পরম শূন্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Ad anupam das (আলোচনা | অবদান)
পরম শূন্য এবং এর অভূতপূর্ব গুনাবলি : পরম শূন্য কি? এর বৈশিষ্ট্য কি? এর বৈচিত্র্যই বা কি? কেনও আজও বিজ্ঞানীরা পরম শূন্যে পৌছুতে পারেননি? পরম শূন্যে পৌছুলে পদার্থ কি ভাবে আচরণ করে? পরম শূন্য সম্পর্কে এই নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা হোল এই প্রবন্ধে।
 
Ad anupam das (আলোচনা | অবদান)
বিষয়শ্রেণী
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
=== '''<big><u>পরম শূন্যের সংজ্ঞা</u></big>''' ===
পরম শূন্য (Absolute Zero) হচ্ছে এই মহাবিশ্বের সম্ভাব্য সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তাপমাত্রা মাপক যন্ত্রে এর মানক হচ্ছে ০ কেলভিন অথবা -২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা -৪৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। মহাবিশ্বে এর থেকে কম তাপমাত্রা হওয়া সম্ভব নয়।
পরম শূন্য (Absolute Zero) হচ্ছে এই মহাবিশ্বের সম্ভাব্য সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তাপমাত্রা মাপক যন্ত্রে এর মানক হচ্ছে ০ কেলভিন অথবা -২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা -৪৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। মহাবিশ্বে এর থেকে কম তাপমাত্রা হওয়া সম্ভব নয়।


=== '''<big><u>তাপ, তাপমাত্রা ও পরম শূন্য</u></big>''' ===
পদার্থের অণুর একটি গতিশীলতা রয়েছে। তাপ হচ্ছে পদার্থের অণুর সমষ্টিগত আভ্যন্তরীণ গতি শক্তি এবং তাপমাত্রা হচ্ছে সেই বস্তুর অণুগুলির গড় আভ্যন্তরীণ গতি শক্তি। একটি বস্তুর অণুগুলির আভ্যন্তরীণ গতি শক্তি বৃদ্ধি পেলে, সেই বস্তুর তাপ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলস্বরূপ ওই বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। একটি কঠিন বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তার অণুগুলির গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। ওই কঠিন বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে ওই কঠিন বস্তুর অণুগুলির গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং তা তরলে পরিণত হবে। ওই কঠিন বস্তুর এই তাপামাত্রাকে ওর গলনাঙ্ক বলা হয়। আবার ওই তরলকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে ওর অণুগুলির গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং তা গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হবে। একে ওই বস্তুর স্ফুটনাঙ্ক বলে। যেমন, বরফের তাপমাত্রা হচ্ছে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জলীয় বাষ্পের তাপমাত্রা হচ্ছে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ বরফের (যা জলের কঠিন রূপ) গলনাঙ্ক হোল ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জলের স্ফুটনাঙ্ক হোল ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরফকে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে তার অণুর গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তা তরল জলে পরিণত হয়। আবার জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে জলের অণুগুলির গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে তা বাষ্পীভূত হয়। কোনও বস্তুকে পরম শূন্য তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে, ওর অণুগুলির গতিশীলতা সম্পূর্ণ ভাবে স্তব্ধ হয়ে যায়।
পদার্থের অণুর একটি গতিশীলতা রয়েছে। তাপ হচ্ছে পদার্থের অণুর সমষ্টিগত আভ্যন্তরীণ গতি শক্তি এবং তাপমাত্রা হচ্ছে সেই বস্তুর অণুগুলির গড় আভ্যন্তরীণ গতি শক্তি। একটি বস্তুর অণুগুলির আভ্যন্তরীণ গতি শক্তি বৃদ্ধি পেলে, সেই বস্তুর তাপ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলস্বরূপ ওই বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। একটি কঠিন বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তার অণুগুলির গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। ওই কঠিন বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে ওই কঠিন বস্তুর অণুগুলির গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং তা তরলে পরিণত হবে। ওই কঠিন বস্তুর এই তাপামাত্রাকে ওর গলনাঙ্ক বলা হয়। আবার ওই তরলকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে ওর অণুগুলির গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং তা গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হবে। একে ওই বস্তুর স্ফুটনাঙ্ক বলে। যেমন, বরফের তাপমাত্রা হচ্ছে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জলীয় বাষ্পের তাপমাত্রা হচ্ছে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ বরফের (যা জলের কঠিন রূপ) গলনাঙ্ক হোল ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জলের স্ফুটনাঙ্ক হোল ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরফকে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে তার অণুর গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তা তরল জলে পরিণত হয়। আবার জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে জলের অণুগুলির গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে তা বাষ্পীভূত হয়। কোনও বস্তুকে পরম শূন্য তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে, ওর অণুগুলির গতিশীলতা সম্পূর্ণ ভাবে স্তব্ধ হয়ে যায়।


তাপ সাধারণত বেশি তাপমাত্রা থেকে কম তাপমাত্রার দিকে যায় এবং সবসময় একটি ভারসাম্যের অবস্থায় আসতে চায়। এই কারনে আমরা লক্ষ্য করি যে একটি গরম বস্তুকে বাইরের সাধারণ তাপমাত্রায় রাখলে, ধিরে ধিরে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাপ ওই গরম তাপমাত্রার বস্তু থেকে কম তাপমত্রার পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে প্রবাহিত হয়। তাপমাত্রার একটি বিশেষত্ব হোল যে এটির প্রবাহ মোট তাপের উপর নির্ভর করে না বরং এটি তাপমাত্রার পার্থক্যের উপর নির্ভর করে। যেমন উদাহরণ স্বরূপ, এক গ্লাস ফুটন্ত জলের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। আবার একটি পুকুরের বা হ্রদের তাপমাত্রা সাধারণত ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে অনেক কম হয়। কিন্তু ওই এক গ্লাস জলের মোট তাপ ওই পুকুর বা হ্রদের মোট তাপের চেয়ে কম হবে। তার কারণ পুকুর বা হ্রদের জলের মোট অণুর সংখ্যা একটি ফুটন্ত গ্লাসের মোট অণুর সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি হয়। এই কারনে একটি পুকুর বা হ্রদের অণুগুলির সমষ্টিগত গতি শক্তি একটি গ্লাসের জলের অণুগুলির সমষ্টিগত গতি শক্তির তুলনায় অনেক বেশি হয়।
তাপ সাধারণত বেশি তাপমাত্রা থেকে কম তাপমাত্রার দিকে যায় এবং সবসময় একটি ভারসাম্যের অবস্থায় আসতে চায়। এই কারনে আমরা লক্ষ্য করি যে একটি গরম বস্তুকে বাইরের সাধারণ তাপমাত্রায় রাখলে, ধিরে ধিরে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাপ ওই গরম তাপমাত্রার বস্তু থেকে কম তাপমত্রার পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে প্রবাহিত হয়। তাপমাত্রার একটি বিশেষত্ব হোল যে এটির প্রবাহ মোট তাপের উপর নির্ভর করে না বরং এটি তাপমাত্রার পার্থক্যের উপর নির্ভর করে। যেমন উদাহরণ স্বরূপ, এক গ্লাস ফুটন্ত জলের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। আবার একটি পুকুরের বা হ্রদের তাপমাত্রা সাধারণত ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে অনেক কম হয়। কিন্তু ওই এক গ্লাস জলের মোট তাপ ওই পুকুর বা হ্রদের মোট তাপের চেয়ে কম হবে। তার কারণ পুকুর বা হ্রদের জলের মোট অণুর সংখ্যা একটি ফুটন্ত গ্লাসের মোট অণুর সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি হয়। এই কারনে একটি পুকুর বা হ্রদের অণুগুলির সমষ্টিগত গতি শক্তি একটি গ্লাসের জলের অণুগুলির সমষ্টিগত গতি শক্তির তুলনায় অনেক বেশি হয়।


=== <big><u>পরম শূন্যের অসম্ভবতা</u></big> ===
এই মহাবিশ্বে তাপমাত্রার উচ্চতর প্রান্তের কোনও সীমা নেই। অর্থাৎ একটি বস্তুর তাপমাত্রা যতটা সম্ভব বেশি হতে পারে। যেমন, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হবার মুহূর্তে অর্থাৎ বিগ ব্যাং (Big Bang) এর সময় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের তাপমাত্রা ছিল কোটি কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। কিন্তু আমরা তাপমাত্রার নিম্নতর সীমার ক্ষেত্রে পরম শূন্যের নিচে যেতে পারি না। সত্যি কথা বলতে, আমরা এই মহাবিশ্বের কোনও স্থানে আজ পর্যন্ত পরম শূন্য তাপমাত্রা লক্ষ্য করিনি এবং আমারা আজও পর্যন্ত গবেষণাগারে পরম শূন্য তাপমাত্রায় পৌছুতে পারিনি। এর দুটি কারণ আছে-
এই মহাবিশ্বে তাপমাত্রার উচ্চতর প্রান্তের কোনও সীমা নেই। অর্থাৎ একটি বস্তুর তাপমাত্রা যতটা সম্ভব বেশি হতে পারে। যেমন, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হবার মুহূর্তে অর্থাৎ বিগ ব্যাং (Big Bang) এর সময় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের তাপমাত্রা ছিল কোটি কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। কিন্তু আমরা তাপমাত্রার নিম্নতর সীমার ক্ষেত্রে পরম শূন্যের নিচে যেতে পারি না। সত্যি কথা বলতে, আমরা এই মহাবিশ্বের কোনও স্থানে আজ পর্যন্ত পরম শূন্য তাপমাত্রা লক্ষ্য করিনি এবং আমারা আজও পর্যন্ত গবেষণাগারে পরম শূন্য তাপমাত্রায় পৌছুতে পারিনি। এর দুটি কারণ আছে-


১১ নং লাইন: ১৪ নং লাইন:
২। দ্বিতীয়ত, কোয়ান্টাম মেকানিক্স। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের হাইজেনবার্গ অনিশ্চয়তার নীতির মতে, কোনও অণুর একেবারে সঠিক অবস্থান জানা সম্ভব নয়। কিন্তু পরম শূন্য যদি একটি অণুর আভ্যন্তরীণ গতি সম্পূর্ণ ভাবে স্তব্ধ করে দেয়, তবে ওই অণুর অবস্থান একেবারে সঠিক ভাবে জানা যাবে। এই কারনে পরম শূন্যে পৌছানো একেবারে অসম্ভব। বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে পরম শূন্যের খুব কাছে পৌছাতে পারলেও, একেবারে পরম শূন্যে এখনও পৌছাতে পারেননি এবং ভবিষ্যতেও সম্ভবত পৌছতে পারবেন না।
২। দ্বিতীয়ত, কোয়ান্টাম মেকানিক্স। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের হাইজেনবার্গ অনিশ্চয়তার নীতির মতে, কোনও অণুর একেবারে সঠিক অবস্থান জানা সম্ভব নয়। কিন্তু পরম শূন্য যদি একটি অণুর আভ্যন্তরীণ গতি সম্পূর্ণ ভাবে স্তব্ধ করে দেয়, তবে ওই অণুর অবস্থান একেবারে সঠিক ভাবে জানা যাবে। এই কারনে পরম শূন্যে পৌছানো একেবারে অসম্ভব। বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে পরম শূন্যের খুব কাছে পৌছাতে পারলেও, একেবারে পরম শূন্যে এখনও পৌছাতে পারেননি এবং ভবিষ্যতেও সম্ভবত পৌছতে পারবেন না।


=== <u><big>পরম শূন্য ও পদার্থ</big></u> ===
বিজ্ঞানীরা পরম শূন্যে পৌছতে না পারলেও, এর খুব কাছাকাছি তাপমাত্রায় পৌছতে পেরেছেন। এই অত্যন্ত কম তাপমাত্রায় পদার্থের অণুগুলি খুবই অদ্ভুদভাবে আচরণ করে। আমাদের বাঙালীদের গর্ব বৈজ্ঞানিক সতেন্দ্রনাথ বোস বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে একত্রে কাজ করে খুবই কম তাপমাত্রায় পদার্থ কীভাবে আচরণ করবে, তা নির্ধারণ করেন। একে “বোস আইনস্টাইন কনডেনসেট” তত্ত্ব বলে। এই তত্ত্বের মতে, কোনও গ্যাসীয়-তরল পদার্থের তাপামাত্রা পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারলে, ওই পদার্থের সমস্ত অণুগুলি সর্বনিম্ন কোয়ান্টাম অবস্থায় পৌছে যাবে। এর ফলে ওই অণুগুলি স্বাভাবিকের থেকে একেবারে ভিন্ন ভাবে আচরণ করবে। ওই অণুগুলি একত্রিত হয়ে একটিমাত্র সত্ত্বার মতো আচরণ করবে। এর ফলে এই গ্যাসীয়-তরল বস্তু পরম তড়িৎ পরিবাহক ও পরম তরলে পরিণত হবে। এর ফলে এর মধ্যে দিয়ে বিনা বাধায় তড়িৎ পরিবাহিত হবে। আবার এই গ্যাসীয়-তরল পদার্থে কোনও ঘর্ষণ বল কাজ করবে না। এর ফলে এই পরম তরলকে কোনও পাত্রে রাখলে তা ওই পাত্র থেকে নিজের থেকেই উপচে পড়বে।                  
বিজ্ঞানীরা পরম শূন্যে পৌছতে না পারলেও, এর খুব কাছাকাছি তাপমাত্রায় পৌছতে পেরেছেন। এই অত্যন্ত কম তাপমাত্রায় পদার্থের অণুগুলি খুবই অদ্ভুদভাবে আচরণ করে। আমাদের বাঙালীদের গর্ব বৈজ্ঞানিক সতেন্দ্রনাথ বোস বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে একত্রে কাজ করে খুবই কম তাপমাত্রায় পদার্থ কীভাবে আচরণ করবে, তা নির্ধারণ করেন। একে “বোস আইনস্টাইন কনডেনসেট” তত্ত্ব বলে। এই তত্ত্বের মতে, কোনও গ্যাসীয়-তরল পদার্থের তাপামাত্রা পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারলে, ওই পদার্থের সমস্ত অণুগুলি সর্বনিম্ন কোয়ান্টাম অবস্থায় পৌছে যাবে। এর ফলে ওই অণুগুলি স্বাভাবিকের থেকে একেবারে ভিন্ন ভাবে আচরণ করবে। ওই অণুগুলি একত্রিত হয়ে একটিমাত্র সত্ত্বার মতো আচরণ করবে। এর ফলে এই গ্যাসীয়-তরল বস্তু পরম তড়িৎ পরিবাহক ও পরম তরলে পরিণত হবে। এর ফলে এর মধ্যে দিয়ে বিনা বাধায় তড়িৎ পরিবাহিত হবে। আবার এই গ্যাসীয়-তরল পদার্থে কোনও ঘর্ষণ বল কাজ করবে না। এর ফলে এই পরম তরলকে কোনও পাত্রে রাখলে তা ওই পাত্র থেকে নিজের থেকেই উপচে পড়বে।                  

১৩:৩৯, ৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

পরম শূন্যের সংজ্ঞা

পরম শূন্য (Absolute Zero) হচ্ছে এই মহাবিশ্বের সম্ভাব্য সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তাপমাত্রা মাপক যন্ত্রে এর মানক হচ্ছে ০ কেলভিন অথবা -২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা -৪৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। মহাবিশ্বে এর থেকে কম তাপমাত্রা হওয়া সম্ভব নয়।

