ইমোজি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নোটো প্রকল্প দ্বারা তৈরি একটি ইমোজি
ইমোজি
প্রতীক সেটইমোজি
মনোনীত১,০৮৮ কোড পয়েন্ট
ইউনিকোড সংস্করণ ইতিহাস
১.০.০78 (+78)
৩.০80 (+2)
৩.২88 (+8)
৪.০96 (+8)
৪.১111 (+15)
৫.১115 (+4)
৫.২142 (+27)
৬.০858 (+716)
৬.১871 (+13)
৭.০৯৭৫ (+১০৪)
৮.০১,০১৬ (+৪১)
৯.০১,০৮৮ (+৭২)
নোট: এই ইমোজির গণনা একক ইউনিকোড অক্ষরের জন্য;[১][২] দুই বা ততোধিক অক্ষরকে সংযুক্ত করেও ইমোজি তৈরি করা যেতে পারে।[৩] ইমোজি প্রথম প্রকাশ পায় ইউনিকোড ৬.০ তে।
জিমেল, গুগল হ্যাংআউটস, ক্রোম ওএস এবং অ্যান্ড্রয়েডে ব্যবহৃত গুগলের নোটো ইমোজি প্রজেক্টের রঙিন ইমোজি।

ইমোজি (জাপানি: 絵文字, জাপানি উচ্চারণ: [emodʑi][৪]) হল বৈদ্যুতিন বার্তা আর ওয়েবপৃষ্ঠায় ব্যবহৃত ভাবলিপি বা স্মাইলি। ইমোজি ভাব-নির্দেশক চিহ্ন (ইমোটিকন) হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয় আর বিভিন্ন ঘরানার হয়, যেমন: মুখভঙ্গি, দৈনন্দিন বস্তু, স্থান, আবহাওয়া এবং জীবজন্তু।

১৯৯০-এর দশকে জাপানি মোবাইল ফোনে ইমোজির প্রথম আবির্ভাব। এরপর অ্যাপেলের আইফোনে ইমোজি অন্তর্ভুক্ত হবার সাথে সাথে ইমোজির দিগ্বিজয় শুরু হয়। পরে অ্যান্ড্রয়েড আর অন্যান্য মোবাইল ফোনগুলি অ্যাপেলকে অনুসরণ করে ইমোজিকে গ্রহণ করে।[৫][৬][৭] অ্যাপেলের ম্যাক-ওএস ইমোজির ১০.৭ (লায়ন) সংস্করণটি সমর্থন করে।[৮] মাইক্রোসফ্‌ট উইন্ডোজ় ৮-এ সিগো উইআই সিম্বল সিস্টেম ফন্টে একবর্ণী ইউনিকোড ইমোজি চালু করে, পরে উইন্ডোজ় ৮.১-এ সিগো ইউআই ইমোজি ফন্টের মাধ্যমে রঙিন ইমোজি তৈরি করে।[৯] ২০১৬-র ৪ঠা নভেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে প্রথম আন্তর্জাতিক ইমোজিকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।[১০]

ইমোজি শব্দটি এসেছে জাপানি শব্দ (絵, "ছবি") + মোজি (文字, "অক্ষর") থেকে। এর আক্ষরিক অর্থ হল চিত্রলিপি। এর থেকেই ইংরেজি সমার্থক শব্দ Emotion এবং Emoticon সৃষ্ট হয়েছে।[১১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ইমোজি প্রথমে শুধু জাপানি মোবাইল অপারেটর, NTT DoCoMo, au এবং সফ্‌টব্যাঙ্ক মোবাইলে (প্রাক্তন ভোডাফোন) ব্যবহৃত হত। এই সংস্থাগুলি নিজেদের আলাদা আলাদা ইমোজি ব্যবহার করত। বিশ্বের প্রথম ইমোজি শিগেটাকা কুরিতা ১৯৯৮ সালে তৈরি করেন। তিনি ছিলেন NTT DoCoMo-র আই-মোবাইল ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম দলের সদস্য। কুরিতা আবহাওয়ার সংকেত, চিনে অক্ষর এবং রাস্তার চিহ্নগুলোকে ইমোজিকে রূপান্তরিত করেন। এমনকি মাংগায় মনের ভাব বোঝাতে যে সব চিহ্ন ব্যবহৃত হত (যেমন, বুদ্ধি বোঝাতে বাল্‌ব), সেগুলোকেও ইমোজি বানানোর কাজে লাগান। আই-মোডের মেসেজিং পরিষেবাটি বৈদ্যুতিন যোগাযোগকে ত্বরান্বিত করতে এবং বাজারে নিজেদের উৎকর্ষ বাড়াতে ১৭৬টি ১২×১২ পিক্সেলের ইমোজির প্রথম সেট প্রকাশ করে। কুরিতা মানুষের মুখভঙ্গি এবং শহরের অন্যান্য জিনিসপত্র পর্যবেক্ষণ করে নিজেই প্রথম ১৮০টি ইমোজি তৈরি করেন।

