হেলমান্দ সভ্যতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

হেলমান্দ সভ্যতা বর্তমান আফগানিস্তানের একটি সুপ্রাচীন সভ্যতা। আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশের অন্তর্গত হেলমান্দ নদীকে কেন্দ্র করে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

জন্ম[সম্পাদনা]

হেলমান্দ নদী আফগানিস্তানে প্রবাহিত নদীগুলোর মধ্যেই অক্সাসের পরেই সর্ববৃহৎ বলে চিহ্নিত। হিন্দুকুশ পর্বতামালা থেকে উৎপন্ন হয়ে পর্বতমালার মধ্যবর্তী ‌উপত্যকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদীটি একসময় পার্বত্যভূমি ত্যাগ করেছে। পার্বত্যভূমি ছেড়ে নিম্নভূমিতে নেমে আসার পর এটি পূর্বদিক থেকে বয়ে আসা আর্ঘান্দাব নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। দুই নদীর এই সম্মিলিত প্রবাহ গার্মাসার মরুভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে হামুন-ই -হেলমান্দ (বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের আফগান সীমান্তে অবস্থিত) নামক জলাভূমিতে তার পথচলার পরিসমাপ্তি টেনেছে। হেলমান্দ নদী বিধৌত হেলমান্দ প্রদেশ আফগানিস্তানের একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত। আর এই নদীর উপত্যকা সে হিসেবে হিন্দুকুশ থেকে পামির মালভূমি হয়ে হেলমান্দের মধ্য দিয়ে ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত। এই উপত্যকা অনুর্বর হলেও যেখানে ছোট ছোট খাল বা জলাধারের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে চাষের উপযোগী বিশেষ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ সনের আগেই এখানে প্রথম কৃষিকাজ শুরু হয়। এই উপত্যকায় গড়ে উঠা প্রাচীন জনবসতিগুলোর একটি বিবরণ এখানে দেয়া যেতে পারে:

  • হেলমান্দের পার্শবর্তী কান্দাহার জেলায় অবস্থিত মান্ডিগাক, সঈদ কোয়ালা এবং দেহ মোরাসি-তে খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ সহস্রাব্দে অর্থাৎ প্রাচীন তাম্র প্রস্তর যুগে গ্রামীণ জনবসতি ছিল। বর্তমান পাকিস্তানের কোয়েতার নিকটে দাম্ব সাদাত নরামক স্থানেইএকই ধরনের কৃষিকাজ চলছিল। সে হিসেবে এখানে একধরনের সাংস্কৃতিক সংহতি বিরাজমান ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ - ২৬০০ সন পর্যন্ত। এই সবগুলো স্থানে একই ধরনের মৃৎশিল্পের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরুপ দাম্ব সাদাতের সিরামিক এবং কোয়েত্তা পণ্যসামগ্রীর নাম করা যায়।
  • তুর্কমেনিস্তানের নামাজগা সংস্কৃতিতে খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০-২৭০০ সনে এ ধরনের মৃৎশিল্পের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
  • সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শাহর-ই-সোকতা, কারণ এটিই হেলমান্দ সভ্যতার সবচেয়ে প্রভাবশালী নগরী ছিল। ইরানের হামুন-ই-হেলমান্দে অবস্থিত এই নগরীর ইতিহাসকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়:
  1. আদিম যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০-২৭০০)
  2. আদি-নগর যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০-২৫০০)
  3. আদি-রাষ্ট্র যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০-২২০০)
  • প্রথম দুই যুগের সংস্কৃতির সাথে পূর্বের দুই অঞ্চলের সংস্কৃতির প্রচুর মিল পাওয়া যায় যদিও তৃতীয় যুগে এই মিল আর অবশিষ্ট থাকেনি। অন্যদিকে এই শহর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মান্ডিগাকের চতুর্থ ও পঞ্চম পর্বের সাথে এর প্রায় হুবহু মিল রয়েছে। উভয় শহরের বিস্তারই ছিল উল্লেখযোগ্য। এ থেকে বোঝা যায় প্রায় চার পাচ'শ কিলোমিটারের এই অঞ্চলে একটি সাংস্কৃতিক সংহতি ছিল যা থেকে জন্ম নেয় হেলমান্দ সভ্যতা। অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ সনের দিকে হেলমান্দ সংস্কৃতি একটি সভ্যতার স্তরে উন্নীত হয়েছিল। কারণ এই সময়েই বিভিন্ন অঞ্চে সংস্কৃতির সংহতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • ভারতবর্ষের মানুষের ইতিহাস ২ - সিন্ধু সভ্যতা [ও অন্যান্য তাম্রযুগের সংস্কৃতিসমূহ এবং ভাষার রূপ ইরাবর্তনের ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব ১৫৫ (ক্যা.) পর্যন্ত] - ইরফান হাবিব - ভাষান্তর, কাবেরী বসু; ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড