সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
কিছু তথ্য বর্ধ্ন করা হয়েছে এবং একটি অনুচ্ছেদ আকারে বিবৃত করা হয়েছে
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
নওয়াব বাহাঁদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সাহেব ১৮৬৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জিলার টাঙ্গাইল মহকুমার (বর্তমানে জিলা) ধনবাড়ীর বিখ্যাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জনাব আলী চৌধুরী ও মাতার নাম সাইয়েদা রাবেয়া খাতুন। নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর জন্মের প্রায় আড়াইশ বছর পূর্বে তাঁর প্রপিতামহ শাহ সৈয়দ খোদা বক্স তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার ধনবাড়ীতে বসতি স্থাপন করেন। নওয়াব বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী শৈশবে গৃহ শিক্ষকের কাছে আরবী, ফার্সি, ও বাংলায় বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় রাজশাহীর কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরবর্তিতে কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জোভিয়ার্স কলেজ থেকে তিনি এফ.এ. পাশ করেন।
{{উৎসহীন|date=ফেব্রুয়ারি ২০১৬}}
নবাব সাহেব শিক্ষা,সাহিত্য ও সংস্কৃতির একজন বড় অনুরাগী ছিলেন। ১৮৯৫ সালে শেখ আবদুর রহীমের সম্পাদিত মাসিক “মিহির” পত্রিকা শেখ আবদুর রহিম (মতান্তরে মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদ আল মাশহাদী) সম্পাদিত সাপ্তাহিক “সুধাকর ” পত্রিকা একত্রিত হয়ে সাপ্তাহিক “মিহির-সুধাকর নামে আত্মপ্রকাশ করে। নওয়াব আলী চৌধুরী এর মালিক ছিলেন। এজন্য একটি প্রেস ক্রয় করে তিনি কলকাতায় তার নিজ বাসভবনে স্থাপন করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পন্ডিত রেয়াজউদ্দিন আহমদ আল মাশহাদী, কবি মোজাম্মেল হকের সাহিত্য প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর দান ছিল অপরিসীম। ফলে উল্লেখিত লেখকগন তাদের বিভিন্ন প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর নামে উৎসর্গ করেন।
{{Infobox revolution biography
শিক্ষানুরাগী জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত গ্রন্থ সমূহ হচ্ছে, “ঈদুল আযহা(১৮৯০)”; “মৌলুদ শরীফ (১৯০৩)”; “ভারনাকুলার এডুকেশন ইন বেঙ্গল (১৯০০)”; “প্রাইমারি এডুকেশন ইন রুরাল এরিয়াস্‌ (১৯০৬)”।
|name=সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবর্তকদের প্রবল বাঁধার মুখে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়ে পুর্ব বাংলা ও আসাম নামক একটি মুসলিম প্রধান প্রদেশ জন্ম লাভ করে। এসময় নওয়াব আলী চৌধুরী একটা সর্বভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি মুসলমানদের অনগ্রসরতার জন্য অশিক্ষাকে দায়ী করেন। ১৯০৫ সালের যেদিন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় সেদিনই ঢাকার ‘নর্থব্রুক হলে’ তার ও ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহের উদ্যোগে একটি প্রাদেশিক রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়। ১৯১১ সালে বংগভঙ্গ বাতিল ঘোষণা হলে এ সম্পর্কে তিনি বলেন , “প্রদেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করিয়াছি এবং যদিও সে চেষ্ঠা সফল হয় নাই তথাপি পুর্ববঙ্গে যাহারা আমাদের প্রতিপক্ষ ছিলেন তাহারা পর্যন্ত স্বীকার করিবেন যে, আমরা যাহার জন্য চেষ্ঠা করিয়াছিলাম তাহাই ঠিক এবং বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়াতে ঐ প্রদেশের হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই ক্ষতি হইয়াছে।”
|alternate name=
১৯১১ সালে ২৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি মানপত্রে নবাব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জের ঢাকায় অবস্থান কালে নওয়াব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী সহ ১৯ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে মুসলমানদের যে সমূহ ক্ষতি হচ্ছে সে কথা তুলে ধরেন। এ লক্ষ্যে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নাথান কমিটি গঠিত হলে নওয়াব আলী চৌধুরী এর অন্যতম সদস্য হন। এর অধীনে ছয়টি সাব কমিটি গঠিত হলে তিনি ৬ টি বিভাগের সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আর্থিক সংকটের কারনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চাপা পড়ে যায়। সে সময় নওয়াব আলী চৌধুরী ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি বিষয়টি ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় আবার উপস্থাপন করেন। ১৯২০ সালের মার্চ ১৮ ভারতীয় আইনসভায় প্রস্তাবটি “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অ্যাক্টে” পরিনত হয় এবং ২৩ মার্চ তা গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। ১৯২১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস শুরু হয়। ১৯২২ সালে নবাব আলী চৌধুরী ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা গেলে নিজ জমিদারীর একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫,০০০ টাকা প্রদান করেন।
|lived=[[২৯ ডিসেম্বর]] [[১৮৬৩]] –[[১৭ এপ্রিল]] [[১৯২৯]]
২০০৩ সালের ৯ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস. এম. এ. ফায়েজের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিনেট ভবনের নাম "সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সিনেট ভবন" করা হয়।
|image=[[চিত্র:Syed Nawab Ali Chowdhury.JPG|thumb|center]]
নওয়াব আলী চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী । শিক্ষাবিস্তারে তার আন্তরিকতার জন্য সে সময় তাকে শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯২৯ সালের এপ্রিল ১৭ ইন্তেকালের পুর্ব পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এদেশে নওয়াব আলী চৌধুরী ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে জমি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ১৯১০ সালে তিনি নিজস্ব এলাকা ধনবাড়ীতে “নওয়াব ইনস্টিটিউট নামের একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া সোনাতলা, কোদালিয়া, গফরগাঁও, পিংনা, জঙ্গলবাড়ি, হয়বতনগর সহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়তা করেন।
|dateofbirth={{birth date|1863|12|29}}
নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১১ সালে মুসলিম লীগের রংপুর অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে প্রথম সোচ্চার হয়ে বলেছিলেন, “বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, মাতৃস্তনের ন্যায়, জন্মভূমির শান্তি নিকেতনের ন্যায় বাংলা ভাষা। বাংলাভাষা আমাদের নিকট প্রিয়, কিন্তু হতভাগ্য আমরা, প্রিয় মাতৃভাষার উন্নতিকল্পে আমরা উদাসীন। অধঃপতন আমাদের হবে না - তো কার হবে?
|placeofbirth=টাঙ্গাইল, ধনবাড়ী [[ব্রিটিশ ভারত]]
তৎকালীন প্রতিকূল পরিবেশে একজন জমিদার হয়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯২১ সালে বাংলাভাষাকে প্রদেশের সরকারি ভাষা করার জন্য তিনি লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন।
|dateofdeath={{death date and age|1929|4|17|1863|12|29}}
নবাব আলী চৌধুরী ইংরেজ সরকার কতৃক ১৮৯৬ সালে খান বাহাদুর, ১৯১১ সালে নওয়াব, ১৯১৮ সালে কমান্ডার অব দ্যা ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (সিআইই) এবং ১৯২৪ সালে নওয়াব বাহাদুর পদবি লাভ করেন।
|placeofdeath=[[দার্জিলিং]], [[ব্রিটিশ ভারত]]°
তাঁর এক পুত্র সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী অবিভক্ত বাংলা, পুর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর দৌহিত্র মোহাম্মদ আলী বগুড়া পাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
|offices=শিক্ষা মন্ত্রী (অবিভক্ত বাংলা)
|organizations=
|movement= বঙ্গভঙ্গ
}}
'''নওয়াব বাহহদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী''' (জন্ম: [[২৯ ডিসেম্বর]], [[১৮৬৩]]; মৃত্যু: [[১৭ এপ্রিল]], [[১৯২৯]]) বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) টাঙ্গাইলস্থ ধনবাড়ীর নবাব ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তার দৌহিত্র [[মোহাম্মদ আলী বগুড়া]] পাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া তার এক পুত্র [[সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী]] পুর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।


সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৭ এপ্রিল ১৯২৯ (বাংলা ১৩৩৬, ১ বৈশাখ) দার্জিলিংয়ে (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে) ইডেন ক্যাসেলে ইন্তেকাল করেন।
== জন্ম ও শৈশব ==
[[চিত্র:Mosque Dhonobari Tangail.jpg|thumb|right|টাঙাইলের ধনবাড়ীর নবাব এস্টেটের ৭০০ বৎসর পুরোনো মসজিদ। প্রায় চারশত বৎসর পূর্বে এই মসজিদের সংস্কার করা হয়। তারপর থেকে মসজিদটি এই অবস্থায়ই আছে]]


নওয়াব সাহেব [[১৮৬৩]] সালের [[ডিসেম্বর ২৯|২৯ ডিসেম্বর]] [[টাঙ্গাইল জেলা|টাঙ্গাইল জেলার]] ধনবাড়ীর বিখ্যাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার আড়াইশ বছর আগে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর প্রপিতামহ শাহ সৈয়দ খোদা বক্স বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীতে বসতি স্থাপন করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী শৈশবে গৃহ শিক্ষকের কাছে আরবী, ফার্সি, ও বাংলায় বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন। তার আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় রাজশাহীর কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরবর্তিতে কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জোভিয়ার্স কলেজ থেকে তিনি এফ.এ. পাশ করেন।

[[চিত্র:Nabab Estate Tangail Dhobobari.jpg|thumb|right|নবাব এস্টেটের অফিস ভবন, টাঙ্গাইল, ধনবাড়ী।]]

== সাহিত্য সংস্কৃতি ==
[[১৮৯৫]] থেকে [[১৯০৪]] পর্যন্ত নওয়াব সাহেবের কর্মতৎপরতা ছিল প্রধানত সাহিত্যসংস্কৃতি কেন্দ্রিক। [[১৮৯৫]] সালে ''মিহির''ও ''সুধাকর'' পত্রিকা একত্রিত হয়ে সাপ্তাহিক ''মিহির-সুধাকর'' নামে আত্মপ্রকাশ করে। নওয়াব আলী চৌধুরী এর মালিক ছিলেন। এজন্য একটি প্রেস ক্রয় করে তিনি কলকাতায় তার নিজ বাসভবনে স্থাপন করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পন্ডিত রেয়াজউদ্দিন আহমদ আল মাশহাদী, কবি মোজাম্মেল হকের সাহিত্য প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর দান ছিল অপরিসীম। ফলে উল্লেখিত লেখকগন তাদের বিভিন্ন প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর নামে উৎসর্গ করেন।

শিক্ষানুরাগী অনন্য জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত গ্রন্থ সমূহ---
* ঈদুল আযহা ([[১৮৯০]])
* মৌলুদ শরীফ ([[১৯০৩]])
* ভারনাকুলার এডুকেশন ইন বেঙ্গল ([[১৯০০]])
* প্রাইমারি এডুকেশন ইন রুরাল এরিয়াস্‌ ([[১৯০৬]])

== রাজনীতিতে প্রবেশ ==
[[চিত্র:Nabab Estate Office Tangail Dhobobari2.jpg|thumb|left|টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব এস্টেটের বৈঠকখানা। বৃটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ সফরে এলে, এই ভবনেই নবাব সাহেবের সাথে তার বৈঠক হয়। এই ঘরটিতে আসবাব পত্র এখনও ঠিক সেভাবেই সাজানো আছে, যেভাবে সেদিনের বৈঠকের সময় সাজানো ছিল।]]
[[১৯০৫]] সালে [[বঙ্গভঙ্গ]] আন্দোলন থেকে তার রাজনীতিতে সক্রিয় হন। [[১৯০৫]] সালের [[অক্টোবর ১৬|১৬ অক্টোবর]] হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবর্তকদের প্রবল বাঁধার মুখে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়ে পুর্ব বাংলা ও আসাম নামক একটি মুসলিম প্রধান প্রদেশ জন্ম লাভ করলে নওয়াব আলী চৌধুরী একটা সর্বভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি মুসলমানদের অনগ্রসরতার জন্য অশিক্ষাকে দায়ী করেন। [[১৯০৫]] সালের যেদিন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় সেদিনই ঢাকার [[নর্থব্রুক হল|নর্থব্রুক হলে]] তার ও ঢাকার [[খাজা সলিমুল্লাহ|নবাব স্যার সলিমুল্লাহের]] উদ্দোগে প্রাদেশিক রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়। তিনি বংগ ভঙ্গ সম্পর্কে বলেন , "প্রদেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করিয়াছি এবং যদিও সে চেষ্ঠা সফল হয় নাই তথাপিও পুর্ব বঙ্গে যাহারা আমাদের প্রতিপক্ষ ছিলেন তাহারা পর্যন্ত স্বীকার করিবেন যে, আমরা যাহার জন্য চেষ্ঠা করিয়াছিলাম তাহাই ঠিক এবং বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়াতে ঐ প্রদেশের হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই ক্ষতি হইয়াছে।''

== ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ==
[[১৯১১]] সালে [[আগস্ট ২৯|২৯ আগস্ট]] [[ঢাকা|ঢাকার]] [[কার্জন হল|কার্জন হলে]] [[ল্যান্সলট হেয়ার|ল্যান্সলট হেয়ারের]] বিদায় এবং [[চার্লস বেইলি|চার্লস বেইলির]] যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি মানপত্রে [[নবাব সলিমুল্লাহ]] ও নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। [[১৯১২]] সালের [[জানুয়ারি ৩১|৩১ জানুয়ারি]] [[লর্ড হার্ডিঞ্জ|লর্ড হার্ডিঞ্জের]] [[ঢাকা|ঢাকায়]] অবস্থান কালে নওয়াব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী সহ ১৯ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে [[বঙ্গভঙ্গ]] রদের ফলে মুসলমানদের যে সমূহ ক্ষতি হচ্ছে সে কথা তুলে ধরেন। এ লক্ষ্যে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট [[নাথান কমিটি]] গঠিত হলে নওয়াব আলী চৌধুরী এর অন্যতম সদস্য হন। এর অধীনে ছয়টি সাব কমিটি গঠিত হলে তিনি ৬ টি বিভাগের সদস্য নিযুক্ত হন। [[১৯১৪]] সালে [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধ]] চলাকালে আর্থিক সংকটের কারনে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] প্রতিষ্ঠার কাজ চাপা পড়ে যায়। সে সময় নওয়াব আলী চৌধুরী ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি বিষয়টি আবার [[১৯১৭]] সালের [[মার্চ ৭|৭ মার্চ]] ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় আবার উপস্থাপন করেন। [[১৯২০]] সালের [[১৮ মার্চ|মার্চ ১৮]] ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অ্যাক্টে পরিনত হয় এবং [[মার্চ ২৩|২৩ মার্চ]] তা গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। লর্ড হার্ডিঞ্জ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নয় বছর পর [[১৯২১]] সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস শুরু হয়। [[১৯২২]] সালে তিনি ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা গেলে নিজ জমিদারীর একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫,০০০ টাকা প্রদান করেন।

[[চিত্র:Nabab ali chowdhury Senate bhobon DU.jpg|right|thumb|নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]
[[২০০৩]] সালের [[জুন ৯|৯ জুন]] [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য]] [[এস. এম. এ. ফায়েজ|এস. এম. এ. ফায়েজের]] সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিনেট ভবনের নাম "সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সিনেট ভবন" করা হয়।

== শিক্ষাবিস্তার ==
নওয়াব আলী চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী । শিক্ষাবিস্তারে তার আন্তরিকতার জন্য সে সময় তাকে শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। [[১৯২৯]] সালের [[এপ্রিল ১৭]] ইন্তেকালের পুর্ব পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এদেশে নওয়াব আলী চৌধুরী ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে জমি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। [[১৯১০]] সালে তিনি নিজস্ব এলাকা ধনবাড়ীতে ''নওয়াব ইনস্টিটিউট'' নামের একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া সোনাতলা, কোদালিয়া, গফরগাঁও, পিংনা, জঙ্গলবাড়ি, হয়বতনগরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়তা করেন।

== মাতৃভাষার প্রতি অবদান ==
[[File:Gate of dhanbari Nawab institution founded on 1910.jpg|thumb|নওয়াব আলী চৌধুরী কর্তৃক ১৯১০ সালে ধনবাড়ীতে প্রতিষ্ঠিত নওয়াব ইনস্টিটিউশন এর গেট]]
নওয়াব আলী চৌধুরী [[১৯১১]] সালের [[রংপুর জেলা|রংপুর]] অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে প্রথম সোচ্চার হয়ে বলেছিলেন, "বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, মাতৃস্তনের ন্যায়, জন্মভূমির শান্তি নিকেতনের ন্যায় বাংলা ভাষা। বাংলাভাষা আমাদের নিকট প্রিয়, কিন্তু হতভাগ্য আমরা, প্রিয় মাতৃভাষার উন্নতিকল্পে আমরা উদাসীন। অধঃপতন আমাদের হবে না - তো কার হবে? তৎকালীন প্রতিকূল পরিবেশে একজন জমিদার হয়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। [[১৯২১]] সালে বাংলাভাষাকে প্রদেশের সরকারি ভাষা করার জন্য লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন।