প্রথমদিকের ইমোজি এনকোডিং[সম্পাদনা]

NTT DoCoMo-র আই-মোডে প্রতিটি ইমোজি ১২×১২ পিক্সেল গ্রিডে আঁকা থাকে। ট্রান্সমিট করা হলে চিহ্নগুলি দুই বাইট ক্রমানুযায়ী আসে, ইউনিকোড ক্যারেক্টার স্পেসে E63E থেকে E757 প্রাইভেট-ইউজ় রেঞ্জের মধ্যে, আর শিফ্ট জেআইএস-এ F89F থেকে F9FC-এর মধ্যে। প্রাথমিকভাবে এতে ১৭০৬টি চিহ্ন আছে; কিন্তু যেসব ফোন C-HTML 4.0 সমর্থন করে, সেগুলোতে আরো ৭৮টা বেশি যোগ করা যেতে পারে।

জাপানি মোবাইল ব্র্যান্ড au-র ইমোজিগুলিকে চিহ্নিত করা যায়, তাদের IMG ট্যাগের মাধ্যমে। সফ্‌টব্যাঙ্ক মোবাইল ইমোজি SI/SO এস্কেপ ক্রমে থাকে, এতে রঙ এর অ্যানিমেশনও দেয়া যায়। DoCoMo-র ইমোজি ট্রান্সমিট করা সবচেয়ে কঠিন, কিন্তু au-র ইমোজির ক্ষেত্রে তা সবচেয়ে সহজ আর মুক্ত স্ট্যান্ডার্ডের ওপর ভিত্তি করা।

২০১০ সাল থেকে জাপানের ওই ইমোজিগুলির কয়েকটি ইউনিকোড অন্তর্ভুক্ত হয়, ইমোজি একটি মান্য রূপ পায় এবং সারা বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হবার সুযোগ পায়।

২০১০ এর অক্টোবরে ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ডের ৬.০ সংস্করণে অসংখ্য ইমোজি প্রকাশিত হয় (এছাড়াও আন্তর্জাতিক ISO/IEC 10646-এ)। এই সংযুক্তির জন্য আবেদন পাঠিয়েছিল গুগল (কাট মোমোই, মার্ক ডেভিস এবং মার্ক শেরার ২০০৭ এর অগাস্টে ইউনিকোড টেকনিক্যালকে এই সম্বন্ধে চিঠি লিখেছিলেন) এবং অ্যাপল (২০০৯ এর জানুয়ারিতে ৬০৭টি অক্ষর যোগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইয়াসুও কিডা ও পিটার এডবার্গ)। ইউনিকোড এবং ISO/IEC JTC1/SC2/WG2-তে অংশগ্রহণকারী দেশের সংস্থার (মূলত আমেরিকা, জার্মানি, আয়ার্ল্যান্ড ও জাপান) অনেক আলাপ আলোচনার পর প্রচুর নতুন অক্ষর (বেশিরভাগই মানচিত্রের চিহ্ন ও ইউরোপীয় চিহ্ন) গৃহীত ও যুক্ত করা হয়। ইউনিকোড ইমোজিকে গ্রহণ করায় জাপান-সহ বাকি বিশ্ব ইমোজির সাথে পরিচিত হল। ইউনিকোড ৬.০ এর প্রাথমিক ইমোজি সেটে ৭২২টি অক্ষর ছিল, যার মধ্যে ১১৪টি ছিল প্রাক্-৬.০ ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ডের ক্রম অনুযায়ী, আর বাকি ৬০৮টি অক্ষর ইউনিকোড ৬.০ তে প্রথম প্রকাশ করা হয়। ইমোজির জন্য ইউনিকোড নির্দিষ্ট কোনো ব্লক রাখা হয়নি ― সাতটি আলাদা ব্লকে ইমোজিগুলিকে ভাগ করে রাখা হয়েছে (কিছু ব্লক সম্প্রতি তৈরি করা হয়েছে) এবং সেখানে EmojiSources.txt নামে একটি ইউনিকোড ডেটা ফাইল আছে, যেখানে জাপানি ভেন্ডরের লেগাসি অক্ষর সেট আছে। এই অক্ষর সেটে "আঞ্চলিক নির্দেশক চিহ্ন" বলে একটি অংশ আছে, যেটি বিভিন্ন দেশের জাতীয় পতাকাকে অক্ষর হিসেবে ব্যবহার করা বিকল্প।

ইমোজির জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে যায় যে, ভেন্ডর ও আন্তর্জাতিক বাজার বিভিন্ন সংস্কৃতি-সম্পর্কিত ইমোজি যোগ করার জন্য ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ডকে চাপ দিতে থাকে। ইউনিকোড ৭.০-তে প্রায় ২৫০টি ইমোজি যোগ করা হয়, বেশিরভাগই ওয়েবডিংসউইনডিংস ফন্ট থেকে। জাপান, ইয়াহু ও এমএসএন মেসেঞ্জারের প্রাক্-ইউনিকোড মেসেঞ্জার সিস্টেমের কিছু অক্ষরকে এখন ইমোজি হিসেবে গণ্য করা হয়। ইউনিকোড ৮.০-তে ক্রিকেট ব্যাটের মতো কিছু খেলার সরঞ্জাম, খাবার (ট্যাকো), রাশিচক্রের চিহ্ন, নতুন কিছু মুখভঙ্গি এবং উপাসনা-গৃহ ইত্যাদি নিয়ে মত ৪১টি নতুন ইমোজি যোগ করা হয়।

ইউনিকোড দ্বারা নির্ধারিত একই অর্থবহ ইমোজির চেহারা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কিছুটা অদল-বদল হতে পারে, কারণ ওই বস্তুটিকে বিভিন্ন কোম্পানি নানা শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে। যেমন, অ্যাপলের রীতি অনুযায়ী, ক্যালেন্ডার ইমোজিতে সবসময় জুলাই ১৭ লেখা থাকে, কারণ ২০০২ সালের এই দিনেই অ্যাপলের ম্যাকের জন্য আই-ক্যাল ক্যালেন্ডার অ্যাপ্লিকেশন বাজারে এসেছিল। ফলস্বরূপ অ্যাপলের কিছু পণ্য ব্যবহারকারীরা ১৭ই জুলাই দিনটিকে "আন্তর্জাতিক ইমোজি ক্যালেন্ডার দিবস" ডাকনাম দিয়ে ফেলে, পরে এই দিনটিকেই আবার বিশ্ব ইমোজি দিবস হিসেবে মেনে নেওয়া হয়।

সফ্‌টব্যাঙ্ক স্ট্যান্ডার্ডের সাথে অ্যাপল ইমোজির যথেষ্ট মিল রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, 💃 (ইউনিকোডে যার নাম "নর্তক - 'চলো মজা করি"-র জন্যও ব্যবহৃত") অ্যাপল এবং সফ্‌টব্যাঙ্ক স্ট্যান্ডার্ডে মহিলা হিসেবে দেখানো হয়েছে, কিন্তু অন্য জায়গায় পুরুষ অথবা লিঙ্গ-নিরপেক্ষ আছে।

সাংবাদিকেরা উল্লেখ করেছেন, কিছু ইমোজির মূল চিহ্নে কোনো সংস্কৃতি-নির্ভর অর্থ না থাকলেও, সেই চিহ্নটির দ্ব্যর্থকতার জন্য একাধিক সংস্কৃতির চিহ্ন হিসেবেই মেনে নেওয়া হয়েছে। যেমন, 💅 (নখ পালিশ) ইংরেজি ভাষাভাষীরা "ফাটাফাটি এবং বেপরোয়া" অথবা "নিজের সম্মান বাড়িয়ে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করা" হিসেবে ব্যবহার করে। আবার শিল্পীদের নির্দেশ দিতে এবং ইমোজিটি কী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে ― তা বোঝাতে কখনো কখনো ইউনিকোড নির্দেশিকায় কিছু টীকা লেখা থাকে। যেমন, কেউ 💺 (সিট) "বিমান, ট্রেন কিংবা থিয়েটারের সংরক্ষিত আসন" হিসেবেও ভেবে নিতে পারেন।

