রক্তক্ষরণ
রক্তক্ষরণ | |
---|---|
প্রতিশব্দ | রক্তহ্রাস, হেমারেজ, হেমারেজিং |
জখম হওয়া আঙুলে রক্তক্ষরণ | |
বিশেষত্ব | জরুরী চিকিৎসাবিজ্ঞান, রক্তবিজ্ঞান |
রক্তক্ষরণ বা রক্তহ্রাস হচ্ছে একটি অবস্থা যখন রক্তবাহিকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে রক্ত সংবহন তন্ত্র থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে। রক্তক্ষরণ শরীরের অভ্যন্তরে বা বাহ্যিকভাবে হতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে যেসকল অঙ্গের মাধ্যমে বাহ্যিক রক্তরক্ষরণ হয়ে থাকে তার মধ্যে আছে মুখ, নাক, কান, মূত্রনালী, যোনি, বা পায়ু। এছাড়াও ত্বকের কোনো অংশ কেটে গেলে বা জখম হলেও বাহ্যিক রক্তক্ষরণ হতে পারে। শরীরের রক্তের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্তভাবে কমে যাওয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হাইপোভলেমিয়া এবং অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণের ফলে মৃত্যু হলে তাকে এক্সস্যাংগুইনেশন হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষ শরীরের ১০–১৫% রক্ত হ্রাস হলেও কোনো রকম গুরুতর শারীরিক জটিলতা ছাড়াই কাটিয়ে উঠতে পারে। তুলনামূলকভাবে রক্ত দানের ক্ষেত্রে সাধারণত শরীরের ৮–১০% রক্ত হ্রাস পায়। রক্তক্ষরণ বন্ধ বা হ্রাস করার শারীরিক প্রক্রিয়া হেমোস্ট্যাসিস নামে পরিচিত এবং এটি প্রাথমিক চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এবং যুদ্ধের সময় আহতদের ক্ষতস্থান বন্ধ করতে সায়ানোএক্রিলেট আঠা আবিষ্কার করা হয়েছিলো, এবং সর্বপ্রথম ভিয়েতনাম যুদ্ধে তা ব্যবহৃত হয়েছিলো। বর্তমানে ছোটখাট রক্তক্ষরণের চিকিৎসায় ত্বকের উপরে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার প্রয়োজনে এ ধরনের আঠার চিকিৎসীয় সংস্করণ ব্যবহার করা হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা
রক্তক্ষরণ নিরাময়ে প্রাথমিকভাবে আমারা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি, তা নিন্মে আলোচনা করা হল:[১]
- রোগীকে বসানো ও শোয়ানো যায় এমন স্থানে স্থানান্তর করতে হবে। এতে রক্তপাত আপনা-আপনি কমে যাবে।
- যে স্থান হতে রক্তপাত হচ্ছে, সে স্থান হৃৎপিণ্ডের সমতার উপর তুলে ধরলে রক্তপাত অনেকটা কমে যাবে।
- সামান্য কেটে গেলে ঐ স্থানে রক্ত জমাটবেঁধে আপনা-আপনি রক্তপাত বন্ধ হয়।
- কাটা স্থানে বৃদ্ধাঙ্গুলির চাপ প্রয়োগ করলে অনেক সময় রক্তপাত বন্ধ হয়।
- আহত অঙ্গের নড়াচড়া বন্ধ করতে হবে।
- রক্তপাতের স্থানে বরফ ব্যবহার করতে হবে।
- রক্তপাত বন্ধের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ দিতে হবে।
- ক্ষতস্থান পরিষ্কার কাপড় বা ব্যাণ্ডেজ দিয়ে বাঁধতে হবে।
- তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে বাহাসপাতালে নিতে হবে।
- বেশি রক্তপাত হলে টুর্নিকেট ব্যবহার করতে হবে। টুর্নিকেট অর্থ হলো প্রাথমিক বাঁধনকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শক্ত করে তোলা। ক্ষতস্থান ঢিলা করে বেঁধে তার ভিতরে একটি কাঠি বা পেন্সিল ঢুকিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে ঘুরালে বাঁধনটি ক্রমশ শক্ত হয়ে রক্তপাত বন্ধ হয়।
প্রকারভেদ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রক্তক্ষরণের তীব্রতা নির্ণয়ে একটি আদর্শ গ্রেডিং স্কেল প্রণয়ন করেছে।[২]
গ্রেড ০ | কোনো রক্তক্ষরণ হয়নি |
গ্রেড ১ | পেটিকিয়াল রক্তক্ষরণ |
গ্রেড ২ | সামান্য রক্তক্ষরণ (গুরুত্ববহ) |
গ্রেড ৩ | অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, রক্তপ্রদানের প্রয়োজন (তীব্র) |
গ্রেড ৪ | দুর্বল করে দেওয়ার মতো রক্তক্ষরণ, চোখের রেটিনায় বা সেরিব্রাল রক্তক্ষরণ যা প্রায় সময় মৃত্যুর সাথে সংশ্লিষ্ট |
তথ্যসূত্র
- ↑ হোসেন, জুলফিকার বিন (২০১৯)। "রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে করণীয়"। Emedical.com।
- ↑ Webert K, Cook RJ, Sigouin CS, Rebulla P, Heddle NM (নভেম্বর ২০০৬)। "The risk of bleeding in thrombocytopenic patients with acute myeloid leukemia"। Haematologica। 91 (11): 1530–37। পিএমআইডি 17043016।
বহিঃসংযোগ
শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |