ফ্যাড (হাইপ)
ফ্যাড, ট্রেন্ড, হাইপ বা ঝোঁক হলো যেকোনো প্রকারের সামষ্টিক আচরণ যা একটি সংস্কৃতি, প্রজন্ম বা সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে বিকাশ লাভ করে যেখানে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী স্বল্প সময়ের জন্য উৎসাহের সাথে একটি প্রবণতাকে অনুসরণ করে।
ফ্যাড হল এমন কিছু আচরণ যা স্বল্পস্থায়ী জনপ্রিয়তা অর্জন করে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মিলিয়ে যায়। [১] ফ্যাড সাধারণত হঠাৎ, দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এবং স্বল্পস্থায়ী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। [২] ফ্যাডের মধ্যে রয়েছে খাদ্যাভ্যাস , পোশাক, চুলের স্টাইল, খেলনা এবং আরও অনেক কিছু। ইতিহাস জুড়ে কিছু জনপ্রিয় ফ্যাড হল খেলনা যেমন ইয়ো-ইয়ো, হুলা হুপ, এবং ফ্যাড নাচ যেমন ম্যাকারেনা, ফ্লস এবং টুইস্ট । [৩]
অভ্যাস বা রীতির মতো হলেও স্বল্পস্থায়ী, ফ্যাড সাধারণত একটি কার্যকলাপ বা আচরণকে একটি সমমনা গোষ্ঠীর মধ্যে জনপ্রিয় বা উত্তেজনাপূর্ণ হিসেবে দেখা হলে, বা সামাজিক নেটওয়ার্ক দ্বারা কুল হিসাবে প্রচারিত হলে সৃষ্টি হয়৷ [৪] কোনো ফ্যাড গ্রহণকারী লোকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলে বা ভাইরাল হওয়ার পর্যায়ে বাড়তে শুরু করলে এটাকে "ক্যাচ অন" বলা হয়। অভিনবত্বের উপলব্ধি চলে গেলে ফ্যাডগুলি দ্রুত মিলিয়ে যায়। [৪]
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
[সম্পাদনা]ফ্যাডের সাথে সম্পর্কিত আচরণের ধরন যেকোনো কিছু হতে পারে, যেমন অস্বাভাবিক ভাষার ব্যবহার, স্বতন্ত্র পোশাক, ফ্যাড খাদ্যাভ্যাস বা পিরামিড স্কিমের মতো প্রতারণা। সাধারণ নতুনত্ব ছাড়াও, গণ-বিপণন, আবেগজনিত চাপ, দলগত চাপ বা অন্য সকলের মতো হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে ফ্যাড চালু হয়।[৫] জনপ্রিয় সেলিব্রিটিরাও ফ্যাড দ্বারা চালিত হতে পারে, যেমন অপরাহ'স বুক ক্লাব এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা সৃষ্টিকারী প্রভাব।
অনেকে যদিও ট্রেন্ড শব্দটিকে ফ্যাড এর সমতুল্য বলে মনে করেন, ফ্যাড সাধারণত দ্রুত এবং স্বল্পস্থায়ী আচরণ হিসাবে বিবেচিত হয়, যেখানে ট্রেন্ড দীর্ঘমেয়াদী বা এমনকি স্থায়ী পরিবর্তনে রূপান্তরিত হতে পারে।[৬]
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]অর্থনীতিতে, এই শব্দটি একইভাবে ব্যবহৃত হয়। ফ্যাডের অন্তর্নিহিত মূল্য রয়েছে , যা সামাজিক বা মনস্তাত্ত্বিক শক্তির দ্বারা চালিত হয় এবং যেগুলো রাজনৈতিক দর্শন বা ভোক্তাবাদের ফ্যাশন সৃষ্টি করে।[৭]
উৎপত্তি
[সম্পাদনা]অনেক সমসাময়িক ফ্যাড সামাজিক সংগঠনের একই ধরণের প্যাটার্ন অনুসরণ করে।[৮] বিভিন্ন মডেল রয়েছে যা ফ্যাডের বিস্তার এবং সেগুলোর প্রচার কিভাবে হয় তা বিশ্লেষণ করে।
