সৈয়দ আলতাফ হোসেন (ক্রিকেটার)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সৈয়দ আলতাফ হোসেন (১৯৩৮ – ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)[১] একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার ও ক্রিকেট কোচ ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে খেলেছিলেন ও পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার লাভ করেন।[২]

সৈয়দ আলতাফ হোসেন ১৯৩৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার বাবা ব্রিটিশ ইন্ডিয়া শিপিং কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তার দুই বড় ভাইয়ের মৃত্যু হলে তিনি মায়ের সাথে ঢাকায় চলে আসেন।[২]

তিনি ডানহাতি ফাস্ট বোলার ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট জীবন শুরু করেন। ১৯৬১-৬২ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে, পূর্ব পাকিস্তান দলের হয়ে করাচি সবুজ দলের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে। অভিষেক খেলায় তিনি কোন উইকেট লাভ করতে ব্যর্থ হন। পরের ম্যাচেও তিনি উইকেট শুন্য থাকেন। মার্চ ১৯৬৫ সালে করাচি জাতীয় স্টেডিয়ামে, তিনি ঢাকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে খেলেন। এই খেলায় তিনি ২/২০ ও ৩/৯ উইকেট নেন ও ঢাকা দলের বিজয়ে বড় অবদান রাখেন। ১৯৬৫ সালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের বিপক্ষে পাকিস্তানের ঘোষিত ১৪ জনের দলে তিনি সুযোগ পান।[২] তবে তিনি মূল একাদশের হয়ে টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, পিডব্লুডি, পূর্ব পাকিস্তান জিমখানা ও শান্তিনগরের হয়ে খেলেছেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট দল পূর্ব পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। সামগ্রিকভাবে, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন দলের হয়ে ছয়টি প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ খেলেন। তিনি কায়েদে আজম ট্রফি ও আইয়ুব ট্রফিতেও খেলেছেন।

খেলা থেকে অবসরের পর তিনি আম্পায়ার হিসেবে নাম লেখান ও ১৯৭০ সালে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্বও পালন করেন। তারপর কোচিং করানো শুরু করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি কোচ হিসেবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে যোগ দেন। ২৫ বছর এখানে চাকরি করেন। সেখান থেকেই তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের অভিষেক হয়, তিনি সেই দলের কোচ ছিলেন।[২] ১৯৯০ সালে তিনি ভারতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। ১৯৯৭ সালে নারী ক্রিকেট দল গড়ে তোলার জন্য বিসিসি তাকে দায়িত্ব প্রদান করে।[৩] তিনি জাতীয় দল ও জাতীয় মহিলা দল ছাড়াও ‘এ’ দল ও বয়সভিত্তিক দলগুলোর কোচও ছিলেন। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে সূর্যতরুণ, বাংলাদেশ বিমান, সিটি ক্লাব সহ বিভিন্ন ক্লাবের কোচ ছিলেন। ২০০৬ সালে কোচিং থেকে অবসর নেন।[৪]

ব্যক্তিজীবনে তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ের পিতা ছিলেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় দিনগত রাতে মৃত্যুবরণ করেন।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "না ফেরার দেশে আলতাফ হোসেন"সমকাল। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  2. "না ফেরার দেশে সৈয়দ আলতাফ হোসেন"প্রথম আলো। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  3. "পরপারে সৈয়দ আলতাফ হোসেন"banglanews24.com। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  4. "চলে গেলেন বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট কোচ"সময় সংবাদ। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  5. "চলে গেলেন ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা"দৈনিক ভোরের কাগজ। ৫ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]