শ্রীগোবিন্দকৃষ্ণ মোদক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শ্রী গোবিন্দকৃষ্ণ মোদক মহারাষ্ট্র প্রদেশের পুনার অন্তর্গত নিউ ইংলিশ স্কুলে সংস্কৃত ভাষার শিক্ষক। বিংশ শতাব্দীতে যে কয়েকজন নিষ্ঠার সঙ্গে সংস্কৃত ভাষার চর্চা করে ধ্রুপদি সাহিত্যকে আধুনিক ভাষার সমপর্যায়ে এনেছেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য শ্রীগোবিন্দকৃষ্ণ মোদক। সংস্কৃত ভাষাকে জনপ্রিয় করার জন্য অনেক দেশি-বিদেশি গ্রন্থের সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- 'চোরচত্বারিংশী কথা' (১৯৩৪)। অন্যান্য গ্রন্থ হল 'ধাতু নয় কল্পদ্রুম', 'Exercises in Sanskrit Grammer and Translation', 'সংস্কৃতাচা অভ্যাস', 'মরাঠীচে - অন্তরঙ্গদর্শন' ইত্যাদি।

"বনগতা গুহা" পাঠ্যাংশটি বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সাহিত্য 'সহস্র এক আরব্য রজনি' এই গল্প সংকলনের একটি জনপ্রিয় গল্প "আলিবাবা ও চল্লিশ চোর"-এর সংস্কৃত অনুবাদ। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের আগেও বিদ্যালয় স্তরে অনেক কৃতি সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন, যাঁরা অ-ভারতীয় পটভূমি থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করে সহজ-সরল সংস্কৃতে অনুবাদ করে প্রশংসা অর্জন করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় সংস্কৃত ভাষা অনেক আধুনিক বিষয়কে দক্ষতার সঙ্গে প্রকাশ করতে পারে। সংস্কৃত সম্পূর্ণরূপে অনুবাদশীল ও জীবন্ত ভাষা নিম্নশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। এই কাজটি আরও সহজ করে দিয়েছেন সংস্কৃত পণ্ডিত গোবিন্দকৃষ্ণ মোদক। 'চোরচত্বারিংশী কথা' গ্রন্থের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- শ্রীযুক্ত মোদকের রচনাতে ভাষা বিস্ময়করভাবে চিন্তার সাবলীল ও তরল প্রকাশ মাধ্যম। ভাষা এখানে সহজ-সরল এবং মার্জিত।

ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে এই গ্রন্থটি শুরু হয়েছে ঈশ্বরকে প্রণাম জানিয়ে — "নমো ভগবতে তুভ্যং বাসুদেবায় ধীমতে।" হিতোপদেশ, পঞ্চতন্ত্রের মতো লেখক এখানে প্রসঙ্গক্রমে নীতিশ্লোকগুলির উল্লেখ করেছেন। এখানে তার কতকগুলি উদাহরণ দেওয়া হল :

"পুষ্পং পুষ্পং বিচিন্তীত মূলচ্ছেদং ন কারয়েৎ। মালাকার ইবারামে ন যথাঙ্গারকারকাঃ"।। ৩।।

অর্থ হল - মূল বিনষ্ট না-করে পুষ্প চয়ন করো, মালাকারের মতো, কয়লাকারের মতো নয়। কয়লাকার সম্পূর্ণ বৃক্ষটিকে বিনাশসাধন করে, কিন্তু মালাকার শুধুমাত্র পুষ্প চয়ন করে। সুতরাং, বৃক্ষ আরও অনেক কিছু প্রদানে সক্ষম হয়, ঠিক সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো। ৪ নং শ্লোকে বলা হয়েছে-

"কাকতালীয়বৎপ্রাপ্তং দৃষ্টাপি নিধিধমগ্রতঃ।

ন স্বয়ং দৈবমাদত্তে পুরুষার্থমপেক্ষতে”।। ৪।।

অর্থাৎ, (তাল গাছে কাকের প্রবচনের মতো) ভাগ্য প্রসন্ন হলেও সম্মুখে ধনরত্ন পড়ে থাকলেও, সৌভাগ্য তা কারও হাতে প্রদান করে না, পেতে গেলে প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়।