== বিভিন্ন পদবি লাভ ==
[[১৮৯৬]] সালে [[খান বাহাদুর]], [[১৯১১]] সালে [[নওয়াব]], [[১৯১৮]] সালে [[কমান্ডার অব দ্যা ইন্ডিয়ান এম্পায়ার]] (সিআইই) এবং [[১৯২৪]] সালে [[নওয়াব বাহাদুর]] পদবি লাভ করেন।
== মৃত্যু ==
[[File:Tomb of Nawab ali Chowdhury.jpg|thumb|নওয়াব আলী চৌধুরীর কবর]]
সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী [[এপ্রিল ১৭|১৭ এপ্রিল]] [[১৯২৯]] (বাংলা ১৩৩৬, ১ বৈশাখ) [[দার্জিলিং|দার্জিলিংয়ে]] (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে) ইডেন ক্যাসেলে ইন্তেকাল করেন।


[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ]]
৬০ নং লাইন: ২০ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]
[[বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]
[[বিষয়শ্রেণী:টাঙ্গাইল জেলার ব্যক্তিত্ব]]
[[বিষয়শ্রেণী:টাঙ্গাইল জেলার ব্যক্তিত্ব]]

তথ্যসূত্রঃ http://mymensinghdivision24.com/news/3415 = ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল

১৬:৩০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

নওয়াব বাহাঁদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সাহেব ১৮৬৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জিলার টাঙ্গাইল মহকুমার (বর্তমানে জিলা) ধনবাড়ীর বিখ্যাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জনাব আলী চৌধুরী ও মাতার নাম সাইয়েদা রাবেয়া খাতুন। নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর জন্মের প্রায় আড়াইশ বছর পূর্বে তাঁর প্রপিতামহ শাহ সৈয়দ খোদা বক্স তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার ধনবাড়ীতে বসতি স্থাপন করেন। নওয়াব বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী শৈশবে গৃহ শিক্ষকের কাছে আরবী, ফার্সি, ও বাংলায় বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় রাজশাহীর কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরবর্তিতে কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জোভিয়ার্স কলেজ থেকে তিনি এফ.এ. পাশ করেন। নবাব সাহেব শিক্ষা,সাহিত্য ও সংস্কৃতির একজন বড় অনুরাগী ছিলেন। ১৮৯৫ সালে শেখ আবদুর রহীমের সম্পাদিত মাসিক “মিহির” পত্রিকা ও শেখ আবদুর রহিম (মতান্তরে মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদ আল মাশহাদী) সম্পাদিত সাপ্তাহিক “সুধাকর ” পত্রিকা একত্রিত হয়ে সাপ্তাহিক “মিহির-সুধাকর ” নামে আত্মপ্রকাশ করে। নওয়াব আলী চৌধুরী এর মালিক ছিলেন। এজন্য একটি প্রেস ক্রয় করে তিনি কলকাতায় তার নিজ বাসভবনে স্থাপন করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পন্ডিত রেয়াজউদ্দিন আহমদ আল মাশহাদী, কবি মোজাম্মেল হকের সাহিত্য প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর দান ছিল অপরিসীম। ফলে উল্লেখিত লেখকগন তাদের বিভিন্ন প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর নামে উৎসর্গ করেন। শিক্ষানুরাগী জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত গ্রন্থ সমূহ হচ্ছে, “ঈদুল আযহা(১৮৯০)”; “মৌলুদ শরীফ (১৯০৩)”; “ভারনাকুলার এডুকেশন ইন বেঙ্গল (১৯০০)”; “প্রাইমারি এডুকেশন ইন রুরাল এরিয়াস্‌ (১৯০৬)”। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবর্তকদের প্রবল বাঁধার মুখে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়ে পুর্ব বাংলা ও আসাম নামক একটি মুসলিম প্রধান প্রদেশ জন্ম লাভ করে। এসময় নওয়াব আলী চৌধুরী একটা সর্বভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি মুসলমানদের অনগ্রসরতার জন্য অশিক্ষাকে দায়ী করেন। ১৯০৫ সালের যেদিন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় সেদিনই ঢাকার ‘নর্থব্রুক হলে’ তার ও ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহের উদ্যোগে একটি প্রাদেশিক রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়। ১৯১১ সালে বংগভঙ্গ বাতিল ঘোষণা হলে এ সম্পর্কে তিনি বলেন , “প্রদেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করিয়াছি এবং যদিও সে চেষ্ঠা সফল হয় নাই তথাপি পুর্ববঙ্গে যাহারা আমাদের প্রতিপক্ষ ছিলেন তাহারা পর্যন্ত স্বীকার করিবেন যে, আমরা যাহার জন্য চেষ্ঠা করিয়াছিলাম তাহাই ঠিক এবং বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়াতে ঐ প্রদেশের হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই ক্ষতি হইয়াছে।” ১৯১১ সালে ২৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি মানপত্রে নবাব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জের ঢাকায় অবস্থান কালে নওয়াব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী সহ ১৯ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে মুসলমানদের যে সমূহ ক্ষতি হচ্ছে সে কথা তুলে ধরেন। এ লক্ষ্যে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নাথান কমিটি গঠিত হলে নওয়াব আলী চৌধুরী এর অন্যতম সদস্য হন। এর অধীনে ছয়টি সাব কমিটি গঠিত হলে তিনি ৬ টি বিভাগের সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আর্থিক সংকটের কারনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চাপা পড়ে যায়। সে সময় নওয়াব আলী চৌধুরী ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি বিষয়টি ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় আবার উপস্থাপন করেন। ১৯২০ সালের মার্চ ১৮ ভারতীয় আইনসভায় প্রস্তাবটি “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অ্যাক্টে” পরিনত হয় এবং ২৩ মার্চ তা গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। ১৯২১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস শুরু হয়। ১৯২২ সালে নবাব আলী চৌধুরী ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা গেলে নিজ জমিদারীর একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫,০০০ টাকা প্রদান করেন। ২০০৩ সালের ৯ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস. এম. এ. ফায়েজের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিনেট ভবনের নাম "সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সিনেট ভবন" করা হয়। নওয়াব আলী চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী । শিক্ষাবিস্তারে তার আন্তরিকতার জন্য সে সময় তাকে শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯২৯ সালের এপ্রিল ১৭ ইন্তেকালের পুর্ব পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এদেশে নওয়াব আলী চৌধুরী ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে জমি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ১৯১০ সালে তিনি নিজস্ব এলাকা ধনবাড়ীতে “নওয়াব ইনস্টিটিউট ” নামের একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া সোনাতলা, কোদালিয়া, গফরগাঁও, পিংনা, জঙ্গলবাড়ি, হয়বতনগর সহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়তা করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১১ সালে মুসলিম লীগের রংপুর অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে প্রথম সোচ্চার হয়ে বলেছিলেন, “বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, মাতৃস্তনের ন্যায়, জন্মভূমির শান্তি নিকেতনের ন্যায় বাংলা ভাষা। বাংলাভাষা আমাদের নিকট প্রিয়, কিন্তু হতভাগ্য আমরা, প্রিয় মাতৃভাষার উন্নতিকল্পে আমরা উদাসীন। অধঃপতন আমাদের হবে না - তো কার হবে?”

তৎকালীন প্রতিকূল পরিবেশে একজন জমিদার হয়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯২১ সালে বাংলাভাষাকে প্রদেশের সরকারি ভাষা করার জন্য তিনি  লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন।

নবাব আলী চৌধুরী ইংরেজ সরকার কতৃক ১৮৯৬ সালে খান বাহাদুর, ১৯১১ সালে নওয়াব, ১৯১৮ সালে কমান্ডার অব দ্যা ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (সিআইই) এবং ১৯২৪ সালে নওয়াব বাহাদুর পদবি লাভ করেন। তাঁর এক পুত্র সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী অবিভক্ত বাংলা, পুর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর দৌহিত্র মোহাম্মদ আলী বগুড়া পাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৭ এপ্রিল ১৯২৯ (বাংলা ১৩৩৬, ১ বৈশাখ) দার্জিলিংয়ে (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে) ইডেন ক্যাসেলে ইন্তেকাল করেন।

তথ্যসূত্রঃ http://mymensinghdivision24.com/news/3415 = ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল