শের আলি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শের আলি
লর্ড মেয়োকে হত্যার পর তোলা ছবিতে শের আলি
জন্ম
জামরুদ গ্রাম, খাইবারপাস
মৃত্যু১১ মার্চ, ১৮৭৩

শের আলি আফ্রিদি, যাকে শেরে আলীও বলা হয়, তিনি ১৮৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড মেয়োকে হত্যার জন্য পরিচিত। তিনি তখন হত্যার জন্য দণ্ডিত হিসাবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বন্দী ছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

শের আলি ১৮৬০-এর দশকে পাঞ্জাব মাউন্টেড পুলিশে ব্রিটিশ প্রশাসনের জন্য কাজ নিয়োজিত ছিলেন।[১] তিনি খাইবার এজেন্সির তিরাহ উপত্যকা থেকে এসে পেশোয়ারের কমিশনারের জন্য কাজ করেছিলেন।[২] তিনি ব্রিটিশদের সেবায় আম্বালায় অশ্বারোহী রেজিমেন্টে যুক্ত ছিলেন।[২] তিনি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের সময় রোহিলখণ্ডঅবধে প্রেসিডেন্সি সেনাবাহিনীতে (অর্থাৎ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেবা করা) দায়িত্ব পালন করেন।[৩] তিনি পেশোয়ারে মেজর হিউ জেমসের অধীনে অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে এবং রেনেল টেলরের জন্য মাউন্ট অর্ডারলি হিসেবে কাজ করেন। রেনেল টেলর শের আলীকে ঘোড়া, পিস্তল ও সংশয় পত্র দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।[৪] তার উত্তম চরিত্রের কারণে, শের আলি ইউরোপীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন এবং রেনেল টেলরের সন্তানদের দেখাশোনায় নিযুক্ত ছিলেন।[৪] পারিবারিক কলহের মধ্যে তিনি দিনের আলোতে পেশোয়ারে হায়দার[৪] নামে তার এক আত্মীয়কে হত্যা করেন এবং তাকে ১৮৬৭ সালের ২ই এপ্রিল মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যদিও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। আপিলে, বিচারক কর্নেল পোলেক তার সাজা কমিয়ে[৪] যাবজ্জীবন কারাদণ্ড[১] মঞ্জুর করেন এবং তাকে তার শাস্তি পূরণের জন্য কালা পানি বা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নির্বাসিত করা হয়ে।[২] তাকে পোর্ট ব্লেয়ারে নাপিত হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়, কারণ তিনি তার আগমনের পর থেকে ভাল আচরণকারী হিসাবে পরিচিত ছিলেন।[৪]

আন্দামান দ্বীপান্তর[সম্পাদনা]

শের আলি হায়দার আলি নামক এক যুবককে হত্যা করেন।[৪] পেশোয়ার থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন ১৮৬৭ সালে। বিচারে তার মৃত্যুদন্ড হয়। কলকাতা হাইকোর্ট আপিলে তাকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে দণ্ডিত করে। আন্দামানে তখনো সেলুলার জেল তৈরি হয়নি। বন্দীদের বিভিন্ন দ্বীপে কঠোর পাহারায় রাখা হতো। শের আলি পোর্ট ব্লেয়ারের হোপ টাউন অঞ্চলের পানিঘাটায় বন্দি ছিলেন।[৫]

বড়লাট হত্যা[সম্পাদনা]

