মিক্সোস্পোরোজেনেসিস

মিক্সোস্পোরোজেনেসিস(Myxosporogenesis) হল এমন একটি স্বতন্ত্র প্রোক্যারিওটিক গ্ৰাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া মিক্সোব্যাক্টোরিয়াম জাতের এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়ার জীবনচক্রের এক নির্দিষ্ট পর্যায়কে বোঝায়, যেখানে তারা স্পোর গঠনের মাধ্যমে অবদান রাখে। মিক্সোব্যাক্টেরিয়াম স্পোর গঠন ও বিকাশের সেই জৈবিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তারা তাদের পরিবেশ ও প্রজনন ক্ষমতা অনুযায়ী নিজেদের গঠন বা আকার পরিবর্তন করে।মিক্সোব্যাকটেরিয়ামের (Myxobacterium) সমষ্টি ব্যাক্টেরিয়াম নির্দিষ্ট কিছু শর্তাধীনে এমন বহুকোষীয় কাঠামোগুলো দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, যখন অ্যামাইনো অ্যাসিডের সংকট থাকে, মিক্সোব্যাকটেরিয়া পারিপার্শ্বিক ব্যাকটেরিয়া কোষগুলোকে 'কোরাম সেনসিং'(Quorum sensing) প্রক্রিয়ায় শনাক্ত করতে পারে এবং প্রত্যেকে একে অপরের দিকে স্থানান্তরিত হয়ে ৫০০ মাইক্রোমিটার দীর্ঘ পর্যন্ত "ফ্রুটিং বডি" (Fruiting body) গঠন করতে পারে। ফ্রুটিং বডিতে আনুমানিক ১০০,০০০ ব্যাকটেরিয়া কোষ থাকে।এই ফ্রুটিং বডিগুলোর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া পৃথক পৃথক কাজ সম্পাদন করে; উদাহরণস্বরূপ, দশটি কোষের মধ্যে একটি কোষ ফ্রুটিং বডির শীর্ষে পরিযাণ করে এবং একটি বিশেষায়িত সুপ্তাবস্থায় প্রভেদিত হয়, যে দশাকে মিক্সোস্পোর বলে।মিক্সোস্পোরোজেনেসিস কে মিক্সোস্পোর মরফোজেনেসিস(Mixospore morphogenesis) বলা হয়।

মিক্সোস্পোরোজেনেসিস ধাপসমূহ

মিক্সোস্পোরোজেনেসিস পদ্ধতির বেশ জটিল এবং এটি বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, মিক্সোব্যাক্টেরিয়া স্পোর উৎপাদন করে, যা তাদের জীবনচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধারাবাহিক ভাবে এই প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপগুলি নিম্নরূপ:

১. কোষ সংকেত ও সংগ্রহণ(Cell Reception and Perception): মিক্সোব্যাক্টেরিয়া খাদ্যের অভাব বা অন্যান্য পরিবেশগত চাপের সাড়া দিয়ে বিশেষ সংকেত মোলিকিউল উৎপাদন করে এবং মুক্তি দেয়। এই মোলিকিউলগুলি পার্শ্ববর্তী কোষগুলিকে একত্রিত হতে এবং জমা হতে উৎসাহিত করে।

২. একীয়ভূতকরণ ও অ্যাগ্রোগেটেশন(Assimilation and Aggregation):- কোষগুলি একত্রিত হয়ে বড়,দৃশ্যমান অ্যাগ্ৰোগেটেশন মাধ্যমে অ্যাগ্রোগেট গঠন করে, যা পরবর্তী ধাপের জন্য ভিত্তি তৈরি করে।

৩. ফ্রুটিং বডির গঠন(Formation of Fruiting body):- অ্যাগ্রোগেটগুলি জটিল আকারের ফ্রুটিং বডি গঠন করে, যেখানে কোষগুলি বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। এই ফ্রুটিং বডি পর্যায়ে, কিছু কোষ প্রজনন স্পোরে পরিণত হয়, অন্যান্য কোষ সমর্থন এবং সুরক্ষার কাজ করে।

৪. স্পোরুলেশন(Sporulation): ফ্রুটিং বডির মধ্যে বা উপরে কিছু কোষ স্পোরে পরিণত হয়। এই স্পোরগুলি পরিবেশগত চাপ সহ্য করার ক্ষমতা সহ উচ্চ স্তরের সুরক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদী বেঁচে থাকার ক্ষমতা বহন করে।

৫. মিক্সোস্পোর নিদ্রাবস্থা (Dormancy of Mixospore): এই ধাপে, কিছু স্পোর যা পর্যায়ে উৎপন্ন হয়েছে তারা একটি অমূল্য অবস্থায় চলে যায়, যা ডরমেন্ট বলা হয়। এটি অনুকূল পরিবেশে আবর্তন হতে পারে যা সমর্থন এবং জীবনের জন্য অপ্রয়োজনীয় সময় কাটাতে সহায়ক হতে পারে।

৬. মিক্সোস্পোর জার্মিনেশন (Germination of Mixospore): জার্মিনেশনে, ডরমেন্ট অবস্থায় থাকা স্পোর আবার জীবনের চক্রে প্রবৃদ্ধি দেয়। এটি অভিজীবনকরণের জন্য একটি প্রক্রিয়া, যেখানে স্পোর থেকে এক নতুন বিচরক কোষ গঠন হয়। জার্মিনেশন একটি নতুন জীবাণু প্রজননের উপায়ের প্রস্তুতি করে এবং জীবাণুর জীবনচক্রে পৌঁছায়।

৭. আউটগ্রোউথ অব হাইফে (Outgrowth of Hyphae): জার্মিনেশনের পর, স্পোর থেকে উৎপন্ন হওয়া নতুন জীবাণু একটি হাইফা বা বৃদ্ধি উৎপন্ন করে। এই হাইফা বা বৃদ্ধি অপর উৎপন্ন হওয়া জীবাণুদের সাথে সংগতি এবং আবদ্ধ হয়ে থাকে।

৮. কায়াসথান বা কালন্নি (Formation of Cystotheca or Calonni) গঠন: আগের ধাপে গঠন হয়া হাইফা বা বৃদ্ধি অবশ্যই একটি কায়াসথান বা কালন্নি গঠন করতে পারে। এই গঠন হয়ে থাকতে পারে যাতে জীবাণুগুলি পরিবেশে আত্ম-সুরক্ষা করতে পারে এবং উচ্চ স্তরের পরিবেশগত চাপ এবং অন্যান্য কঠিনাগার দক্ষতা সহ্য করতে পারে।

৯. মিক্সোস্পোর মুক্তি(Mixospore Release): কায়াসথান বা কালন্নি গঠন হয়ে থাকলে, স্পোরুলেশন ধাপে জীবাণুগুলি আবদ্ধ থেকে মুক্ত হয়। এই স্পোরগুলি পরিবেশে ছড়িয়ে যায় এবং আবদ্ধ বা সুরক্ষিত অঞ্চলে মিক্সোব্যাক্টেরিয়াম বা অপর জীবাণুগুলির দিকে চলে যায়।