হাতিব ইবনে আবি বালতায়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

হাতিব ইবন আবি বালতায়া (মৃত্যু ৩০ হিজরি) মুহাম্মদের একজন সাহাবা ছিলেন। তিনি কুরাইশদের মধ্যে অন্যতম খ্যাতিমান ঘোড় সাওয়ার ও কবি ছিলেন ।[১] তিনি তিনটি হাদিস বর্ণনা করেছেন ।

নাম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

হাতিব ইবনে আবি বালতায়া এর মূলনাম নাম হাতিব এবং কুনিয়াত/উপনাম আবু মুহাম্মাদ বা আবু আবদিল্লাহ ।তার পিতার নাম আবু বালতায়া ইবনে আমর

তাঁর বংশ পরিচয় ও মক্কায় উপস্থিতির ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণের মতভেদ আছে। তবে উল্লেখযোগ্য মতে তার পিতৃ-পুরুষের আদি বাসস্থান ইয়েমেন। বনী আসাদ, অতঃপর যুবাইর ইবনুল আওয়ামের এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তারা মক্কায় বসবাস করতো। কেউ বলেছেন, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনে হুমাইদের দাস ছিলেন। চুক্তির ভিত্তিতে অর্থ পরিশোধ করে দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করেন (উসুদুল গাবা-১/৩৬১)।

ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত[সম্পাদনা]

হিজরতের পূর্বে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদিনা ইসলামের কেন্দ্ররূপে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর তাঁর দাস সাদকে সংগে করে তিনি মদীনায় স্থানান্তর হন। এবং সেখানে হযরত মুনজির ইবনে মুহাম্মাদ আল আনসারীর অতিথি হন এবং খালিদ ইবনে রাখবালার সাথে ভাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

যুদ্ধে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

মুসা ইবনে উকবাইবনে ইসহাকের মতে, তিনি মুহাম্মদ এর সাথে তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়ও তিনি উপস্থিত ছিলেন (উসুদুল গাবা-১/৩৬১)। বিভিন্ন বর্ণনা মতে তিনি উহুদ, খন্দক সহ রাসূলুল্লাহর সংগে সংঘটিত সকল যুদ্ধে যোগদান করেন।

মিশরে প্রেরন[সম্পাদনা]

উহুদ যুদ্ধের পর হিজরী ৬ষ্ঠ সনে ইসলামের প্রচারক হিসেবে মুহাম্মদ তাকে মিসরের অধিপতি মাকুকাস এর দরবারে পাঠান। তিনি মাকুকাসের নিকট মুহাম্মদের পত্রটি নিয়ে উপস্থিত হলে মাকুকাস বিভিন্ন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে ইসলাম গ্রহণ করেন ও মুহাম্মদ এর জন্য তিনটি দাসী ও অনন্য উপকৌঠন পাঠান ।[২][৩] তিনজন দাসীর মধ্যে একজন ছিলো মারিয়া আল কিবতিয়া যাকে মুহাম্মদ পরবর্তীতে বিবাহ করেন ।[৪][৫]

মক্কা বিজয়ের সময় স্বজনপ্রীতি[সম্পাদনা]

হিজরী ৮ম সনে মক্কা বিজয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়,মুহাম্মদ খবরটি প্রতিপক্ষ মক্কাবাসী যেন না জানতে পারে এ ব্যপারে নিষেধ করে দেন । কিন্তু হাতিব ইবনে আবি বালতায়া মক্কায় মক্কায় এই খবর পৌঁছানোর জন্য গোপনে মুযাইনা গোত্রের এক মহিলাকে মজুরি দিয়ে ঠিক করেন। পরে মুহাম্মদ ও তার সাহাবারা বিষয়টি জানতে পারলে ঐ মহিলাকে আটক করেন । এই ব্যপারে হাতিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন,ইয়া রাসুল,আমি এই কাজ ইসলামের বিরোধিতা করে করিনি,আমি কুরাইশদের প্রতি বন্ধুত্বের সম্পর্কের জন্য করেছি,আমি কোন সময়েই চাই না ইসলামের ক্ষতি হোক।[৬][৭] হাতিবের বক্তব্য শুনার পর মুহাম্মদ তাকে ক্ষমা করে দেন ।[৮]

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই পবিত্র কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয়,

খলিফাদের আমলে[সম্পাদনা]

প্রথম খলীফা আবু বকর তাঁকে দ্বিতীয়বার মাকুকাসের দরবারে পাঠান এবং মাকুকাসের সাথে একটি সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করেন। হযরত আমর ইবনুল আসের মিসর জয়ের পূর্ব পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে এ চুক্তি বহাল থাকে।[৯]

চরিত্র[সম্পাদনা]

প্রতিশ্রুতি পালন, উপকারের প্রতিদান দেওয়া এবং ষ্পষ্ট ভাষণ তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আত্মীয় বন্ধুদের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা ছিলো ।[১০]

তাঁর স্বভাব ছিল কিছুটা রুক্ষ,তিনি দাসদের সাথে কঠোর আচরণ করতেন। এ কারণে মুহাম্মদ ও সংশোধন করে দিতেন।[১১] উমরের খিলাফতকালে তার দাসেরা বহুবার হাতিবের বিরুদ্ধে খলীফার নিকট কঠোরতার অভিযোগ এনেছে।[১২]

ব্যবসা ছিল তার জীবিকার প্রধান উৎস। খাবারের একটি দোকান থেকে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। মৃত্যুকালে চার হাজার দীনার এবং অনেকগুলি বাড়ী রেখে যান। কেউ বলেছেন, হাতিব থেকে মুহাম্মদ থেকে তিনটি হাদীস, আবার কেউ বলেছেন, দুটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

হাতিব ইবনে আবি বালতায়া ৩০ হিজরিতে ৬৫ বছর বয়সে তিনি মদীনায় ইনতিকাল করেন। উসমান জানাযার নামাযের ইমামতি করেন এবং বিপুল সংখ্যক লোক তার জানাজায় উপস্থিত হয় ।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. (আল ইসাবা-১/৩০০) 
  2. (উসুদুল গাবা-১/৩৬১) 
  3. (যাদুল মাআদ-২৫৭) 
  4. হায়াতুস সাহাবা-১/১৪০-৪১ 
  5. (উসুদুল গাবা-১/৩৬২) 
  6. (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল মাগাযী) 
  7. (আল ইসাবা-১/৩০০, হায়াতুস সাহাবা-২/৪২৫) 
  8. (সহীহুল বুখারী, ফদলু মান শাহেদা বদরান) 
  9. (আল ইসতিয়াব) 
  10. (আল ইসাবা-১/৩০০, হায়াতুস সাহাবা-২/৪২৫) 
  11. (ইসতিয়াব) 
  12. (বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথা – দ্বিতীয় খন্ড)