সাংস্কৃতিক প্রভাব[সম্পাদনা]

নোটো ইমোজি প্রজেক্ট, টুইটার ও ফায়ারফক্স ওএসে "😂" ("Face With Tears of Joy", U+1F602)-র রঙিন চিত্র

অক্সফোর্ড অভিধান 😂 (আনন্দের অশ্রু-সহ মুখ)-কে ২০১৫ ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অক্সফোর্ড এও উল্লেখ করেছে, ২০১৫ সালে বিশ্বে "ইমোজি" শব্দটির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ে আর জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে এর বেশ প্রভাব দেখা যায়; SwiftKey লক্ষ করেছিল, "Face With Tears of Joy" ইমোজিটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইমোজি। মার্কিন উপভাষা সংস্থা তাদের ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার নির্বাচনের ভিত্তিতে 🍆 (বেগুন)-কে ২০১৫ সালের "সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ইমোজি" হিসেবে ঘোষণা করে।

কিছু ইমোজি আছে, যারা সম্পূর্ণ জাপানি সংস্কৃতি-নির্ভর, যেমন, জাপানি নতজানু সম্ভাষণ, মুখোশ-পরা মুখ, সাদা ফুল ("অসাধারণ হোমওয়ার্ক" অর্থে ব্যবহৃত), কিংবা জনপ্রিয় জাপানি খাবার: রামেন নুডল্‌স, ডাংগো, ওনিগিরি, জাপানি তরকারি আর সুশি। ইউনিকোড কনসর্টিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক ডেভিস ইমোজির ব্যবহারকে গঠনরত ভাষার সাথে তুলনা করেছেন, বিশেষত আমেরিকানদের 🍆 (বেগুন)-কে শিশ্ন অর্থে ব্যবহার করার প্রচলন তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। কিছু ভাষাবিদ ইমোজি ও ইমোটিকন-কে ভাব প্রকাশের উৎকৃষ্ট মাধ্যম বলেছেন।

২০১৫ এর ডিসেম্বরে ইমোজির একটি অনুভূতি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়, ইমোজি সেন্টিমেন্ট র‌্যাংকিং ১.০ বের হয়। ২০১৬ সালে সোনি পিকচারস অ্যানিমেশন ঘোষণা করে, তারা ইমোজির ওপর একটি ফিচার অ্যানিমেটেড ছবি তৈরির কথা ভাবছে। ২০১৬য় লস এঞ্জেলেসে ইমোজি নিয়ে একটি সংগীত প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

২০১৭র জানুয়ারিতে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে প্রথম ইমোজি-সম্বন্ধীয় বড়ো চর্চায় দেখা যায়, কিকা ইমোজি কিবোর্ড দিয়ে ৪২ কোটিরও বেশি ইমোজি পাঠানো হয়েছে এবং আবারও "আনন্দের অশ্রু-সহ মুখ" ইমোজিটি সর্বাধিক জনপ্রিয় হিসেবে মান্যতা পায়। হৃদয় এবং চোখসহ হৃদয় ইমোজি দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে। গবেষণায় এও দেখা গেছে, ফরাসিরা প্রেম-সম্বন্ধীয় ইমোজিগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে। দেখা গেছে, যেসব দেহে ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যের মাত্রা অনেক বেশি, সেখানকার মানুষ আনন্দের ইমোজিগুলি বেশি ব্যবহার করছে; যেমন, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স এবং চেক প্রজাতন্ত্র। কিন্তু মেক্সিকো, কলম্বিয়া, চিলি ও আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলি রক্ষণশীল সংস্কৃতির অধিকারী, তাই এখানে দুঃখবাচক ইমোজির চল বেশি।

ইমোজিকে এখন অনেকে পূর্ণাঙ্গ ভাষা হিসেবে গণ্য করছেন। এমনকি আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনা চলছে যে, আদালতে গ্রহণযোগ্য করা যায় কিনা। এছাড়াও, ইমোজি "চিহ্নের ভাষা" হিসেবে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে ইমোজির "উপভাষা" তৈরিরও প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। এইজন্য ইমোজি ব্যবহারের সংজ্ঞা দিন দিন বদলাচ্ছে। ইমোজি এখন আর শুধু ভাব প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে না। স্ন্যাপচ্যাট তাদের ট্রোফি ও ফ্রেন্ড সিস্টেমে ইমোজিকে যুক্ত করেছে, যেখানে প্রত্যেকটি ইমোজিই একটি জটিল গূঢ় অর্থবহ।

