ইসলামের প্রাথমিক যুগে সামাজিক পরিবর্তন
৬১০ থেকে ৬৬১ সালের মধ্যে মুহাম্মদ (সা.) এর সময়কালসহ খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রতিষ্ঠাতা তাঁর চারজন অব্যবহিত উত্তরসূরীর সময় ইসলামের অধীনে অনেকগুলো সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছিল। অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন, সামাজিক সুরক্ষা, পারিবারিক কাঠামো, দাসত্ব এবং নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে সংঘটিত পরিবর্তনগুলো আরবের বিদ্যমান সামাজিক অবস্থার নানাভাবে উন্নয়ন করেছিল।[১][২][৩][৪][৫][৬] উদাহরণস্বরূপ, বার্নার্ড লুইসের মতে, ইসলাম "প্রথম অভিজাতদের সুবিধাভোগের সমালোচনা করেছে, শ্রেণিবিভাজনকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এবং মেধাভিত্তিক জীবিকার পথ উন্মোচন করার পন্থা গ্রহণ করেছে"।[১] লীলা আহমেদ মনে করেন, ঐতিহাসিক সূত্র থেকে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, প্রাক-ইসলামিক আরবে ইতিমধ্যেই নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে অনেকগুলো একই ধরনের প্রগতিশীল রীতিনীতি ছিল যার জন্য লুইসের মতো পণ্ডিতগণ ইসলামকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন।[৭] তবে অন্যান্য পণ্ডিতরা তাঁর এই বক্তব্যের সাথে একমত নন।
ইসলামের আগমন
[সম্পাদনা]বার্নার্ড লুইসের মতে, ইসলামের আগমন একটি বিপ্লব ছিল যা আংশিকভাবে সফল হয়েছিল নতুন ধর্ম এবং মুসলমানরা যে বহু পুরানো সমাজগুলো দখল করেছিল তার মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনার কারণে। তিনি মনে করেন, এই জাতীয় উত্তেজনার ক্ষেত্র ইসলামী মতবাদের সমতাবাদী প্রকৃতির পরিণতি ছিল। ইসলাম "প্রথম অভিজাতদের সুবিধাভোগের সমালোচনা করেছে, শ্রেণিবিভাজনকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং মেধাভিত্তিক জীবিকার পথ উন্মোচন করার নীতি গ্রহণ করেছে"। লুইস অবশ্য উল্লেখ করেছেন, ইসলামে সাম্যতা শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক স্বাধীন পুরুষ মুসলমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, তবে এটি "গ্রেকো-রোমান এবং প্রাচীন ইরানীয় উভয় বিশ্বের রীতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করেছিল"।[১]
বার্নার্ড লুইস মুহাম্মদের সাফল্যের তাৎপর্য সম্পর্কে লিখেছেন:[৮]
“ | তিনি বেশ কিছু অসাধারণ অর্জন করেছিলেন। পশ্চিম আরবের পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি একটি নতুন ধর্ম নিয়ে এসেছিলেন যা এর একেশ্বরবাদ এবং এর নৈতিক মতবাদের মধ্য দিয়ে পৌত্তলিকতার চেয়ে অপ্রত্যাশিত উঁচু স্তরে দাঁড়িয়েছিল। তিনি সেই ধর্মকে প্রচারের মাধ্যমে এমনভাবে উন্মোচিত করেছিলেন যা শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে অগণিত লক্ষ লক্ষ বিশ্বাসীকে জীবন ও চিন্তার পাথেয় হিসেবে অনুসরণ করতে হবে। তবে তিনি এর চেয়ে আরও বেশি কাজ করেছিলেন; তিনি একটি সম্প্রদায় এবং একটি সুসংগঠিত ও সশস্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যার শক্তি ও প্রতিপত্তি তাকে আরবের একটি প্রভাবশালী কেন্দ্রে পরিণত করেছিল। | ” |
মদিনা সংবিধান
[সম্পাদনা]মদিনা সংবিধান মদিনা সনদ হিসেবেও পরিচিত। ৬২২ সালে মুহাম্মদ এর খসড়া করেছিলেন। এটি মূলত মুহাম্মদ এবং ইয়াথ্রিবের (পরে মদিনা নামে পরিচিত) সমস্ত উল্লেখযোগ্য গোত্র এবং মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিক সকল পরিবারের সকলের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল।[৯][১০] মদিনার আউজ (বনু আউস) এবং বনু খাজরাজের গোত্রগুলোর মধ্যে তিক্ত আন্তঃগোত্রীয় লড়াইয়ের অবসান ঘটানোর সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে দলিলটি তৈরি করা হয়েছিল। ফলে এটি মদিনার মুসলিম, ইহুদি এবং পৌত্তলিক সম্প্রদায়কে একটি সম্প্রদায়-উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত করে তাদের জন্য বিবিধ অধিকার এবং দায়িত্বের প্রতিষ্ঠা করেছিল।[১১]
মদিনা সংবিধানের সুনির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে তবে সাধারণভাবে পণ্ডিতরা একমত হন যে, এটি হিজরি (৬২২) এর কিছু পরে লেখা হয়েছিল।[১২] এর মধ্য দিয়েই কার্যকরীভাবে প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই সংবিধান জনসাধারণের সুরক্ষা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, পবিত্র স্থান হিসাবে মদিনার ভূমিকা (সব ধরনের অস্ত্র সহিংসতাকে নিষিদ্ধ করে), নারীদের সুরক্ষা, মদিনার অভ্যন্তরে শান্তিপূর্ণ গোত্রীয় সম্পর্ক, সংঘাতের সময় জনগণের উপযোগী কর ব্যবস্থা, বহিরাগত রাজনৈতিক জোটসমূহের স্থিতিমাপক, ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিতের ব্যবস্থা, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিচার ব্যবস্থা এবং নিয়ন্ত্রিত রক্তপণ প্রদান (পরিবার বা গোত্রের মধ্যে লেক্স টালিওনিসের বা প্রতিশোধমূলক আইন বা সমশাস্তি বিধির পরিবর্তে একজন ব্যক্তিকে হত্যার ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদেয় অর্থ) ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিল।
সামাজিক পরিবর্তন
[সম্পাদনা]প্রথা
[সম্পাদনা]জন এস্পোসিতো মুহাম্মদকে এমন এক সংস্কারক হিসেবে দেখেন যিনি কন্যাশিশু হত্যা, দরিদ্রদের শোষণ, সুদ, হত্যা, মিথ্যা চুক্তি, পরকীয়া, ব্যভিচার এবং চুরির মতো পৌত্তলিক আরবের প্রচলিত প্রথাসমূহের কঠোর নিন্দা করেছিলেন।[১৩] তিনি বলেন, " প্রত্যেক ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে গোত্রীয় রীতিনীতিভিত্তিক আইনের প্রতি দায়বদ্ধ নয় বরং এক ঐশ্বরিক আইনের প্রতি দায়বদ্ধ- এ বিষয়ের প্রতি মুহাম্মদের গুরুত্বারোপ তৎকালীন আরব সমাজের মূল ভিত্তি কাঁপিয়ে দিয়েছিল ... মুহাম্মদ ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের এক সুদূরপ্রসারী কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন যা ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতি, ব্যবসায়িক চুক্তি এবং অনুশীলন, নারী-পুরুষ এবং পারিবারিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছিল"।[১৪] এস্পোসিতো মনে করেন, কুরআনের সংস্কারগুলো "বিধি বা নৈতিক নির্দেশনা সম্পন্ন যা বিদ্যমান প্রথা বা রীতিনীতিসমূহকে নিষিদ্ধ বা প্রতিস্থাপনের পরিবর্তে সীমাবদ্ধ করেছে বা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করেছে।" তিনি দাসত্ব এবং নারীর মর্যাদাকে দুটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কিছু পণ্ডিতের মতে, মুহম্মদের শিশু হত্যার নিন্দা করাই তৎকালে নারীর মর্যাদা বাড়াতে তাঁর প্রয়াসের মূল দিক ছিল।[৬] কুরআনে এ প্রথার সম্বোধনে একটি উল্লেখযোগ্য আয়াতে বলা হয়েছে: "যখন সূর্য নিষ্প্রভ হবে, যখন নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে, পর্বতসমূহকে যখন চলমান করা হবে, যখন পূর্ণগর্ভা উষ্ট্রী উপেক্ষিত হবে, যখন বন্য পশুগুলো একত্রিত হবে, যখন সমুদ্রগুলোকে উদ্বেলিত করা হবে, যখন আত্মারা মিলিত হবে, যখন জীবন্ত প্রোথিতা কন্যা (মাওদাতু) কে জিজ্ঞাসা করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল, যখন আমলনামা উন্মোচিত হবে ..."[কুরআন ৮১: ১], [কুরআন ৮১:১] [৬] যদিও একটি হাদিস[১৫] বিশেষ প্রক্রিয়ার জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাথে বিষয়টিকে সংযুক্ত করেছে।
এই সময়কালে লিঙ্গভিত্তিক হত্যার প্রকৃত ব্যাপকতা কতটুকু ছিল সে বিষয়টি অনিশ্চিত। ডোনা লি বোভেন এনসাইক্লোপিডিয়া অফ কুরআনে লিখেছেন, "প্রাক-ইসলামী আরবদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট শব্দ 'ওয়াদ' খুব সাধারণভাবেই ছিল,"[১৬] কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন যে এটি একসময় প্রচলিত ছিল, তবে ইসলামের আগমনের সময় এটি অনেকখানি কমে এসেছিল,[১৭] আবার অনেকে মনে করেন, ইসলামের আগে এবং পরে একেবারে নিঃস্ব পরিবারগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসাবে এর অনেকটা নিয়মিত ব্যবহার ছিল।[১৮]
যদিও মুসলমান এবং পাশ্চাত্যের অনেক লেখকের বর্ণনায় এই ধারণাটিই খুব সাধারণভাবেই লক্ষ্যণীয় যে, প্রাক-ইসলামী আরবে নিয়মিতভাবে কন্যাশিশু হত্যার রীতি ছিল। তবে কিছু কিছু বিদ্যমান সূত্রমতে এই প্রথার কথা উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে । ইয়েমেনের প্রায় ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের একটি শিলালিপিতে এই প্রথা নিষিদ্ধ করার উল্লেখ পাওয়া যায় যা প্রাক ইসলামী যুগে এ সংক্রান্ত একমাত্র নজির। যদিও সেই সময়কাল সম্পর্কেও তথ্যের অভাব রয়েছে তাই নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা সম্ভব নয়।[১৯] সহিহ্ মুসলিম এর সূত্রগুলোতে এমন কিছু ব্যক্তির নাম রয়েছে যারা শিশু হত্যার ক্ষেত্রে অংশ নেওয়া, পর্যবেক্ষণ করা বা হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্রে জড়িত ছিলেন, যেমন [আসমা বিনতে আব] বর্ণিত একটি হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী জায়েদ ইবনে আমরের কথা জানা যায়।[২০]
সামাজিক নিরাপত্তা
[সম্পাদনা]উইলিয়াম মন্টগোমেরি ওয়াট বলছেন, মুহাম্মদ একজন সামাজিক ও নৈতিক সংস্কারক ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে, মুহাম্মদ "সামাজিক সুরক্ষার একটি নতুন ব্যবস্থা এবং একটি নতুন পারিবারিক কাঠামো তৈরি করেছিলেন যা পূর্ববর্তী অবস্থার তুলনায় বিরাট উন্নয়ন ছিল। বেদুঈন নৈতিকতার মাঝে সর্বোত্তম যা ছিল তাকে গ্রহণ করে এবং একটি স্থায়ী সম্প্রদায়ের জন্য তার আত্মীকরণ করে তিনি বিবিধ বর্ণের মানুষের জীবনাচরণের জন্য একটি ধর্মীয় এবং সামাজিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।"[২১]
দাসত্ব
[সম্পাদনা]কুরআনে দাসপ্রথা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অসংখ্যবার উল্লেখ রয়েছে ([কুরআন ২:১৭৮], [কুরআন ১৬:৭৫], [কুরআন ৩০:২৮]), তবে এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিদ্যমান বিধানকেও স্পষ্টভাবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। লুইস বলেছেন যে, ইসলাম প্রাচীন দাসত্বের ক্ষেত্রে দুটি বড় পরিবর্তন এনেছিল যা সুদূরপ্রসারী প্রভাব তৈরি করেছিল। "এর মধ্যে একটি হল স্বাধীনতার সম্ভাব্যতা; অন্যটি কঠোরভাবে নির্দেশিত পরিস্থিতি ব্যতীত মুক্ত ব্যক্তিদের দাসত্বের উপর নিষেধাজ্ঞা," লুইস আরও বলেছেন, আরবে ক্রীতদাসদের অবস্থান "ব্যাপক উন্নত" হয়েছিল। আরবের দাস "শুধুমাত্র ভূমিদাস রইল না বরং কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয়, সামাজিক মর্যাদা এবং আপাত-আইনী অধিকার সম্পন্ন মানুষ হিসেবে স্বীকৃত হল।" [২২]
লুইস বলেছেন, মুসলিম ভূমি দাসদের একটি নির্দিষ্ট আইনী মর্যাদা ছিল সেই সাথে তাদের মালিকদেরও অধিকার ছিল তেমনি কিছু বিধিনিষেধও ছিল যা প্রাচীন বিশ্বের দাসত্বের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতির পরিচায়ক। এই সংস্কারগুলোর জন্যই ইসলামী সাম্রাজ্যের দাসত্বের প্রথা " উত্তরাধিকার সূত্রে রোম এবং বাইজান্টিয়াম থেকে প্রাপ্ত ব্যাপক উন্নতির প্রতিনিধিত্ব করেছিল।"[২২]
যদিও কুরআনে দাসত্ব প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিবেশী সংস্কৃতিগুলোর দাসত্বের মধ্যে অনেকগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে তবে কুরআনের দাসত্বের কিছু অনন্য নতুন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ইতিহাস ও ধর্ম বিষয়ক অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক জোনাথন ব্রোকপ্পের মতে, দাসমুক্তির জন্য ভিক্ষা প্রদানের ধারণাটি কুরআনে অনন্য (আয়াতগুলোর ঐতিহ্যগত ব্যাখ্যা অনুমান করে [কুরআন ২: ১৭৭][কুরআন ২:১৭৭]এবং [কুরআন ৯:৬০ ][কুরআন ৯:৬০]। একইভাবে, কিছু পাপের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে দাস মুক্ত করার রীতিও কুরআন দ্বারা প্রবর্তিত বলে মনে হয়।[২৩] ব্রোকপ্প যোগ করেছেন: "অন্যান্য সংস্কৃতিগুলো কোন দাসের ক্ষতি করার জন্য একজন কর্তার অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে তবে খুব কমই তাদের দাসের সাথে সদয় আচরণ করার পরামর্শ দেয়। অন্যদিকে সমাজের অন্যান্য দুর্বল সদস্যদের মতো একই শ্রেণিতে দাসদের রেখে তাদেরও সকল সুরক্ষার দাবিদার করার ঘোষণা কুরআনের বাইরে অন্য কোথাও আছে বলে জানা যায় না। তাই কুরআনের অনন্য অবদানটি হচ্ছে, সমাজে দাসের স্থান এবং দাসের প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতার উপর জোর দেওয়া। আর এটি সম্ভবত সে সময়ে দাসত্ব সম্পর্কিত সবচেয়ে প্রগতিশীল আইন ছিল। [২৩]
নারী অধিকার
[সম্পাদনা]নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলামের প্রভাব মূল্যায়নের জন্য অনেক লেখক প্রাক-ইসলামী আরবে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং তাদের অনুসন্ধানগুলো বিভিন্ন রকম।[২৪] কিছু লেখক প্রায়শই মুহাম্মদের প্রথম বিবাহ এবং মুহাম্মদের পিতামাতার বিবাহ এবং মক্কায় নারী মূর্তি পূজা করার মতো অন্যান্য বিষয়গুলোকে উল্লেখ করে যুক্তি দেখিয়েছেন যে ইসলামের আগে নারীরা আরও বেশি স্বাধীন ছিল।[২৪] বিপরীতে অন্যান্য লেখকগণ কন্যা শিশু হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক বহুবিবাহ, পিতৃগোত্রীয় বিবাহ এবং অন্যান্য প্রথা উল্লেখ করে প্রাক-ইসলামী আরবে নারীদের অবস্থান নিম্নমানের ছিল বলে যুক্তি দিয়েছেন।[২৪]
ভ্যালেন্টাইন মোগাদাম একটি মার্কসবাদী তাত্ত্বিক কাঠামো থেকে নারীদের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে, নারীর অবস্থান বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইসলামের অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তে নাগরিকীকরণ, শিল্পায়ন, মেরুকরণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পৃক্ত রাজনৈতিক প্রবক্তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। মোগাদাম মনে করেন, অন্যান্য বিশ্ব ধর্ম বিশেষত হিন্দু ধর্ম, খ্রিস্টান এবং ইহুদী ধর্মের তুলনায় ইসলাম বেশি বা কম পুরুষতান্ত্রিক নয়।[২৫][২৬]
