মেহতাব কৌর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মহারানি মেহতাব কৌর ( আনু. ১৭৮২ – ১৮১৩) [১] [২] [৩] ছিলেন শিখ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের প্রথম স্ত্রী। [৩] [৪] তিনি রঞ্জিতের স্বনামধন্য পুত্র মহারাজা শের সিং- এর মা ছিলেন, [৫] [৬] শের সিং ১৮৪১ থেকে ১৮৪৩ সাল অবধি তাঁর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত শিখ সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন [৭]

মেহতাব কৌর ছিলেন সাদা কৌর এবং গুরবকশ সিং কানহাইয়ার একমাত্র কন্যা। চার বছর বয়সে ছয় বছর বয়সী রঞ্জিত সিংয়ের সাথে তার বিবাহ হয়।

মেহতাব কৌর ছিলেন রঞ্জিত সিংয়ের স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ [৮] এবং ইতিহাসবিদ জিন-মেরি ল্যাফন্টের মতে, রঞ্জিত সিং -এর বিবাহিত স্ত্রীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র মহারানী (উচ্চ রানী) উপাধি পেয়েছিলেন যখন তার অন্যান্য স্ত্রীরা রানী কেবল রানী উপাধি পেয়েছিলেন। [৯] [১০] তার মৃত্যুর পর, রঞ্জিতের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তার উত্তরাধিকারী মহারাজা খড়ক সিং-এর মাতা দাতার কৌর মহারানী উপাধি ধারণ করেছিলেন। [১১] [১২] তার মৃত্যুর পর উপাধিটি রঞ্জিতের সর্বকনিষ্ঠ বিধবা জিন্দ কৌরের কাছে চলে যায়, যিনি ১৮৪৩ সাল থেকে ১৮৪৬ সাল পর্যন্ত শিখ সাম্রাজ্যের (শের সিংয়ের মৃত্যুর পর) শাসনভার দেখতেন, তিনি মহারাজা দলীপ সিংয়ের মা ছিলেন। [১৩]

গুরবকশ সিং কানহাইয়া ( সন্ধু ) এবং তার স্ত্রী সাদা কৌর ধালিওয়ালের একমাত্র সন্তান মেহতাব কৌর ১৭৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। [২] তার জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিল " মেহতাব " (مهتاب) যার অর্থ ফর্সি ভাষায় 'চাঁদের আলো' বা 'চাঁদের জাঁকজমক'। তার ফর্সা এবং পরিষ্কার বর্ণের কারণে তার এই নামকরন করা হয়। [১৪] [১৫] তার পিতা, গুরবক্ষ সিং, জয় সিং কানহাইয়া এর উত্তরাধিকারী ছিলেন, যিনি কানহাইয়া মিসলের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান ছিলেন। [১৬]

জয় সিং তার নাতনী মেহতাব কৌরকে মহা সিং এর ছেলে রঞ্জিত সিং এর সাথে বিয়ে দিতে রাজি হননি, কিন্তু তার বিধবা পুত্রবধূ সাদা কৌর তাকে রাজি করান। [১৭] ১৭৮৯ সালে কানহাইয়া প্রধানের [১৮] মৃত্যু হয়। [১৯] একই বছর তরুণ মেহতাব কৌর এবং রঞ্জিত সিং বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। [২০] [২১] তাদের মুকলাওয়া ১৭৯৬ সালে ঘটেছিল। [২২]

১৮০৪ সালে মেহতাব রঞ্জিত সিং-এর তার দ্বিতীয় পুত্র (এবং তার প্রথম সন্তান) জন্ম দেন। ঈশ্বরকে ( ঈশ্বর ) ধন্যবাদ জানিয়ে শিশুটির নাম রাখা হয় ইশার সিং । [২৩] রাজকুমার মাত্র দেড় বছর বয়সে, অকালে মারা যান। [৯] মেহতাব কৌর ১৮০৭ সালে আবার গর্ভবতী হন এবং বাটালায় শের সিং এবং তারা সিং নামে যমজ পুত্রের জন্ম দেন। [২৪] রঞ্জিত যখন তাদের জন্মের খবর পেয়েছিলেন তখন জাওয়ালামুখীর কাছে ছিলেন, তিনি সেখান থেকে স্বর্ণ মন্দিরে ধন্যবাদ জানাতে অমৃতসরে ছুটে যান। [২৫] তার পুত্রদের জন্ম ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হয়। রঞ্জিত লাহোরে ফিরে এসে পরোপকারে বিবিধ দান করেছিলেন এবং শহরটি কয়েক রাতের জন্য আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছিল। [২৬]

