ব্যবহারকারী:Zihad0302

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে


ইট পাটকেল পর্ব ১ - ইট পাটকেল সকল পর্বের লিংক[সম্পাদনা]

বিচ্ছেদের চার বছর পরে প্রিয় মানুষটির হলুদ সন্ধায় লাইভ পারফর্ম করছে নূর। পুরো নাম তেহজিব নূর। একজন প্রফেশনাল সিঙ্গার সে। মাস খানেক আগেই তাদের সাথে কনট্রাক করেছে মিনিস্টার আশমিন জায়িনের পি.এ সানভি। সব কিছু জেনে শুনেই কন্ট্রাক পেপার সাইন করেছে নূর। যে বর্তমানে স্টেজ কাপাচ্ছে নিজের সুরেলা গলার গান দিয়ে। তার সাথেই একদল মেয়ে গানের তালে তালে নেচে যাচ্ছে। নূর ও তাদের সাথে তাল মেলাচ্ছে মাঝে মাঝে। তার দিকেই রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে আশমিন। অথচ তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই এই মুহুর্তে তার রাগ পুরো কমিউনিটি সেন্টার জ্বালিয়ে দিতে পারে। আশমিনের বাবা কিছুটা আচ করতে পেরে মুচকি হাসলেন। ছেলের চোখে চোখ পরতেই গা জ্বালানো হাসি দিতে ভুললেন না। আশমিনের রাগ তরতর করে বেড়ে গেলেও সে নূরের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকালো।