মজিদ খাদদুরি লিখেছেন, আরবে প্রাক-ইসলামী আইনী মর্যাদা অনুযায়ী নারীদের কার্যত কোনও অধিকার ছিল না, যেখানে শরিয়া (ইসলামী আইন) নারীদের বেশ কয়েকটি অধিকার প্রদান করেছিল।[২৭] জন এস্পোসিতো বলেছেন, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকার ইসলামী সংস্কারগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।[১৩] কারেন আর্মস্ট্রংয়ের মতে, পশ্চিমে এবং অন্যান্য অনেক সংস্কৃতিতেই বহু শতাব্দী পরেও নারীদের উত্তরাধিকার এবং বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার দেওয়া হয়নি।[২৮] অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ ইসলামে বলা হয়েছে, আরবে নারীদের মর্যাদার সাধারণ উন্নয়নে কন্যা শিশু হত্যার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং নারীর পূর্ণ ব্যক্তিত্বকে স্বীকৃতি প্রদান করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।[২৯] গারহার্ড এন্ড্রেস বলেছেন: "এই সামাজিক ব্যবস্থা ... বিবাহ, পরিবার এবং উত্তরাধিকারের একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল; যা নারীদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং পাশাপাশি তার এবং তার বাচ্চাদের সামাজিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। আইনত নিয়ন্ত্রিত বহু বিবাহ পূর্বের বিবিধ সম্ভাব্য এবং বিদ্যমান শিথিল ব্যবস্থার ওপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি ছিল; ব্যভিচারের জন্য কঠোর শাস্তি প্রদানে সহায়ক হিসেবে একমাত্র এই বিধানের মাধ্যমেই পরিবার (যা যে কোনও আবাসিক সমাজের মূল ভিত্তি)কে দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করা যেত।"[৩০]
তবে লীলা আহমেদ দাবি করেন, প্রাক-ইসলামী যুগে মক্কায় নারীদের ব্যবসায়ের মালিকানা, একক নারী হিসাবে কাজ করা এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার ইত্যাদির একাধিক সূত্র রয়েছে। মুহাম্মদের প্রথম স্ত্রী খাদিজার স্বাধীনতা এবং আর্থিক সাফল্য সম্মন্ধে লীলা আহমেদ এও যুক্তি দেন যে, "তার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তার বিবাহের সূচনা এবং এমনকি বিবাহের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করার জন্য একজন পুরুষ অভিভাবকের অনুপস্থিতি (যেমনটি ইসলামের প্রয়োজন হয়)" নিজের থেকে বহু বছর কনিষ্ঠ এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুহম্মদের একমাত্র স্ত্রী হয়ে থাকা এ সবকিছুই কিন্তু প্রাক-ইসলামী যুগেই ঘটেছিল। তবে তিনি আরো বলেন, ইসলাম নিজে নারীর অধিকার হ্রাস করেনি বরং এটি ছিল সাসানিয়ান ইরাকের পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি যেখানে ইসলামী আইন প্রথম প্রণীত হয়েছিল যা নারী মর্যাদাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিল।"[৭]
তবে অন্যান্য সূত্রমতে জানা গেছে যে, প্রাক-ইসলামী আরবে সাধারণ নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষিত ছিল না বরং তা শুধুমাত্র উচ্চ শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
বিবাহ
[সম্পাদনা]ইসলামী উৎস অনুসারে, প্রাক-ইসলামী ঐতিহ্যে বিবাহ বা বিবাহবিচ্ছেদ গ্রহণে পুরুষদের অধিকারের ক্ষেত্রে কোনও সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে ইসলামী আইন উপপত্নীর স্থলে একসাথে চারজন স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকার অনুমোদন দিয়েছিল। [কুরআন ৪:৩] [১৩] প্রাক ইসলামী আইনে বিবাহ ব্যবস্থায় প্রশ্নাতীতভাবে স্বীকৃত পুরুষের প্রাধান্য ইসলামে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছিল এবং নারীকে একজন আগ্রহী অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। 'উদাহরণস্বরূপ, যৌতুক, আগে পিতাকে কনে মূল্য হিসেবে প্রদান করা হত যা পরে স্ত্রীর আয়ত্তে থাকা তার ব্যক্তিগত সম্পত্তির অংশ হিসেবে এক ধরনের ব্যক্তিগত উপহারে পরিণত হয়'।[১৩][২৭] ইসলামী আইন অনুসারে, বিবাহকে 'মর্যাদা' নয় বরং "চুক্তি" হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এই বিবাহ চুক্তির অপরিহার্য উপাদানগুলো ছিল পুরুষের প্রস্তাব উপস্থাপন, নারীর অনুমোদন এবং যৌতুক প্রদান সাপেক্ষে উভয়ের সম্মিলনের ব্যবস্থা। সক্রিয় সম্মতি বা নীরবতা দ্বারা নারীর সম্মতি অপরিহার্য ছিল।[৩১] তাছাড়াও, কমপক্ষে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে এই প্রস্তাব এবং অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি সংঘটিত করতে হতো।[১৩][২৭][২৯] আল তিরমিযির সংগৃহীত একটি হাদীস অনুসারে, "এবং আমি আপনাকে নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার আদেশ দিচ্ছি, কারণ তারা তো আপনার সঙ্গে আবদ্ধ যাদের উপর আপনার অন্য কোন ক্ষমতা নেই, যদিনা তারা প্রকাশ্যে নির্লজ্জ খারাপ আচরণ করে। ... তারা যদি তা করে, তবে তাদের বিছানা ছেড়ে দিন এবং প্রহার করুন এমনভাবে যা ক্ষতিকারক নয় এবং যদি তারা আপনার কথা মান্য করে তবে তাদের বিরুদ্ধাচারণের কোন কারণ নেই। প্রকৃতপক্ষে আপনার নারীর উপর আপনার অধিকার আছে এবং আপনার নারীও আপনার উপর অধিকার রাখে। আপনার নারীদের উপর আপনার অধিকারের ক্ষেত্রে, তারা অবশ্যই আপনার গৃহে এমন কাউকে আহবান করবে না যাকে আপনি আপ্যায়নে পছন্দ করবেন না এবং এমন কাউকে প্রবেশও করতে দেবে না যাকে আপনি অপছন্দ করেন। আর আপনার ওপর তাদের অধিকার হল, আপনি তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করবেন। তাদের পোশাক এবং খাদ্য সরবরাহ করবেন।"[৩১]
সম্পদ ও উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]জন এস্পোসিতো বলেছেন, "ইসলাম পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের উত্তরাধিকারকে স্বীকার করেছে যেখানে পূর্বে উত্তরাধিকারের বিষয়টি শুধুমাত্র পুরুষ আত্মীয়দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল,"[১৩] একইভাবে অ্যানিমারী শিমেল লিখেছেন, "নারীদের প্রাক-ইসলামী অবস্থানের তুলনায় ইসলামী আইনের মধ্য দিয়ে এক ব্যপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে; আইনী বিধান অনুযায়ী নারী পারিবারিকভাবে প্রাপ্ত সম্পদ কিংবা নিজের উপার্জিত সম্পদ উভয়ই নিজস্ব ইচ্ছে অনুযায়ী পরিচালনার অধিকার রাখেন।"[৩২] লীলা আহমেদ যুক্তি দেখান যে, প্রাক-ইসলামী যুুুগে মক্কা এবং অন্যান্য আরবীয় বাণিজ্য শহরগুলোতে পুরুষ আত্মীয়দের মধ্য থেকে নারীর উত্তরাধিকার প্রাপ্তির বিভিন্ন তথ্য ইসলামী উৎসগুলোতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে এ রীতির অনুশীলন গোত্রভেদে বিভিন্ন রকম ছিল এবং অনেকটা অনিশ্চিত ছিল।[৭]
দ্য অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ ইসলাম অনুসারে, বিবাহিত অবস্থায় নারীদের পৈত্রিক বাড়িতে থাকা এবং মৃত্যু অবধি বা বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত অর্থনৈতিক ভরণপোষণের খরচ বা খোরপোশ পাওয়ার অধিকার দেয়া হয়েছিল।[২৯]
নারীর মর্যাদা
[সম্পাদনা]ওয়াট বলছেন, ইসলাম তারপরও অনেক দিক থেকে পুরুষের ধর্ম। যদিও তিনি এও বলেন যে, মুহম্মদকে তাঁর সময়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে যিনি নারীর অধিকারের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং যথেষ্ট উন্নয়ন সাধন করেছেন। ওয়াট মুহাম্মদের সময়ে নারীদের অধিকারের ঐতিহাসিক প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে: "এটি প্রতীয়মান হয় যে আরবের কিছু অংশে, বিশেষত মক্কায়, মুহাম্মদের সময়ে একটি মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিস্থাপিত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন ছিল। ব্যবসায়িক পথ পরিবর্তনের ফলে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যক্তিস্বাতন্ত্রও বিকশিত হচ্ছিল। পুরুষরা যথেষ্ট পরিমাণে ব্যক্তিগত সম্পদের মালিক হচ্ছিলেন এবং তারা নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে, এ সম্পদ কেবল তাদের বোনের ছেলের বর্ধিত পরিবার দ্বারা নয় বরং তাদের প্রকৃত পুত্রদের দ্বারা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হবে।" আর মুহাম্মদ "সম্পত্তির মালিকানা, উত্তরাধিকার, শিক্ষা এবং বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীদের কিছু নির্দিষ্ট মৌলিক সুরক্ষা দিয়েছিলেন"।[৩৩]