ভারতের ভাইসর হিসাবে ১৮৬৯ সালে নিযুক্ত রিচার্ড বোর্কে, মেয়োর ৬ষ্ঠ আর্ল ১৮৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পরিদর্শন করেন। দ্বীপপুঞ্জটি তখন ভারতের অপরাধী, অপরাধী ও রাজনৈতিক বন্দী উভয়ের জন্য ব্রিটিশ পেনাল কলোনি হিসেবে ব্যবহৃত হত।[৪] লর্ড মেয়ো দ্বীপপুঞ্জের প্রধান শহর পোর্ট ব্লেয়ারের প্রবিধানের খসড়া তৈরিতে জড়িত ছিলেন।[১] যখন ফেব্রুয়ারি মাসে ভাইসরয় প্রায় তার পরিদর্শন সম্পন্ন করেছিলেন এবং সন্ধ্যা ৭:০০ টায় তার নৌকায় করে ফিরে যাচ্ছিলেন, যেখানে লেডি মেয়োও অপেক্ষা করছিলেন, সেখানে শের আলি আফ্রিদি অন্ধকার থেকে উপস্থিত হয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করেন। [1] শের আলিকে তৎক্ষণাৎ বারোজন নিরাপত্তা কর্মী গ্রেফতার করে। লর্ড মেয়ো শীঘ্রই রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান।[১] হ্যারিয়েট পর্বতের পাদদেশে ঘটা এই ঘটনাটি দ্বীপপুঞ্জের প্রতি জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করে।[৬]

ভারতের ইতিহাসে শের আলিই একমাত্র ব্যক্তি যিনিই ভারতের গভর্নর-জেনারেলকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।[৭]

ফলাফল[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ ক্রাউন কর্তৃক নিযুক্ত ভারতের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা ভাইসরয়ের হত্যাকাণ্ড ব্রিটেন ও ব্রিটিশ ভারত জুড়ে অভিঘাত তরঙ্গ পাঠিয়েছিল।[৪] শের আলি আফ্রিদি তার শাস্তির প্রতিশোধ হিসেবে দুজন শ্বেতাঙ্গ, সুপারিনটেনডেন্ট ও ভাইসরয়কে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কারণ তিনি ধারণা করতেন তাকে প্রদান করা শাস্তি তার অপরাধ অপেক্ষা অধিক।[১] তিনি একটি পূর্ণ দিন অপেক্ষা করেছিলেন এবং শুধুমাত্র সন্ধ্যায় ভাইসরয়কে হত্যা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যে তিনি ঈশ্বরের নির্দেশে হত্যা করেছিলেন এবং এই কাজে তার অংশীদার কেবল ঈশ্বর ছিলেন।[৪] তিনি সহজেই অপরাধী হিসাবে ছবি তোলার ভঙ্গি প্রদান করেন।[১] একই সময় কালে কিছু জিহাদি-অনুপ্রাণিত বন্দীদের আন্দামানে কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল, কিন্তু ব্রিটিশরা ভাইসরয়ের হত্যাকাণ্ড ও এই বন্দীদের উপস্থিতির কোন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।[৪] বিচারে শের আলির মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয় এবং আন্দামানের ভাইপার দ্বীপে ১৮৭৩ সালের ১১ মার্চ ফাঁসিতে ঝুলানো হয়।[৭][৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Murder of Lord Mayo 1872"। andaman.org। ৫ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২১ 
  2. "Sher Ali Afridi"। Khyber.org। ২ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২১ 
  3. Hussain, Hamid। "Tribes and Turbulance"। defencejournal.org। ২০ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২১ 
  4. James, Halen। "The Assassination of Lord Mayo : The "First" Jihad?" (পিডিএফ)। IJAPS,Vol 5, No.2 (July 2009)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২১ 
  5. নারায়ণ সান্যাল (২০০৩)। শের-ই-শহীদ দ্বীপ। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর পা: লি:। পৃষ্ঠা ১৫, ১৭। 
  6. Kapse, Ram (২১ ডিসেম্বর ২০০৫)। "Hundred years of the Andamans Cellular Jail"The Hindu। ১৩ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২১ 
  7. মুক্তির সংগ্রামে ভারত। কলকাতা: পশ্চিমবংগ বাংলা আকাদেমী। ১৯৯৬। পৃষ্ঠা ৩৯। 
  8. "উনি 'বীর', আর বাকিরা?"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