ইমোজি বনাম টেক্সট উপস্থাপন[সম্পাদনা]

কোনো ইমোজিকে উপস্থাপন করার জন্য ইউনিকোডে বিভিন্নতার ক্রম রাখা আছে।

ইমোজি অক্ষরকে দু'ভাবে উপস্থাপন করা যায়:

  • ইমোজি উপস্থাপন, রঙিন ও বিভিন্ন আকারের হয়, এমনকি অ্যানিমেটেডও হতে পারে
  • টেক্সট উপস্থাপন, সাদা-কালো রঙের
    — "Unicode Technical Report #51: Unicode Emoji"[১২]

বেস ইমোজিকে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে, টেক্সটের জন্য U+FE0E VARIATION SELECTOR-15 (VS15) এবং ইমোজি-স্টাইলের জন্য U+FE0F VARIATION SELECTOR-16 (VS16) ব্যবহৃত হয়।[১৩]

স্যাম্প্‌ল ইমোজি ভ্যারিয়েশন সিকোয়েন্স
U+ 2139 231B 26A0 2712 2764 1F004 1F21A
সাধারণ উপস্থাপন টেক্সট ইমোজি টেক্সট ইমোজি টেক্সট ইমোজি টেক্সট
বেস কোডপয়েন্ট 🀄 🈚
বেস+VS15 (টেক্সট) ℹ︎ ⌛︎ ⚠︎ ✒︎ ❤︎ 🀄︎ 🈚︎
বেস+VS16 (ইমোজি) ℹ️ ⌛️ ⚠️ ✒️ ❤️ 🀄️ 🈚️

গায়ের রঙ[সম্পাদনা]

উইনিকোড ৮.০ তে পাঁচটি চিহ্ন মোডিফায়ার যোগ করা হয়েছিল, মানব ইমোজিগুলোর গায়ের রঙ দেবার জন্য। এই মোডিফায়ারকে বলা হয় EMOJI MODIFIER FITZPATRICK TYPE-1-2, -3, -4, -5, এবং -6 (U+1F3FB–U+1F3FF): 🏻 🏼 🏽 🏾 🏿। মানব গাত্রবর্ণ নির্ধারক ফিৎজ়প্যাক স্কেল অনুযায়ী এগুলোকে তৈরি করা হয়েছে। যেই মানব ইমোজি এই পাঁচটি মোডিফায়ারের কোনোটাই সমর্থন করে না, সেগুলোর রঙ অবাস্তব গায়ের রঙে রাঙানো থাকে, যেমন হালকা হলুদ (), নীল (), অথবা ধূসর ()। অমানব ইমোজির (যেমন U+26FD FUEL PUMP) উপরে ফিৎজ়প্যাক মোডিফায়ারের কোনো প্রভাব পড়ে না। ইউনিকোড ৯.০ অনুযায়ী, ফিৎজ়প্যাক মোডিফায়ার মোট ৮৬টি মানব ইমোজির উপর ব্যবহার করা যায়, যেগুলো ছয়টি আলাদা ব্লকে ছড়িয়ে আছে: Dingbats, Emoticons, Miscellaneous Symbols, Miscellaneous Symbols and Pictographs, Supplemental Symbols and Pictographs এবং Transport and Map Symbols।

ফিৎজ়প্যাক মোডিফায়ার ব্যবহারের উদাহরণ
কোডপয়েন্ট স্বাভাবিক FITZ-1-2 FITZ-3 FITZ-4 FITZ-5 FITZ-6
U+1F466: বালক 👦 👦🏻 👦🏼 👦🏽 👦🏾 👦🏿
U+1F467: বালিকা 👧 👧🏻 👧🏼 👧🏽 👧🏾 👧🏿
U+1F468: পুরুষ 👨 👨🏻 👨🏼 👨🏽 👨🏾 👨🏿
U+1F469: মহিলা 👩 👩🏻 👩🏼 👩🏽 👩🏾 👩🏿

সংযুক্তি[সম্পাদনা]

U+200D ZERO WIDTH JOINER ব্যবহার করে একাধিক ইমোজিকে জোড়া লাগিয়ে একটি নতুন ইমোজি বানানো যায়। (কিছু সিস্টেমে ZWJ অক্ষর সমর্থন করে না)

উদাহরণ স্বরূপ, সিস্টেম সমর্থন করলে, ক্রমানুযায়ী U+1F468 MAN, U+200D ZWJ, U+1F469 WOMAN, U+200D ZWJ, U+1F467 GIRL (👨‍👩‍👧) সাজালে সবগুলো জোড়া লেগে একটিই ইমোজি সৃষ্ট হয়, যেখানে স্বামী-স্ত্রী ও কন্যা-সহ পরিবার দেখা যায়। যে সিস্টেমে এটা সমর্থন করে না, সেটায় মূল ইমোজিগুলিই দেখায়: U+1F468 MAN, U+1F469 WOMAN, U+1F467 GIRL (👨👩👧)।

ইউনিকোডে এই ZWJ সম্পর্কিত একটি ক্যাটালগ আছে, যেখানে দেখানো হয়েছে, ইমোজিগুলোকে পরপর কীভাবে রাখলে নতুন ইমোজি তৈরি হবে।

ইউনিকোড ব্লক[সম্পাদনা]

ইউনিকোড ৯.০তে ২২টি ব্লকে ছড়িয়ে থাকা ১১২৬টি ইমোজি আছে, যাদের মধ্যে ১০৮৫টি হল একক ইমোজি অক্ষর, ২৬টি হল আঞ্চলিক নির্দেশক চিহ্ন, এরা পরস্পর যুক্ত হয়ে পতাকা ইমোজি গঠন করে, বাকি ১২টি (#, *, 0-9) হল কিক্যাপ ইমোজির মূল অক্ষর।

Miscellaneous Symbols and Pictographs ব্লকের ৭৬৮টি কোডপয়েন্টের মধ্যে ৬৩৭টি হল ইমোজি। Supplemental Symbols and Pictographs ব্লকের ৮২টির মধ্যে ৮০টি ইমোজি রূপে মান্য। Emoticon ব্লকের ৮০টি কোডপয়েন্টই ইমোজির অন্তর্গত। Transport and Map Symbols ব্লকের ১০৩টির মধ্যে ৯২টি হল ইমোজি। Miscellaneous Symbols ব্লকের ২৫৬ এর মধ্যে ৮০টি ইমোজি আছে। আর Dingbats ব্লকের ১৯২টির মধ্যে ৩৩টি কোডপয়েন্ট ইমোজির স্বীকৃতি পেয়েছে।

ব্যবহার[সম্পাদনা]

ইমোজির কোনো মান্য আকৃতি নেই, বিভিন্ন ফন্টে বিভিন্ন রকম দেখায়। ঠিক যেমন বর্ণগুলো নানা টাইপফেসে নানারকম। উদাহরণ হিসেবে, অ্যাপল কালার ইমোজি শুধু অ্যাপল ডিভাইসের জন্যই (হ্যাক না হলে)। অনেক কম্পিউটিং কোম্পানি ইমোজির জন্য তাদের নিজস্ব তৈরি করেছে, এদের কারোর মুক্ত-উৎস অনুমতিও আছে। রঙিন, সাদা-কালো, অ্যানিমেটেড ইমোজি থাকতে পারে।

অ্যান্ড্রয়েড[সম্পাদনা]

অপারেটিং সিস্টেমের সংস্করণের উপর নির্ভর করে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে বিভিন্ন রকম ইমোজি দেখা যায়। ২০১৩র জুলাইয়ে অ্যান্ড্রয়েড ৪.৩-এ, এবং নভেম্বরে অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪-এর জন্য গুগ্‌ল কিবোর্ডে অ্যান্ড্রয়েড নিজস্ব ইমোজি প্রকাশ করে। অ্যান্ড্রয়েড ৭.০ নৌগাটে ইউনিকোড ৯ ইমোজি, স্কিন টোন মোডিফায়ার, আর পুরোনো কিছু ইমোজির নতুন নকশা যোগ করা হয়। গুগ্‌ল হ্যাংআউটসের হ্যাংআউটস আর এসএমএস ― দুই মোডেই এই ইমোজি থাকে (সিস্টেম কিবোর্ডের দরকার হয় না)। বেশ কিছু থার্ড-পার্টি মেসেজিং ও কিবোর্ড অ্যাপ্লিকেশন (যেমন IQQI কিবোর্ড) দিয়ে এই ইমোজি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়।

ক্রোম[সম্পাদনা]