যদিও শিল্প ইতিহাসবিদ জোনাথন ব্লুম বিশ্বাস করেন যে কুরআনে নারীদের অবগুন্ঠন পরিধানের বাধ্যবাধকতা নেই, বরং এটি একটি সামাজিক অভ্যাস যা ইসলামের প্রসারের সাথে গ্রহণ করা হয়েছিল,[৩৪] এ বক্তব্যের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক ইসলামী পণ্ডিত একমত নন,[৩৫] তাঁদের মতে কুরআনের আয়াতসমূহ ২৪:৩১ [কুরআন ২৪:৩১]এবং ৩৩:৫৯ [কুরআন ৩৩:৫৯]অনুসারে মাথায় ওড়না পরার পাশাপাশি নারীকে অবশ্যই বিনয়ী পোশাক পরতে হবে।
হাদ্দাদ এবং এপোসিতো বলেন যে, "যদিও নারীদের ন্যূনতম মর্যাদা প্রদানের জন্য ইসলামকে প্রায়শই সমালোচনা করা হয়, তবুও অনেক পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে, মূলত ফিকহ বিশেষজ্ঞ বা আইনজ্ঞদের ব্যাখ্যা, স্থানীয় ঐতিহ্য এবং সামাজিক রীতিনীতিগুলোই মুসলিম নারীদের মর্যাদা হ্রাস করেছিল।"এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযয়ী, মুহাম্মদ পারিবারিক জীবন, বিবাহ, শিক্ষা, এবং অর্থনৈতিক প্রচেষ্টা, এমন সমস্ত অধিকার যা সমাজে নারীর অবস্থান উন্নয়নে সহায়তা করে সেসকল ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার এবং সুযোগ প্রদান করেছিলেন।" তবে "আরব বেদুইনরা রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের প্রতি অধিক নিবেদিত ছিল এবং নতুন ধর্মের পরিবর্তনগুলি প্রতিহত করেছিল।" হাদ্দাদ এবং এস্পোসিতো বলেছেন যে "এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মুসলিম নারীদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছিল মূলত পূর্ব বিদ্যমান বিভিন্ন অভ্যাসের কারণে যার মধ্যে ইসলাম তার শেকড় তৈরি করেছিল। প্রাথমিক যুগের এই মুসলিম সমাজসমূহের অর্থনীতি নারীদের স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য অনুকূল ছিল না। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ইসলামের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতাব্দীর সময়কালে কুরআনের ব্যাখ্যা অত্যন্ত রক্ষণশীল পণ্ডিতদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, যার সিদ্ধান্তগুলি আজ চ্যালেঞ্জ করা খুব সহজ নয়।"[৩৬]
আবার কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধুমাত্র ইসলাম-পূর্ব আরবের ইসলামিক সূত্রের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে, যা ইসলামের উত্থানের বহু শতাব্দী পরে রচিত এবং পূর্ব-ইসলামিক আরবে উপর্যুক্ত মতামতের মতো এতটা নারীবিদ্বেষ ছিল না।[৩৭] অনেক পণ্ডিত প্রাক-ইসলামী আরবের একমাত্রিক চিত্রায়নকে ইসলামিক পণ্ডিতদের ইচ্ছেকৃত প্রয়াস হিসেবে দেখেন, যারা ইসলামকে তুলনামূলকভাবে সহনশীল হিসাবে উপস্থাপনের জন্য তৎকালীন যুগকে অত্যন্ত পশ্চাৎপদ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।[৩৭] মরোক্কোর পণ্ডিত ফাতিমা মের্নিসি যুক্তি দেখান যে, আধুনিক যুগে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে, যেমন "আধুনিক আরব ইতিহাসগুলো এমনকি বিশুদ্ধ বিশ্লেষণের স্তরেও স্বীকার করতে চায় না যে, নারীদের যৌন-আত্মনির্ধারণের প্রকাশ্য যে রীতিনীতিগুলো" প্রাক-ইসলামী আরবে বিদ্যমান ছিল এবং তা পরবর্তীকালে ইসলামের সময়ে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে তিনি আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে, এগুলো শুধু ইসলাম দ্বারাই ঘটে নি বরং ইসলামী আইন বিকাশকারীদের পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রভাবও ছিল এবং তিনি বিশ্বাস করেন, ইসলাম নিজে নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ।[৩৮] তবে লীলা আহমেদ বলেছেন, প্রাক-ইসলামী আরবের ইসলামী তথ্যসূত্রগুলোতে নারী বিদ্বেষের প্রমাণ নেই বরং তা মুহাম্মদের স্ত্রী খাদিজার উদাহরণ দিয়ে দেখায় যে, নারীদের তখন বিবিধ অধিকার ছিল।[৭] তবে অন্যান্য সূত্রগুলো এও প্রমাণ করছে যে, নারীর মর্যাদা তখন সুরক্ষিত ছিল না এবং তা শ্রেণী ও গোত্রভেদে বিভিন্ন রকম ছিল।
শিশু
[সম্পাদনা]কুরআন শিশুদের পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করার প্রাক-ইসলামিক ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রাক-ইসলামীয় দত্তক গ্রহণ প্রথাও বাতিল করেছে।[৩৯]
এ. গিলাদি মনে করেন যে শিশুদের পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করার প্রাক-ইসলামী ধারণাকে কুরআনের প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি ছিল একটি ইহুদি-খৃষ্টীয় প্রভাব এবং এটি গোত্রীয় সমাজে কাঠামোগত পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের একটি প্রতিক্রিয়া ছিল।[৩৯]
কুরআন প্রাক-ইসলামী দত্তক গ্রহণের রীতিনীতিকে (আইনত একটি দত্তককৃত সন্তানকে অন্য একটি পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করা) অন্যভাবে প্রতিস্থাপন করে অনুমোদন করেছে যেখানে মুমিনগণ পরিবারহীন শিশুদের "তাদের ভাই ও আশ্রিত" হিসেবে বিবেচনা করবে।[৪০] দত্তক গ্রহণ ব্যবস্থাকে "মিথ্যে এবং প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে একটি কৃত্রিম বাঁধন হিসেবে দেখা হয়েছে যেখানে কোন বাস্তব আবেগের সম্পর্ক নেই এবং যা বংশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেবল বিভ্রান্তিরই অবতারণা করে। ফলে একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিবাহ সম্পর্কিত সমস্যা এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতার উদ্ভব হয়। তবে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেনি এমন সন্তানও তার পালক পরিবার লালিতপালিত হতে পারে কিন্তু তাকে অবশ্যই তার পরিচয় যেমন তার শেষ নাম এবং বংশ বজায় রাখতে হবে। নবীজী বলেছেন, যে ব্যক্তি অনাথকে সহায়তা করে ও সহযোগীতা করে, জান্নাতে নবী ও সে ব্যক্তির অবস্থান সমপর্যায়ে থাকবে।"[৩৯]
সমাজতাত্ত্বিক পরিবর্তন
[সম্পাদনা]সমাজবিজ্ঞানী রবার্ট এন. বেল্লা যুক্তি দেন যে, ৭ম শতাব্দীতে ইসলাম তার সূচনাকালে তখনকার সময় ও স্থান উভয়ের বিবেচনায় "উল্লেখযোগ্যভাবে আধুনিক ... কারণ তা সম্প্রদায়ের সর্বস্তরের জনগণের প্রতিশ্রুতি, সম্পৃক্ততা এবং অংশীদারিত্ব প্রত্যাশা করেছিল"। তাঁর মতে, এর কারণ ইসলাম সমস্ত মুসলমানের সমতার উপর জোর দিয়েছে। নেতৃত্বের অবস্থানগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে আদি মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর এমন কিছু প্রতিবন্ধকতাও ছিল যা মূলত গোত্রীয় ও আত্মীয়তার "স্থবির স্থানীয়ত্ব" থেকে এই নীতিগুলোর উদাহরণ প্রয়োগে বাধা দেয়। ডেল এইক্যালমেন লিখেছেন যে, বেল্লার মতে "প্রথম দিকের ইসলামী সম্প্রদায়গুলো সম্মিলিত বা গোষ্ঠীগত দায়বদ্ধতার বিপরীতে ব্যক্তির উপর বিশেষ গুরুত্ব অর্পণ করেছিল"।[৪১]
মুহাম্মদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায়ের ইসলামীয় ধারণা (উম্মাহ) সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নমনীয় এবং মুসলমানদের বৈচিত্র্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল যারা বিশ্বাস এবং ব্যক্তি ও সাম্প্রদায়িক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে অভিন্ন কারণ এবং অভিন্ন মতের ভিত্তিতে একটি সাধারণ চেতনা ধারণ করে।[৩৫]
নৈতিক পরিবর্তন
[সম্পাদনা]মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে, ইসলামের অন্যান্য নবীদের মতই মুহাম্মদকে ঈশ্বর প্রেরণ করেছিলেন মানুষকে তাদের নৈতিক দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য, এবং সমাজে ঈশ্বরের ধারণার বিরোধিতা করে এমন ধারণাসমূহের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য। কেলসির মতে, প্রাক-ইসলামী আরবের নিম্নোক্ত প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর বিরুদ্ধে এই চ্যালেঞ্জটি পরিচালিত হয়েছিল:[৪২]
- আরবদের বিভিন্ন গোত্রীয় বিভাজন (রক্ত ও আত্মীয়তার ভিত্তিতে)। এই শ্রেণিবিন্যাসের মুখোমুখি হল তাকওয়ার (ইসলামভক্তি) উপর ভিত্তি করে সংঘবদ্ধ সম্প্রদায়ের তথা এক "উম্মাহর" আদর্শ।
- আল্লাহ ব্যতীত প্রচুর দেব-দেবীর উপাসনার গ্রহণযোগ্যতা - কঠোর তাওহিদ (ইসলামী একেশ্বরবাদ) দ্বারা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়; এটি এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি যা এই নির্দেশ দেয় যে, আল্লাহর ইবাদতের কোন অংশীদার নেই বা কোন সমকক্ষও নেই;
- খ্যাতি অর্জন বা উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্বকে এই ধারণা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল যে মানবজাতিকে কিয়ামাহ (পুনরুত্থানের দিন) র সময় ঈশ্বরের সামনে জবাবদিহিতার জন্য উপস্থিত করা হবে;
- পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও অনুবর্তী হওয়ার রীতিকে ইসলাম দ্বারা চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল - যা পরিবর্তে ঈশ্বরের নিকট আত্মসমর্পণ এবং ওহীর অনুসরণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়।
এই পরিবর্তনগুলো পরিচয়, বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং মূল্যবোধের শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে সমাজের পুনর্গঠনে অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তী প্রজন্মের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি আরব উপদ্বীপে সমাজে ও নৈতিক জীবনব্যবস্থায় এক বিশাল পরিবর্তন এনেছিল। মুহাম্মদের সময় যদিও প্রাক-ইসলামী আরব বহু "অবহেলা"র উদাহরণ দিয়েছিল, তবে তা পুরোই অর্থহীন ছিল না। মুহাম্মদ আরব প্রাক-ইসলামী ঐতিহ্যের কয়েকটি বিষয় যেমনঃ নিকটতম আত্মীয়, বিধবা, এতিম এবং দুস্থ ব্যক্তির যত্ন নেওয়া এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মতো কিছু বিষয়কে অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং মেনে চলতে বলেছিলেন। যদিও, এই মূল্যবোধগুলো গুরুত্ব অনুসারে পুনর্বিন্যাস ও কঠোর একেশ্বরবাদের প্রেক্ষিতে স্থাপন করা যেতে পারে।[৪২]
মুহম্মদের প্রচারের ফলেই "নতুন ধর্মের নিষেধাজ্ঞা এবং ঈশ্বর ও শেষ বিচারের ভয়ের ভিত্তিতে নৈতিক মূল্যবোধের আমূল পরিবর্তন ঘটেছিল" এবং আরবদের প্রাক-ইসলামীয় গোত্রীয় রীতিনীতিসমূহ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছিল। [৪৩]
অর্থনৈতিক পরিবর্তন
[সম্পাদনা]মাইকেল বোনার কুরআনে দারিদ্র্য ও অর্থনীতি সম্পর্কে লিখেছেন, কুরআন সমাজে নতুন শৃঙ্খলার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে, যেখানে দরিদ্রদের সাথে আগের তুলনায় আরও ন্যায্য আচরণ করা হয়। ইসলামী তত্ত্বে "দারিদ্র্যের অর্থনীতি" কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং ১৩ ও ১৪ শতাব্দী পর্যন্ত এর অনুশীলন অব্যাহত ছিল । এর মূল উদ্দেশ্য, অংশত দান করবার মধ্য দিয়ে সম্পদ প্রচার ও পবিত্র করার একটি ধারণা, যা দাতব্য, উদারতা এবং দারিদ্র্যের ধারণার একটি স্বতন্ত্র ইসলামিক পদ্ধতিকে উপস্থাপন করে। আর এটি "ধনী-দরিদ্রের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্প্রদায়ের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দান করা সংক্রান্ত খৃষ্টীয় ধারণা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক।" কুরআনে রিবা নিষিদ্ধ করা হয়েছে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুদ গ্রহণকে বোঝানো হয় সেই সাথে যাকাত ও ভিক্ষা দেওয়ার কথা বলেছে। সদকা গ্রহণকারীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি প্রসঙ্গে কুরআনে একবার উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে অন্যান্যরা যেমন অনাথ, পিতা-মাতা এবং ভিক্ষুক সম্পর্কে প্রায়শই উল্লেখ রয়েছে। আত্মীয়স্বজন, দরিদ্র এবং মুসাফির এই তিনের উল্লেখ এখানে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যণীয়।
প্রাক-ইসলামীয় আরব সমাজের বিপরীতে, কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী পণ্য বিনিময় ও বিধিনিষেধ সংক্রান্ত অর্থনৈতিক প্রবাহ ব্যবস্থাটি ছিল সবার জন্য প্রযোজ্য, সেখানে পণ্য আদান প্রদানে দাতা ও গ্রহীতা একে অপরকে জানুক বা না জানুক সমাজ স্বাভাবিকভাবে তাই করত যা তার করার কথা। কুরআনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার স্বতন্ত্র ধারায় দারিদ্র্য ও দরিদ্রদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে যা নতুনত্বের একটি নিদর্শন। কুরআন বলেছে যে, এই নির্দেশিকা ঐ সম্প্রদায়ের জন্য যারা তার অর্থ এবং পণ্যের প্রবাহকে সঠিক দিকে (উপরে থেকে নীচে) নিয়ন্ত্রণ করে এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহের প্রতিদান হিসাবে উদারতার চর্চা করে। বিস্তৃত অর্থে, কুরআনের অন্তর্নিহিত আখ্যান একটি গোত্রীয় সমাজের শহুরে হয়ে ওঠার কথা বলে। । চার্লস সি টেরি এবং অ্যান্ড্রু রিপ্পিনের মতো অনেক পণ্ডিত কুরআন ও ইসলাম উভয়কে বাণিজ্য ও মধ্য প্রাচ্যের নিকটবর্তী অঞ্চলে উত্থিত চলমান সমাজ ব্যবস্থার পক্ষে অত্যন্ত অনুকূল বলে চিহ্নিত করেছেন। মুসলিম ঐতিহ্য (হাদীস ও ইতিহাসতত্ত্ব উভয়ই) একটি বিষয়কে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছে যে, মুহাম্মদ মদিনার বাজারে কেবল তাঁবু ছাড়া অন্য কোনও ভবন নির্মাণের অনুমতি দেননি এবং তিনি সেখানে কোনও কর বা ভাড়া নেওয়ার অনুমতিও দেননি । কোন ধরনের ফি, কর বা ভাড়া প্রদান ছাড়া, স্থায়ী ভবন নির্মাণ ব্যতীত এবং খলিফার পক্ষ থেকে কোনও লাভ গ্রহণ ছাড়া (একসাথে) কোনও একটি স্থানের মধ্যে পণ্য প্রবাহকে সম্পৃক্ত করে একটি "মুক্ত বাজার" এর এই অভিব্যক্তি "স্বেচ্ছাকৃত দান" তথা সাদাকার মূল তত্ত্ব ছিল। অর্থনৈতিক মহাবিশ্বের এই সুসংগত এবং অত্যন্ত আবেদনময়ী দৃষ্টিভঙ্গির সাথেই ইসলামের প্রাথমিক এবং দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের অন্তর্যোগ ছিল। যেহেতু দরিদ্ররা এই অর্থনৈতিক মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, তাই দারিদ্র্য সম্পর্কে কুরআনের শিক্ষাসমূহ আরব, নিকট পূর্ব এবং এর বাইরেও ব্যাপক পরিবর্তনে প্রভাব রেখেছিল।[৪৪]
নাগরিক পরিবর্তন
[সম্পাদনা]কূপ নির্মাণ ও ক্রয়ের আকারে ইসলামে সমাজকল্যাণ শুরু হয়েছিল। মদিনায় হিজরতের পর মুহাম্মদ মাত্র একটি ভাল কূপ ব্যবহারের জন্য পেয়েছিলেন। মুসলিমরা এই কূপ কিনে নেয় ফলে এটি সাধারণ জনগণের ব্যবহারের জন্য সহজলভ্য হয় । মুহাম্মদের "পানি" সদাকাহ (দাতব্য)র একটি আরও ভাল পন্থা ঘোষণার পরে, তার অনেক সাহাবী নতুন কূপ খননের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। খেলাফতের সময়ে, মুসলিমগণ তাদের বিজিত ভূমিতে অনেকগুলো পুরোনো কূপ সংস্কার করেছিলেন।[৪৫]
কূপ ছাড়াও মুসলিমগণ বহু ট্যাঙ্ক এবং খাল নির্মাণ করেছিলেন। কিছু খাল ভিক্ষু ও অভাবীদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছিল (যেমন তালহা দ্বারা কিনে নেওয়া একটি ঝরণা) এবং বেশিরভাগ খাল সাধারণ জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কিছু খাল বসতিগুলোর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল, যেমন সাদ খাল আনবারে পানি সরবরাহ করত এবং আবির মুসা খাল বসরায় পানি সরবরাহ করত।[৪৬]
দুর্ভিক্ষের সময়, উমর (ওমর ইবনে আল-খাত্তাব) মিশরে একটি খাল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে নীল নদকে লোহিত সাগরের সাথে সংযুক্ত করা যায়। খালের উদ্দেশ্য ছিল আরব থেকে সমুদ্রপথে ও স্থলপথে শস্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা। আমাল ইবনুল-আস দ্বারা এক বছরের মধ্যে খালটি তৈরি করা হয়েছিল এবং আবদুস সালাম নাদিব লিখেছেন, এর মধ্য দিয়ে আরব সর্বকালের দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পেয়েছিল।"[৪৭]
রাজনৈতিক পরিবর্তন
[সম্পাদনা]আরব
[সম্পাদনা]সপ্তম শতাব্দীতে মুহাম্মদের নেতৃত্বে আরবে ইসলামের সূচনা হয়েছিল, যিনি আরবের অনেকগুলো স্বাধীন যাযাবর বা বেদুঈন গোত্রকে ইসলামী শাসনের অধীনে একত্রিত করেছিলেন।[৪৮][৪৯]
মধ্যপ্রাচ্য
[সম্পাদনা]ইসলামের পূর্বে মধ্য প্রাচ্যে বাইজেন্টাইন এবং সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের আধিপত্য ছিল। এই দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে সংঘটিত রোমান–পারসীয় যুদ্ধগুলো স্থানীয় গোত্রগুলোর মধ্যে এদের অপ্রিয় করে তুলেছিল।
ইসলামের প্রথম দিককার বিজয়ের সময়, রাশিদুন সেনাবাহিনী, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ এবং 'আমর ইবনে আল-এ'-এর নেতৃত্বে উভয় সাম্রাজ্য পরাভূত হয়েছিল এবং এই অঞ্চলে ইসলামী রাষ্ট্রকে প্রভাবশালী শক্তি হিসাবে পরিণত করেছিল।[৫০] মাত্র এক দশকের মধ্যেই, মুসলিমরা পারস্য বিজয়ের সময় মেসোপটেমিয়া ও পারস্য এবং প্রথম বাইজান্টাইন-আরব যুদ্ধের সময় রোমান সিরিয়া এবং রোমান মিশর দখল করে নেয়।[১৩] এস্পোসিতো যুক্তি দেন যে, এই বিজয় বিজিত অঞ্চলগুলোতে ইহুদি এবং কিছু খ্রিস্টান গীর্জার জন্য বৃহত্তর স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেছিল (যেমন নেস্টোরিয়ান, মনোফিসাইটস, জ্যাকবাইট এবং কোপস যাদের রক্ষণশীল খৃষ্টান উত্তরাধিকার হিসেবে মনে করা হয়)।[১৩]
ফ্রান্সিস এডওয়ার্ড পিটারের মতে:
এই বিজয়গুলো তেমন কোন ক্ষতির কারণ হয় নি: তারা সাম্রাজ্যবাদী প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে দমন করেছিল এবং সেই সাথে সদ্য অনুগত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাম্প্রদায়িক রক্তপাতকেও, মুসলিমরা খ্রিস্টান ধর্মকে মেনে নিয়েছিলেন, তবে তারা নিশ্চিত করেছিলেন যে; এখন থেকে খ্রিস্টান জীবনধারা, উপাসনা, এর অনুদান, রাজনীতি এবং ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি ব্যক্তিগত বিষয় হবে জনসাধারণের বিষয় নয়। বেশ বিদ্রূপাত্মকভাবে, ইসলাম খ্রিস্টানদের মর্যাদা হ্রাস করেছিল যা খ্রিস্টানগণ এর আগে ইহুদিদের উপর করেছিল।
বার্নার্ড লুইস লিখেছেন:
এমনকি সিরিয়া ও মিশরের খ্রিস্টানদের মধ্যে কেউ কেউ বাইজেন্টাইনদের চেয়ে ইসলামের শাসনকে অগ্রাধিকার দিতেন ... বিজয়ী প্রদেশের লোকেরা কেবল নতুন সরকারকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি, কিছু ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে এর প্রতিষ্ঠায়ও সহযোগীতা করেছিল। ফিলিস্তিনে শমরীয়রা ঐতিহ্য অনুসারে আরব অভিযানকারীদের এ জাতীয় যথেষ্ট কার্যকর সহায়তা দিয়েছিল ফলে তারা কিছু সময়ের জন্য বিভিন্ন কর থেকে অব্যাহতিও পেয়েছিল। এছাড়া স্থানীয় ইহুদি ও খ্রিস্টান সহায়তার আরও অনেক সূত্র প্রাথমিক বিবরণগুলোতে পাওয়া গেছে।
বিজয়ের সমসাময়িক সূত্রগুলো আরও দ্ব্যর্থক চিত্র প্রকাশ করে। বিজয়ের প্রথম দিনগুলিতে লেখা জেরুজালেমের সোফ্রনিয়াসের চিঠিগুলোতে গীর্জাসমূহের পতন, ধ্বংস এবং লুণ্ঠনের বিবরণ রয়েছে।[৫১] জন অফ নিকিউ ৬৯০ সালের দিকে মিশরে লেখেন, যেহেতু কিছু কপ্ট বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রতি অসন্তুষ্টির কারণে আরবদের স্বাগত জানিয়েছিলেন, অন্যান্য কপ্ট, গ্রীক অর্থোডক্স মিশরীয় এবং ইহুদিরা তাদের সম্পর্কে ভীত ছিল। তিনি বলেছেন যে, মিশরীয় খ্রিস্টান এবং ইহুদীদের কর মুসলিম বিজয়ের পরে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল যা বেশি ভাগেরই দেয়ার সামর্থ্য ছিল না।[৫২]
মেসোপটেমিয়ায় একই সময়ের লেখায়, জন বার পেনকেয়ে আরব বিজয়কে মারাত্মক ধ্বংস ও ব্যাপক দাসত্ব, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর সাথে সম্পৃক্ত রক্তক্ষয়ী অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেছেন যা তাঁর স্বজাতির উপর ঐশ্বরিক শাস্তি হিসেবে পতিত হয়েছে।[৫৩] খলিফা মুয়াবিয়া সম্পর্কে ইতিবাচক বর্ণনা এবং মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ সহ অন্যান্যদের প্রতি নেতিবাচক বর্ণনার দেয়ায় আরব শাসকদের সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি মিশ্রিত বোধ হয়। একটি সমসাময়িক আর্মেনিয়ান ইতিহাসে একইভাবে লুটপাট, দহন, দাসত্ব ও ধ্বংসের প্রেক্ষাপটে এই বিজয়গুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। জন বার পেনকয়ের মতো তিনিও মুয়াবিয়ার পক্ষে অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। লেখক বিজয়ের খুব শীঘ্রই বিদ্রোহ এবং গৃহযুদ্ধের বর্ণনা দিয়েছেন যা প্রমাণ করে যে, আরব সেনাবাহিনীর আগমনের সাথে "সাম্রাজ্যবাদী প্রতিদ্বন্দ্বিতা" শেষ হয়ে যায়নি।[৫৪]
অন্যান্য পরিবর্তন
[সম্পাদনা]রক্তের চেয়ে অর্থের ক্ষতিপূরণ প্রদানকে উৎসাহিত করে ইসলাম আরবদের মধ্যে প্রচলিত রক্তাক্ত জাতিগত বিবাদের প্রভাবকে হ্রাস করেছিল। প্রাক-ইসলামী আরব ঐতিহ্যের বিপরীতে এক্ষেত্রে যদি ভুক্তভোগী পক্ষ রক্তের জন্য জোরারোপ করত তাহলে যে কোনও পুরুষ আত্মীয়কে হত্যার পরিবর্তে শুধুমাত্র অপরাধীকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত।[৩০][৫৫]
কেমব্রিজ হিস্ট্রি অফ ইসলামে বলা হয়েছে যে, "কুরআন কেবল মানুষকে দুস্থদের যত্ন ও কষ্ট অনুভবের জন্যই তাগিদ দেয়নি, সেই সাথে শেষ দিন সম্পর্কে এর শিক্ষায় ব্যক্তি হিসেবে সকল মানুষের জন্য শাস্তির বিধানের কথা বলা হয়েছে, যাদের স্বার্থপরতা শুধুমাত্র তাদের যাযাবরীয় অমর্যাদার আদর্শ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয় নি।"[৫৬]
