পানি দূষণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{কাজ চলছে/২০২১}}[[চিত্র:Nrborderborderentrythreecolorsmay05-1-.JPG|thumb|300px|মেক্সিক্যালি (মেক্সিকো) থেকে [[নিউ রিভার]] দ্বারা বাহিত হয়ে কাঁচা নিকাশী এবং [[শিল্প বর্জ্য|শিল্প বর্জ্যের]] ক্যালেক্সিকো, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রবেশ ]]সাধারণত মানুষের কার্যকলাপের ফলে জলাশয় দূষিত হয়ে পড়লে তাকে পানি দূষণ বা জল দূষণ বলে। উদাহরণস্বরূপ, জলাশয় বলতে হ্রদ, নদী, সমুদ্র, ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর এবং ভৌমজলকেই বোঝায়। স্বাভাবিক পরিবেশে দূষণকারী পদার্থ উপস্থিত হলে জলদূষণ হয়। উদাহরণস্বরূপ, অপর্যাপ্তভাবে পরিশোধিত বর্জ্যজল যদি স্বাভাবিক জলাশয়ে জমা হয়, তবে তা জলজ বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশগত অবনতি ঘটাতে পারে। এর ফলে, ভাটির দিকে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তারা এই দূষিত জল পান করার কাজে, স্নানের কাজে অথবা সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারে। জলবাহিত রোগের প্রকোপে সারা বিশ্বে যত মানুষ আক্রান্ত হয় বা মারা যায়, তাদের সিংহভাগই ঘটে জল দূষণের কারণে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=|শিরোনাম=West, Larry (March 26, 2006). "World Water Day: A Billion People Worldwide Lack Safe Drinking Water". About.com.}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Pink, Daniel H. (April 19, 2006). "Investing in Tomorrow's Liquid Gold". Yahoo. Archived from the original on April 23, 2006.}}</ref>
{{কাজ চলছে/২০২১}}[[চিত্র:Nrborderborderentrythreecolorsmay05-1-.JPG|thumb|300px|মেক্সিক্যালি (মেক্সিকো) থেকে [[নিউ রিভার]] দ্বারা বাহিত হয়ে কাঁচা নিকাশী এবং [[শিল্প বর্জ্য|শিল্প বর্জ্যের]] ক্যালেক্সিকো, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রবেশ ]]সাধারণত মানুষের কার্যকলাপের ফলে জলাশয় দূষিত হয়ে পড়লে তাকে পানি দূষণ বা জল দূষণ বলে। উদাহরণস্বরূপ, জলাশয় বলতে হ্রদ, নদী, সমুদ্র, ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর এবং ভৌমজলকেই বোঝায়। স্বাভাবিক পরিবেশে দূষণকারী পদার্থ উপস্থিত হলে জলদূষণ হয়। উদাহরণস্বরূপ, অপর্যাপ্তভাবে পরিশোধিত বর্জ্যজল যদি স্বাভাবিক জলাশয়ে জমা হয়, তবে তা জলজ বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশগত অবনতি ঘটাতে পারে। এর ফলে, ভাটির দিকে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তারা এই দূষিত জল পান করার কাজে, স্নানের কাজে অথবা সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারে। জলবাহিত রোগের প্রকোপে সারা বিশ্বে যত মানুষ আক্রান্ত হয় বা মারা যায়, তাদের সিংহভাগই ঘটে জল দূষণের কারণে।<ref name=":0">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=|শিরোনাম=West, Larry (March 26, 2006). "World Water Day: A Billion People Worldwide Lack Safe Drinking Water". About.com.}}</ref><ref name=":1">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Pink, Daniel H. (April 19, 2006). "Investing in Tomorrow's Liquid Gold". Yahoo. Archived from the original on April 23, 2006.}}</ref>


জলদূষণকে ভূ-পৃষ্ঠতলীয় জল বা ভৌমজল দূষণ – এই দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। সামুদ্রিক দূষণ এবং পুষ্টি দূষণ – জল দূষণের এই দুটি উপসেট। জল দূষণের উৎস দুটি হতে পারে - হয় বিন্দু উৎস নতুবা অ-বিন্দু উৎস। বিন্দু উৎসে দূষণের একটিমাত্র চিহ্নিতযোগ্য কারণ থাকে, যেমন বেনো জল বা বর্জ্যজল পরিশোধক কারখানা। অ-বিন্দু উৎস হল আরো বেশি বিস্তৃত, যেমন কৃষিজ জল।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Moss, Brian (2008). "Water Pollution by Agriculture". Phil. Trans. R. Soc. Lond. B. 363 (1491): 659–666. doi:10.1098/rstb.2007.2176. PMC 2610176. PMID 17666391.}}</ref> বহু সময় ধরে ক্রমবর্দ্ধিত কাজের ফলেই দূষণ সৃষ্টি হয়। দূষিত জলাশয়ে থাকা অথবা এর সংস্পর্শে আসা সমস্ত গাছ এবং জীবই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দূষণের ফলে একক প্রজাতিগুলো ধ্বংস হতে পারে এবং এরা যে স্বাভাবিক জৈব সংগঠনের অন্তর্গত তারও ক্ষতি হতে পারে।
জলদূষণকে ভূ-পৃষ্ঠতলীয় জল বা ভৌমজল দূষণ – এই দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। সামুদ্রিক দূষণ এবং পুষ্টি দূষণ – জল দূষণের এই দুটি উপসেট। জল দূষণের উৎস দুটি হতে পারে - হয় বিন্দু উৎস নতুবা অ-বিন্দু উৎস। বিন্দু উৎসে দূষণের একটিমাত্র চিহ্নিতযোগ্য কারণ থাকে, যেমন বেনো জল বা বর্জ্যজল পরিশোধক কারখানা। অ-বিন্দু উৎস হল আরো বেশি বিস্তৃত, যেমন কৃষিজ জল।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Moss, Brian (2008). "Water Pollution by Agriculture". Phil. Trans. R. Soc. Lond. B. 363 (1491): 659–666. doi:10.1098/rstb.2007.2176. PMC 2610176. PMID 17666391.}}</ref> বহু সময় ধরে ক্রমবর্দ্ধিত কাজের ফলেই দূষণ সৃষ্টি হয়। দূষিত জলাশয়ে থাকা অথবা এর সংস্পর্শে আসা সমস্ত গাছ এবং জীবই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দূষণের ফলে একক প্রজাতিগুলো ধ্বংস হতে পারে এবং এরা যে স্বাভাবিক জৈব সংগঠনের অন্তর্গত তারও ক্ষতি হতে পারে।
১১ নং লাইন: ১১ নং লাইন:
জল যদি মানুষবাহিত দূষক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেই জলকে দূষিত বলা হয়। এইসকল দূষকের ফলে এই জল হয় মানুষের ব্যবহারের যোগ্য হতে পারে না, যেমন জলপানের অযোগ্য হয়ে যায়, অথবা এই জলের জীবগোষ্ঠী ধারণের ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যায়, যেমন মাছ। আগ্নেয়গিরি, শৈবাল পুষ্প, ঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনার ফলেও জলের গুণাগুণে এবং এর বাস্তুতান্ত্রিক অবস্থায় প্রভূত পরিবর্তন দেখা দেয়।
জল যদি মানুষবাহিত দূষক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেই জলকে দূষিত বলা হয়। এইসকল দূষকের ফলে এই জল হয় মানুষের ব্যবহারের যোগ্য হতে পারে না, যেমন জলপানের অযোগ্য হয়ে যায়, অথবা এই জলের জীবগোষ্ঠী ধারণের ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যায়, যেমন মাছ। আগ্নেয়গিরি, শৈবাল পুষ্প, ঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনার ফলেও জলের গুণাগুণে এবং এর বাস্তুতান্ত্রিক অবস্থায় প্রভূত পরিবর্তন দেখা দেয়।


জল দূষণ একটি বিশ্বব্যাপী গুরুতর সমস্যা। এর জন্য সর্বস্তরে (আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব্যক্তিগত ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর এবং কুয়ো) জলসম্পদ নীতির মূল্যায়ন এবং পুনর্মূল্যায়ন জরুরী। মনে করা হয়, বিশ্বে যত রোগ ও মৃত্যু হয়, তার মুখ্য কারণ হল জল দূষণ। ২০১৫ সালে ১৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল জল দূষণ।
জল দূষণ একটি বিশ্বব্যাপী গুরুতর সমস্যা। এর জন্য সর্বস্তরে (আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব্যক্তিগত ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর এবং কুয়ো) জলসম্পদ নীতির মূল্যায়ন এবং পুনর্মূল্যায়ন জরুরী। মনে করা হয়, বিশ্বে যত রোগ ও মৃত্যু হয়, তার মুখ্য কারণ হল জল দূষণ।<ref name=":1" /><ref name=":0" /> ২০১৫ সালে ১৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল জল দূষণ।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Kelland, Kate (October 19, 2017). "Study links pollution to millions of deaths worldwide". Reuters.}}</ref>


বৈশ্বিক সামুদ্রিক পরিবেশগত সমীক্ষা নামক সংস্থার মতে জল দূষণ হল অন্যতম প্রধান একটি পরিবেশগত সমস্যা যেটা পরবর্তী দশকগুলোতে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন যেগুলো ৭০% অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং পৃথিবীর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের একটি বড়ো অংশ শোষণ করে, জল দূষণ তাদের জন্য একটি অন্যতম সমস্যা। এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য সংস্থা থেকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো কার্যকরী হতে দশ বছর সময় লাগবে।
বৈশ্বিক সামুদ্রিক পরিবেশগত সমীক্ষা নামক সংস্থার মতে জল দূষণ হল অন্যতম প্রধান একটি পরিবেশগত সমস্যা যেটা পরবর্তী দশকগুলোতে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন যেগুলো ৭০% অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং পৃথিবীর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের একটি বড়ো অংশ শোষণ করে, জল দূষণ তাদের জন্য একটি অন্যতম সমস্যা। এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য সংস্থা থেকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো কার্যকরী হতে দশ বছর সময় লাগবে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম="Goes Foundation Home". Global Oceanic Environmemtal Survey. Retrieved September 1, 2019.}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম="Resources". GOES Foundation. Retrieved September 10, 2019.}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Dryden, Howard. "We have 10 years to save the seas". Global Oceanic Environmental Survey. Retrieved September 1, 2019.}}</ref>


ভারত এবং চীন এই দুই দেশে জল দূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। ভারতে প্রতিদিন আনুমানিক ৫৮০জন মানুষ জল দূষণজনিত রোগে (জলবাহিত রোগসমেত) মারা যায়। চীনের শহরের জলের প্রায় ৯০ শতাংশই দূষিত। ২০০৭ সালের হিসেবানুযায়ী, চীনের পাঁচ লক্ষ মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের থেকে বঞ্চিত।
ভারত এবং চীন এই দুই দেশে জল দূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। ভারতে প্রতিদিন আনুমানিক ৫৮০জন মানুষ জল দূষণজনিত রোগে (জলবাহিত রোগসমেত) মারা যায়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম="An overview of diarrhea, symptoms, diagnosis and the costs of morbidity" (PDF). CHNRI. 2010. Archived from the original (PDF) on May 12, 2013.}}</ref> চীনের শহরের জলের প্রায় ৯০ শতাংশই দূষিত।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম="China says water pollution so severe that cities could lack safe supplies". Chinadaily.com.cn. June 7, 2005.}}</ref> ২০০৭ সালের হিসেবানুযায়ী, চীনের পাঁচ লক্ষ মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের থেকে বঞ্চিত।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Kahn, Joseph; Yardley, Jim (August 26, 2007). "As China Roars, Pollution Reaches Deadly Extremes". New York Times.}}</ref>


উন্নয়নশীল দেশের এই চূড়ান্ত জল দূষণের পাশাপাশি, উন্নত দেশগুলোও কিন্তু দূষণজনিত সমস্যা নিয়ে লড়াই করে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জলের মান রিপোর্টে বলা হয়েছে যে যত মাইল প্রবাহের মূল্যায়ন করা হয়েছে তার ৪৪ শতাংশ, মূল্যায়িত হ্রদের একরের ৬৪ শতাংশ এবং উপসাগর ও মোহনার স্কোয়্যার মাইলের ৩০ শতাংশকে দূষিত বলে জানানো হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশের এই চূড়ান্ত জল দূষণের পাশাপাশি, উন্নত দেশগুলোও কিন্তু দূষণজনিত সমস্যা নিয়ে লড়াই করে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জলের মান রিপোর্টে বলা হয়েছে যে যত মাইল প্রবাহের মূল্যায়ন করা হয়েছে তার ৪৪ শতাংশ, মূল্যায়িত হ্রদের একরের ৬৪ শতাংশ এবং উপসাগর ও মোহনার স্কোয়্যার মাইলের ৩০ শতাংশকে দূষিত বলে জানানো হয়েছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Fact Sheet: 2004 National Water Quality Inventory Report to Congress (Report). EPA. January 2009. EPA 841-F-08-003.}}</ref>


== প্রকারভেদ ==
== প্রকারভেদ ==
২৭ নং লাইন: ২৭ নং লাইন:
=== সামুদ্রিক দূষণ ===
=== সামুদ্রিক দূষণ ===
[[চিত্র:AngleseyCopperStream.jpg|থাম্ব|অ্যাঙ্গলেসিতে একটি দূষিত নদী দ্বারা একটি পরিত্যক্ত তামার খনির নিকাশিত হচ্ছে।]]
[[চিত্র:AngleseyCopperStream.jpg|থাম্ব|অ্যাঙ্গলেসিতে একটি দূষিত নদী দ্বারা একটি পরিত্যক্ত তামার খনির নিকাশিত হচ্ছে।]]
সমুদ্রে দূষিত পদার্থের আগমনের একটি সাধারণ পথ হল নদীর জল। এর একটি উদাহরণ হল, নর্দমার জল এবং কারখানার বর্জ্য সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে ফেলা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই বিশেষ করে এই ধরনের দূষণ দেখা যায়। বাস্তবিক, সারা বিশ্বের ১০টি সর্ববৃহৎ সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণকারী দেশকে বেশি থেকে কম এই ক্রমে সাজালে হয় – চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস্‌, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মিশর, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া এবং বাংলাদেশ; যেসকল নদীগুলোর মাধ্যমে সমুদ্র দূষিত হয় তারা হল ইয়াঙ্গটজে, সিন্ধু, পীতনদী, হাই, নীল, গঙ্গা, পার্ল, আমুর, নাইজের ও মেকং এবং “পৃথিবীতে সমুদ্রে যত প্লাস্টিক জমা হয়, তার ৯০শতাংশ এইসকল নদীগুলো দ্বারা বাহিত হয়”।
সমুদ্রে দূষিত পদার্থের আগমনের একটি সাধারণ পথ হল নদীর জল। এর একটি উদাহরণ হল, নর্দমার জল এবং কারখানার বর্জ্য সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে ফেলা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই বিশেষ করে এই ধরনের দূষণ দেখা যায়। বাস্তবিক, সারা বিশ্বের ১০টি সর্ববৃহৎ সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণকারী দেশকে বেশি থেকে কম এই ক্রমে সাজালে হয় – চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস্‌, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মিশর, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া এবং বাংলাদেশ;<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Jambeck, Jenna R.; Geyer, Roland; Wilcox, Chris (February 12, 2015). "Plastic waste inputs from land into the ocean" (PDF). Science. 347 (6223): 769. Bibcode:2015Sci...347..768J. doi:10.1126/science.1260352. PMID 25678662. S2CID 206562155. Retrieved August 28, 2018.}}</ref> যেসকল নদীগুলোর মাধ্যমে সমুদ্র দূষিত হয় তারা হল ইয়াঙ্গটজে, সিন্ধু, পীতনদী, হাই, নীল, গঙ্গা, পার্ল, আমুর, নাইজের ও মেকং এবং “পৃথিবীতে সমুদ্রে যত প্লাস্টিক জমা হয়, তার ৯০শতাংশ এইসকল নদীগুলো দ্বারা বাহিত হয়”।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Christian Schmidt; Tobias Krauth; Stephan Wagner (October 11, 2017). "Export of Plastic Debris by Rivers into the Sea" (PDF). Environmental Science & Technology. 51 (21): 12246–12253. Bibcode:2017EnST...5112246S. doi:10.1021/acs.est.7b02368. PMID 29019247. "The 10 top-ranked rivers transport 88–95% of the global load into the sea"}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Harald Franzen (November 30, 2017). "Almost all plastic in the ocean comes from just 10 rivers". Deutsche Welle. Retrieved December 18, 2018. "It turns out that about 90 percent of all the plastic that reaches the world's oceans gets flushed through just 10 rivers: The Yangtze, the Indus, Yellow River, Hai River, the Nile, the Ganges, Pearl River, Amur River, the Niger, and the Mekong (in that order)."}}</ref>


প্লাস্টিক আবর্জনা সমুদ্রের বড় বড় বলয়ের (ঘুর্ণি) মধ্যে আটকে পড়ে। প্লাস্টিক আবর্জনাগুলো সামুদ্রিক দূষণে সৃষ্ট বিষাক্ত পদার্থগুলোকে শোষণ করে নেয় যার ফলে সামুদ্রিক জীব এগুলো খেয়ে ফেললে তাদের শরীরেও বিষ প্রবেশ করতে পারে। এইসকল দীর্ঘজীবী পদার্থগুলো অনেক সময়েই শেষমেশ সামুদ্রিক পাখি এবং প্রাণীদের পেটে চলে যায়। এর ফলে তাদের হজমের পথ আটকে যায়, যার ফলে তাদের খিদে কমে যায় অথবা এর থেকে তারা অনাহারেও ভুগতে পারে।
প্লাস্টিক আবর্জনা সমুদ্রের বড় বড় বলয়ের (ঘুর্ণি) মধ্যে আটকে পড়ে। প্লাস্টিক আবর্জনাগুলো সামুদ্রিক দূষণে সৃষ্ট বিষাক্ত পদার্থগুলোকে শোষণ করে নেয় যার ফলে সামুদ্রিক জীব এগুলো খেয়ে ফেললে তাদের শরীরেও বিষ প্রবেশ করতে পারে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Zaikab, Gwyneth Dickey (March 28, 2011). "Marine microbes digest plastic". Nature. doi:10.1038/news.2011.191. ISSN 0028-0836.}}</ref> এইসকল দীর্ঘজীবী পদার্থগুলো অনেক সময়েই শেষমেশ সামুদ্রিক পাখি এবং প্রাণীদের পেটে চলে যায়। এর ফলে তাদের হজমের পথ আটকে যায়, যার ফলে তাদের খিদে কমে যায় অথবা এর থেকে তারা অনাহারেও ভুগতে পারে।


মূল দূষক ছাড়াও, তার লব্ধ পরিস্থিতিরও অনেক ধরনের অপ্রত্যক্ষ প্রভাব থাকে। যেমন ভূপৃষ্ঠে জলের স্রোতে পলি ভেসে থাকলে জলস্তম্ভের মধ্যে দিয়ে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারে না এবং এর ফলে জলজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
মূল দূষক ছাড়াও, তার লব্ধ পরিস্থিতিরও অনেক ধরনের অপ্রত্যক্ষ প্রভাব থাকে। যেমন ভূপৃষ্ঠে জলের স্রোতে পলি ভেসে থাকলে জলস্তম্ভের মধ্যে দিয়ে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারে না এবং এর ফলে জলজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।


=== ভৌমজল দূষণ ===
=== ভৌমজল দূষণ ===
ভৌমজল এবং ভূপৃষ্ঠতলীয় জলের মধ্যেকার যোগাযোগটা কিছুটা জটিল। যার ফলে, ভৌমজল দূষণকে ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণ বলা যায় না। প্রকৃতিগত কারণেই, ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তরের দূষিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু এই দূষণের উৎস ভূপৃষ্ঠতলীয় জলাশয়ের প্রত্যক্ষ ক্ষতি নাও করতে পারে। বিন্দু বনাম অ-বিন্দু উৎসের পার্থক্য কিছু ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে।
ভৌমজল এবং ভূপৃষ্ঠতলীয় জলের মধ্যেকার যোগাযোগটা কিছুটা জটিল। যার ফলে, ভৌমজল দূষণকে ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণ বলা যায় না।<ref name=":2">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Ground Water and Surface Water: A Single Resource (Report). Denver, CO: United States Geological Survey (USGS). 1998. Circular 1139.}}</ref> প্রকৃতিগত কারণেই, ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তরের দূষিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু এই দূষণের উৎস ভূপৃষ্ঠতলীয় জলাশয়ের প্রত্যক্ষ ক্ষতি নাও করতে পারে। বিন্দু বনাম অ-বিন্দু উৎসের পার্থক্য কিছু ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে।


ভৌমজলের দূষণের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাটির বৈশিষ্ট্য এবং স্থানের ভূতত্ত্ব, জল ভূতত্ত্ব, জলবিদ্যা এবং দূষকের প্রকৃতির ওপর নজর দেওয়া হয়। ভৌমজলের দূষণের কারণের মধ্যে যেগুলো থাকে তা হল: সাধারণভাবে ঘটা (জিওজেনিক), স্থানটার শৌচব্যবস্থা, নিকাশি ব্যবস্থা, সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার, বাণিজ্যিক এবং কলকারখানার অবাঞ্ছিত বহির্গমন, হাইড্রলিক ফাটল, ল্যান্ডফিল লিচেট।
ভৌমজলের দূষণের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাটির বৈশিষ্ট্য এবং স্থানের ভূতত্ত্ব, জল ভূতত্ত্ব, জলবিদ্যা এবং দূষকের প্রকৃতির ওপর নজর দেওয়া হয়। ভৌমজলের দূষণের কারণের মধ্যে যেগুলো থাকে তা হল: সাধারণভাবে ঘটা (জিওজেনিক), স্থানটার শৌচব্যবস্থা, নিকাশি ব্যবস্থা, সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার, বাণিজ্যিক এবং কলকারখানার অবাঞ্ছিত বহির্গমন, হাইড্রলিক ফাটল, ল্যান্ডফিল লিচেট।


== দূষণ উৎসের বিভাগ ==
== দূষণ উৎসের বিভাগ ==
ভূপৃষ্ঠতলীয় জল এবং ভৌমজল দুটি পৃথক সম্পদ হিসেবে প্রায়শই চর্চিত এবং আলোচিত হয়, যদিও এদের মধ্যে আন্তর্যোগ রয়েছে। ভূপৃষ্ঠতলীয় জল মাটির মধ্যে দিয়ে চুঁইয়ে যায় এবং ভৌমজলে রূপান্তরিত হয়। বিপরীতক্রমে, ভৌমজলও ভূপৃষ্ঠতলীয় জলের যোগান দিতে পারে। ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণের উৎসকে সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়।
ভূপৃষ্ঠতলীয় জল এবং ভৌমজল দুটি পৃথক সম্পদ হিসেবে প্রায়শই চর্চিত এবং আলোচিত হয়, যদিও এদের মধ্যে আন্তর্যোগ রয়েছে।<ref name=":2" /> ভূপৃষ্ঠতলীয় জল মাটির মধ্যে দিয়ে চুঁইয়ে যায় এবং ভৌমজলে রূপান্তরিত হয়। বিপরীতক্রমে, ভৌমজলও ভূপৃষ্ঠতলীয় জলের যোগান দিতে পারে। ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণের উৎসকে সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়।


=== বিন্দু উৎস ===
=== বিন্দু উৎস ===

১৬:৫৯, ৬ এপ্রিল ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মেক্সিক্যালি (মেক্সিকো) থেকে নিউ রিভার দ্বারা বাহিত হয়ে কাঁচা নিকাশী এবং শিল্প বর্জ্যের ক্যালেক্সিকো, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রবেশ

সাধারণত মানুষের কার্যকলাপের ফলে জলাশয় দূষিত হয়ে পড়লে তাকে পানি দূষণ বা জল দূষণ বলে। উদাহরণস্বরূপ, জলাশয় বলতে হ্রদ, নদী, সমুদ্র, ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর এবং ভৌমজলকেই বোঝায়। স্বাভাবিক পরিবেশে দূষণকারী পদার্থ উপস্থিত হলে জলদূষণ হয়। উদাহরণস্বরূপ, অপর্যাপ্তভাবে পরিশোধিত বর্জ্যজল যদি স্বাভাবিক জলাশয়ে জমা হয়, তবে তা জলজ বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশগত অবনতি ঘটাতে পারে। এর ফলে, ভাটির দিকে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তারা এই দূষিত জল পান করার কাজে, স্নানের কাজে অথবা সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারে। জলবাহিত রোগের প্রকোপে সারা বিশ্বে যত মানুষ আক্রান্ত হয় বা মারা যায়, তাদের সিংহভাগই ঘটে জল দূষণের কারণে।[১][২]

জলদূষণকে ভূ-পৃষ্ঠতলীয় জল বা ভৌমজল দূষণ – এই দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। সামুদ্রিক দূষণ এবং পুষ্টি দূষণ – জল দূষণের এই দুটি উপসেট। জল দূষণের উৎস দুটি হতে পারে - হয় বিন্দু উৎস নতুবা অ-বিন্দু উৎস। বিন্দু উৎসে দূষণের একটিমাত্র চিহ্নিতযোগ্য কারণ থাকে, যেমন বেনো জল বা বর্জ্যজল পরিশোধক কারখানা। অ-বিন্দু উৎস হল আরো বেশি বিস্তৃত, যেমন কৃষিজ জল।[৩] বহু সময় ধরে ক্রমবর্দ্ধিত কাজের ফলেই দূষণ সৃষ্টি হয়। দূষিত জলাশয়ে থাকা অথবা এর সংস্পর্শে আসা সমস্ত গাছ এবং জীবই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দূষণের ফলে একক প্রজাতিগুলো ধ্বংস হতে পারে এবং এরা যে স্বাভাবিক জৈব সংগঠনের অন্তর্গত তারও ক্ষতি হতে পারে।

জল দূষণের কারণ হিসেবে প্রচুর রাসায়নিক এবং রোগজীবাণুর কথা বলা যেতে পারে; তাছাড়া অনেক ভৌত স্থিতিমাপও রয়েছে। দূষকগুলো জৈব অথবা অজৈব পদার্থের হতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রাও দূষিত জলের কারণ হতে পারে। তাপীয় দূষণের একটি সাধারণ কারণ হল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং শিল্পোৎপাদন কেন্দ্রে কুল্যান্ট হিসেবে জলের ব্যবহার। উচ্চ জলীয় তাপমাত্রা অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয় যার ফলে মাছ মারা যায় এবং খাদ্যশৃঙ্খলের উপাদানও পরিবর্তিত হয়, প্রজাতির বাস্তুতন্ত্র কমে আসে, এবং এর ফলে তাপের ফলে সৃষ্ট ব্যাকটিরিয়ার নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়।[৪][৫]