তাপ, তাপমাত্রা ও পরম শূন্য

পদার্থের অণুর একটি গতিশীলতা রয়েছে। তাপ হচ্ছে পদার্থের অণুর সমষ্টিগত আভ্যন্তরীণ গতি শক্তি এবং তাপমাত্রা হচ্ছে সেই বস্তুর অণুগুলির গড় আভ্যন্তরীণ গতি শক্তি। একটি বস্তুর অণুগুলির আভ্যন্তরীণ গতি শক্তি বৃদ্ধি পেলে, সেই বস্তুর তাপ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলস্বরূপ ওই বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। একটি কঠিন বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তার অণুগুলির গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। ওই কঠিন বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে ওই কঠিন বস্তুর অণুগুলির গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং তা তরলে পরিণত হবে। ওই কঠিন বস্তুর এই তাপামাত্রাকে ওর গলনাঙ্ক বলা হয়। আবার ওই তরলকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে ওর অণুগুলির গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং তা গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হবে। একে ওই বস্তুর স্ফুটনাঙ্ক বলে। যেমন, বরফের তাপমাত্রা হচ্ছে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জলীয় বাষ্পের তাপমাত্রা হচ্ছে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ বরফের (যা জলের কঠিন রূপ) গলনাঙ্ক হোল ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জলের স্ফুটনাঙ্ক হোল ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরফকে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে তার অণুর গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তা তরল জলে পরিণত হয়। আবার জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে জলের অণুগুলির গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে তা বাষ্পীভূত হয়। কোনও বস্তুকে পরম শূন্য তাপমাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে, ওর অণুগুলির গতিশীলতা সম্পূর্ণ ভাবে স্তব্ধ হয়ে যায়।

তাপ সাধারণত বেশি তাপমাত্রা থেকে কম তাপমাত্রার দিকে যায় এবং সবসময় একটি ভারসাম্যের অবস্থায় আসতে চায়। এই কারনে আমরা লক্ষ্য করি যে একটি গরম বস্তুকে বাইরের সাধারণ তাপমাত্রায় রাখলে, ধিরে ধিরে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাপ ওই গরম তাপমাত্রার বস্তু থেকে কম তাপমত্রার পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে প্রবাহিত হয়। তাপমাত্রার একটি বিশেষত্ব হোল যে এটির প্রবাহ মোট তাপের উপর নির্ভর করে না বরং এটি তাপমাত্রার পার্থক্যের উপর নির্ভর করে। যেমন উদাহরণ স্বরূপ, এক গ্লাস ফুটন্ত জলের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। আবার একটি পুকুরের বা হ্রদের তাপমাত্রা সাধারণত ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে অনেক কম হয়। কিন্তু ওই এক গ্লাস জলের মোট তাপ ওই পুকুর বা হ্রদের মোট তাপের চেয়ে কম হবে। তার কারণ পুকুর বা হ্রদের জলের মোট অণুর সংখ্যা একটি ফুটন্ত গ্লাসের মোট অণুর সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি হয়। এই কারনে একটি পুকুর বা হ্রদের অণুগুলির সমষ্টিগত গতি শক্তি একটি গ্লাসের জলের অণুগুলির সমষ্টিগত গতি শক্তির তুলনায় অনেক বেশি হয়।

পরম শূন্যের অসম্ভবতা

এই মহাবিশ্বে তাপমাত্রার উচ্চতর প্রান্তের কোনও সীমা নেই। অর্থাৎ একটি বস্তুর তাপমাত্রা যতটা সম্ভব বেশি হতে পারে। যেমন, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হবার মুহূর্তে অর্থাৎ বিগ ব্যাং (Big Bang) এর সময় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের তাপমাত্রা ছিল কোটি কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। কিন্তু আমরা তাপমাত্রার নিম্নতর সীমার ক্ষেত্রে পরম শূন্যের নিচে যেতে পারি না। সত্যি কথা বলতে, আমরা এই মহাবিশ্বের কোনও স্থানে আজ পর্যন্ত পরম শূন্য তাপমাত্রা লক্ষ্য করিনি এবং আমারা আজও পর্যন্ত গবেষণাগারে পরম শূন্য তাপমাত্রায় পৌছুতে পারিনি। এর দুটি কারণ আছে-