ইসলাম দরিদ্র ও নিপীড়িতদের সহায়তার শিক্ষা দিয়েছে।[৫৭] দরিদ্র ও এতিমদের সুরক্ষা ও সহায়তার প্রয়াসে মুসলমানদের জন্য নিয়মিত দান-যাকাতকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এই নিয়মিত ভিক্ষা প্রদান এক ধরনের আয়কর প্রদান ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছিল যা এককভাবে জনকল্যাণের কাজে ব্যবহার করা হত।[৫৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ Lewis, Bernard (২০১৯-০৫-২৮)। Shi'ism, Resistance, and Revolution। Routledge। পৃষ্ঠা 21–30। আইএসবিএন 978-0-429-30599-3।
- ↑ Snodaigh, P. Ó; Watt, John (১৯৭৪)। "An Eaglais Anallód"। Comhar। 33 (1): 20। আইএসএসএন 0010-2369। ডিওআই:10.2307/20553486।
- ↑ Robinson (2004) p.21
- ↑ Esposito (1998), p. 98
- ↑ "Ak̲h̲lāḳ", Encyclopaedia of Islam Online
- ↑ ক খ গ Nancy Gallagher, Encyclopedia of Women & Islamic Cultures, Infanticide and Abandonment of Female Children
- ↑ ক খ গ ঘ Ahmed, Leila (1986-07-XX)। "Women and the Advent of Islam"। Signs: Journal of Women in Culture and Society। 11 (4): 665–691। আইএসএসএন 0097-9740। ডিওআই:10.1086/494271। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Hitti, Philip K. (1951-07)। "The Arabs in History. Bernard Lewis"। Speculum। 26 (3): 522–522। আইএসএসএন 0038-7134। ডিওআই:10.2307/2850889। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ See: Firestone (1999) p. 118; "Muhammad", Encyclopaedia of Islam Online
- ↑ The Holy City of Medina। Cambridge University Press। ১৯২০-১২-৩১। পৃষ্ঠা 42–64। আইএসবিএন 978-1-107-32377-3।
- ↑ Serjeant, R. B. (1978-02-XX)। "The Sunnah Jāmi'ah, pacts with the Yathrib Jews, and the Taḥrīm of Yathrib: analysis and translation of the documents comprised in the so-called 'Constitution of Medina'"। Bulletin of the School of Oriental and African Studies। 41 (1): 1–42। আইএসএসএন 0041-977X। ডিওআই:10.1017/s0041977x00057761। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Watt. Muhammad at Medina. pp. 227-228 Watt argues that the initial agreement was shortly after the hijra and the document was amended at a later date specifically after the battle of Badr. Serjeant argues that the constitution is in fact 8 different treaties which can be dated according to events as they transpired in Medina with the first treaty being written shortly after Muhammad's arrival. R. B. Serjeant. "The Sunnah Jâmi'ah, Pacts with the Yathrib Jews, and the Tahrîm of Yathrib: Analysis and Translation of the Documents Comprised in the so called 'Constitution of Medina'." in The Life of Muhammad: The Formation of the Classical Islamic World: Volume iv. Ed. Uri Rubin. Brookfield: Ashgate, 1998, p. 151 and see same article in BSOAS 41 (1978): 18 ff. See also Caetani. Annali dell'Islam, Volume I. Milano: Hoepli, 1905, p. 393. Julius Wellhausen. Skizzen und Vorabeiten, IV, Berlin: Reimer, 1889, p 82f who argue that the document is a single treaty agreed upon shortly after the hijra. Wellhausen argues that it belongs to the first year of Muhammad's residence in Medina, before the battle of Badr in 2/624. Wellhausen bases this judgement on three considerations; first Muhammad is very diffident about his own position, he accepts the pagan tribes within the Ummah, and maintains the Jewish clans as clients of the Ansars see Wellhausen, Excursus, p. 158. Even Moshe Gil a skeptic of Islamic history argues that it was written within 5 months of Muhammad's arrival in Medina. Moshe Gil. "The Constitution of Medina: A Reconsideration." Israel Oriental Studies 4 (1974): p. 45
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ Swatos, William H.; Esposito, John L. (1991-06-XX)। "Islam: The Straight Path"। Review of Religious Research। 32 (4): 379। আইএসএসএন 0034-673X। ডিওআই:10.2307/3511692। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Esposito, John L. (২০০২)। Unholy war : terror in the name of Islam। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-515435-5। ওসিএলসি 48450951।
- ↑ Robinson, Neal (1994-01-XX)। "Varieties of pronouncement stories in Sahih Muslim: A gospel genre in the hadith literature"। Islam and Christian–Muslim Relations। 5 (2): 123–146। আইএসএসএন 0959-6410। ডিওআই:10.1080/09596419408721028। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Infanticide"। Encyclopaedia of the Qurʾān। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৭।
- ↑ al-Hibri, Azizah (1982-01-XX)। "A study of Islamic herstory: Or how did we ever get into this mess?"। Women's Studies International Forum। 5 (2): 207–219। আইএসএসএন 0277-5395। ডিওআই:10.1016/0277-5395(82)90028-0। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Giladi, Avner (1990-05-XX)। "Some Observations on Infanticide In Medieval Muslim Society"। International Journal of Middle East Studies। 22 (2): 185–200। আইএসএসএন 0020-7438। ডিওআই:10.1017/s0020743800033377। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ HALLOUN, M. (১৯৮৭-০১-০১)। "Some Remarks on MAFRAY/Qutra I"। Le Muséon। 100 (1): 177–180। আইএসএসএন 0771-6494। ডিওআই:10.2143/mus.100.1.2011442।
- ↑ Hadith, Piety, and Law। Lockwood Press। পৃষ্ঠা 61–88। আইএসবিএন 978-1-937040-50-5।
- ↑ Schimmel, Annemarie (১৯৬২)। "W. Montgomery Watt: Muhammad. Prophet and Statesman. Oxford 1961. IX, 260 pp. 25 sh"। Die Welt des Islams। 8 (1): 62–68। আইএসএসএন 0043-2539। ডিওআই:10.1163/157006062x00102।
- ↑ ক খ LEWIS, BERNARD (১৯৯২-০৬-১৮)। Race and Slavery in the Middle East। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 3–15। আইএসবিএন 978-0-19-505326-5।
- ↑ ক খ "Slaves and Slavery"। Encyclopaedia of the Qurʾān। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৭।
- ↑ ক খ গ Islam : critical concepts in sociology। Bryan S. Turner। London: Routledge। ২০০৩। আইএসবিএন 0-415-12347-X। ওসিএলসি 50401046।
- ↑ WIKAN, UNNI (1995-11-XX)। "Modernizing Women: Gender and Social Change in the Middle East. VALENTINE M. MOGHADAM. Women and Change in the Developing World. MARY H. MORAN, ed"। American Ethnologist। 22 (4): 1078–1079। আইএসএসএন 0094-0496। ডিওআই:10.1525/ae.1995.22.4.02a01200। line feed character in
|শিরোনাম=