আরো পড়ুন : ইট পাটকেল পর্ব ১

ইট পাটকেল পর্ব ২

ইট পাটকেল পর্ব ৩

ইট পাটকেল পর্ব ৪

ইট পাটকেল পর্ব ৫

ইট পাটকেল পর্ব ৬

ইট পাটকেল পর্ব ৭

ইট পাটকেল পর্ব ৮

ইট পাটকেল পর্ব ৯

ইট পাটকেল পর্ব ১০

ইট পাটকেল পর্ব ১১

ইট পাটকেল পর্ব ১২

ইট পাটকেল পর্ব ১৩

ইট পাটকেল পর্ব ১৪

ইট পাটকেল পর্ব ১৫

ইট পাটকেল পর্ব ১৬

ইট পাটকেল পর্ব ১৭

ইট পাটকেল পর্ব ১৮

ইট পাটকেল পর্ব ১৯

ইট পাটকেল পর্ব ২০

ইট পাটকেল পর্ব ২১

ইট পাটকেল পর্ব ২২

ইট পাটকেল পর্ব ২৩

ইট পাটকেল শেষপর্ব ২৪

বেবি পিনক গ্রাউনে নূর কে প্রিন্সেসের মতো লাগছে। হেলেদুলে যখন ডান্সারদের সাথে পা মেলাচ্ছে তখন আশমিনের কলিজায় আগুন লেগে যাচ্ছে। অথচ তার পাশেই তার হবু বউ বসে রাগে ফুসছে তাতে তার কোন হেলদোল নেই। তার কলিজা কয়লা করার জন্য স্টেজে হাজির হলো মেল সিঙ্গার তাসিন। যে আপাতত নূরের সাথে ডুয়েট করছে। দুজন যে খুব বেশি ইনজয় করে গাইছে তা কেউ চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবে। আশমিনের হবু বউ লারা এবার নিজের বেচারি মার্কা খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। কটমট করতে করতে আশমিন কে বললো, প্রাক্তনের প্রতি দরদ উতলে উঠছে নাকি? এভাবে তাকিয়ে কি তার রুপের সাগরে ডুব দিয়েছো তা সবাইকে বোঝাতে চাইছো। আশমিন পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো লারার দিকে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে উপহাসের স্বরে বললো, - সামনে রুপের সাগর রেখে আমি পাশে পচা ডোবা নিয়ে বসে আছি। কি দিন আসলো আমার। আমি কি ভেবেছি জানো লারা, এবার শহরের সমস্ত পচা নর্দমা গুলো পরিস্কার করে ফেলবো। আবর্জনা সব ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবো। মন্ত্রী হিসেবে আমার একটা কর্তব্য আছে তো নাকি। লারার মুখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেছে। আশমিনের নজর এখোনো নূরেতেই স্থির। প্রথম থেকে সবটা খেয়াল করলেও আশমিন কে পুরো পুরি ইগনোর করে গেছে নূর। প্রিয়জনের পাশে অন্য কাউকে সহ্য করা মানে নিজের কলিজায় নিজেই করাত চালিয়ে দেয়া। তবুও নূর নির্বাক। আর তার এই নির্লিপ্ততাই তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এইযে সামনের মানুষটা তাকে হাদি খুশি আরেক ছেলের সাথে পারফর্ম করতে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছে তাতেই তো তার নিজের কলিজায় বরফ পরছে। গান শেষ হতেই উত্তেজনায় ফেটে পরলো দর্শক। করা তালিতে তাদের বাহ বাহ দিচ্ছে সবাই। নূর স্টেজ থেকে নেমে আমজাদ চৌধুরীর দিকে এগিয়ে গেলো নূর। হাসি হাসি মুখে বললো, কেমন আছেন স্যার? মার খাবি। আমি আবার স্যার হলাম কবে রে? মিনিস্টার আশমিন জায়িনের বাবা আপনি। স্যার না বললে গর্দান যাবে যে। ওই সব মিনিস্টার ফিনিস্টার বাদ দে। দু পয়সার মূল্য নেই আমার কাছে এসবের। আমি তোর আঙ্কেল ছিলাম তাই আছি। খবরদার এইসব স্যার টের ডাকবি না। -আচ্ছা আচ্ছা ডাকবো না। রাগ করো না তুমি। অনেকদিন পরে দেখা, এভাবে রাগ করলে আমার খারাপ লাগবে। ছেলের বিয়েতে মজা করো। মুখ গোমড়া করে আছো কেন? নূরের কথা শুনে মুখ গোমড়া করে ফেললো আমজাদ চৌধুরী। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। অনেক বড় হয়ে গেছিস। দোয়া করি আরো বড় হ। সবাই সবকিছুর মূল্য দিতে জানে না রে মা। কাচ কে হীরা ভাবতে ভাবতে আসল হীরাকেই কাচ ভেবে হারিয়ে ফেলে। যে মূল্য দিতে জানে না তাকেও মূল্যহীনের খাতায় ফেলে দিয়ে এগিয়ে যা। নিজেকে এতটা শক্ত কর যাতে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ তোকে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা না রাখে। নূর মলিন হাসলো। আমজাদ চৌধুরীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার জন্য বরাদ্দকৃত রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। রুমে প্রবেশ করতেই নূরের হাসি হাসি মুখটা বিষাদের কালো মেঘে ছেয়ে গেলো। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরার আগেই সন্তপর্ণে তা মুছে নিলো সে। আশমিনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নূরের দিকেই সীমাবদ্ধ। নূর এখোনো আশমিন কে খেয়াল করে নি। বিলাশবহুল স্যুটের ড্রয়িং রুম থেকে বেড রুমে ঢুকতেই একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরলো তাকে। শক্ত হাতের ধাক্কায় দেয়ালের উপর আছরে পরলো নূর। কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঝাপসা হয়ে গেলো সব কিছু। নিজেকে সামলে নেয়ার আগেই সেই হাতের মালিক শক্ত করে চেপে ধরলো তাকে। ভীত চোখে সামনে তাকিয়েই শান্ত হয়ে গেলো নূর। আশমিন চোখ লাল করে তার দিকেই তাকিয়ে। সরে দাড়ান মন্ত্রী সাহেব। সামান্য একজন সিঙ্গারের এতো কাছে আসবেন না প্লিজ। চরিত্রে দাগ লাগতে পারে। নূরের নির্লিপ্ত ভাব আশমিনের রাগে ঘি ঢালার কাজ করলো। হাতের বাধন শক্ত করে দাতে দাত চেপে বললো, আজকাল সিঙ্গাররা সস্তা হয়ে যাচ্ছে নাকি? নাকি তাদের চরিত্র এতোটাই নিম্নমানের হয়ে গেছে যে কেউ কাছে আসলে তার চরিত্র ও খারাপ বলবে লোকে। নূর চোয়াল শক্ত করে তাকালো আশমিনের দিকে। পুরনো ক্ষত তাজা হয়ে উঠছে। নূর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, মানুষ নিজের চরিত্র দিয়ে অন্যকে বিচার করে জানেন তো মন্ত্রী সাহেব। যার চরিত্র যেমন সে অন্যকে তেমন ই ভাবে। সেসব কথা বাদ দিন, নিজের হবু বউয়ের দিকে নজর দিন। আমি এখানে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট নিতে বা দিতে আসি নি। ব্যক্তিগত কোন কথা না বললে খুশি হবো। দয়া করে হাত ছাড়ুন। যদি না ছাড়ি? হাহ!ধরে রাখা আপনার স্বভাবের সাথে যায় না। আপনি ছেড়ে দিতেই অভ্যস্ত। তাই অযথা সময় নষ্ট করবেন না। বদলে গেছো! - পৃথিবী টা বড্ড নিষ্ঠুর মন্ত্রী সাহেব। কি? বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্বাস না হলে একবার আমার জায়গায় নিজেকে দাড় করিয়ে দেখুন। আমার চোখ দিয়ে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম মানুষ গুলো কে দেখুন। দেখবেন প্রতারকদের মেলা বসেছে। ঠান্ডা মাথায় খুন করে দিয়ে চলে যাবে বুঝতেই পারবেন না। আচ্ছা মন্ত্রী সাহেব! আপনি কখনো আয়না দেখেন না? চোখ মেলাতে পারেন তো নিজের সাথে? ঘৃণা হয় না এই জঘন্য প্রতারক চেহারা দেখে? বমি পায় না? আমার কিন্তু বমি পাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঘৃণা গুলো বমি হয়ে আপনার গায়ে উগড়ে দেই। আপনি বরং চলে যান। অযথা সময় নষ্ট করার মানে হয়? নূর!!! আপনার উপরে আমার কোন দাবি নেই মন্ত্রী সাহেব। নূর এতটা ও বেহায়া না। ভাববেন না আপনার নতুন সংসারে ঝামেলার সৃষ্টি করবো। জীবন অনেক লম্বা জানেন তো? সেখানে আপনার মতো প্রতারকদের পাত্তা দিতে নেই। আমার করা প্রতিটি ওয়াদা আমি পূরোন করেছি। আরেকটা ওয়াদা আমি আপনাকে করতে চাই মন্ত্রী সাহেব, আমার শূন্যতায় আপনার সুখের সংসার জ্বালিয়ে রাক করে দিবো। এটা এই নূরের ওয়াদা। প্রতি মুহূর্ত আপনি পোড়বেন। আপনার মনের ভিতর থাকা শান্তির শেষ বিন্দুটুকু নিংড়ে বের করে আনবো। এতোদিন এই নূরের ভালোবাসা আপনাকে উষ্ণতা দিয়েছে। এবার নূরের তেজ আপনাকে ছাই করবে। নতুন জীবনের জন্য অভিনন্দন।

বারান্দার সোফায় আয়েসি ভঙ্গিতে বসে মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে রেখেছে আশমিন। নূরের কোন কথাই তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে নি। সেসব নিয়ে মাথা ও ঘামাচ্ছে না সে। তার বর্তমান মাথা ব্যথার নাম লারা। এই মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েক দিনেই মাথা খেয়ে দিল। কয়েকটা বিশ্রী গালি দিয়ে মাথা সোজা করে বসলো সে। সামনেই কাচুমাচু করে সানভি দাঁড়িয়ে। কি বুঝে যে এই ছেলেটা কে নিজের পি.এ. করেছে আজো মাথায় আসে না। -কি বলবে বলো। আশমিনের গম্ভীর গলা শুনে শুকনো ঢোক গিললো সানভি। ভয়ে ভয়ে বললো, ম্যাম কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না স্যার। তরাক করে বন্ধ চোখ খুলে ফেললো আশমিন। রক্তিম চোখে তাকাতেই কাপা কাপি শুরু হয়ে গেলো সানভির। আশমিন নিজের ফোনে দৃষ্টি রেখে গম্ভীর গলায় বললো, নূর রুমেই আছে সান। অযথা আমার সময় নষ্ট না করে বাকি দিকটা সামলাও। আমি লারা ম্যামের কথা বলছি স্যার। সানভির তারাহুরো জবাব। বিরক্তিতে কপাল কুচকে গেলো আশমিনের। তবে চেহারায় তার রেশ মাত্র নেই। শান্ত ভঙ্গিতে শুভ্র পাঞ্জাবির পকেট থেকে রিভালবার বের করে শান্ত গলায় বললো, ওই মেয়েকে আরেকবার ম্যাম বললে এই রি*ভালবারের একটা গুলি তোমার নামে দান করে দিবো। বুঝে শুনে কথা বলবে এর পর থেকে। ঠিক আছে? তাড়াতাড়ি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো সানভি। যে লোক কোল্ড ড্রিংক খেতে খেতে ঠান্ডা মাথায় খুন করতে পারে তার দ্বারা সব কিছুই সম্ভব। প্রানের নিশ্চয়তা থাকলে এই চাকরি সে কবেই ছেড়ে দিতো। এসবে এমন ভাবে জরিয়ে গেছে যে চারিদিকে শত্রুর অভাব নেই। আশমিনের ছায়া মাথা থেকে উঠতেই সে দুনিয়া থেকে উঠে যাবে। লারা কে আমি সরিয়েছি। তাই চিন্তা বাদ দাও। ঠ ঠিক আছে স্যার। তবে অভয় দিলে আরেকটা কথা বলতাম। আশমিন শান্ত চোখে তাকালো সানভির দিকে। সাথে সাথেই সানভি গড়গড় করে সব বলতে শুরু করলো, আপনি লারা কে যে গোডাউনে রেখেছিলেন সেখানে সে নেই স্যার। আমাদের গার্ডদের চোখ ফাকি দিয়ে কেউ তাকে নিয়ে গেছে। আশেপাশের সব জায়গায় খোঁজ চলছে কিন্তু কোন আশানুরূপ খবর এখনো পাই নি। আশমিন চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো, কাজ টা তুমি ঠিক করলে না নূর। আমার কাজে বাম হাত ঢোকানো আমি পছন্দ করিনা। আমার অপছন্দের কাজ গুলোই তুমি সবচেয়ে বেশি করো। ফলাফল ভোগ করার জন্য তৈরি থাকো। চোখ বন্ধ রেখেই সানভি কে বললো, এই মুহুর্তে শুধু আমার মায়ের কাছে এই খবর টা পৌঁছে দাও যে, বউ পালিয়েছে। আর অন্দরমহল খালি করে দাও। শুধু আমার কাছের মানুষ গুলো ছাড়া আর কেউ যেন না থাকে। ওকে স্যার। হন্তদন্ত পায়ে বেড়িয়ে গেলো সানভি। রাত তিনটায় আড়ামের ঘুম বাদ দিয়ে এসব করতে হচ্ছে। কালার ফুল প্রজাপতির মতো সুন্দরী মেয়েরা এদিক সেদিক উড়ে বেরাচ্ছে। অথচ তার সেদিকে নজর দেয়ার ও সময় নেই। এই জীবন রেখে কি হবে। এর চেয়ে সন্যাসী হয়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ঢেড় ভালো।। ভোর রাতে মিসেস কামিনী চৌধুরীর বিলাপে ঘুম ভাঙলো সবার। আশমিন একমনে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূরের রুমে হিডেন ক্যামেরা লাগিয়েছে সে। ফোনের স্ক্রিনে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে সে। নূর ঘুমাচ্ছে। ঠিক দু মিনিটের মাথায় আলসে ভঙ্গিতে উঠে বসলো নূর। চুল গুলো মেসি বান করে আড়মোড়া ভেঙে ফিচলে হাসলো। হেলেদুলে এসে আশমিনের সেট করা ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে দুই ঠোঁট উচু করে চুক চুক শব্দ করে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। আশমিন হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাগ সংবরণ করার চেষ্টা করছে। এই মেয়েটা এতো বিধ্বংসী হলো কবে থেকে! নূর নিজের হাসি থামিয়ে চেহারা দুঃখী দুঃখী করে ফেললো। আফসোসের স্বরে বললো, – আহারে!মন্ত্রী সাহেবের বউ পালিয়েছে বুঝি? এখন কি হবে? প্রেস, মিডিয়া তো মন্ত্রী সাহেব কে বদনাম করে দিবে। আপনি চিন্তা করবেন না মন্ত্রী সাহেব, আমি কোন ভাবেই আপনাকে বদনাম হতে দিবো না। আমি ওয়াদা করেছিলাম তো! আপনার বিপদে আপনার পাশে থাকবো। লুক, আম হেয়ার। নূর রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার দশ মিনিটের মাথায় সমস্ত শোরগোল থেমে গেলো। পুরো দমে বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলো। বিশাল বাগানের মধ্যে বরের গোসলের প্রস্তুতি চলছে। এক সাইডে নূরের ব্যান্ড একের পর এক গান পারফর্ম করে যাচ্ছে। আজকে নূর এখনো স্টেযে উঠে নি।সে আশমিনের আসার অপেক্ষায় আছে। তার পারফরম্যান্স শুরু হবে আশমিন আসার পর পর। কয়েক মুহুর্ত পরে আশমিন উপস্থিত হলো বাগানে। শুভ্র পাঞ্জাবিতে রাজকুমারের মতো লাগছে তাকে। হলদেটে গায়ের সাথে পাঞ্জাবি টা অসাধারণ ভাবে মানিয়ে গিয়েছে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নূরের দিকেই স্থির। নূর মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়লো। আশমিন বাকা হেসে গোসলের জন্য নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দাড়াতেই মহিলারা তাকে আবারও হলুদ মাখিয়ে দিলো। স্টেজে তখন শুভ বিবাহ গান বাজছে। আমজাদ চৌধুরী হাক ডেকে নূর কে বললো, এদিকে আয় তো তেহজিব মা। আশমিন কে হলুদ লাগিয়ে দে। নূর শয়তানি হেসে হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে এলো। নূর কে আসতে দেখে মহিলারা একপাশ হয়ে দাড়িয়ে গেলো। আশমিন শান্ত চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে। নূর আশমিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো, "আমার জায়গায় বসিয়েছো অন্য কাউকে যেমন তোমার জায়গা ও দিয়ে দিবো অন্য কাউকে তেমন। আশমিনের গালে হলুদ লাগিয়ে দিতেই আশমিন নূরের হাত চেপে ধরলো। হেচকা টানে নূর কে ঘুড়িয়ে নিলো। সাথে সাথে আশমিনের বুকের সাথে নূরের পিঠ লেগে গেল। আশমিন হালকা নিচু হয়ে গুন গুন করে গাইলো, " tera muskurana, nazar yu jhukana, mere liye he bass, mere liye hai. নূরের গালে নিজের গাল ঘষে দিলো। নূর বাকা হেসে সামনে বসে থাকা কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকালো। সে কটমট করে তাদের দিকেই তাকিয়ে। লারা কে এখনো পাওয়া যায় নি। নূর তাদের আশ্বাস দিয়েছে, সে সময় মতো লারা কে বধু বেসে উপস্থিত করবে। কামিনী চৌধুরী জানেন নূর নিজের কথা রাখবে। তবুও নিশ্চন্ত হতে পারছেন না। আশমিনের মতিগতি তার ঠিক লাগছে না। ভালোয় ভালোয় বিয়ে টা মিটে গেলেই হলো। আশমিন নিজের রুমে দাঁড়িয়ে। বর বেশে তাকে কোন দেশের রাজা লাগছে। কিছু একটা ভেবে শয়তানি হেসে বিরবির করলো, -তোমার জীবনে কালবৈশাখী ঝড় তুলে দিবো তেহজিব, ঠিক যেমন আজ আমার হৃদয়ে ঝড় উঠেছে। ঝড়ের তান্ডবে যেমন শুকনো ডাল ভেঙে পড়ে ঠিক তোমাকেও সেভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো। তবে তোমার মতো আমি একা ছাড়বো না তোমাকে। খুব যত্নে কড়িয়ে নিবো বাহুডোরে। আজ যেমন তুমি আমাকে শূণ্যতার মহাকাশে ছুঁড়ে ফেলেছো। ঠিক আমিও তোমাকে আমার হৃদয়ের আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলবো। দেখা হবে শীঘ্রই,,, আশমিনের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। বর বেশে বসে আছে সে। পাশেই তার বাবা মলিন মুখে বসে। প্রেস মিডিয়া চারিদিকে গিজগিজ করছে। সামিয়ানার ওপাশে লারা বধু বেশে উপস্থিত। নূর সামনেই দাঁড়িয়ে। মুখে তার ক্রুর হাসি। আশমিন হঠাৎ করেই খুব হাসি হাসি মুখ করে তাকালো নূরের দিকে। হচকচিয়ে গেলো নূর। এর মধ্যেই কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছে। লারা কে কবুল বলতে বললে লারা ভীতু চোখে আশমিনের দিকে তাকালো। আশমিন হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কবুল বলতে বললো। লারা কাপা কাপা গলায় কবুল বলে দিলো। আমজাদ চৌধুরী মুখ কাল করে ফেললো। হঠাৎ করেই আশমিন চিৎকার করে উঠল।