নোটো ফন্ট ব্যবহার করে ক্রোম ওএস ইউনিকোড ৬.২ এর ইমোজি সমর্থন করে।

লিনাক্স[সম্পাদনা]

কিছু লিনাক্স পরিবেশক অতিরিক্ত ফন্ট ইনস্টল করার পর ইমোজি সমর্থন করে। Ubuntu কিংবা Debian পরিবেশনের ক্ষেত্রে fonts-symbola ইনস্টল করলে ইমোজি পাওয়া যায়, আবার Fedora কিংবা openSUSE-তে gdouros-symbola-fonts ইনস্টল করতে হয়।

মাইক্রোসফ্‌ট উইন্ডোজ়[সম্পাদনা]

উইন্ডোজ় ৮ এবং তার উপরের সিস্টেম মাইক্রোসফ্‌ট সিগো ইউআই (Segoe UI) ফন্ট পরিবার দিয়ে সমস্ত ইউনিকোড ইমোজি অক্ষর সমর্থন করে। অনস্ক্রিন কিবোর্ডের "স্মাইলি" বাট্‌ন দিয়ে এই ইমোজিগুলো লেখা যায়। উইন্ডোজ় ৮.১ প্রিভিউতে সিগো ইউআই রঙিন চিত্রলিপি সমর্থন করে। কিন্তু সিগো ইউআই ইমোজি তখনই রঙিন হয়, যখন অ্যাপ্লিকেশনটি মাইক্রোসফ্‌টের ডাইরেক্ট এপিআই সমর্থন করে। নয়তো সাদা-কালো অক্ষরই দেখায়। উইন্ডোজ় ৭ এবং উইন্ডোজ় সার্ভার ২০০৮ R2-তে একটি আপডেটের মাধ্যমে ওই অপারেটিং সিস্টেমগুলোয় একবর্ণী ইমোজি অক্ষর দেওয়া হয়। এই ফোনটি আপডেটে ফন্টটাকে রিব্র্যান্ড করে নাম দেওয়া হয় সিগো ইউ আই সিম্বল। দুটো ফন্টের পার্থক্য হল সিগো ইউআইতে কিছু ইমোজি অনুপস্থিত, জেগো সিগো ইউআই সিম্বল আছে। তবে উইন্ডোজ়ের সব প্রোগ্রামে এই ইমোজি আর তার রঙিন সংস্করণ সমর্থন করে না। যেমন, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ও গুগল ক্রোম, কিন্তু ফায়ারফক্সে সমর্থন করে। উইন্ডোজ় ১০ এ ইউনিকোড ৯ যুক্ত করা হয়।

ম্যাকওএস এবং আইওএস[সম্পাদনা]

২০১১য় OS X 10.7 Lionএ অ্যাপল ডেস্কটপে প্রথম ইমোজি আনে।

গণমাধ্যমে[সম্পাদনা]

  • দ্য ইমোজি মুভি: সোনি পিকচারস অ্যানিমেশনের প্রযোজনায় অ্যান্টনি লিওনডিস ইমোজি সম্পর্কিত একটি ছবি পরিচালনা করছেন।
  • ২০১৬-র ৪ঠা নভেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে প্রথম আন্তর্জাতিক ইমোজিকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; EmojiData নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. "Enumerated Versions of The Unicode Standard"The Unicode Standard। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-১৭ 
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ZWJSequences নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. http://dictionary.cambridge.org/dictionary/english/emoji
  5. Blagdon, Jeff (মার্চ ৪, ২০১৩)। "How emoji conquered the world"The Verge। Vox Media। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৬, ২০১৩ 
  6. Adam Sternbergh (নভেম্বর ১৬, ২০১৪)। "Smile, You're Speaking EMOJI: The fast evolution of a wordless tongue"New York 
  7. "Android – 4.4 KitKat"android.com 
  8. "Apple - Support - Search"apple.com 
  9. Burge, Jeremy। "Windows 10 Emoji Changelog"Emojipedia 
  10. Hess, Amanda (নভে ৭, ২০১৬)। "Secrets of the Emoji World, Now With Its Own Convention"New York Times 
  11. Taggart, Caroline (৫ নভেম্বর ২০১৫)। "New Words for Old: Recycling Our Language for the Modern World"। Michael O'Mara Books – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  12. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; UTR51 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  13. "UCD: Standardized Variation Sequences"। Unicode Consortium। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৭, ২০১৬ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]