১। প্রথমত, কোনও বস্তুকে পরম শূন্যে নিয়ে যেতে হলে, ওই বস্তু থেকে তাপ নির্গত করে তার পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত করতে হবে। এটি করার জন্য বস্তুর পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা ওই বস্তুর তুলনায় কম হতে হবে। যেমন, সাধারণ জলের তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তুলনায় অনেক বেশি। এবার এই জলকে বরফে পরিণত করতে হলে, এর তাপামাত্রাকে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য জলকে এমন পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে রাখতে (যেমন ডীপ ফ্রিজ) হবে যার তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। তাহলে জলের থেকে তাপ বেরিয়ে পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত হবে এবং জলের তাপমাত্রা কমে গিয়ে তা বরফে পরিণত হবে। সুতরাং কোনও বস্তুকে পরম শূন্যে নিয়ে যেতে হলে তার পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা পরম শূন্যের কম হতে হবে। যা কার্যত অসম্ভব।

২। দ্বিতীয়ত, কোয়ান্টাম মেকানিক্স। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের হাইজেনবার্গ অনিশ্চয়তার নীতির মতে, কোনও অণুর একেবারে সঠিক অবস্থান জানা সম্ভব নয়। কিন্তু পরম শূন্য যদি একটি অণুর আভ্যন্তরীণ গতি সম্পূর্ণ ভাবে স্তব্ধ করে দেয়, তবে ওই অণুর অবস্থান একেবারে সঠিক ভাবে জানা যাবে। এই কারনে পরম শূন্যে পৌছানো একেবারে অসম্ভব। বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে পরম শূন্যের খুব কাছে পৌছাতে পারলেও, একেবারে পরম শূন্যে এখনও পৌছাতে পারেননি এবং ভবিষ্যতেও সম্ভবত পৌছতে পারবেন না।

পরম শূন্য ও পদার্থ

বিজ্ঞানীরা পরম শূন্যে পৌছতে না পারলেও, এর খুব কাছাকাছি তাপমাত্রায় পৌছতে পেরেছেন। এই অত্যন্ত কম তাপমাত্রায় পদার্থের অণুগুলি খুবই অদ্ভুদভাবে আচরণ করে। আমাদের বাঙালীদের গর্ব বৈজ্ঞানিক সতেন্দ্রনাথ বোস বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে একত্রে কাজ করে খুবই কম তাপমাত্রায় পদার্থ কীভাবে আচরণ করবে, তা নির্ধারণ করেন। একে “বোস আইনস্টাইন কনডেনসেট” তত্ত্ব বলে। এই তত্ত্বের মতে, কোনও গ্যাসীয়-তরল পদার্থের তাপামাত্রা পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারলে, ওই পদার্থের সমস্ত অণুগুলি সর্বনিম্ন কোয়ান্টাম অবস্থায় পৌছে যাবে। এর ফলে ওই অণুগুলি স্বাভাবিকের থেকে একেবারে ভিন্ন ভাবে আচরণ করবে। ওই অণুগুলি একত্রিত হয়ে একটিমাত্র সত্ত্বার মতো আচরণ করবে। এর ফলে এই গ্যাসীয়-তরল বস্তু পরম তড়িৎ পরিবাহক ও পরম তরলে পরিণত হবে। এর ফলে এর মধ্যে দিয়ে বিনা বাধায় তড়িৎ পরিবাহিত হবে। আবার এই গ্যাসীয়-তরল পদার্থে কোনও ঘর্ষণ বল কাজ করবে না। এর ফলে এই পরম তরলকে কোনও পাত্রে রাখলে তা ওই পাত্র থেকে নিজের থেকেই উপচে পড়বে।