সাংখ্যিক বিশ্লেষণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ব্যাবিলনীয় মটিতে সাংখ্যিক বিশ্লেষণের উদাহরণ...[১]

সাংখ্যিক বিশ্লেষণ হল শ্রেণীবদ্ধ প্রক্রিয়ার বিষয় যা গাণিতিক বিশ্লেশনের সমস্যা সমাধানের জন্য সাঙ্খিক আসন্ন মান নির্ণয় এর জন্য ব্যাবহ্রিত হয়।

প্রাচীনতম গাণিতিক প্রতিলিপির মধ্যে একটি হল ইয়েল ব্যবিলনিও সঙ্কলন, যেখানে ২ এর বর্গমূল এর ষষঠিক সাংখ্যিক আসন্ন মান দেওয়া আছে, যা একক বর্গখেত্রের কর্ণের দৈরঘ্য। ত্রিভুজ এর বাহুর দৈরঘ্য পরিমাপ করার জন্য ইহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতির্বিদ্যা, ছুতোরের কাজে এবং নির্মাণবিদ্যাতে।

ব্যবহারিক গাণিতিক গননার চিরন্তন ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে সাংখ্যিক বিশ্লেষণ। ২ এর বর্গমূল এর ব্যবিলনিও আসন্ন মান এর মতোই আধুনিক সাংখ্যিক বিশ্লেষণ সম্পুরন রুপে সঠিক উত্তর দিতে পারে না কারণ সাধারনত সম্পুরন সঠিক উত্তর বের করা প্রায় অসম্ভব। সাংখ্যিক বিশ্লেষণ ব্যবহার করে আমরা আসন্ন উত্তর পেতে পারি যেখানে ত্রুটির পরিমান নগন্য।
সাংখ্যিক বিশ্লেষণ এর প্রয়োগ দেখা যায় যন্ত্রবিদ্যা এবং ব্যবহারিক বিজ্ঞানে কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে জীবন বিজ্ঞানে এবং এমনকি যেকোনো বৈগ্ণানিক গণনার জন্য ইহা ব্যাবহ্রিত হয়। মহাকাশীও গতিবিদ্যার জন্য সাধারণ অভেদ সমীকরণ, তথ্য বিশ্লেষণের জন্য রৈখিক বীজগণিত এবং জীববিদ্যার জন্য সম্ভাবিত অভেদ সমীকরণ ও মারকভ সৃঙ্খল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কারের পূর্বে সাংখ্যিক পদ্ধতি গুলি প্রায়ই হাতে করা চিত্রিত ছক এর ওপর নির্ভরশীল ছিল। যেহেতু বিংশ শতকের মাঝামাঝি তে কম্পিউটার সয়ংক্রিয় ভাবে অপেক্ষক গণনা করতে শেখে। সেই সমস্ত প্রক্রিয়া গুলি সফটওয়্যার পরিভাষার মাধ্যমে অভেদ সমীকরণ সমাধানের জন্য ব্যাবহ্রিত হয়।

সাধারণ ভূমিকা[সম্পাদনা]

সাংখ্যিক বিশ্লেষণ এর লক্ষ হল কঠিন সমস্যার আসন্ন উত্তর দেওয়ার পদ্ধতির বিশ্লেষণ এবং নকশা করা। বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল

  • আগাম সাংখ্যিক পদ্ধতি যা সাংখ্যিক আবহাওয়ার পুরভাবাস এর জন্য জরুরি।
  • মহাকাশ যানের গতিপথ নির্ণয় এর জন্য একগুচ্ছ অভেদ সমীকরণের সঠিক সমাধান জরুরি।
  • দুর্ঘটনাজনিত সুরক্ষার জন্য কম্পিউটার এর প্রয়োগ এবং তার জন্য আংশিক অভেদ সমীকরণ সমাধান অত্যন্ত জরুরি।
  • বিমা কম্পানি গুলি দুর্ঘটনা বিশ্লেষণের জন্য সাংখ্যিক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

কম্পিউটার আবিষ্কারের বহু শতাব্দি পূর্বেই সাংখ্যিক বিশ্লেষণ এর ব্যবহার ছিল। রৈখিক প্রক্ষেপীকরণ ২০০০ বছর পূর্বেই ব্যবহার করা হত। অতীতের বিখ্যাত গাণিতিকরা সাংখ্যিক বিশ্লেষণের ওপর অনেক কাজ করে গেছেন। উদাহারনসরূপ নিউটনের পদ্ধতি, লাগরানজ্ঞের প্রক্ষেপীকরণ বহুপদী, গাউসীয় বিভাজন, ইউলার পদ্ধতির কথা বলা যেতে পারে।