জলের নমুনা বিশ্লেষণ করে জল দূষণ পরিমাপ করা হয়। ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈব পরীক্ষা করা হতে পারে। সঠিক পরিকাঠামো এবং পরিচালনা পরিকল্পনার দ্বারাই জল দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। পরিকাঠামোর মধ্যে থাকতে পারে বর্জ্যজল পরিশোধক কারখানা। বর্জ্যনিকাশী পরিশোধক কারখানা এবং শিল্পজাত বর্জ্যজলের পরিশোধক কারখানা অশোধিত বর্জ্যজলের হাত থেকে জলাশয়গুলোকে রক্ষা করতে পারে। কৃষিখামারের ক্ষেত্রে কৃষিজ বর্জ্যজল পরিশোধন এবং নির্মাণ স্থানে ভূমিক্ষয় রোধের ব্যবস্থাও জলদূষণ প্রতিরোধ করতে পারে। জল দূষণ রোধের আরেকটি উপায় হল প্রকৃতি-কেন্দ্রিক সমাধান।[৬] স্রোতের গতি এবং এর পরিমাণ কমিয়ে শহরের নিকাশী ব্যবস্থার কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মার্কিং যুক্তরাষ্ট্রে, জল দূষণের জন্য সেরা পরিচালনা ব্যবস্থা হিসেবে জলের পরিমাণ কমানো এবং জলের মান উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।[৭]

ভূমিকা

কানাডার লাচাইন খালে দূষণ

জল যদি মানুষবাহিত দূষক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেই জলকে দূষিত বলা হয়। এইসকল দূষকের ফলে এই জল হয় মানুষের ব্যবহারের যোগ্য হতে পারে না, যেমন জলপানের অযোগ্য হয়ে যায়, অথবা এই জলের জীবগোষ্ঠী ধারণের ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যায়, যেমন মাছ। আগ্নেয়গিরি, শৈবাল পুষ্প, ঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনার ফলেও জলের গুণাগুণে এবং এর বাস্তুতান্ত্রিক অবস্থায় প্রভূত পরিবর্তন দেখা দেয়।

জল দূষণ একটি বিশ্বব্যাপী গুরুতর সমস্যা। এর জন্য সর্বস্তরে (আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব্যক্তিগত ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর এবং কুয়ো) জলসম্পদ নীতির মূল্যায়ন এবং পুনর্মূল্যায়ন জরুরী। মনে করা হয়, বিশ্বে যত রোগ ও মৃত্যু হয়, তার মুখ্য কারণ হল জল দূষণ।[২][১] ২০১৫ সালে ১৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল জল দূষণ।[৮]

বৈশ্বিক সামুদ্রিক পরিবেশগত সমীক্ষা নামক সংস্থার মতে জল দূষণ হল অন্যতম প্রধান একটি পরিবেশগত সমস্যা যেটা পরবর্তী দশকগুলোতে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন যেগুলো ৭০% অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং পৃথিবীর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের একটি বড়ো অংশ শোষণ করে, জল দূষণ তাদের জন্য একটি অন্যতম সমস্যা। এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য সংস্থা থেকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো কার্যকরী হতে দশ বছর সময় লাগবে।[৯][১০][১১]

ভারত এবং চীন এই দুই দেশে জল দূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। ভারতে প্রতিদিন আনুমানিক ৫৮০জন মানুষ জল দূষণজনিত রোগে (জলবাহিত রোগসমেত) মারা যায়।[১২] চীনের শহরের জলের প্রায় ৯০ শতাংশই দূষিত।[১৩] ২০০৭ সালের হিসেবানুযায়ী, চীনের পাঁচ লক্ষ মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের থেকে বঞ্চিত।[১৪]

উন্নয়নশীল দেশের এই চূড়ান্ত জল দূষণের পাশাপাশি, উন্নত দেশগুলোও কিন্তু দূষণজনিত সমস্যা নিয়ে লড়াই করে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জলের মান রিপোর্টে বলা হয়েছে যে যত মাইল প্রবাহের মূল্যায়ন করা হয়েছে তার ৪৪ শতাংশ, মূল্যায়িত হ্রদের একরের ৬৪ শতাংশ এবং উপসাগর ও মোহনার স্কোয়্যার মাইলের ৩০ শতাংশকে দূষিত বলে জানানো হয়েছে।[১৫]

প্রকারভেদ

ভূ-পৃষ্ঠতলীয় জল দূষণ

বিভিন্ন ধরনের খাদ্যে প্রতি ১০০ গ্রাম প্রোটিনের ইউট্রোফাইং নির্গমনের (জল দূষণ) মধ্যমান [১৬]
খাদ্য প্রকৃতি ইউট্রোফিকেশন নির্গমন (প্রতি ১০০ গ্রাম প্রোটিনে গ্রাঃ PO43-eq)
গরুর মাংস
৩৬৫.৩
চাষ করা মাছ
২৩৫.১
চাষ করা ক্রাস্টাসিয়ানস
২২৭.২
পনীর
৯৮.৪
ভেড়া ও ভেড়ার মাংস
৯৭.১
শুয়োরের মাংস
৭৬.৪
মুরগী খামার
৪৮.৭
ডিম
২১.৮
চীনাবাদাম
১৪.১
মটরশুঁটি
৭.৫
তোফু
৬.২

ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণের মধ্যে রয়েছে নদী, হ্রদ এবং সমুদ্রের দূষণ। ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণের একটি বিভাগ হল সামুদ্রিক দূষণ।

সামুদ্রিক দূষণ

অ্যাঙ্গলেসিতে একটি দূষিত নদী দ্বারা একটি পরিত্যক্ত তামার খনির নিকাশিত হচ্ছে।

সমুদ্রে দূষিত পদার্থের আগমনের একটি সাধারণ পথ হল নদীর জল। এর একটি উদাহরণ হল, নর্দমার জল এবং কারখানার বর্জ্য সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে ফেলা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই বিশেষ করে এই ধরনের দূষণ দেখা যায়। বাস্তবিক, সারা বিশ্বের ১০টি সর্ববৃহৎ সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণকারী দেশকে বেশি থেকে কম এই ক্রমে সাজালে হয় – চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস্‌, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মিশর, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া এবং বাংলাদেশ;[১৭] যেসকল নদীগুলোর মাধ্যমে সমুদ্র দূষিত হয় তারা হল ইয়াঙ্গটজে, সিন্ধু, পীতনদী, হাই, নীল, গঙ্গা, পার্ল, আমুর, নাইজের ও মেকং এবং “পৃথিবীতে সমুদ্রে যত প্লাস্টিক জমা হয়, তার ৯০শতাংশ এইসকল নদীগুলো দ্বারা বাহিত হয়”।[১৮][১৯]

প্লাস্টিক আবর্জনা সমুদ্রের বড় বড় বলয়ের (ঘুর্ণি) মধ্যে আটকে পড়ে। প্লাস্টিক আবর্জনাগুলো সামুদ্রিক দূষণে সৃষ্ট বিষাক্ত পদার্থগুলোকে শোষণ করে নেয় যার ফলে সামুদ্রিক জীব এগুলো খেয়ে ফেললে তাদের শরীরেও বিষ প্রবেশ করতে পারে।[২০] এইসকল দীর্ঘজীবী পদার্থগুলো অনেক সময়েই শেষমেশ সামুদ্রিক পাখি এবং প্রাণীদের পেটে চলে যায়। এর ফলে তাদের হজমের পথ আটকে যায়, যার ফলে তাদের খিদে কমে যায় অথবা এর থেকে তারা অনাহারেও ভুগতে পারে।

মূল দূষক ছাড়াও, তার লব্ধ পরিস্থিতিরও অনেক ধরনের অপ্রত্যক্ষ প্রভাব থাকে। যেমন ভূপৃষ্ঠে জলের স্রোতে পলি ভেসে থাকলে জলস্তম্ভের মধ্যে দিয়ে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারে না এবং এর ফলে জলজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

ভৌমজল দূষণ

ভৌমজল এবং ভূপৃষ্ঠতলীয় জলের মধ্যেকার যোগাযোগটা কিছুটা জটিল। যার ফলে, ভৌমজল দূষণকে ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণ বলা যায় না।[২১] প্রকৃতিগত কারণেই, ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তরের দূষিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু এই দূষণের উৎস ভূপৃষ্ঠতলীয় জলাশয়ের প্রত্যক্ষ ক্ষতি নাও করতে পারে। বিন্দু বনাম অ-বিন্দু উৎসের পার্থক্য কিছু ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে।

ভৌমজলের দূষণের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাটির বৈশিষ্ট্য এবং স্থানের ভূতত্ত্ব, জল ভূতত্ত্ব, জলবিদ্যা এবং দূষকের প্রকৃতির ওপর নজর দেওয়া হয়। ভৌমজলের দূষণের কারণের মধ্যে যেগুলো থাকে তা হল: সাধারণভাবে ঘটা (জিওজেনিক), স্থানটার শৌচব্যবস্থা, নিকাশি ব্যবস্থা, সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার, বাণিজ্যিক এবং কলকারখানার অবাঞ্ছিত বহির্গমন, হাইড্রলিক ফাটল, ল্যান্ডফিল লিচেট।

দূষণ উৎসের বিভাগ

ভূপৃষ্ঠতলীয় জল এবং ভৌমজল দুটি পৃথক সম্পদ হিসেবে প্রায়শই চর্চিত এবং আলোচিত হয়, যদিও এদের মধ্যে আন্তর্যোগ রয়েছে।[২১] ভূপৃষ্ঠতলীয় জল মাটির মধ্যে দিয়ে চুঁইয়ে যায় এবং ভৌমজলে রূপান্তরিত হয়। বিপরীতক্রমে, ভৌমজলও ভূপৃষ্ঠতলীয় জলের যোগান দিতে পারে। ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণের উৎসকে সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়।

