মায়ার্স - ব্রিগস টাইপ ইনডিকেটর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রতিটি মায়ারের বর্ণনা সহ একটি চার্ট

মায়ার্স–ব্রিগস টাইপ ইন্ডিকেটর (এমবিটিআই) হলো মানুষের অনুভব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পর্কে নিজেকে পরীক্ষার বেশ কিছু প্রশ্নমালা।[১][২] পরীক্ষাটি চারটি ধরনঃ অন্তর্মুখি বা বহির্মুখী, সংবেদন বা অন্তর্দৃষ্টি, চিন্তাভাবনা বা অনুভূতি, বিচার বা অনুধাবন। প্রতিটি প্রকার থেকে একটি করে অক্ষর নিয়ে চার অক্ষরের একটি ফলাফল দেয়। যেমনঃ আইএনটিপি (INTP) বা ইএনএফযে (ENFJ)

ইতিহাস[সম্পাদনা]

কুক ব্রিগস এবং ইসাবেল ব্রিগস ম্যাইইয়ার্স

এমবিটিআইয়ের মূল সংস্করণ, ক্যাথরিন কুক ব্রিগস ও তার মেয়ে ইসাবেল ব্রিগস এই পদ্ধতি তৈরি করে।[৩] ক্যাথরিন কুক ব্রিগস ১৯১৭ সালে  ব্যক্ত্বিতের উপর গবেষণা শুরু করে। কুক মেয়ে মায়ার্সের হবু বরের সাথে পরিচিত হয়ে লক্ষ করেন তার ব্যক্তিত্ব ব্রিগস ও তার পরিবার থেকে অনেক আলাদা। কুক ব্রিগস বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনী এবং মনস্তত্ত্ব বিষয়ক বই পড়তে থাকেন। পরবর্তীকালে তিনি মানুষের মানষিকতার চারটি প্রকার যথাঃ চিন্তাশীল, স্বতঃস্ফূর্ত, নির্বাহী, ও সামাজিক  বের করেন। এই ৪টি প্রকার ছিলো তার গবেষণার প্রাথমিক রূপ।[৪][৫]

১৯২৩ সালে মনোবিজ্ঞানী কার্ল জং এর সাইকোলোজিক্যাল টাইপস বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর (যা প্রথম জার্মান ভাষায় প্রকাশ হয়) তিনি বুঝতে পারেন জং এবং তার তত্ত্বের অনেক মিল রয়েছে কিন্ত তা আরো অনেক উন্নত। ১৯২৬ এবং ১৯২৮ সালে আমেরিকান পত্রিকা নিউ রিপাবলিক  জং এর তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে দুটি প্রবন্ধ লিখেন। জংয়ের গবেষণা  ভালোভাবে বুঝার পর, ব্রিগেস এবং তার মেয়ে মানুষের আচরণের প্রতি তাদের আগ্রহকে বাড়াতে থাকেন এবং মনস্তাত্ত্বিক ধরনের তত্ত্বকে বাস্তবিকতায় ব্যবহার যোগ্য করায় আগ্রহী হন।১৯২৬ এবং ১৯২৮ সালে আমেরিকান পত্রিকা নিউ রিপাবলিক  জং এর তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে দুটি প্রবন্ধ লিখেন। জংয়ের গবেষণা  ভালোভাবে বুঝার পর, ব্রিগেস এবং তার মেয়ে মানুষের আচরণের প্রতি তাদের আগ্রহকে বাড়াতে থাকেন এবং মনস্তাত্ত্বিক ধরনের তত্ত্বকে বাস্তবিকতায় ব্যবহার যোগ্য করায় আগ্রহী হন। [১]

ব্রিগসের মেয়ে ইসাবেল ব্রিগেস মায়ার্স তার মায়ের গবেষণায় যোগ দেন এবং ধীরে ধীরে সম্পুর্ণ নিজেই করতে থাকে। মায়ার্স ১৯১৯ সালে স্বর্থমোর কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করলেও মায়ার্স এবং ব্রিগস উভয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী ছিলো না। সাইকোমেট্রিক পরিক্ষায় তারা স্বশিক্ষিত ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মায়ার্স ও ব্রিগস তাদের টাইপ ইনডিকেটর তৈরি শুরু করে, মহিলাদের তাদের ব্যক্ত্বিতের ধরন অনুসারে সবচেয়ে ভালো কাজ নির্বাচনে সাহায্য করার লক্ষ্যে। ১৯৪৪ সালে ব্রিগেস মায়ার্স টাইপ ইনডিকেটর হ্যান্ডবুক প্রকাশিত হয়।

মায়ার্স এর গবেষণা এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিসের প্রধান হেনরি চাউনসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রতিষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম এমবিটিআই ম্যানুয়াল ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়। মায়ার্স - ব্রিগস টাইপ ইনডিকেটর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইইনস্টিটিউট অফ পারসোনালিটি এন্ড সোসাল রিসার্চের প্রধান বার্কলে; মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি এর প্রফেসর ডোনাল্ড ডব্লিউ, ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় এর মেরি এইচ ম্যাককুলির সমার্থন পায়।

ফলাফলের ধরন[সম্পাদনা]

মায়ার্স–ব্রিগস টাইপ ইন্ডিকেটর (এমবিটিআই) পরীক্ষাটির মাধ্যমে মানবচরিত্রের চারটি দিক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয় । প্রশ্নগুলির উদ্দেশ্য হয় নিম্নলিখিত বিষয়গুলির মধ্যে থেকে আপনার চরিত্রে বহুব্যবহৃত দিকটি জানা । যথাঃ-

১. আপনি কি একা বা কেবলমাত্র অত্যন্ত পরিচিতদের সাথে থাকতে পছন্দ করেন এবং স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন না কি আপনি অপরিচিতদের সাথে মিলেমিশে থাকতেও পছন্দ করেন এবং তাতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ?


২. আপনি কি বাস্তব তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত বিবেচনা করেন না আপনি তাত্ত্বিক দিকগুলির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন ?

৩. আপনি কি যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশি স্বচ্ছন্দ না আপনি আপনার মূল্যবোধের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশি স্বচ্ছন্দ ?

৪. আপনার জীবনে কি পরিকল্পনা এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ না কি আপনি নিজের জীবনকে অনেক খোলামেলা ভাবে উপভোগ করেন এবং কোনো গণ্ডিতে নিজেকে সাধারণত আবদ্ধ রাখতে চান না ?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের উপর ভিত্তি করে মানুষের চরিত্রকে ষোলটি ভাগে ভাগ করে এই টাইপ ইন্ডিকেটর পদ্ধতি। যথাঃ-

ISTJ, ISFJ, IFNJ, INTJ, ISTP, ISFP, INFP, INTP, ESTP, ESFP, ENTJ, ENFP, ENTP, ESTJ, ESFJ, ENFJ

মায়ার্স–ব্রিগস টাইপ ইন্ডিকেটর (এমবিটিআই) প্রতিটি ব্যক্তি এই ব্যক্তিত্ব গুলোর একটির মধ্যে পড়ে এবং এদের প্রতিটির আলাদা আলাদা ভালো খারাপ দিক আছে।

সমালোচনা[সম্পাদনা]

যদিও এমবিটিআই বেশকিছু মনবিজ্ঞানের থিওরী দিয়ে বানানো তবুও এটি অপবিজ্ঞান হিসাবে সমালোচিত হয়েছে।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. MBTI basics ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৮-১০-০৫ তারিখে, The Myers-Briggs Foundation, 2014, Retrieved 18 June 2014.
  2. Myers-Briggs Type Indicator (MBTI) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৯-০৮-২৬ তারিখে, The Myers-Briggs Company, Sunnyvale, CA, 2019, Retrieved 3 September 2019.
  3. Block, Melissa (সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮)। "How The Myers-Briggs Personality Test Began In A Mother's Living Room Lab"NPR। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  4. "The Story of Isabel Briggs Myers"Center for Applications of Psychological Type। ২০১৭-০১-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২৯ 
  5. "The TYPE Writer: "It Happened In 1943: The Myers-Briggs Type Indicator Turns 60 Years Old"" (পিডিএফ)। ২০১১-০৬-২৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-২৯ 
  6. Lilienfeld, Scott O.; Lynn, Steven Jay; Lohr, Jeffrey M. (২০১৪)। Science and Pseudoscience in Clinical Psychology (ইংরেজি ভাষায়)। Guilford Publications। আইএসবিএন 978-1462517510