শাহবাগে ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিবাদে গর্জে উঠুন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শাহবাগে ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিবাদে গর্জে উঠুন
লেখকশাহ আহমদ শফী
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
ধারাবাহিকহেফাজতের ১৩ দফা
বিষয়ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ
ধরনচিঠি
পটভূমিশাহবাগ আন্দোলন ২০১৩
প্রকাশিত১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
প্রকাশকহেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ

শাহবাগে ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিবাদে গর্জে উঠুন হলো ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের কাছে প্রেরিত দারুল উলুম হাটহাজারীর মহাপরিচালক এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ আহমদ শফীর একটি খোলা চিঠি। এই চিঠিতে ২০১৩ সালে গড়ে উঠা শাহবাগ আন্দোলনে নানাধরণের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। এতে কাদিয়ানী সম্পৃক্ততা এবং এর অন্তরালে ইসলাম অবমাননাকারী একটি অনলাইন চক্রকে দায়ী করা হয়। এর পেছনে শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন, জাফর ইকবাল, গোলাম রব্বানী, অজয় রায় প্রমুখের নাস্তিক পৃষ্ঠপোষকতাকেও দায়ী করা হয়। তাদের এই ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে দাবি জানানো হয় এবং এর প্রতিবাদে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।[১] চিঠিটি প্রকাশের পর দেশব্যাপী ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।[২] চিঠি প্রকাশের পর চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৭ এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।[৩] এর মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ জাতীয় দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়, যার ধারাবাহিকতায় ১৩ দফা দাবি উত্থাপন, লংমার্চ এবং ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।[১]

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের দায়ে আবদুর কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের বদলে মৃত্যুদণ্ড রায় প্রদানের জন্য কতক ব্লগার শাহবাগ আন্দোলনের সূচনা করে। এই শাহবাগ আন্দোলনের শুরুর দিকে দাড়ি টুপি পরিহিত কোনো লোক পাশ দিয়ে গেলে তাদের তল্লাশী করা হতো, বোরখা পরা মহিলা দেখলে তাদেরকেও তল্লাশী করা হতো। শাহবাগে মঞ্চস্থ নাটকে দাড়ি এবং টুপি পরিহিত এক অভিনেতার মাথায় জুতো দিয়ে আঘাত করা হয়। ডামি কুকুরের মাথায় টুপি এবং গালে দাড়ি লাগিয়ে সেটাকে নিয়েও নাটক মঞ্চস্থ করেছিলো। তাদের এসব আচরণকে ইসলাম বিরোধীতা আখ্যা দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি দারুল উলুম হাটহাজারীর বার্ষিক সভায় একযোগে প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে শাহ আহমদ শফী বলেন, "জাতির আবেগ-অনুভূতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নাস্তিক ও ইসলামের দুশমনরা তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে ইসলামের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। দেশব্যাপী বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা, ব্যভিচার ছড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল ও সভ্যতা-সংস্কৃতি ধ্বংসে নতুন আরেক ষড়যন্ত্র শুরু করছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার হাজারবার হোক, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে আলেমসমাজ, মাদ্রাসা, দাড়ি-টুপি, পর্দা তথা দ্বীন-ইসলামের বিরুদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্রে এদেশের আলেমসমাজ ও তৌহিদী জনতা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না।’ তিনি সরকারের প্রতি অবিলম্বে ইসলাম, মুসলমান, নামাযী, দাড়ি-টুপিধারীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সকল অপতৎপরতা বন্ধের আহবান জানান।"

মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, "সংবিধান সংশোধন করে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি সংযোজনের পর থেকে নাস্তিকরা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক যেভাবে দুঃসাহস দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক মসজিদে হামলা ও ভাংচুর চালাচ্ছে, আমাদের প্রাণের স্পন্দন হযরত মুহাম্মদ সা.-এর বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে, বয়োবৃদ্ধ দাড়ি-টুপীধারীদের ওপর উঠতি তরুণরা যেভাবে বর্বর আচরণ করছে, তাতে আমরা হতভম্ব ও বিস্মিত না হয়ে পারছি না। নাস্তিক-মুরতাদ ও ক্ষমতাসীন মহলের ইসলাম বিদ্বেষী এ আচরণের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।"

মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, "কলেজ পড়ুয়া এক তরুণ পুলিশের সামনে একজন বয়স্ক মুরুব্বিকে দাড়ি ধরে যেভাবে মারধর করেছে, এরকম অবস্থা সমাজে আরও ঘটতে থাকলে জমিনে সরাসরি আল্লাহর গযব নেমে আসবে।"

এই সভার পর শাহবাগের এইসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। সভার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসে আলেমরা। ১৫ ফেব্রুয়ারি নিহত হয় রাজিব ওরফে থাবা বাবা। তার মৃত্যুর পর শাহবাগের কর্মকাণ্ড আরও বেড়ে যায়। দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক ইনকিলাবে নিহত রাজিবের ইসলামকে কটুক্তি করা থাবা বাবার লেখাগুলো প্রকাশের ফলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সর্বত্র। বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে এর নিন্দা জানায়। এসময় ১৯ ফেব্রুয়ারি শাহ আহমদ শফী জাতির উদ্দেশ্যে এই খোলা চিঠি দেন।[৪][৫]

বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

ভূমিকা প্রদানের পর খোলা চিঠির শুরুতে শাহবাগ আন্দোলনে নানাধরণের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে অভিযোগ আনা হয়। যথা:

  1. শাহবাগে অগ্নিপূজক ও পৌত্তলিকদের অনুকরণে মুসলমানদের সন্তান সন্ততিদের দ্বারা মোমবাতি প্রজ্বলন।
  2. নামাজের সময়সহ দিনরাত অনবরত মাইকে গান বাজনা।
  3. জাগরণ মঞ্চের মূল উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দীনসহ স্বঘোষিত নাস্তিকদের ব্লগে আল্লাহ ও রাসূল স. তথা ইসলাম সম্পর্কে চরম অবমাননাকার ব্লগ লেখা ও জঘন্য মন্তব্য।
  4. নারী-পুরুষের উদ্দাম নৃত্য, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা, মদ, গাজা সেবন ইত্যাদি অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড।
  5. মক্কা মদিনার ইমাম ও খতিবদের বিশেষ পোশাক কোবা পরিয়ে ফাঁসির অভিনয়।
  6. শাহবাগ চত্বরের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও দেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে হত্যার হুমকি ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ।
  7. দাড়ি-টুপি পরিহিত ব্যক্তির গলায় রশি বেঁধে রাসূলের সুন্নাত ও ইসলামের প্রতীকসমূহের অবমাননা।
  8. কোমলমতি শিশুদের দিয়ে অপরাধ প্রবণতামূলক স্লোগান শিক্ষা দেয়া।
  9. বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের আবহমান ইসলামি সংস্কৃতির বিপরীতে ভারতীয় সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রদর্শনী।
  10. সব ধরনের ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের উস্কানি দিয়ে দেশকে অনিবার্য সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া।
  11. গভীর রাত পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থানকারী তরুণ-তরুণীদের অবাধ মিলামিশা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে।
  12. সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকি দেয়া সত্ত্বেও শাহবাগ চত্বর নিয়ে এক শ্রেণীর গণমাধ্যমে দৃষ্টিকটু ও সীমা ছাড়ানো মাতামাতি।
  13. রাজধানীর বারডেম ও বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের রোগীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও রাস্তা বন্ধ করা অমানবিক পদক্ষেপ।
  14. স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগারদের ইসলাম অবমাননার প্রমাণ/ প্রতিবেদন তুলে ধরে দেয়া পোস্ট/ লেখা প্রকাশ করার কারণে সম্প্রতি নিরপেক্ষ অনেক ইসলামী ব্লগ সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেয়া।

কাদিয়ানী সম্পৃক্ততা[সম্পাদনা]

এই খোলা চিঠিতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নেপথ্যে কাদিয়ানীদের সম্পৃক্ততা দেখানো হয়েছে। এই সম্পর্কে চিঠিতে বলা হয়, "যুদ্ধাপরাধের বিচার মূলত রাজনৈতিক ইস্যু হওয়ায় আমরা সে সম্পর্কে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দিই নাই। কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা খুঁজে পেয়েছি। একই মঞ্চে ঘাদানিক নেতা, নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষী শাহরিয়ার কবীর এবং আহমদিয়া মুসলিম জামায়েত (কাদিয়ানী) নায়েবে আমীর আব্দুল আওয়াল খান পাশাপাশি বসে অনুষ্ঠান করেছে। বর্তমান যুদ্ধাপরাধের বিচারের পেছনে কাদিয়ানীরাও পরোক্ষভাবে বামপন্থী ও সরকারি সমর্থনে সক্রিয় রয়েছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, আন্দোলন চলাকালে শাহবাগ চত্বর থেকে ১১ জন কাদিয়ানী যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। বামপন্থী শাহরিয়ার কবীরের মতো মুশরিক ও মুরতাদরা একদিকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, আর অন্যদিকে কাদিয়ানীদের মতো মুরতাদ সংগঠনকে সাথে নিয়ে ইসলাম বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তাদের এ অবস্থান সম্পূর্ণ স্ববিরোধী।"

