রঙিন সোনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

যদিও খাঁটি সোনার রঙ অনেকটা হলুদাভ, তারপরেও বাজারে অন্য অনেক রঙের সোনাই দেখা যায়। এই রঙগুলো আসে সোনার সাথে বিভিন্ন অনুপাতে মেশানো অন্যান্য মৌলের খাদ থেকে।

যেমন, কোনো একটি সংকরে যদি ১৪ ভাগ সোনা এবং ১০ ভাগ খাদ মেশানো হয় তাহলে প্রাপ্ত সোনাকে বলে ১৪-ক্যারেট সোনা, ১৮ ভাগ সোনা ও ৬ ভাগ খাদ থাকলে বলা হয় ১৮-ক্যারেট সোনা... এরকম। এটাকে অনেকসময় ভগ্নাংশের অনুপাত আকারেও প্রকাশ করা হয় যেমন, ১৪/২৪ সমান ০.৫৮৫ (রাউণ্ড অফ) এবং ১৮/২৪ সমান ০.৭৫০। সোনার এরকম হাজারো সংকর সম্ভব, কিন্তু সাধারণত সোনার সাথে রূপা মেশালে সবুজাভ রঙ ধারণ করে, এবং তামা মেশালে লালচে। খাদ হিসাবে ৫০/৫০ তামা ও রূপার সংকর ব্যবহার করলে বাজারে আমরা সাধারণত যে হলদে সোনালি স্বর্ণ দেখি সেটা পাওয়া যায়।

বিভিন্ন Ag-Au-Cu সংকরের বিভিন্ন রঙ

সাদা সোনা[সম্পাদনা]

সাদা সোনা হচ্ছে স্বর্ণের সাথে অন্তত একটি সাদা ধাতুর(নিকেল বা প্যালাডিয়াম) সংকর। হলুদ সোনার মত সাদা সোনার খাঁটিত্বও ক্যারেট এ প্রকাশ করা হয়।

সাদা সোনার ধর্ম খাদ হিসাবে কোন ধাতু কত অনুপাতে ব্যবহার করা হল তার উপর নির্ভর করে। এর ফলে, সাদা সোনার সংকর বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে; নিকেল সংকর কঠিন এবং দৃঢ় হওয়ায় আংটি এবং পিন প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়, সোনা-প্যালাডিয়াম সংকর কিছুটা নরম হওয়ায় রত্নপাথরের অলংকারে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও খাদ হিসাবে অন্যান্য ধাতু যেমন, তামা, রূপা, প্লাটিনাম এগুলো ব্যবহার হয় এদের সংকরের ভর, টেকসই এসব গুণের কারণে। এর জন্য অবশ্য প্রশিক্ষিত স্বর্ণকারের প্রয়োজন। বাজারে সাদা সোনা বলতে যে কোনো সাদাটে আভা যুক্ত ক্যারেট(খাদযুক্ত) সোনাকেই বোঝায়। অনেকেই মনে করে সাদাসোনার অলঙ্কারাদির উপরে যে চকচকে কঠিন রোটিয়াম প্লেটিংটা চোখে পড়ে সেটাই বুঝি সাদা সোনার রঙ। এখানে সাদা বলতে আবছা হলুদ থেকে শুরু করে বাদামি অথবা খুবই আবছা গোলাপি সহ বেশ বড় বর্ণালীর সংকর সোনাকেই বোঝায়। স্বর্ণশিল্পে প্রায়ই এই অ-সাদা রঙকে রোডিয়াম প্লেটিং দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়।

রোডিয়াম স্তর দেওয়া সাদা সোনার বিয়ের আংটি

সংস্পর্শ অ্যালার্জি[সম্পাদনা]

প্রায় প্রতি আট জনে একজন ব্যক্তি সংকর সাদা সোনার নিকেল খাদের প্রতি অ্যালার্জি প্রবণ[১] দীর্ঘদিন ধরে এর ব্যবহারে অনেকের ত্বকে হালকা গোটা দেখা দিতে পারে। সাধারণত নিকেল ছাড়া অন্য খাদ দিয়ে তৈরি সাদা সোনা অ্যালার্জিক প্রভাব কম।

গোলাপি, লাল, এবং লালচে গোলাপি সোনা[সম্পাদনা]

রোজ গোল্ড হচ্ছে একধরনের সোনা ও তামার সংকর যা বিশেষ ধরনের অলংকারাদি নির্মানে ব্যবহৃত হয়। তামার খাদের কারণে এতে লালচে আভা থাকে তাই একে লাল সোনা বা গোলাপি সোনাও বলা হয়। উনিশ শতকের শুরুতে রাশিয়াতে এই সোনা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে তাই একে অনেক সময় রাশিয়ান সোনাও বলা হয়, যদিও টার্মের এই ব্যবহার এখন আর তেমন দেখা যায় না। যদিও এই টার্মগুলোর একটিকে অপরটির পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা হয় তার পরেও গোলাপি, লাল ও লালচে গোলাপি সোনার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। খাদে তামার পরিমাণ যত বেশি হয় এর রঙ ততটা লালের দিকে হয়। লালচে গোলাপি সোনার একটি প্রচলিত সংকরে ভর অনুপাতে সোনা ৭৫% এবং ২৫% হয়(১৮-ক্যারেট)। যেহেতু রোজ গোল্ড বা লালচে গোলাপি সোনা একটি সংকর সেহেতু “খাটি লাল সোনা” বলে কিছু নেই।

গোলাপি সোনা সংকর[সম্পাদনা]

রোজ গোল্ডের সবচেয়ে বেশি ক্যারেট ভার্সন কে ক্রাউন গোল্ড বলা হয়; এটা ২২ ক্যারেট। ১৮- ক্যারেট লাল সোনা ৭৫% সোনা ও ২৫% তামার সংকর। ১৮-ক্যারেট রোজ গোল্ডের জন্য সাধারণত ৪% রূপা যোগ করা হয় ৭৫% সোনা ও ২১% তামার সংকরে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রায়ই ১৪ ক্যারেট সোনা পাওয়া যায়, যার তামা খাদের পরিমাণ ৪১.৬৭%।

বাদ্যযন্ত্রে লাল সোনার ব্যবহার[সম্পাদনা]

প্রায়ই বাঁশি বাদ্যযন্ত্রের ফিনিশিং এ একধরনের লালচে সোনালি ধাতব সংকর ব্যবহৃত হয়, যাকে সাধারণত লাল সোনা বলে। কিন্তু এটা আসলে পাতলা রূপার স্তরের উপরে বসানো পাতলা তামার স্তর। এতে আসলে কোনো সোনা ব্যবহৃত হয় না।

সবুজ সোনা[সম্পাদনা]

সবুজ সোনার সংকর প্রস্তুতিতে তামা বাদ দিয়ে খাদ হিসাবে শুধু রূপা ব্যবহৃত হয়। এর রঙ আসলে পুরোপুরি সবুজ না, বরং কিছুটা সবুজাভ হলুদ। আঠারো ক্যারেট সবুজ সোনায় তাই ৭৫% সোনা ও ২৫% রূপা থাকে। এ ধরনের সংকরের উপরে এনামেল কোটিং ভালো বসে।

ধূসর সোনা[সম্পাদনা]

সোনার সাথে নির্দিষ্ট অনুপাতে রূপা, তামা ও ম্যাঙ্গানিজ মিশিয়ে ধূসর সোনা প্রস্তুত করা হয়।[২]

কালো সোনা[সম্পাদনা]

কালো সোনাও অলংকারাদিতে ব্যবহৃত একধরনের সোনা।[৩][৪] বিভিন্ন পদ্ধতিতেই কালো সোনা প্রস্তুত করা যেতে পারে:

  • ইলেকট্রো প্লেটিং, যেখানে রোডিয়াম ও রুথেনিয়াম এর তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবন ব্যবহার করা হয়। রোডিয়ামের চেয়ে রুথেনিয়াম ব্যবহার করলে কালো স্তরটা আরো কঠিনতর হয়।[৫]
  • প্যাটিনেশন, সালফার ও অক্সিজেনের যৌগের সাহায্যে।

প্যালজমার সাহায্যে রাসায়নিক বাষ্পের ঘনীভবন, যেখানে কার্বনে ও অক্সিজেনের উপস্তিতিতে কোবাল্ড ও ক্রোমিয়ামের খাদযুক্ত সোনাকে পোড়ানো হয়।

অধুনা লেজার পদ্ধতিতে যেকোনো ধাতুর উপরিতল কেই কালো রঙ দেওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। ধাতুর উপর ফেমটো সেকেন্ড লেজার পাল্‌স প্রয়োগ করলে এর বহির্তলের ন্যানোস্ট্রাকচার পরিবর্তিত হয়। এবং ন্যানো স্কেলে উচুনিচু হয়ে যাবার ফলে এর তলের ক্ষেত্রফল বহুলাংশে বেড়ে যায়। এই বর্ধিত বহির্তল ভার্চুয়ালি যে কোনো আলোকেই শোষণ করতে পারে।[৬]

বেগুনী এবং নীল সোনা[সম্পাদনা]

বেগুনী সোনা(যাকে পার্পল সোনাও বলে) হচ্ছে সোনা ও অ্যালুমিনিয়ামের একটি সংকর। এতে সোনার পরিমাণ প্রায় ৭৯% তাই একে ১৮ ক্যারেট সোনা বলা যেতে পারে। বেগুনী সোনা সোনার অন্যান্য সংকরের চেয়ে বেশি ভঙ্গুর। তীক্ষ্ণ আঘাতে এটি চূর্ণবিচূর্ন হয়ে যেতে পারে। বেগুনী সোনা দিয়ে অলঙ্কার তৈরির বদলে সাধারণত একে অলঙ্কারে ‘রত্ন’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একই ভাবে নীল সোনাও সোনা ও ইনডিয়াম এর একটি সংকর।[৫]

সূত্র[সম্পাদনা]

  1. White Gold ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে - Site provided by the World Gold Council
  2. 18 karat grey gold alloy, without nickel and withoutpalladium, for jewellery - Patent 6576187, Free Patents Online
  3. "Jewelery Technology"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২১ 
  4. W.S. Rapson (১৯৭৮), Gold Usage, Academic Press 
  5. "Gold In Purple Color, Blue Color And Even Black Gold"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২১ 
  6. "Ultra-Intense Laser Blast Creates True 'Black Metal'"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২১