ফ্যাডের বিস্তারকে বোঝার একটি উপায় হল টপ-ডাউন মডেল, যা বলে যে ফ্যাশন প্রথমে এলিটদের জন্য তৈরি হয়, এবং এলিটদের থেকে এটি নিম্নশ্রেণীতে ছড়িয়ে পড়ে।[৮] প্রাথমিক গ্রহণকারীরা অবশ্যই উচ্চ মর্যাদার নাও হতে পারে, তবে তাদের কাছে যথেষ্ট সম্পদ থাকে যা তাদের নতুন উদ্ভাবনগুলো পরীক্ষা করার সক্ষমতা দান করে।[৮] টপ-ডাউন মডেল অনুযায়ী দেখতে গেলে, সমাজবিজ্ঞানীরা এখানে নির্বাচনের ভূমিকাটি হাইলাইট করতে চান। এলিটরা নির্দিষ্ট কোনো ফ্যাড প্রবর্তন করতে পারে, তবে অন্য মানুষকে অবশ্যই সেই ফ্যাডগুলো গ্রহণ করতে হবে।[৮]
অন্যরা বলতে পারে যে সব ফ্যাড তাদের গ্রহণকারীদের সাথে শুরু হয় না।[৮] সামাজিক জীবন ইতোমধ্যে মানুষকে এমন ধারণা দেয় যা নতুন এবং উদ্ভাবনী ফ্যাড তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।[৮] কোম্পানিগুলো দেখতে পারে যে মানুষ ইতোমধ্যে কি নিয়ে আগ্রহী এবং সেই তথ্য থেকে কিছু তৈরি করতে পারে। ফ্যাডের ধারণাগুলো সবসময়ই যে মৌলিক তা নয়; সেগুলো এমন কিছু থেকে উদ্ভূত হতে পারে যা ইতোমধ্যে জনপ্রিয়। বিনোদন এবং স্টাইলের ফ্যাডিস্টরা এমন কোনো মূল প্যাটার্ন বা ধারণার বৈচিত্র পরীক্ষা করতে পারে যা ইতোমধ্যে বিদ্যমান।[৯]
ফ্যাডের বিস্তারকে বোঝার আরেকটি উপায় হলো প্রতীকী মিথস্ক্রিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি। মানুষ তাদের চারপাশের মানুষের কাছ থেকে তাদের আচরণ শেখে।[২] যখন যৌথ আচরণের কথা আসে, তখন এই শেয়ার করা নিয়ম, অর্থ এবং আবেগগুলোর উদ্ভব মূলত পরিস্থিতির নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল হয়, শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনের উপর নয়।[২] প্রতীকী-মিথস্ক্রিয়া তত্ত্বের সাথে এর সংযোগ রয়েছে, যা মানুষের কাজগুলোকে ব্যাখ্যা করে এই হিসেবে যে তারা শেয়ারকৃত ভাবার্থ এবং অনুমানের দ্বারা পরিচালিত হয়, এই ব্যাখ্যা দেয় যে ফ্যাড ছড়িয়ে পড়ে কারণ মানুষ বস্তুগুলোর সাথে অর্থ এবং আবেগ জুড়ে দেয়, এবং এই কারণে না যে সেই বস্তুটি ব্যবহারিক সুবিধা দেয়, উদাহরণস্বরূপ-[১০] মানুষ হয়তো কোনো ফ্যাড গ্রহণ করতে পারে কারণ তারা অন্য লোকদের সাথে একই অর্থ এবং ধারণা শেয়ার করে। মানুষ অন্যান্য ফ্যাড গ্রহণকারীদের সাথে যোগ দিতে পারে কারণ তারা একটি গোষ্ঠীর অংশ হতে উপভোগ করে এবং তার প্রতীকী অর্থ পছন্দ করে।[১] কিছু মানুষ হয়তো যোগ দেয় কারণ তারা সেই গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ একজন হওয়ার অনুভূতি পেতে চায়।[১] যখন অনেক মানুষ একই ফ্যাড গ্রহণ করে, তারা অনুভব করে যে তারা সঠিক পছন্দ করেছে কারণ অন্যান্য লোকেরাও সেই একই পছন্দ করেছে।[১]
সমাপ্তি
[সম্পাদনা]ফ্যাড মূলত শেষ হয় কারণ সব নতুনত্ব ফুরিয়ে যায়।[৯] মানুষ যখন আর ফ্যাডকে নতুন এবং অনন্য হিসেবে দেখে না, তখন ফ্যাড ম্লান হতে শুরু করে। যত বেশি মানুষ ফ্যাড অনুসরণ করে, কিছু মানুষ এটিকে "অতিরিক্ত হাইপ" মনে করতে শুরু করে, এবং এটি আর আগের মতো আকর্ষণ ধরে রাখতে পারে না।[১] অনেক সময়, যারা প্রথমে ফ্যাড গ্রহণ করে তারাই প্রথমে তা পরিত্যাগ করে।[১] তারা বুঝতে শুরু করে যে ফ্যাডের প্রতি তাদের আকর্ষণ তাদের কিছু নিয়মিত কার্যকলাপ উপেক্ষা করতে বাধ্য করছে, এবং তারা তাদের আচরণের নেতিবাচক দিকগুলো বুঝতে পারে।[৯] একবার ফ্যাডিস্টরা ফ্যাডের নতুন বৈচিত্র্য তৈরি করা বন্ধ করলে, মানুষ বুঝতে শুরু করে যে তারা অন্য কার্যকলাপগুলো উপেক্ষা করছে এবং ফ্যাডের বিপদগুলো উপলব্ধি করে। তবে, সবাই পুরোপুরি ফ্যাড ছেড়ে দেয় না, এবং কিছু অংশ থেকে যেতে পারে।[১]
একটি গবেষণায় দেখা হয়েছে কেন কিছু ফ্যাড অন্যগুলোর তুলনায় দ্রুত মারা যায়। জোনাহ বার্জার, যিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুল অফ বিজনেসের একজন মার্কেটিং অধ্যাপক, এবং তার সহকর্মী গায়েল লে মেন্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের শিশুর নাম নিয়ে গবেষণা করেন ফ্যাডের সমাপ্তি অনুসন্ধানের জন্য।[১১] তাদের ফলাফল অনুসারে, যত দ্রুত নামগুলো জনপ্রিয়তা পায়, তত দ্রুতই তারা জনপ্রিয়তা হারায়।[১১] তারা আরও দেখতে পান যে সবচেয়ে কম সফল নামগুলোই ছিল সেই নামগুলো যেগুলো সবচেয়ে দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছিল।[১১] ফ্যাড, শিশুর নামের মতোই, প্রায়শই তেমনই দ্রুত তাদের আকর্ষণ হারায় যেভাবে তারা তা অর্জন করেছিল।
সামষ্টিক উন্মাদনা
[সম্পাদনা]ফ্যাডকে "সামষ্টিক উন্মাদনা"র ছাতার তলায়ও রাখা যেতে পারে। সামষ্টিক উন্মাদনার তিনটি মূল বৈশিষ্ট্য সাধারণভাবে লক্ষ্য করা যায়।[৯] প্রথম এবং সবচেয়ে সুস্পষ্ট লক্ষণ হল একটি নির্দিষ্ট বিশ্বাস বা আচরণের ঘনত্ব এবং তীব্রতার বৃদ্ধি।[৯]ফ্যাডের জনপ্রিয়তা খুব দ্রুত বাড়ে, যেখানে একটি প্রবণতা বা ট্রেন্ড ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল, এই আচরণকে উন্মাদনার অংশ নয় এমন লোকদের কাছে হাস্যকর, অযৌক্তিক বা নেতিবাচক হিসেবে দেখা হয়।[৯] কিছু মানুষ হয়তো মনে করতে পারে যারা নির্দিষ্ট ফ্যাড অনুসরণ করে তারা অযৌক্তিক এবং অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তাদের কাছে ফ্যাডটি হাস্যকর, এবং এটি নিয়ে মানুষের উন্মাদনা ঠিক ততটাই হাস্যকর। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি শীর্ষে পৌঁছানোর পর, হঠাৎ করেই এর জনপ্রিয়তা কমে যায় এবং এরপরে একটি বিপরীত প্রবণতা দেখা যায়।[৯] বিপরীত প্রবণতা বলতে বোঝায় যে, একবার ফ্যাডটি শেষ হয়ে গেলে, তখনও যদি কেউ সেই ফ্যাডে অনুসরণ করে তাদের উপহাসের পাত্র হতে হয়।[৯] ফ্যাডের জনপ্রিয়তা প্রায়শই দ্রুত হারে হ্রাস পেতে থাকে যখন এর নতুনত্ব ম্লান হয়ে যায়। কিছু মানুষ হয়তো ফ্যাডের সমালোচনা করতে শুরু করতে পারে এই বলে যে এটি আর জনপ্রিয় নয়, তাই এটি সম্ভবত আদৌ "প্রত্যাশা অনুযায়ী মূল্যবান ছিল না"।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]টীকা
[সম্পাদনা]- Arena, Barbara (২০০১)। The Complete Idiot's Guide to Making Money with Your Hobby। Alpha। আইএসবিএন 978-0-02-863825-6।
- Aguirre, B.E. Jorge L.; Mendoza, Jorge L.; Quarantelli, E.L. (১৯৮৮)। "The collective behavior of fads: The characteristics, effects, and career of streaking"। American Sociological Review। 53 (4): 569–584। জেস্টোর 2095850। ডিওআই:10.2307/2095850।
- Best, Joel (2006). Flavor of the Month: Why Smart People Fall for Fads. University of California Press. আইএসবিএন ৯৭৮০৫২০২৪৬২৬৩.
- Burke, Sarah. "5 Marketing Strategies, 1 Question: Fad or Trend?". Spokal.
- Camerer, Colin (১৯৮৯)। "Bubbles and Fads in Asset Prices"। Journal of Economic Surveys। 3 (1): 3–41। ডিওআই:10.1111/j.1467-6419.1989.tb00056.x।
- Conley, Dalton (2015). You may ask yourself: An introduction to thinking like a sociologist. New York: W.W. Norton & Co. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩৯৩-৯৩৭৭৩-২.
- Domanski, Andrzej (২০০৪)। "Collective fascinations (fads) and the idea of ephemeral culture"। Kultura I Spoleczenstwo (Culture and Society)। 48 (4)। ২০১১-০৭-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। (review/summary)
- Griffith, Benjamin (2013). "College Fads". St. James Encyclopedia of Popular Culture – via Gale Virtual Reference Library.
- Heussner, Ki Mae. "7 Fads You Won't Forget". ABC News.
- Issitt, Micah L. (২০০৯)। Hippies: A Guide to an American Subculture। Greenwood। আইএসবিএন 978-0-313-36572-0।
- Killian, Lewis M.; Smelser, Neil J.; Turner, Ralph H. "Collective behavior". Encyclopædia Britannica.
- Kornblum, William (২০০৭)। Sociology in a Changing World (8th সংস্করণ)। Wadsworth Publishing। আইএসবিএন 978-0-495-09635-1।
- Sparks, Jared; Everett, Edward; Lowell, James Russell; Lodge, Henry Cabot (১৮৯৯)। The North American review। 168। New York: North American Review Publishing Co.।
- Suzuki, Tadashi; Best, Joel (২০০৩)। "The Emergence of Trendsetters for Fashions and Fads"। Sociological Quarterly। 44 (1): 61–79। এসটুসিআইডি 145052921। ডিওআই:10.1111/j.1533-8525.2003.tb02391.x।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ Best, Joel (২০০৬)। Flavor of the Month: Why Smart People Fall for Fads। University of California Press। আইএসবিএন 9780520246263।
- ↑ ক খ গ Aguirre, B.E. Jorge L.; Mendoza, Jorge L. (১৯৮৮)। "The collective behavior of fads: The characteristics, effects, and career of streaking": 569–584। জেস্টোর 2095850। ডিওআই:10.2307/2095850।
- ↑ Griffith, Benjamin (২০১৩)। "College Fads"।
- ↑ ক খ Kornblum (2007), p. 213.
- ↑ Domanski (2004), pp. 147–159.
- ↑ Arena (2001), p. 341.
- ↑ Camerer (1989).
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Suzuki, Tadashi; Best, Joel (২০০৩)। "The Emergence of Trendsetters for Fashions and Fads"। Sociological Quarterly। 44 (1): 61–79। এসটুসিআইডি 145052921। ডিওআই:10.1111/j.1533-8525.2003.tb02391.x।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;:3
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Conley, Dalton (২০১৫)। You may ask yourself: An introduction to thinking like a sociologist। New York: W.W. Norton & Co.। আইএসবিএন 978-0-393-93773-2।
- ↑ ক খ গ Heussner, Ki Mae। "7 Fads You Won't Forget"। ABC News।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- উইকিমিডিয়া কমন্সে ফ্যাড সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।