অন্তরালে ইসলাম অবমাননাকারী অনলাইন চক্র[সম্পাদনা]

খোলা চিঠিতে অন্তরালে ইসলাম অবমাননাকারী অনলাইন চক্রের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, "মুক্তমনা একটি চরম ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের ওয়েবসাইট। এ ওয়েবসাইটে ইসলাম ও মহানবী (স.) সম্পর্কে কটূক্তি ও নানা ধরনের অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া হয়। শাহবাগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ ওয়েবসাইটটি এখন আরো বেপারোয়া হয়ে উঠেছে। মুক্তমনার বিভিন্ন পেইজে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। মুক্তমনা “আগামী নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক দলের অংশগ্রহণ বাতিল কর- মুক্তমনা” এ ধরনের ইসলাম বিরোধী নানা স্লোগান বড় করে লেখা রয়েছে। আর মুক্তমনাকে যাবতীয় সাহায্য ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এই পতিত সংগঠনটি মুক্তমনা ওয়েবসাইটকে ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের কারণে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক-২০০৭’ পুরস্কার প্রদান করেছিল। মুক্তমন ই-বুকে অবিশ্বাসের দর্শন, বিবর্তনের পথ ধরে, সমকামিতা, যে সত্য বলা হয়নি, ইসলাম ও শরিয়া প্রভৃতি বই পাওয়া যায় যেগুলো ইসলাম কোরআন ও মহানবী (স) -এর চরিত্র সম্পর্কে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ ও অশ্লীল কটূক্তিতে ভরা। সেই মুক্তমনার সাথে সংশ্লিষ্ট মুরতাদ নাস্তিকরাই বর্তমান শাহবাগ নাটকের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। শাহবাগের পেছনে যেসব ব্লগার ও অ্যাক্টিভিটিস্ট রয়েছে তাদের মধ্যে রাজীব আহমেদ একজন। ব্লগার ‘থাবা বাবা’ ছদ্মনামে থাকা তার পোস্টগুলোতে সে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে ‘মোহাম্মক’ বলে ব্যঙ্গ করেছে। মোহাম্মকের সফেদ লুঙ্গী, ঢিলা ও কুলুখ, সিজদা, মদ ও মোহাম্মকসহ অসংখ্য এমন সব অশ্লীল পোস্ট পাওয়া যায় যেগুলো মহানবী (স.)-এর বিরুদ্ধে মার্কিন ও ইউরোপীয় ব্যঙ্গচিত্রকেও হার মানায়। ব্লগার আরিফুর রহমান ইংল্যান্ডে থাকেন, বর্তমানে লিখেছেন ওস্কার ও বিভিন্ন ‘নিক' নামে (সামহোয়্যার ইন ব্লগ)। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্রাটেজি ফোরামের নেতা। আরেকজন নাস্তিক ব্লগার নিঝুম মজুমদারের সাথে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেন। শাহবাগ আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা আসিফ মহীউদ্দিন এখন বাংলাদেশের উদীয়মান নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ। শাহবাগ নাটকের অন্তরালে তৎপর তথাকথিত অনলাইন অ্যাক্টিভিটিস্টদের মধ্যে অন্যতম হলো চরম ইসলাম বিদ্বেষী প্রসিদ্ধ ব্লগ সামহোয়্যার ইন-এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্লগাররা।"

শাহবাগ চত্বরে নাস্তিক পৃষ্ঠপোষকতা[সম্পাদনা]

খোলা চিঠিতে শাহবাগ আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে বলা হয়েছে, "শাহবাগের তথাকথিত জাগরণ মঞ্চে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন ইসলাম ও দেশবিরোধী অসংখ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবীর, বিশিষ্ট বাম বুদ্ধিজীবী মুনতাসীর মামুন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মূর্তি স্থাপনের নেপথ্য নায়ক জাফর ইকবাল, ফতোয়া নিষিদ্ধের রায় প্রদানকারী সাবেক বিচারপতি গোলাম রব্বানী, হিন্দু নাস্তিক অজয় রায়, বাম ঘরানার চিহ্নিত কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ, ইসলামবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন ও সংবিধান থেকে 'আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' বাক্যটি বাদ দেয়ার নেপথ্যে সক্রিয় ব্যক্তিরাই শাহবাগ নাটকের পৃষ্ঠপোষক ও মূল কুশীলব।"

সরকারের প্রতি আমাদের দাবী[সম্পাদনা]

এই চিঠিতে সরকারের প্রতি ৪টি দাবি জানানো হয়। যথা:

  1. সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে চলমান সব আন্দোলনের প্রতি যেভাবে ব্যাপক সহানুভূতি প্রদর্শন করছে অনুরূপভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ইসলাম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  2. আল্লাহ, রাসূল, কুরআন, দাড়ি-টুপি, পর্দা-হিজাব প্রভৃতি ইসলাম প্রতীক অবমাননার মাধ্যমে বিরাজিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  3. প্রকাশ্য রাজপথে দাড়ি-টুপিধারী পথচারীকে অপমান করার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক অবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  4. বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় তাওহীদি জনতার গণজমায়েত, সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং ও গণঅবস্থানের গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে। কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির যেকোনো কর্মসূচীতে কোনো বাধা দেয়া যাবে না। অন্যথায় দেশের লাখো মুসলিম জনতা সকল বাধা অতিক্রম করে ঈমান-আক্বীদা ও ধর্মীয় প্রতীকসমূহের মর্যাদা রক্ষায় সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান[সম্পাদনা]

চিঠির শেষে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, "দেশের সর্বস্তরের মুমিন - মুসলমান জনগণের উদ্দেশে আমরা বলতে চাই শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে বিচার না করে; বিশেষ কোনো দল / গোষ্ঠীর পক্ষে - বিপক্ষে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে সরলীকরণে না গিয়ে, এর অর্ন্তর্নিহিত রূপ ও চরিত্র অনুধাবন করুন। শাহবাগ চত্বরের কথিত জাগরণ মঞ্চের বিগত দুই সপ্তাহের কার্যক্রমকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে পরিষ্কার হয়ে গেছে-এটা মোটেও স্বাধীনতার স্বপক্ষ - বিপক্ষের লড়াই নয়। এবং দামতের উর্ধ্বে উঠে নিজের ঈমান, আক্বীদা-বিশ্বাস ও ইসলামের প্রতীকসমূহের হেফাজতের পক্ষে সোচ্চার ও জোরালো ভূমিকা রাখুন। নাস্তিক, মুরতাদ ও ইসলামবিরোধী অপশক্তির আস্ফালনের বিরুদ্ধে সারা দেশে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলুন।"

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

চিঠি প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার একে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প বলে আখ্যায়িত করেন।[৬] চিঠি প্রকাশের পর হওয়া বিভিন্ন ধর্মীয় হামলার জন্য শাহরিয়ার কবির এই চিঠিকেও দায়ী করেন।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "শ্বেতপত্র: হেফাজত-জামায়াতের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ৪০০ দিন"বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন। মহাখালী, ঢাকা-১২১২। নভেম্বর ২০১৩। পৃষ্ঠা ৫২। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "আল্লামা শফীর 'খোলা চিঠি' নিয়ে তোলপাড়"। দৈনিক আমাদের সময়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। 
  3. রানা, এস এম (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "জামায়াতের মদদেই খোলা চিঠি"দৈনিক কালের কণ্ঠ 
  4. "যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবির আড়ালে তরুণদের আবেগকে পুঁজি করে ইসলামবিদ্বেষী মহল অপপ্রচারে লিপ্ত"দৈনিক সংগ্রাম। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। 
  5. হাসান, রাকিবুল (৩ এপ্রিল ২০২০)। "হেফাজতে ইসলামের সূচনা ও বিকাশ"ফাতেহ২৪.কম 
  6. "'ঘাতকদের অপপ্রচার ভেসে যাবে দেশপ্রেমের জোয়ারে'"বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। 
  7. "হামলাকারীরা 'সাঈদী' 'শফী'র ওয়াজ শুনে প্ররোচিত হয়"আমাদের অর্থনীতি। ৫ মার্চ ২০১৮।