হাতে গণনার জন্য প্রচুর সুত্র ও তথ্য সারণি সংবলিত বই প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সমস্ত তথ্য সারণি থেকে কিছু কিছু অপেক্ষকের ১৬ দশমিক স্থান পর্যন্ত আসন্ন মান নিরনয় করা যেত। এই ক্ষেত্রের কাজগুলি NIST প্রকাশিত Abramowitz এবং Stegun সম্পাদিত ১০০০ পৃষ্ঠারও বেশি একটি বইয়ে লিপিবদ্ধ হয় যেখানে প্রচলিত সূত্র এবং কার্যাবলী এবং অপেক্ষকের মান রয়েছে। যখন একটি কম্পিউটার পাওয়া যায় তখন অপেক্ষকের মান আর দরকার পড়ে না, কিন্তু বৃহৎ সুত্র তালিকা এখনও খুব সুবিধাজনক হতে পারে।
এছাড়াও যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর হাতে গুনতির জন্য একটি হাতিয়ার হিসাবে উন্নত ছিল। এই সমস্ত ক্যালকুলেটর গুলিই ১৯৪০ সালে ইলেকট্রনিক কম্পিউটারে রূপান্তরিত হয় এবং পরে দেখা যায় যে এই কম্পিউটারগুলি প্রশাসনিক কাজের জন্য দরকারী হয়ে পড়ে। কিন্তু কম্পিউটার আবিষ্কার সাংখ্যিক বিশ্লেষণ ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে কারণ এখন বড় এবং আরো জটিল গণনার কাজ করা যেতে পারে।

সরাসরি এবং পুনরাবৃত্ত পদ্ধতি[সম্পাদনা]

সরাসরি পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধানের সসীম সংখ্যক ধাপ থাকে। এই পদ্ধতিতে সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায় যদি তারা অসীম স্পষ্টতা গাণিতিক মধ্যে সঞ্চালিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ গাউসিয় বিভাজন, রৈখিক সমীকরণের সমাধানের জন্য QR উৎপাদকে বিশ্লেষণ পদ্ধতি, এবং রৈখিক প্রোগ্রামিং এর সিমপ্লেক্স পদ্ধতির কথা বলা যেতে পারে। বাস্তবে, সসীম স্পষ্টতা ব্যবহৃত হয় এবং এর ফলে প্রকৃত সমাধান এর একটি আসন্ন মান পাওয়া যায়।
পক্ষান্তরে পুনরাবৃত্ত পদ্ধতিতে ধাপের সসীম সংখ্যা আশা করা হয় না। প্রাথমিক অনুমান থেকে শুরু করে পুনরাবৃত্ত পদ্ধতির ধারাবাহিক অনুমানভিত্তিক যা শুধুমাত্র সীমার মধ্যে সঠিক সমাধান বিন্দুতে মিলিত হয়। একটি অভিসৃতি পরীক্ষা উল্লেখ করা থাকে যাতে একটি পর্যাপ্ত সঠিক সমাধান নির্ণয়য়ের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এমনকি যে সকল গাণিতিক মডেলে অসীম স্পষ্টতা রয়েছে, এই পদ্ধতি দ্বারা সসীম সংখ্যক ধাপের মধ্যে সমাধানে পৌঁছানো যায় (সাধারণত) এবং অনেক ক্ষেত্রে একেবারে নিখুঁত সঠিক সমাধান পাওয়া সম্ভব না হলেও, প্রায় নিকটবর্তী সমাধান হিসাব করে বের করা সম্ভব হয়। উদাহরণস্বারুপ নিউটনের পদ্ধতি, দ্বিখণ্ডন পদ্ধতি, এবং Jacobi পুনরাবৃত্তি পদ্ধতি। গণনীয় ম্যাট্রিক্স বীজগণিতে সাধারণত বড় সমস্যার সমাধানের জন্য পুনরাবৃত্ত পদ্ধতির প্রয়োজন হয়।

সাংখ্যিক বিশ্লেষণে পুনরাবৃত্ত পদ্ধতি সরাসরি পদ্ধতির চেয়ে বেশি প্রচলিত। কিছু পদ্ধতি নীতিগতভাবে সরাসরি হয় কিন্তু সাধারণত ব্যবহার করা হয় যেন তারা ছিল না, উদাঃ GMRES এবং অনুবন্ধী গ্রেডিয়েন্ট পদ্ধতি। এই সমস্ত পদ্ধতির জন্য সঠিক সমাধান পেতে প্রয়োজনীয় ধাপের সংখ্যা এত বড় যে, একটি আসন্ন মান গৃহীত হয় যেমন একটি পুনরাবৃত্ত পদ্ধতির জন্য হয়ে থাকে।

বিচ্ছিন্নকরণ[সম্পাদনা]

মাঝে মাঝে সন্তত সমস্যাকে একটি বিচ্ছিন্ন সমস্যা (যার সমাধান সন্তত সমস্যার তুলনায় আনুমানিক পরিচিত) দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়, এই প্রক্রিয়াকেই বিচ্ছিন্নকরণ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ডিফারেনশিয়াল সমীকরণের সমাধান একটি অপেক্ষক। এই সমস্ত অপেক্ষকগুলি সসীম তথ্য দ্বারা সুসংগত উদাহরণস্বরূপ ডোমেইন এর সসীম বিন্দুতে অপেক্ষকের মান, যদিও এই ডোমেইন সন্তত হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Photograph, illustration, and description of the root(2) tablet from the Yale Babylonian Collection"। ১৩ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০০৬