বিন্দু উৎস

ব্রাজিলের রিউ দি জানেইরুর একটি জাহাজঘাটায় বিন্দু উৎস দূষণ।

দূষণকারী পদার্থ যদি একটি নির্দিষ্ট চিহ্নিতযোগ্য উৎস থেকে জলপ্রবাহে যুক্ত হয় (যেমন নলের মাধ্যমে, অথবা খানার মধ্যে দিয়ে), তবে তাকে বিন্দু উৎস জল দূষণ বলা হয়। এই ধরনের উৎসের উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কোন নিকাশী জলের পরিশোধনকারী কারখানা, কোন শিল্পকারখানা, অথবা শহরের কোন বেনোজলের নর্দমা।

ইউ.এস ক্লিন ওয়াটার অ্যাক্ট (সিডব্লুএ) বিন্দু উৎসের কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৈরি হয়েছিল। সিডব্লুএর এই সংজ্ঞা ১৯৮৭ সালে সংশোধিত হয় এবং এর ফলে এতে পৌরসভার বেনোজল নিকাশী ব্যবস্থা, শিল্পকারখানার অতিরিক্ত জলও (যেমন নির্মাণ স্থানে) স্থান পায়।

অ-বিন্দু উৎস

অ-বিন্দু উৎস দূষণ বলতে যেখানে একটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে দূষণ ছড়ায় না, তাকে বোঝায়। এইধরনের দূষণ প্রায়শই একটি বৃহৎ অঞ্চলে অল্প পরিমাণ দূষণকারী পদার্থ জমা হতে হতে তার ক্রমবর্ধিত রূপের ফলে তৈরি হয়। এর একটি সাধারণ উদাহরণ হল সারযুক্ত কৃষিজমিতে নাইট্রোজেন যৌগের লিচিংয়ের ফলে বেরিয়ে যাওয়া। কৃষিক্ষেত্রে অথবা বনাঞ্চলে বেনোজলের সাথে মাটির উপাদান বেরিয়ে যাওয়াকেও অ-বিন্দু উৎস দূষণের উদাহরণ বলা যেতে পারে।

ভূপৃষ্ঠতলীয় নিকাশী দূষণের বাস্তুতান্ত্রিক প্রভাবের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে ইউকে এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির নীল নর্দমা এবং হলুদ মাছ প্রতীকের ব্যবহার

পার্কিং স্থান, রাস্তাঘাট এবং বড়ো সড়ক থেকে দূষিত বেনোজলের নিকাশ, যাকে শহরের রানঅফ বলা হয়, তাও কিন্তু অ-বিন্দু উৎসের শ্রেণীতেই গণ্য হয়। এই রানঅফ একটি বিন্দু উৎসও হয়ে যেতে পারে কারণ এটাকে বিশেষভাবে বেনোজলের নিকাশী ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রবাহিত করা হয় এবং নলের মাধ্যমে তা স্থানীয় পৃষ্ঠতলীয় জলের মধ্যে গিয়ে মেশে।

দূষণকারী পদার্থ এবং তাদের উৎস

জল দূষণকারী নির্দিষ্ট পদার্থগুলো রাসায়নিক, রোগ সংক্রামক জীবাণু, এবং ভৌত পরিবর্তন যেমন উচ্চ তাপমাত্রা এবং বিবর্ণতার মত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। রাসায়নিক এবং অন্যান্য পদার্থ যাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেসব পদার্থ প্রাকৃতিক হতে পারে (যেমন ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি), কিন্তু প্রকৃতিতে তাদের ঘনত্ব দ্বারা বোঝা যায়, তারা জলের স্বাভাবিক উপাদান না কি দূষক। প্রাকৃতিক উপাদানের উচ্চ ঘনত্ব জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া পদার্থের মধ্যে প্রাকৃতিক বস্তু থাকতে পারে, যেমন উদ্ভিদের অংশ (উদাঃ পাতা এবং ঘাস), আবার মনুষ্যসৃষ্ট রাসায়নিক পদার্থও থাকতে পারে। অন্যান্য প্রাকৃতিক এবং অ্যানথ্রোপোজেনিক পদার্থ জলে টার্বিডিটি (মেঘাচ্ছন্নতা) সৃষ্টি করতে পারে যা আলো প্রবেশে বাধা দেয়, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং মাছের কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে ফুলকাকে আটকে দেয়।

জলের ভৌত রাসায়নিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য দায়ী যেসকল বিষয় তা হল অম্লত্ব (পিএইচ মাত্রার পরিবর্তন), বৈদ্যুতিক পরিবাহীতা, তাপমাত্রা এবং ইউট্রোফিকেশন। ইউট্রোফিকেশনের মাধ্যমে একটি বাস্তুতন্ত্রে রাসায়নিক উপাদানগুলোকে বাড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে বাস্তুতন্ত্রটির প্রাথমিক উৎপাদন ক্ষমতার বৃদ্ধি হয়। ইউট্রোফিকেশনের মাত্রার ওপর পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাব নির্ভর করে যেমন এর ফলে অ্যানোক্সিয়া (অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া) হতে এবং জলের মান গুরুতরভাবে হ্রাস পেতে পারে যার ফলে মাছ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের ক্ষতি হয়।

রোগ সংক্রামক জীবাণু

দক্ষিণ এশিয়ার জনগণকে মানুষের কার্যকলাপের ফলে সৃষ্ট জল দূষণ সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার পোস্টার।
স্যানিটারি নর্দমার জল উপচে পড়া থেকে রোধ করতে ব্যর্থ একটি ম্যানহোল।
কেনিয়ার নাইরোবির কোরোগোচো বস্তির কাছে একটি নদীতে খাটা পায়খানা থেকে মলের পাঁক নিয়ে এসে জমানো হয়েছে।

রোগসৃষ্টিকারী অণুজীবগুলোকে রোগ সংক্রামক জীবাণু বা প্যাথোজেন বলা হয়। এইসকল জীবাণুগুলো মানবদেহে বা প্রাণীদেহে জলবাহিত রোগ সৃষ্টি করতে পারে। কলিফর্ম ব্যাকটিরিয়া জলবাহিত রোগের প্রকৃত কারণ না হলেও এদেরকেই জল দূষণের একটি ব্যাকটিরিয় মানদণ্ড হিসেবে সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য যেসকল অণুজীব দূষিত ভূপৃষ্ঠতলীয় জলে পাওয়া যায় এবং যেগুলো মানব শরীরের ক্ষতিসাধন করে সেগুলো হল:

  •       বুরখোলডেরিয়া সিউডোমাল্লেই
  •        ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম পারভাম
  •        গিয়ার্ডিয়া আয়ামব্লিয়া
  •        সালমোনেল্লা
  •        নোরোভাইরাস এবং অন্যান্য ভাইরাস
  •        পরজীবী কৃমি, সিস্টোসোমা প্রকৃতিসহ

রোগ সংক্রামক জীবাণু সেই নির্দিষ্ট স্থানটির শৌচব্যবস্থা (মলশোধন প্রকোষ্ঠ বা সেপটিক ট্যাঙ্ক, খাটা পায়খানা) অথবা অপর্যাপ্তরূপে শোধিত নিকাশী জলের থেকে অধিক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। পুরোনো শহরের পুরোনো পরিকাঠামোর নিকাশী ব্যবস্থায় অবাঞ্ছিত বহির্গমনের (নল, পাম্প, ভালভের ফাটল) ফলে নর্দমার দূষিত জল বাইরে চলে আসতে পারে। কিছু শহরে সংযুক্ত নিকাশী ব্যবস্থা আছে যেগুলোর দূষিত জল ঝড় বৃষ্টির সময়ে অপরিশোধিত অবস্থাতেই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। নর্দমার দূষিত জলের পলিও (অধঃক্ষিপ্ত) জলাশয়কেও দূষিত করে।

কাদাময় নদী পলি দ্বারা দূষিত হচ্ছে।

গৃহপালিত পশু সংক্রান্ত কাজকর্ম যেখানে চলে সেসব জায়গা খারাপভাবে পরিচালিত হলেও রোগজীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

জৈব, অজৈব এবং ম্যাক্রোস্কোপিক দূষণকারী পদার্থ

এইসকল দূষণকারী পদার্থগুলো জৈব এবং অজৈব পদার্থ হতে পারে। অনেক রাসায়নিক পদার্থও বিষাক্ত হয়।

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের একটি শহরের ছোট নদীতে দূষণ কমানোর জন্য একটি আবর্জনা সংগ্রহের বৃদ্ধি।

জৈব জল দূষকের মধ্যে যেগুলো পড়ে, তা হল:

  • ডিটারজেন্টস্‌
  • রাসায়নিকভাবে জীবাণুমুক্ত পানীয় জলের মধ্যে থাকা জীবাণুধ্বংসকারী উপজাত পদার্থ, যেমন ক্লোরোফর্ম
  • খাদ্য প্রক্রিয়াকরণজাত বর্জ্য, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে অক্সিজেনের চাহিদাযুক্ত পদার্থ, চর্বি, গ্রিজ
  • কীটনাশক এবং ভেষজনাশক, বিভিন্ন ধরনের অর্গ্যানোহ্যালাইডস এবং অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ
  • পেট্রোলিয়াম হাইড্রোকার্বন, যেমন জ্বালানি (পেট্রোল, ডিজেল জ্বালানি, জেট জ্বালানি, এবং জ্বালানি তেল) এবং পিচ্ছিলকারক তেল (মোটর তেল), এবং বেনোজলের মধ্যে দিয়ে বয়ে আসা জ্বালানির দহন-পরবর্তী উপজাত পদার্থ
  • উদ্বায়ী জৈব যৌগ, যেমন অনুপযুক্ত সঞ্চয়স্থান থেকে ছড়িয়ে পড়া কারখানার দ্রাবক।
  • ক্লোরিনযুক্ত দ্রাবক, এগুলো ঘন অ-জলীয় দশার তরল যা জলে ভালোভাবে দ্রবীভূত না হতে পারার জন্য এবং ঘনত্ব বাড়িয়ে তোলার কারণে জলাধারের তলায় গিয়ে সঞ্চিত হয়।
    • পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি)
    • ট্রাইক্লোরোইথিলিন
  • পার্চক্লোরেট
  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি দ্রব্য এবং প্রসাধনী দ্রব্যে উপস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ
  • ড্রাগ দূষণ যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ ড্রাগ এবং তাদের বিপাকজাত দ্রব্য। এসবের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ড্রাগ অথবা গর্ভনিরোধক বড়ির মত হর্মোন ওষুধ। এসকল অণুগুলো এতই ক্ষুদ্র যে দামী ও উন্নত শোধক কারখানা ছাড়া এদেরকে মুক্ত করা বেশ জটিল।

অজৈব জল দূষণকারী পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • শিল্পকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনের দ্বারা সৃষ্ট অম্লত্ব (বিশেষ করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সালফার ডাই-অক্সাইড)
  • খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের বর্জ্য থেকে প্রাপ্ত অ্যামোনিয়া
  • শিল্পকারখানার উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত রাসায়নিক বর্জ্য
  • নাইট্রেট এবং ফসফেট জাতীয় উপাদানযুক্ত সার যা কৃষিজমি থেকে এবং বাণিজ্যিক ও গৃহস্থ ব্যবহারের ফলেও বৃষ্টির জলের সাথে যুক্ত হয়
  • মোটর গাড়ির ভারী ধাতু (শহরের বর্ষার জলের প্রবাহের মাধ্যমে) এবং অম্ল খনির নর্দমা
  • কেওসোট সংরক্ষণকারী থেকে নিঃসৃত পদার্থের জলজ বাস্তুতন্ত্রে গিয়ে মেশা
  • নির্মায়মান অঞ্চল, বৃক্ষচ্ছেদন, ঝুম চাষ অথবা ভূমি নিষ্কাশন অঞ্চল থেকে প্রবাহিত জলের পলি (অধঃক্ষিপ্ত)

ম্যাক্রোস্কোপিক দূষণ – জল দূষণকারী দৃশ্যমান বড়ো বড়ো পদার্থ – যেগুলোকে শহরের ঝোড়ো জলের প্রেক্ষিতে ভাসমান বলা চলে, অথবা সামুদ্রিক জঞ্জাল যখন উন্মুক্ত সাগরে পাওয়া যায় এবং এইধরনের পদার্থগুলোকে নিম্নলিখিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়:

  • মাটিতে মানুষের দ্বারা পরিত্যক্ত আবর্জনা (যেমন, কাগজ, প্লাস্টিক, অথবা নষ্ট খাবার), এর সাথে রয়েছে দুর্ঘটনাপ্রযুক্ত অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে আবর্জনার স্তুপ তৈরি, যা বৃষ্টির জলের সাথে ধুয়ে যায় এবং ভূপৃষ্ঠতলীয় জলে উন্মুক্ত হয়।
  • নার্ডল, ছোট ছোট সর্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা জলের প্লাস্টিকের টুকরো।
  • পরিত্যক্ত ভাঙা জাহাজ।
ম্যাসাচুসেটসের ব্রেটন পয়েন্ট পাওয়ার স্টেশন থেকে উন্মুক্ত গরম জল মাউন্ট হোপ বে'তে এসে মিশছে।

তাপমাত্রার পরিবর্তন

মানুষের দ্বারা স্বাভাবিক জলাশয়ে তাপমাত্রার উত্থান অথবা পতন হলে তাকে তাপীয় দূষণ বলে। তাপীয় দূষণের ফলে জলের ভৌত ধর্মে পরিবর্তন দেখা যায়, যা রাসায়নিক দূষণে হয় না। তাপীয় দূষণের একটা সাধারণ কারণ হল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এবং শিল্প নির্মাতাদের দ্বারা ব্যবহৃত কুল্যান্টে জলের ব্যবহার। জলের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তা জলের অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস করে, যা মৎস্যকুলকে ধ্বংস করে এবং খাদ্য শৃঙ্খল উপাদানের পরিবর্তন ঘটায়, প্রজাতির জীববৈচিত্র্য হ্রাস করে, এবং উষ্ণতায় তৈরি হয় এমন কিছু নতুন প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘটে। শহরের বয়ে আসা জলও ভূপৃষ্ঠতলীয় জলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

জলাধারের তল থেকে খুব শীতল জল অপেক্ষাকৃত উষ্ণ নদীতে উন্মুক্ত হলেও তাপীয় দূষণ ঘটে।

পরিমাপ

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জলের অটোস্যাম্পলার প্রস্তুত করছেন।

জল দূষণকে পদ্ধতিগতভাবে বেশ কয়েকটি বৃহৎ ভাগে ভাগ করা যায়: ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈব। বেশিরভাগের মধ্যেই রয়েছে নমুনা সংগ্রহ, এবং তারপর বিশেষভাবে কৃত বিশ্লেষণমূলক পরীক্ষা। কিছু কিছু পদ্ধতি যথাস্থানেই অবলম্বন করা হয়, নমুনা ছাড়াই, যেমন তাপমাত্রা। সরকারী সংস্থা এবং গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান প্রমিত, বৈধ বিশ্লেষণমূলক পরীক্ষা পদ্ধতিগুলো প্রকাশ করে যাতে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার ঘটনা থেকে প্রাপ্ত ফলের তুলনা করা যেতে পারে।

নমুনা সংগ্রহ

দূষণকারী পদার্থের চরিত্র এবং সূক্ষ্যতার প্রয়োজনীয়তার ওপর নির্ভর করে ভৌত ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য জলের নমুনা সংগ্রহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা যেতে পারে। দূষণের অনেক ঘটনা (বিশেষ করে যেগুলো বৃষ্টির সাথে যুক্ত) সূক্ষ্মভাবে সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই কারণে সহজে উপলব্ধ নমুনাগুলো দূষণকারী পদার্থের মাত্রা নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়। বিজ্ঞানীরা এই ধরনের তথ্য জোগাড় করে স্ব-নমুনা পরীক্ষক যেটি কোন এক সময়ে অথবা জল নিকাশের অন্তর্বতীকালীন সময়ে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।

জৈব পরীক্ষার নমুনা হিসেবে ভূপৃষ্ঠতলীয় জলাশয় থেকে উদ্ভিদ এবং প্রাণী সংগ্রহ করতে হয়। কি ধরনের মূল্যায়ন করা হবে তার ওপর নির্ভর করে এদের জীবসুমারি (সংখ্যা গণন) করা হয় ও জলাশয়ে ফেরত পাঠানো হয়, অথবা তাদের ব্যবচ্ছেদ করে বায়োঅ্যাসে করে শরীরে বিষের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

ভৌত পরীক্ষা

জলের সাধারণ ভৌত পরীক্ষাগুলো হল, তাপমাত্রা, কঠিন বস্তুর ঘনত্ব (উদাঃ সমগ্র প্রলম্বিত কঠিন বস্তু) এবং টার্বিডিটি।

রাসায়নিক পরীক্ষা

বিশ্লেষণী রসায়নের নীতি ব্যবহার করে জলের নমুনা পরীক্ষা করা হতে পারে। জৈব এবং অজৈব যৌগের জন্য অনেক প্রকাশিত পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে। প্রায়শই ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো হল, পিএইচ, জৈবরাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা (বিওডি), রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা (সিওডি), পুষ্টিযুক্ত উপাদান (নাইট্রেট এবং ফসফরাস যৌগ), ধাতু (তামা, দস্তা, ক্যাডমিয়াম, সীসা এবং পারদ), তেল এবং গ্রীজ, সমস্ত পেট্রোলিয়াম হাইড্রোকার্বন, এবং কীটনাশক।

জৈব পরীক্ষা

জৈব পরীক্ষায় উদ্ভিদ, প্রাণী অথবা অণুজীবীয় সূচক ব্যবহার করে জলের বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ করা হয়। এগুলো যেকোন জৈব প্রজাতি অথবা প্রজাতিগোষ্ঠী হতে পারে যাদের কাজ, সংখ্যা অথবা অবস্থা বলে দিতে পারে সেই স্থানে বাস্তুতন্ত্র অথবা পরিবেশগত অখণ্ডতা কতখানি বজায় রয়েছে। এইধরনের জৈব-সূচক গোষ্ঠীর একটি উদাহরণ হল কোপপড এবং অন্যান্য ছোট জলাশয়ের ক্রাস্টাসিয়ানস যেগুলো অনেক জলাশয়ে পাওয়া যায়। এইধরনের জীবগুলোর পরিবর্তন (জৈবরাসায়নিক, শারীরবৃত্তীয়, অথবা আচরণগত) নিরীক্ষণ করে বোঝা যায় তাদের বাস্তুতন্ত্রে কোন সমস্যা আছে কি না।

দূষণের নিয়ন্ত্রণ

পৌরসভার বর্জ্যজলের শোধন

ডিয়ার আইল্যান্ড ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বস্টন, ম্যাসাচুসেটস এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে কাজ করছে।

উন্নত দেশের শহরে, পৌরসভার বর্জ্যজল (অথবা নিকাশী জল) কেন্দ্রীভূত নিকাশী জলের শোধনকারী কারখানা দ্বারা বিশেষভাবে পরিশোধিত হয়। ভালোভাবে পরিকল্পিত এবং পরিচালিত ব্যবস্থার মাধ্যমে (যেমন, মাধ্যমিক শোধনকারী পদক্ষেপ অথবা আরো উন্নত শোধন) ৯০ শতাংশ বা তার বেশি দূষণকারী পদার্থ নিকাশী জল থেকে দূর করা যায়। কোন কোন কারখানায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা থাকে যাতে পুষ্টিকর উপাদান এবং রোগ সংক্রামক জীবাণু দূর করা যেতে পারে, কিন্তু এইসকল আরো উন্নত শোধনমূলক পদক্ষেপ ক্রমশই আরো বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে।

কেন্দ্রীভূত শোধনকারী কারখানার পরিবর্তে (অথবা পাশাপাশি) পরিবেশভিত্তিক সমাধানও ব্যবহার করা হচ্ছে।

যেসব শহরে শৌচালয়ের নর্দমার জল উপচে পড়ে অথবা সংযুক্ত নর্দমার জল উপচে পড়ে তারা সেইসব অশোধিত নির্গমন রোধ করতে এক বা একাধিক প্রকৌশলী ব্যবস্থা নেয়, যার মধ্যে রয়েছে:

  • একটি সবুজ পরিকাঠামোমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় যাতে সমগ্র ব্যবস্থাটির ঝড়ো জলের পরিচালন ক্ষমতা উন্নত হতে পারে এবং শোধনকারী কারখানার হাইড্রলিক উচ্চচাপ কমাতে পারে।
  • অবাঞ্ছিত নির্গমন এবং বিকল যন্ত্রের মেরামত ও বদল।
  • নিকাশী সংগ্রহ ব্যবস্থাটির সামগ্রিক হাইড্রলিক ক্ষমতাবৃদ্ধি (এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি ব্যয়বহুল বিকল্প)

নির্দিষ্ট স্থানের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং নিরাপদরূপে পরিচালিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা

যেসকল অঞ্চলে পৌরসভার শোধনকারী কারখানা নেই সেসকল জায়গায় অবস্থিত বাড়ির এবং ব্যবসায়ী অঞ্চলে ব্যক্তিগত সেপ্টিক ট্যাঙ্ক বা মলশোধনকারী প্রকোষ্ঠ থাকে যা সেই নির্দিষ্ট স্থানের বর্জ্যজলকে পূর্বেই শোধন করে দেয় এবং তা মাটিতে গিয়ে চুঁইয়ে জমা হয়। ভুল পরিকল্পিত অথবা স্থাপিত সেপ্টিক ব্যবস্থা ভৌমজলের দূষণ ঘটাতে পারে।

জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম ফর ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশনের একটি হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৪৫ কোটি মানুষের কাছে নিরাপদভাবে পরিচালিত কোন স্যানিটেশন নেই। স্যানিটেশনের অভাবে প্রায়শই জল দূষণ হয়, যেমন উন্মুক্ত মলত্যাগের অভ্যাসের মাধ্যমে: বৃষ্টি অথবা বন্যায় মানুষের মল মাটির তলায় চলে যায় যেখান থেকে সেগুলো ভূপৃষ্ঠতলীয় জলে জমা হতে থাকে। সাধারণ খাটা পায়খানাও বৃষ্টির জলে প্লাবিত হতে পারে। নিরাপদভাবে পরিচালিত স্যানিটেশন ব্যবস্থার ফলে এই ধরনের জল দূষণ রোধ করা যেতে পারে।

কলকারখানার বর্জ্যজলের শোধন

শিল্প বর্জ্য শোধনের জন্য দ্রবীভূত বায়ু ভাসমান ব্যবস্থা।

কিছু শিল্পকারখানা থেকে বর্জ্যজল নিষ্কাশিত হয় যেগুলো গৃহস্থ বর্জ্যজলের মতই এবং নিকাশী জলের শোধনকারী কারখানা কর্তৃক পরিশোধিত করা যেতে পারে। যেসকল কলকারখানা থেকে বর্জ্যজলের সাথে উচ্চ ঘনত্বের জৈব পদার্থ (যেমন, তেল ও গ্রীজ), বিষাক্ত দূষণকারী পদার্থ (যেমন, ভারী ধাতু, উদ্বায়ী জৈব যৌগ) অথবা জৈব উপাদান যেমন অ্যামোনিয়া নির্গত হয়, তাদের বিশেষ রকম শোধনকারী ব্যবস্থা প্রয়োজন হয়। ছোটখাটো কলকারখানাগুলো একটি প্রাক-শোধনকারী ব্যবস্থা স্থাপন করে যার দ্বারা কিছু দূষণকারী পদার্থ বেরিয়ে যায় (যেমন, বিষাক্ত যৌগ), এবং তারপর এরা সেই অর্ধপরিশোধিত বর্জ্যজল পৌরসভার নিকাশী ব্যবস্থায় মুক্ত করে। যেসকল কলকারখানার বর্জ্যজলের পরিমাণ অত্যন্ত অধিক হয়, তারা নিজস্ব শোধনকারী ব্যবস্থা পরিচালনা করে। কিছু কলকারখানা তাদের নির্মাণ পদ্ধতির পুনর্পরিকল্পনা করে দূষণকারী পদার্থের দূরীকরণ অথবা হ্রাস করতে সফল হয়েছে; এই পদ্ধতিকে বলা হয় দূষণ রোধ।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অথবা নির্মাণ কারখানা থেকে উৎপন্ন বর্জ্যজলের তাপ দূর করতে নিম্নলিখিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়:

  • শীতলকারী পুকুর, বাষ্পীভবন, পরিবহন ও বিকিরণের মাধ্যমে শীতল করার উদ্দেশ্যে কৃত্রিম জলাশয়ের নির্মাণ।
  • শীতলকারী টাওয়ার, যেগুলো বাষ্পীভবন অথবা তাপ স্থানান্তরের মাধ্যমে বর্জ্য তাপকে পরিবেশে স্থানান্তরিত করে
  • কোজেনারেশন, এমন একটি পদ্ধতি যেখানে বর্জ্য তাপ গৃহস্থ বাড়িতে অথবা কলকারখানায় তাপ ব্যবহারের জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়।
আইওয়াতে রিপারিয়ান বাফার একটি খাঁড়ির রেখা সৃষ্টি করেছে।

কৃষিজমির বর্জ্যজলের পরিশোধন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবথেকে বেশি পরিমাণ কৃষি দূষণ অধঃক্ষিপ্ত পলি (মাটির গুঁড়ো) জমি থেকে ধুয়ে যাবার ফলে ঘটে থাকে। কৃষকরা ভূমিক্ষয় রোধ করার মাধ্যমে এইধরনের ধুয়ে যাওয়া রোধ করতে পারেন এবং মাটিকে তাঁদের কৃষিক্ষেত্রে ধরে রাখতে পারেন। কনট্যুর প্লাওয়িং, ক্রপ মালচিং, ক্রপ রোটেশান, বহুবর্ষজীবী শস্যের চাষ এবং রিপারিয়ান বাফার স্থাপন করা প্রভৃতি হল ভূমিক্ষয় রোধের সাধারণ কিছু উপায়।

কৃষিক্ষেত্রে যেসকল সার উপাদান (নাইট্রোজেন ও ফসফরাস) প্রয়োগ করা হয় তা হল, বাণিজ্যিক সার, পশুর বর্জ্য, অথবা পৌরসভার বা কলকারখানার বর্জ্যজল (প্রবাহ) বা কাদামাটি ছড়িয়ে দেওয়া। এইসকল সার উপাদানগুলো শস্যের শেষাংশ, সেচ জল, বন্য প্রাণী এবং পরিবেশগত সঞ্চয়ের মাধ্যমেও প্রবাহে মিশতে পারে। কৃষকরা সার উপাদান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা করে সারের অতিরিক্ত প্রয়োগ কমাতে পারেন এবং সার উপাদান দূষণের সম্ভাবনাকে কমাতে পারেন।

