাস পেতে পারে।

অত্যধিক গরমের সময়, উদ্ভিদ পানি সংরক্ষণের জন্য তাদের পাতার ছিদ্র (পত্ররন্ধ্র) বন্ধ করে দেয়, কিন্তু এটি উদ্ভিদের শোষণ ক্ষমতাও হ্রাস করে। এতে বায়ুতে দূষণ ও ওজোন বেড়ে যায়, যা জনসংখ্যার মধ্যে মৃত্যুহার বাড়ায়। অনুমান করা হয়, ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যের প্রচণ্ড গরমকালে অতিরিক্ত দূষণ ৪৬০ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়।[১৩] ধারণা করা হয়, ২০০৩ সালের গ্রীষ্মে ইউরোপীয় তাপপ্রবাহে তাপের চাপ ও বায়ু দূষণের কারণে অতিরিক্ত ৩০,০০০ লোক মারা যায়।[১৪] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০০ টিরও অধিক শহরে নতুন রেকর্ড উচ্চ তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয়েছে।[১৫] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ ১৯৩৬ সালে আঘাত হেনে সরাসরি ৫০০০ জনেরও বেশি লোককে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ ঘটেছিল ১৯৩৮-৩৯ সালে, তাতে ৪৩৮ জন মারা যায়। দ্বিতীয় সবচেয়ে ভয়াবহ তাপপ্রবাহটি আঘাত হানে ১৮৯৬ সালে।

তাপপ্রবাহ মোকাবেলা করা অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুতের চাহিদা (যেমন এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার) বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও ঘটতে পারে।[১৬] নগর এলাকায় হিট আইল্যান্ড প্রভাব তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষ করে রাতের বেলায়।[১৭]

শৈত্য প্রবাহ

শৈত্যপ্রবাহ হলো একটি আবহাওয়া সংক্রান্ত ঘটনা যাকে বাতাসের তাপমাত্রার তীব্র পতন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। বিশেষভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস কর্তৃক ব্যবহৃত সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি শৈত্যপ্রবাহ হলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাপমাত্রার দ্রুত পতন, যার জন্য কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড সুরক্ষার উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা প্রয়োজন হয়। শৈত্যপ্রবাহের সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড তাপমাত্রা হ্রাসের হার এবং এর ন্যূনতম সীমা দ্বারা নির্ধারিত হয়। এই ন্যূনতম তাপমাত্রা ভৌগোলিক অঞ্চল এবং বছরের সময়ের উপর নির্ভরশীল।[১৮] শৈত্যপ্রবাহ সাধারণত যেকোন ভৌগলিক অবস্থানেই ঘটতে পারে এবং সেগুলো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের চলাচলের কারণে জমা হওয়া বৃহৎ মাত্রার ঠান্ডা বায়ু থেকে তৈরি হয়।[১৯]

শৈত্য প্রবাহের কারণে গবাদি পশু ও বন্যপ্রাণীর মৃত্যু এবং আহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। ঠান্ডার প্রভাবে সকল প্রাণীর, এমনকি মানুষেরও শরীরে ক্যালোরির চাহিদা বেড়ে যায়। তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী তুষারপাত হলে চারণভূমিতে নির্ভরশীল প্রাণীরা প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানি সংগ্রহে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং হাইপোথার্মিয়া বা অনাহারে মারা যেতে পারে। শৈত্য প্রবাহের কারণে কৃষকদের গবাদি পশুর জন্য অতিরিক্ত পশুখাদ্য কিনতে হয়, যা তাদের জন্য বেশ ব্যয়বহুল।[২০] দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডার সংস্পর্শে থাকলে মানুষের ফ্রস্টবাইট হতে পারে, যার ফলে অঙ্গহানি বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

প্রচণ্ড শীতের সময়, পর্যাপ্ত তাপ নিরোধক ব্যবস্থা না থাকলে পানির পাইপ জমে যেতে পারে। এমনকি ভালোভাবে সুরক্ষিত না থাকা কিছু অভ্যন্তরীণ প্লাম্বিং পাইপও জমে থাকা পানি প্রসারিত হওয়ার ফলে ফেটে যেতে পারে, যার ফলে সম্পত্তির ক্ষতি হতে পারে। বিপরীতভাবে, প্রচণ্ড শীতের সময় আগুন লাগার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। পানির মূল লাইন ভেঙ্গে গেলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে, যার ফলে আগুন নেভানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।[২১]

মধ্য-অক্ষাংশ অঞ্চলে ফসল চাষের সময় হঠাৎ ও অপ্রত্যাশিতভাবে তুষারপাত বা শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে, ফসলের বৃদ্ধির শুরুর দিকে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ গাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তীব্র ঠান্ডার কারণে গাছ মারা যেতে পারে এবং ফসল নষ্ট হতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি খাদ্য সংকটও দেখা দিতে পারে। অতীতে বহুবার শৈত্যপ্রবাহের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। তীব্র ঠান্ডার কারণে মাটি শক্ত এবং হিমায়িত হয়ে যায়, যার ফলে গাছপালার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ইতিহাসে 'Year Without a Summer' বা 'গ্রীষ্মবিহীন বর্ষ' (১৮১৬) এর ঘটনা উল্লেখযোগ্য। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর পরিমাণ কমে যায় এবং এর ফলে গ্রীষ্মকালেও তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই কারণে ১৮১০-এর দশকে বেশ কয়েকবার ফসল নষ্ট হয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে, অস্বাভাবিকভাবে তীব্র শীতের আবহাওয়া বেশি ঘনঘন হতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় (যেমন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর আমেরিকার শৈত্যপ্রবাহ) এরকমটা ঘটতে পারে। আর্কটিক অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।[২২][২৩] তবে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে সম্পর্ক এখনও বিতর্কিত।[২৪] JRC PESETA IV প্রকল্পটি ২০২০ সালে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তীব্র শীতের তীব্রতা এবং ঘনত্ব কমবে। এর ফলে মৃদু শীতের আবহাওয়ায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে মৃত্যুহারও কমবে।[২৫] এমনকি, যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এককভাবে শীতের তীব্র আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এবং সম্ভবত কিছু অঞ্চলে এই ঘটনা ঘন ঘন হতে পারে। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, "বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সাথে সাথে উত্তর গোলার্ধে দুর্বল তীব্র শীতের ঘটনার (ECE) পুনরাবৃত্তি, অভিক্ষেপ এলাকা এবং মোট ভূমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। যাইহোক, শক্তিশালী ECE-এর পুনরাবৃত্তি, অভিক্ষেপ এলাকা এবং মোট ভূমির পরিমাণ কোন উল্লেখযোগ্য প্রবণতা দেখায় না, বরং সাইবেরিয়া এবং কানাডায় এগুলো ক্রমবর্ধমান।"[২৬]

ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়

তথ্যসূত্র

  1. "Has Climate Variability, or have Climate Extremes, Changed?"Intergovernmental Panel on Climate Change। ২০০৫-১১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০০৭ 
  2. IPCC, 2022: Annex II: Glossary [Möller, V., R. van Diemen, J.B.R. Matthews, C. Méndez, S. Semenov, J.S. Fuglestvedt, A. Reisinger (eds.)]. In: Climate Change 2022: Impacts, Adaptation and Vulnerability. Contribution of Working Group II to the Sixth Assessment Report of the Intergovernmental Panel on Climate Change [H.-O. Pörtner, D.C. Roberts, M. Tignor, E.S. Poloczanska, K. Mintenbeck, A. Alegría, M. Craig, S. Langsdorf, S. Löschke, V. Möller, A. Okem, B. Rama (eds.)]. Cambridge University Press, Cambridge, UK and New York, NY, US, pp. 2897–2930, doi:10.1017/9781009325844.029.
  3. IPCC, 2022: Annex II: Glossary [Möller, V., R. van Diemen, J.B.R. Matthews, C. Méndez, S. Semenov, J.S. Fuglestvedt, A. Reisinger (eds.)]. In: Climate Change 2022: Impacts, Adaptation and Vulnerability. Contribution of Working Group II to the Sixth Assessment Report of the Intergovernmental Panel on Climate Change [H.-O. Pörtner, D.C. Roberts, M. Tignor, E.S. Poloczanska, K. Mintenbeck, A. Alegría, M. Craig, S. Langsdorf, S. Löschke, V. Möller, A. Okem, B. Rama (eds.)]. Cambridge University Press, Cambridge, UK and New York, NY, US, pp. 2897–2930, doi:10.1017/9781009325844.029.
  4. Seneviratne, Sonia I.; Zhang, Xuebin; Adnan, M.; Badi, W.; ও অন্যান্য (২০২১)। "Chapter 11: Weather and climate extreme events in a changing climate" (পিডিএফ)Climate Change 2021: The Physical Science Basis. Contribution of Working Group I to the Sixth Assessment Report of the Intergovernmental Panel on Climate। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 1517। 
  5. Attribution of Extreme Weather Events in the Context of Climate Change (প্রতিবেদন)। Washington, DC: The National Academies Press। ২০১৬। পৃষ্ঠা 127–136। আইএসবিএন 978-0-309-38094-2ডিওআই:10.17226/21852। ২০২২-০২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২২ 
  6. Attribution of Extreme Weather Events in the Context of Climate Change (প্রতিবেদন)। Washington, DC: The National Academies Press। ২০১৬। পৃষ্ঠা 21–24। আইএসবিএন 978-0-309-38094-2ডিওআই:10.17226/21852 
  7. IPCC, 2022: Annex II: Glossary [Möller, V., R. van Diemen, J.B.R. Matthews, C. Méndez, S. Semenov, J.S. Fuglestvedt, A. Reisinger (eds.)]. In: Climate Change 2022: Impacts, Adaptation and Vulnerability. Contribution of Working Group II to the Sixth Assessment Report of the Intergovernmental Panel on Climate Change [H.-O. Pörtner, D.C. Roberts, M. Tignor, E.S. Poloczanska, K. Mintenbeck, A. Alegría, M. Craig, S. Langsdorf, S. Löschke, V. Möller, A. Okem, B. Rama (eds.)]. Cambridge University Press, Cambridge, UK and New York, NY, US, pp. 2897–2930, doi:10.1017/9781009325844.029.
  8. IPCC, 2022: Annex II: Glossary [Möller, V., R. van Diemen, J.B.R. Matthews, C. Méndez, S. Semenov, J.S. Fuglestvedt, A. Reisinger (eds.)]. In: Climate Change 2022: Impacts, Adaptation and Vulnerability. Contribution of Working Group II to the Sixth Assessment Report of the Intergovernmental Panel on Climate Change [H.-O. Pörtner, D.C. Roberts, M. Tignor, E.S. Poloczanska, K. Mintenbeck, A. Alegría, M. Craig, S. Langsdorf, S. Löschke, V. Möller, A. Okem, B. Rama (eds.)]. Cambridge University Press, Cambridge, UK and New York, NY, US, pp. 2897–2930, doi:10.1017/9781009325844.029.
  9. Attribution of Extreme Weather Events in the Context of Climate Change (প্রতিবেদন)। Washington, DC: The National Academies Press। ২০১৬। পৃষ্ঠা 21–24। আইএসবিএন 978-0-309-38094-2ডিওআই:10.17226/21852 
  10. Mogil, H Michael (২০০৭)। Extreme Weather। New York: Black Dog & Leventhal Publishers। পৃষ্ঠা 210–211। আইএসবিএন 978-1-57912-743-5 
  11. NOAA NWS। "Heat: A Major Killer"। ২০১৪-০৭-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-১৬ 
  12. Casey Thornbrugh; Asher Ghertner; Shannon McNeeley; Olga Wilhelmi; Robert Harriss (২০০৭)। "Heat Wave Awareness Project"National Center for Atmospheric Research। ২০১৮-০৮-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১৮ 
  13. "It's not just the heat – it's the ozone: Study highlights hidden dangers"University of York। ২০১৩। ২০১৮-০৭-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-১৬ 
  14. Brücker, G. (২০০৫)। "Vulnerable populations: Lessons learnt from the summer 2003 heatwaves in europe"। Eurosurveillance10 (7): 1–2। ডিওআই:10.2807/esm.10.07.00551-enঅবাধে প্রবেশযোগ্য 
  15. Epstein, Paul R (২০০৫)। "Climate Change and Human Health"The New England Journal of Medicine353 (14): 1433–1436। ডিওআই:10.1056/nejmp058079পিএমআইডি 16207843পিএমসি 2636266অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  16. Doan, Lynn; Covarrubias, Amanda (২০০৬-০৭-২৭)। "Heat Eases, but Thousands of Southern Californians Still Lack Power"Los Angeles Times। ২০২৩-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১৬, ২০১৪ 
  17. T. R. Oke (১৯৮২)। "The energetic basis of the urban heat island"। Quarterly Journal of the Royal Meteorological Society108 (455): 1–24। এসটুসিআইডি 120122894ডিওআই:10.1002/qj.49710845502বিবকোড:1982QJRMS.108....1O 
  18. Glossary of Meteorology (২০০৯)। "Cold Wave"American Meteorological Society। ২০১১-০৫-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১৮ 
  19. Mogil, H Michael (২০০৭)। Extreme Weather। New York: Black Dog & Leventhal Publishers। পৃষ্ঠা 210–211। আইএসবিএন 978-1-57912-743-5 
  20. Mogil, H Michael (২০০৭)। Extreme Weather। New York: Black Dog & Leventhal Publishers। পৃষ্ঠা 210–211। আইএসবিএন 978-1-57912-743-5 
  21. Mogil, H Michael (২০০৭)। Extreme Weather। New York: Black Dog & Leventhal Publishers। পৃষ্ঠা 210–211। আইএসবিএন 978-1-57912-743-5 
  22. "Climate change: Arctic warming linked to colder winters"BBC News। ২ সেপ্টেম্বর ২০২১। ২০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০২১ 
  23. Cohen, Judah; Agel, Laurie; Barlow, Mathew; Garfinkel, Chaim I.; White, Ian (৩ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "Linking Arctic variability and change with extreme winter weather in the United States"। Science373 (6559): 1116–1121। এসটুসিআইডি 237402139 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1126/science.abi9167পিএমআইডি 34516838 |pmid= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)বিবকোড:2021Sci...373.1116C 
  24. Irfan, Umair (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "Scientists are divided over whether climate change is fueling extreme cold events"Vox (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০২১ 
  25. "Climate change impacts of heat and cold extremes on humans" (পিডিএফ)। ২১ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২১ 
  26. He, Yongli; Wang, Xiaoxia; Zhang, Boyuan; Wang, Zhanbo; Wang, Shanshan (২০২৩-০৫-১৩)। "Contrast responses of strong and weak winter extreme cold events in the Northern Hemisphere to global warming"। Climate Dynamics (ইংরেজি ভাষায়)। 61 (9–10): 4533–4550। আইএসএসএন 1432-0894এসটুসিআইডি 258681375 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1007/s00382-023-06822-7বিবকোড:2023ClDy...61.4533H