at position 64 (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Friedl, Erika (1994-12-XX)। "Modernizing Women: Gender and Social Change in the Middle East, by Valentine M. Moghadam. (Women and Change in the Developing World) 311 pages, photos, tables, notes, bibliography, index. Boulder, CO: Lynne Rienner Publishers, 1993. $17.95 (Paper) ISBN 1-55587-354-5"। Middle East Studies Association Bulletin। 28 (2): 250–251। আইএসএসএন 0026-3184। ডিওআই:10.1017/s0026318400030108। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ গ Khadduri, Majid (১৯৭৮)। "Marriage in Islamic Law: The Modernist Viewpoints"। The American Journal of Comparative Law। 26 (2): 213। আইএসএসএন 0002-919X। ডিওআই:10.2307/839669।
- ↑ Encyclopedia of religion। Lindsay Jones, Mircea Eliade, Charles J. Adams (2nd ed সংস্করণ)। Detroit: Macmillan Reference USA। ২০০৫। পৃষ্ঠা ৬২২৪ ; The Quran gave women rights of inheritance and divorce centuries before women in other cultures, including the West, were accorded such legal statu। আইএসবিএন 0-02-865733-0। ওসিএলসি 56057973।
- ↑ ক খ গ "The Oxford Dictionary of Islam"। ২০০৩-০১-০১। ডিওআই:10.1093/acref/9780195125580.001.0001।
- ↑ ক খ Morgan, D. O. (1988-04-XX)। "An introduction to Islam. BY Gerhard Endress, translated by Carole Hillenbrand. pp. ix, 294, 6 maps. Edinburgh, Edinburgh University Press, 1988. £29.50 (paper £9.50)."। Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain & Ireland। 120 (2): 395–396। আইএসএসএন 0035-869X। ডিওআই:10.1017/s0035869x0014170x। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ Nur Shiddiq, Muhammad (২০২০-১২-২২)। "Rawi Khawarij dalam Sahih Al-Bukhari"। Al-Bukhari : Jurnal Ilmu Hadis। 3 (2): 149–170। আইএসএসএন 2622-7606। ডিওআই:10.32505/al-bukhari.v3i2.1933।
- ↑ Walker, Daniel; Swietochowski, Marie Lukens; Schimmel, Annemarie (১৯৯২)। "Islam"। The Metropolitan Museum of Art Bulletin। 50 (2): 14। আইএসএসএন 0026-1521। ডিওআই:10.2307/3269242।
- ↑ Watt, William Montgomery (২০১৩-১২-১৯)। "Muslim-Christian Encounters (Routledge Revivals)"। ডিওআই:10.4324/9781315819624।
- ↑ Bloom and Blair (2002) p.46-47
- ↑ ক খ Hartmann, Noga (২০০৮-০৭-০১)। "Encyclopaedia of the Qur'an"। American Journal of Islam and Society। 25 (3): 119–121। আইএসএসএন 2690-3741। ডিওআই:10.35632/ajis.v25i3.1453।
- ↑ Smith, J. I. (১৯৯৯-০৬-০১)। "Islam, Gender, and Social Change. Edited by Yvonne Yazbeck Haddad and John L. Esposito. Oxford University Press, 1998. 259 pp"। Social Forces। 77 (4): 1671–1673। আইএসএসএন 0037-7732। ডিওআই:10.1093/sf/77.4.1671।
- ↑ ক খ Rhouni, Raja (২০১০)। Secular and Islamic feminist critiques in the work of Fatima Mernissi। Leiden: Brill। আইএসবিএন 978-90-474-2960-9। ওসিএলসি 593295874।
- ↑ Mernissi, Fatima (২০০৩)। Beyond the veil : male-female dynamics in modern Muslim society ([Saqi books rev. ed.] সংস্করণ)। London: Saqi Books। আইএসবিএন 0-86356-441-0। ওসিএলসি 52420139।
- ↑ ক খ গ Encyclopaedia of Islam, saghir
- ↑ Marmaduke Pickthall: Islam and the Modern World। BRILL। ২০১৭-০১-০১। পৃষ্ঠা 231–248। আইএসবিএন 978-90-04-32759-7।
- ↑ Dammen McAuliffe, Jane। The Cambridge Companion to the Qur'an। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 1–20। আইএসবিএন 978-1-139-00120-5।
- ↑ ক খ Hrsg., Becker, Lawrence C. 1939- (২০০১)। Encyclopedia of ethics। Routledge। আইএসবিএন 0-415-93675-6। ওসিএলসি 1071013238।
- ↑ Islamic ethics, Encyclopedia of Ethics
- ↑ Bonner, Michael (2005-01)। "Poverty and Economics in the Qur'an"। The Journal of Interdisciplinary History। 35 (3): 391–406। আইএসএসএন 0022-1953। ডিওআই:10.1162/0022195052564270। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Nadvi (2000), pg. 403-4
- ↑ Nadvi (2000), pg. 405-6
- ↑ Nadvi (2000), pg. 407-8
- ↑ Rahman, Fazlur (১৯৭৭-০৪-২১)। The Cambridge History of Islam। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 632–656। আইএসবিএন 978-1-139-05505-5।
- ↑ Hourani (2003), p.22
- ↑ Sonn, pg.24-6
- ↑ Hoyland, Robert G. (১৯৯৭)। Seeing Islam as others saw it : a survey and evaluation of Christian, Jewish, and Zoroastrian writings on early Islam। Princeton, N.J.: Darwin Press। আইএসবিএন 0-87850-125-8। ওসিএলসি 36884186।
- ↑ "John of Nikiu"। Encyclopedia of the Medieval Chronicle। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২১।
- ↑ "John bar Penkāyē, Yōḥannān bar Penkāyē, John of Penek (Fenek)"। Christian-Muslim Relations. A Bibliographical History। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২১।
- ↑ "Sebēos"। Encyclopedia of the Medieval Chronicle। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২১।
- ↑ Bloom and Blair (2002) p.4
- ↑ Linton, D. L.; Moseley, F. (১৯৭০-১২-০২)। The Cambridge Ancient History। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 1–34। আইএসবিএন 978-1-139-05424-9।
- ↑ Nasr, Seyyed Hossein (২০০২)। The heart of Islam : enduring values for humanity (1st ed সংস্করণ)। [San Francisco, Calif.]: HarperSanFrancisco। আইএসবিএন 0-06-009924-0। ওসিএলসি 49942682।
- ↑ author., Reeves, Minou,। Muhammad in Europe : a thousand years of Western myth-making। আইএসবিএন 978-1-85964-466-9। ওসিএলসি 1062274061।
গ্রন্থসূত্র
[সম্পাদনা]- Forward, Martin (১৯৯৮)। Muhammad: A Short Biography। Oxford: Oneworld। আইএসবিএন 978-1-85168-131-0।
- Lewis, Bernard (১৯৮৪)। The Jews of Islam। US: Princeton University Press। আইএসবিএন 978-0-691-05419-3।
- P.J. Bearman, Th. Bianquis, C.E. Bosworth, E. van Donzel and W.P. Heinrichs (Ed.), Encyclopaedia of Islam Online. Brill Academic Publishers. আইএসএসএন 1573-3912.
- Watt, William Montgomery (১৯৭৪)। Muhammad: Prophet and Statesman। United Kingdom: Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-881078-0।
- Jonathan M. Bloom, Sheila S. Blair (১৯৭৪)। Islam: A Thousand Years of Faith and Power। Yale University Press। আইএসবিএন 978-0-300-09422-0।
- Manning, Patrick (১৯৯০)। Slavery and African Life: Occidental, Oriental, and African Slave Trades। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-34867-6।
- Nadvi, Abdus Salam (২০০০)। The ways of the Sahabah। Karachi: Darul Ishaat। Translated by Muhammad Yunus Qureshi.
- Schimmel, Annemarie (১৯৯২)। Islam: An Introduction। US: SUNY Press। আইএসবিএন 978-0-7914-1327-2।
- Sonn, Tamara (২০০৪)। A Brief History of Islam। Blackwell Publishing। আইএসবিএন 978-1-4051-0900-0।