কীটনাশকের প্রভাব কমাতে, কৃষকরা সম্মিলিত কীট ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন (যার মধ্যে থাকতে পারে জৈব কীট দমন) যার ফলে কীটের ওপর নিয়ন্ত্রণও রাখা যাবে আর অন্যদিকে রাসায়নিক কীটনাশকের ওপর নির্ভরশীলতাও কমবে; এতে জলের গুণমান বজায় রাখা সম্ভব হবে।

যেসকল খামারে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে পশুর অথবা মুরগী সংক্রান্ত কাজকর্ম করা হয়, যেমন খামার কারখানা সেগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কনসেন্ট্রেটেড্‌ অ্যানিমাল ফিডিং অপারেশনস্‌ অথবা ফিডলটস্‌ বলা হয় এবং এগুলোকে বেশি পরিমাণে সরকারী নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়েছে। পশুর বর্জ্যের অধঃক্ষিপ্ত অংশকে অবায়বীয় হ্রদের মধ্যে রেখে শোধন করা হয় এবং তারপর স্প্রে করে বা চুঁইয়ে ফেলার মাধ্যমে ঘাসজমিতে উন্মুক্ত করা হয়। পশুর বর্জ্যের শোধনের জন্য অনেকসময় নির্মিত জলাভূমিও ব্যবহৃত হয়। কিছু পশুর বর্জ্যকে আবার খড়ের সাথে মিশিয়ে শোধন করা হয় এবং উচ্চ তাপমাত্রায় মিশ্রসারে রূপান্তরিত করে তাকে ব্যাকটিরিয়াগতভাবে নির্বীজ করে তোলা হয় এবং এভাবে খাঁটি সারে পরিণত করে মাটির উন্নতি করা হয়। এইসকল প্রযুক্তিকে "বিন্দু উৎস নিয়ন্ত্রণ" বলা হয়।

নির্মাণ অঞ্চল থেকে ভূমিক্ষয় এবং পলি অধঃক্ষেপের নিয়ন্ত্রণ

নির্মাণ স্থানে স্থাপিত একটি পলিবাঁধ।

নির্মাণ অঞ্চলের পলি অধঃক্ষেপ নিম্নলিখিত উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়:

  • ভূমিক্ষয় রোধ, যেমন মালচিং এবং হাইড্রোসিডিং এবং
  • পলি নিয়ন্ত্রণ, যেমন সেডিমেন্ট বেসিন এবং পলিবাঁধ।

মোটরগাড়ির জ্বালানির মত বিষাক্ত রাসায়নিকের নির্গমন এবং তার ধৌতকরণকে নিম্নলিখিত উপায়ে রোধ করা যায়:

  • অবাঞ্ছিত নির্গমন রোধ এবং নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা এবং
  • বিশেষভাবে নির্মিত পাত্র (যেমন ধৌতকরণের জন্য) এবং পরিকাঠামো যেমন উপচে পড়া নিয়ন্ত্রণ এবং ডাইভারসন বার্মস্‌।

শহরের প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ (ঝোড়োজল)

শহরের নিকাশী ধুয়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিষ্ঠিত রিটেনশন বেসিন।

শহরের প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ঝোড়োজলের প্রবাহ এবং গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ জরুরী এবং তার সাথে দরকার দূষকের নির্গমন রোধ। স্থানীয় সরকার ঝোড়োজলের ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরের প্রবাহের ফল নিয়ন্ত্রণ করে। এইসকল প্রযুক্তি, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জল দূষণের জন্য সবচেয়ে সেরা ব্যবস্থাপনা বলে উল্লেখ করেছে, তার দ্বারা জলের গুণমান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, অন্যান্য ক্ষেত্রে জলের গুণমানের উন্নতি করাও সম্ভব এবং কিছু ক্ষেত্রে উভয়ই করা যায়।

দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য লো-ইমপ্যাক্ট ডেভেলপমেন্ট প্রযুক্তিরও ব্যবহার করা যেতে পারে, সবুজ ছাদ স্থাপন এবং রাসায়নিকের উন্নত ব্যবহার (যেমন মোটর জ্বালানি এবং তেলের নিয়ন্ত্রণ, সার এবং কীটনাশক)। প্রবাহ কমানোর জন্য ইনফিল্ট্রেশন বেসিন, বায়োরিটেনশন ব্যবস্থা, নির্মিত জলাভূমি, রিটেনশন বেসিন এবং এইধরনের আরো অন্যান্য উপায়।

প্রবাহ থেকে ঘটা তাপীয় দূষণকে ঝোড়োজলের ব্যবস্থাপনা উপায় দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় যার ফলে এই প্রবাহকে শুষে নেওয়া হয় অথবা ভৌমজলের মধ্যে উন্মুক্ত করা হয়, যেমন বায়োরিটেনশন ব্যবস্থা এবং ইনফিলট্রেশন বেসিন। গ্রহণকারী প্রবাহের মধ্যে নির্গমনের আগে সূর্যের উত্তাপে জল গরম হয়ে যাওয়ায় রিটেনশন বেসিন কম তাপমাত্রায় কম কার্যকরী হতে পারে।

আরো দেখুন

  • জলজ বিষবিজ্ঞান

তথ্যসূত্র

  1. "West, Larry (March 26, 2006). "World Water Day: A Billion People Worldwide Lack Safe Drinking Water". About.com."। 
  2. "Pink, Daniel H. (April 19, 2006). "Investing in Tomorrow's Liquid Gold". Yahoo. Archived from the original on April 23, 2006."। 
  3. "Moss, Brian (2008). "Water Pollution by Agriculture". Phil. Trans. R. Soc. Lond. B. 363 (1491): 659–666. doi:10.1098/rstb.2007.2176. PMC 2610176. PMID 17666391."। 
  4. "Goel, P.K. (2006). Water Pollution - Causes, Effects and Control. New Delhi: New Age International. p. 179. ISBN 978-81-224-1839-2."। 
  5. "Laws, Edward A. (2018). Aquatic Pollution: An Introductory Text (4th ed.). Hoboken, NJ: John Wiley & Sons. ISBN 9781119304500."। 
  6. "UN-Water (2018) World Water Development Report 2018: Nature-based Solutions for Water, Geneva, Switzerland"। 
  7. ""Ch. 5: Description and Performance of Storm Water Best Management Practices". Preliminary Data Summary of Urban Storm Water Best Management Practices (Report). Washington, DC: United States Environmental Protection Agency (EPA). August 1999. EPA-821-R-99-012."। 
  8. "Kelland, Kate (October 19, 2017). "Study links pollution to millions of deaths worldwide". Reuters."। 
  9. ""Goes Foundation Home". Global Oceanic Environmemtal Survey. Retrieved September 1, 2019."। 
  10. ""Resources". GOES Foundation. Retrieved September 10, 2019."। 
  11. "Dryden, Howard. "We have 10 years to save the seas". Global Oceanic Environmental Survey. Retrieved September 1, 2019."। 
  12. ""An overview of diarrhea, symptoms, diagnosis and the costs of morbidity" (PDF). CHNRI. 2010. Archived from the original (PDF) on May 12, 2013."। 
  13. ""China says water pollution so severe that cities could lack safe supplies". Chinadaily.com.cn. June 7, 2005."। 
  14. "Kahn, Joseph; Yardley, Jim (August 26, 2007). "As China Roars, Pollution Reaches Deadly Extremes". New York Times."। 
  15. "Fact Sheet: 2004 National Water Quality Inventory Report to Congress (Report). EPA. January 2009. EPA 841-F-08-003."। 
  16. Nemecek, T.; Poore, J. (২০১৮-০৬-০১)। "Reducing food's environmental impacts through producers and consumers"Science360 (6392): 987–992। আইএসএসএন 0036-8075ডিওআই:10.1126/science.aaq0216অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 29853680বিবকোড:2018Sci...360..987P 
  17. "Jambeck, Jenna R.; Geyer, Roland; Wilcox, Chris (February 12, 2015). "Plastic waste inputs from land into the ocean" (PDF). Science. 347 (6223): 769. Bibcode:2015Sci...347..768J. doi:10.1126/science.1260352. PMID 25678662. S2CID 206562155. Retrieved August 28, 2018."। 
  18. "Christian Schmidt; Tobias Krauth; Stephan Wagner (October 11, 2017). "Export of Plastic Debris by Rivers into the Sea" (PDF). Environmental Science & Technology. 51 (21): 12246–12253. Bibcode:2017EnST...5112246S. doi:10.1021/acs.est.7b02368. PMID 29019247. "The 10 top-ranked rivers transport 88–95% of the global load into the sea""। 
  19. "Harald Franzen (November 30, 2017). "Almost all plastic in the ocean comes from just 10 rivers". Deutsche Welle. Retrieved December 18, 2018. "It turns out that about 90 percent of all the plastic that reaches the world's oceans gets flushed through just 10 rivers: The Yangtze, the Indus, Yellow River, Hai River, the Nile, the Ganges, Pearl River, Amur River, the Niger, and the Mekong (in that order).""। 
  20. "Zaikab, Gwyneth Dickey (March 28, 2011). "Marine microbes digest plastic". Nature. doi:10.1038/news.2011.191. ISSN 0028-0836."। 
  21. "Ground Water and Surface Water: A Single Resource (Report). Denver, CO: United States Geological Survey (USGS). 1998. Circular 1139."। 

বহিঃসংযোগ