অসুস্থতায় ভোগার পর মেহতাব কৌর ১৮১৩ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর সময়, রঞ্জিত সিং অমৃতসরে ছিলেন। রঞ্জিত সিং দাহ এবং অন্যান্য শোকপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যাননি। কিন্তু এ বিষয়ের ফলে বাজে গুজব ছড়ায় ও পরে দেওয়ান মোখম চাঁদ মহারাজাকে সাদা কৌরের ডেরায় নিয়ে যান যেখানে তিনি শোক প্রকাশের পর অন্যান্য রীতিনীতি পালন করেছিলেন। [২৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Panjab Past and Present" (ইংরেজি ভাষায়)। Department of Punjab Historical Studies, Punjabi University.। ১ জানুয়ারি ১৯৮৬: 122। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  2. Noor, Harbans Singh (২০০৪)। Connecting the dots in Sikh history। Institute of Sikh Studies। পৃষ্ঠা 67। আইএসবিএন 9788185815237 
  3. "The Sikh Courier International" (ইংরেজি ভাষায়)। Sikh Cultural Society of Great Britain। ১ জানুয়ারি ১৯৯৮: 9। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৭ 
  4. "The Sikh Review" (ইংরেজি ভাষায়)। Sikh Cultural Centre। ১ জানুয়ারি ২০০৫: 45, 86। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১৭ 
  5. "Punjab District Gazetteers" (ইংরেজি ভাষায়)। Compiled and published under the authority of the Punjab government। ১ জানুয়ারি ১৯০৫: 226 
  6. "Calcutta Review" (ইংরেজি ভাষায়)। University of Calcutta.। ১ জানুয়ারি ১৯৪৪: 74। 
  7. Grewal, J.S. (১৯৯৮)। The new Cambridge history of India : II. 3 The sikhs of the Punjab (Rev. ed., 1st pbk. সংস্করণ)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 249আইএসবিএন 9780521637640 
  8. Chhabra, G.S. (২০০৪)। Advanced study in the history of modern India ([3rd ed.] সংস্করণ)। Lotus Press। পৃষ্ঠা 155। আইএসবিএন 9788189093075 
  9. Lafont 2002
  10. Lafont 2002
  11. Suri, Sohan Lal Suri। Umdat Ul Tawarikh 
  12. Singh, Patwant; Rai, Jyoti M. (২০০৮-১১-০১)। Empire of the Sikhs: The Life and Times of Maharaja Ranjit Singh (ইংরেজি ভাষায়)। Peter Owen Publishers। আইএসবিএন 978-0-7206-1371-1 
  13. Lafont 2002
  14. Dalrymple, William; Anand, Anita (২০১৬)। Kohinoor: The Story of the WorldÕs Most Infamous Diamond (ইংরেজি ভাষায়)। Juggernaut Books। আইএসবিএন 978-93-86228-08-6 
  15. Richardson, John (১৭৭৭)। A Dictionary, Persian, Arabic, and English (ইংরেজি ভাষায়)। Clarendon Press। পৃষ্ঠা 1905। 
  16. Singha, H.S. (২০০০)। The encyclopedia of Sikhism (over 1000 entries)। Hemkunt Publishers। পৃষ্ঠা 137। আইএসবিএন 9788170103011 
  17. Singh 2008
  18. Roy, Kaushik (২০১৫)। Military Manpower, Armies and Warfare in South Asia (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 82। আইএসবিএন 9781317321286 
  19. Singh, Patwant; Rai, Jyoti M. (২০০৮)। Empire of the Sikhs : the life and times of Maharaja Ranjit Singh। Peter Owen। পৃষ্ঠা 63, 169। আইএসবিএন 9780720613230 
  20. Proceedings - Punjab History Conference (ইংরেজি ভাষায়)। Department of Punjab Historical Studies, Punjabi University.। ২০০৬। আইএসবিএন 978-81-302-0094-1 
  21. Atwal, Priya (২০২০)। Royals and rebels : the rise and fall of the Sikh empireআইএসবিএন 978-0-19-755459-3ওসিএলসি 1256081616 
  22. Atwal, Priya (২০২০-১১-০১)। "Royals and Rebels"আইএসবিএন 978-0-19-754831-8ডিওআই:10.1093/oso/9780197548318.001.0001 
  23. Noor, Harbans Singh (২০০৪)। Connecting the specks in Sikh history। Institute of Sikh Studies। পৃষ্ঠা 70। আইএসবিএন 9788185815237 
  24. Singh 2008
  25. Lafont 2002
  26. Singh 2008
  27. "The Panjab Past and Present" (ইংরেজি ভাষায়)। Department of Punjab Historical Studies, Punjabi University.। ১ জানুয়ারি ১৯৮৬: 124।