সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় (বিচারপতি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়
বিংশতিতম ভারতের প্রধান বিচারপতি
কাজের মেয়াদ
১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৯ – ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯০
মনোনয়নকারীCollegium of judges headed by CJI E. S. Venkataramiah
নিয়োগদাতারামাস্বামী ভেঙ্কটরমণ
পূর্বসূরীই. এস.ভেঙ্কটরামাইয়া
উত্তরসূরীরঙ্গনাথ মিশ্র
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯২৭-০৬-০১)১ জুন ১৯২৭
কলকাতা
মৃত্যু২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯০(1990-09-25) (বয়স ৬৩)
লন্ডন[১]

সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় (১ জুন ১৯২৭ - ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯০) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি আইনবিদ, যিনি ভারতের বিংশতিতম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। [২] তিনি এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। [৩]

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি[সম্পাদনা]

সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ১ জুন ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায়। তার পিতা রায়বাহাদুর বিজয়বিহারী মুখোপাধ্যায় ছিলেন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ল্যান্ড রেকর্ডস এর ভারতীয় মহাপরিচালক। তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা প্রশান্তবিহারী মুখোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. অরবিন্দবিহারী মুখোপাধ্যায়। [৪][৫]

শিক্ষা[সম্পাদনা]

সব্যসাচী কলকাতার ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনার জন্য ভরতি হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন । [৪][৫][৬] ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্র রাজনীতিতেও জড়িত পড়েন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। [৪]

পরবর্তীতে, তিনি ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডনে যান। সেখানে ব্যারিস্টারি পড়ার সময় (১৯৪৮-৪৯ খ্রিস্টাব্দে) তিনি ইন্ডিয়ান সোসালিস্ট গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং সেই সাথে মিডল টেম্পলে প্রতিনিধিত্বকারী ইনস অফ কোর্ট স্টুডেন্ট ইউনিয়নের কমিটির সদস্য হন। [৪][৭]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে একজন আইনজীবি হিসাবে কর্মজীবন শুভ করেন। প্রথমদিকে তিনি যেখানে তিনি প্রাথমিকভাবে দেওয়ানী, রাজস্ব এবং সাংবিধানিক বিষয় সম্পর্কিত মামলা দেখতেন।[৬] প্রথম প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের (ARC) অধীনে, তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের স্টাডি টিমে দায়িত্ব পালন করেন।[৬] ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে, তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। [৪][৫] ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তিনি অষ্টম অর্থ কমিশনের সদস্য হন। [৪][৬] [৮]আদালতে থাকাকালীন বিচারপতি সব্যসাচী ভোটার তালিকা বিষয়ে একটি রায় দেন যার ফলে নির্বাচন বিলম্বিত হয়। নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টের কাছে সুপারিনটেনিং নিয়ন্ত্রণ প্রার্থনা করলে সুপ্রিম কোর্ট তাকে অবিলম্বে মামলার শুনানি করতে এবং পাঁচ দিনের মধ্যে তার রুল জারি করার নির্দেশ দেয়। আদেশটি মেনে চলার সময় তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেন যে এই জাতীয় সমস্যাগুলি বর্তমান বিচারকের বিবেচনার মধ্যে ছিল এবং সুপারিনটেনডিং নিয়ন্ত্রণের অধীন নয়। তিনি তার আগের আদেশ বহাল রাখেন। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ তিনি কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হন। [৪][৬] ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ বিচারপতি মুখোপাধ্যায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর তিনি ভারতের প্রধান বিচারপতি হন। ভোপালের বিপর্যয় সংক্রান্ত "ভোপাল গ্যাস লিক অ্যাক্ট" ( তথা "ভোপাল সেটেলমেন্ট অ্যাক্ট") এর বৈধতা পরীক্ষা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্যানেলের প্রধান হন। [৯] তিনি প্রধান বিচারপতি হওয়ার মাত্র পাঁচ দিন পর তার প্রাথমিক মতামত জারি করেন, [১০] কিন্তু আদালতের বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি তার জীবৎকালে সম্ভব হয় নি। [১১] ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মে তার মেয়াদকালেও বোম্বাই হাইকোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে , যা সমগ্র দেশের বিচার ব্যবস্থায় "বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট" সৃষ্টি করেছিল। [[১২][১৩]] এমতাবস্থায় দেশের বেশিরভাগ উচ্চ আদালতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জাতপাত এবং নিয়োগের রাজনীতিকরণের অভিযোগ নিয়ে সংবাদ তৈরি করতে শুরু করে। [১৪] কিন্তু বিচারপতি মুখোপাধ্যায় বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখতে এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধানে কাজ করেন। [১২][১৫] বিচারপতি মুখোপাধ্যায় ভি. রামস্বামী মামলা ব্যাপারে তিনি যে কমিটি গঠন করেছিলেন তাতে আশানুরূপ সংশোধনমূলক ব্যবস্থা না হওয়ায় সমালোচিতও হয়েছিলেন, যদিও পার্লামেন্ট সেই বিষয়টি সমাধানে প্রায় অক্ষমই ছিল। [১৬][১৭] তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে উল্লেখ করেন-

"মানুষ যদি বলে আমি বিচারক হিসাবে বুদ্ধিমান নই, তাতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু তারা যদি বলে যে আমি সৎ নই, তাহলে সবই নষ্ট হয়ে গেল।"

[১৮]

বিচারকদের আচরণ সম্পর্কে বিচারপতি মুখোপাধ্যায় বলেন সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের বিচারক এবং প্রধান বিচারপতি এই দেশের অন্য নাগরিকদের মতো আইনের শাসনের অধীন এবং তাদের অবশ্যই নিয়ম এবং যতটা প্রবিধান আছে তা মেনে চলতে হবে। [১৯]

বিচারপতি সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় দীর্ঘ আট বছর টেগোর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট সংস্থার সভাপতি ছিলেন।[৩] সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভাষণ দিয়ে দেশে ফেরার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনে প্রয়াত হন। [৩]প্রসঙ্গত তিনি ডায়াবেটিসজনিত জটিল রোগে ভুগছিলেন। [১] তিনি বিচারপতি এইচ জে কানিয়া'র পর দ্বিতীয় প্রধান বিচারপতি যিনি পদে আসীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. De Sarkar, Dipankar (অক্টোবর ১৯৯০)। "Diplomatic dispute"India Today। ২২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. "Retired Hon'ble Chief Justices (Arranged According to Seniority)"। Supreme Court of India। ১৩ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪১৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  4. Misra, Ranganath; ও অন্যান্য (১৯৯০)। "Full Court Reference on the passing away of the Hon'ble Mr Justice Sabyasachi Mukharji, Chief Justice of India on October 1, 1990"Supreme Court Cases4: 1–8। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. "Biography of Chief Justice Sabyasachi Mukharji"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৫ 
  6. "Former Hon'ble Chief Justices' of India: Hon'ble Mr. Justice S. Mukharji"। Supreme Court of India। ৩০ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; AishwaryaSandeep3 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  8. "Report of the eighth finance commission: Chapter 1" (পিডিএফ)। Finance Commission, Government of India। ১৯৮৪। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  9. Singh, Ramindar (৩১ মার্চ ১৯৮৯)। "Rough recoil"India Today। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  10. Devadas, David; Singh, N. K. (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০)। "Bhopal gas disaster: Unsettling the verdict"India Today। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  11. "Bhopal Chronology"। Houston, Texas: Bhopal.com Information Center। জানুয়ারি ২০০১। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  12. Chengappa, Raj (১৫ জুলাই ১৯৯০)। "'I feel sorry and very perturbed'"India Today। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  13. Chengappa, Raj; Rahman, M. (১৫ জুলাই ১৯৯০)। "Crisis of credibility"India Today। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  14. Nariman, Fali S. (২০ জানুয়ারি ২০০৩)। "Wanted: A bench code"India Today। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  15. Nariman, Fali S. (২০ জানুয়ারি ২০০৩)। "Wanted: A bench code"India Today। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  16. Dhavan, Rajeev (৫ ডিসেম্বর ২০১১)। "Judges must look within"India Today। ৭ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  17. Bhushan, Prashant (৪ জুন ১৯৯৩)। "Frontline: A historic non-impeachment, An all-round system failure" (পিডিএফ)। Campaign for Judicial Accountability & Judicial Reforms (CJAR)। ৯ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  18. "Judiciary: Bar takes a strident position"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৫ 
  19. Quoted by Somanath Chatterjee in parliamentary debate. "Motion for Presenting an Address to the President under Clause (4) of Article 124 of the Constitution for Removal from Office of Justice V. Ramaswami of the Supreme Court of India for His Acts of Misbehavior"। Parliament of India। ১০ মে ১৯৯৩। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।