বৈশ্বিক পাতন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বৈশ্বিক পাতন বা গ্রাসোপারের প্রভাব হলো একটি ভূ-রাসায়নিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট রাসায়নিকগুলো, বিশেষত ধ্রুবক জৈব দূষণকারী পদার্থগুলো (পিওপি) পৃথিবীর উষ্ণতর অঞ্চল থেকে শীতল অঞ্চল বিশেষ করে মেরু এবং পর্বতের শীর্ষগুলোতে স্থানান্তরিত হয়। বৈশ্বিক পাতন ব্যাখা করে যে, কেন আর্কটিক পরিবেশে এবং সেখানে বসবাসকারী প্রাণী ও মানুষের দেহে ধ্রুবক জৈব দূষণকারী পদার্থগুলোর তুলনামূলক বেশি ঘনত্ব পাওয়া গিয়েছে, যদিও এই অঞ্চলগুলোতে অধিকাংশ রাসায়নিক উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যবহার করা হয়নি।[১]

পদ্ধতি[সম্পাদনা]

গবেষণাগারে পানীয় তৈরিতে অথবা বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরিশোধনে নিযুক্ত পাতনে ব্যবহৃত নীতিমালাগুলোর মাধ্যমে বৈশ্বিক পাতন প্রক্রিয়াটি বুঝতে পারা যায়। এই প্রক্রিয়াগুলোতে, কোনো পদার্থ তুলনামূলক উচ্চ তাপমাত্রায় বাষ্পীভূত হয় এবং তারপর এই বাষ্প নিম্ন তাপমাত্রার অঞ্চলের দিকে ভ্রমণ করে ও সেখানে ঘনীভূত হয়। যেকোনো নির্দিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্যের জন্য বিশ্বব্যাপী একই ঘটনা ঘটে। যখন রাসায়নিকগুলো পরিবেশে মুক্ত করে দেয়া হয়, তখন পারিপার্শ্বিক উষ্ণ তাপমাত্রায় কিছু পদার্থ বাষ্পীভূত হয়, তাপমাত্রা শীতল হওয়া অবধি বাষ্পগুলো বাতাসে ঘুরে বেড়ায় এবং তারপর ঘনীভবন ঘটে। রাসায়নিকগুলোর উষ্ণতর থেকে শীতলতর জলবায়ুতে স্থানান্তরের জন্য অথবা ঋতু পরিবর্তনের জন্য তাপমাত্রা অধিক পরিমাণে হ্রাস পেলে অধঃক্ষেপণ ঘটতে পারে। মূল প্রভাবটি হলো নিম্ন থেকে উচ্চ ল্যাটিচিউড এবং অলটিচিউডে বায়ুমন্ডলীয় পরিবহন। যেহেতু বৈশ্বিক পাতন একটি অপেক্ষাকৃত ধীর প্রক্রিয়া যা ক্রমাগত বাষ্পীভবন / ঘনীভবন চক্রের উপর নির্ভর করে, তাই এটি শুধুমাত্র অর্ধ-উদ্বায়ী রাসায়নিক দ্রব্যগুলোর জন্য কার্যকর, যেগুলো পরিবেশে খুব ধীরে ধীরে ভাঙে, যেমন- ডিডিটি, পলিক্লোরিনেটেড বাইফেনাইলসলিন্ডেন

বৈশ্বিক পাতনের প্রভাব[সম্পাদনা]

পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বায়ুমন্ডল, জলমণ্ডল অথবা জীবমণ্ডলে যেকোনো নির্দিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্যের ঘনত্বের সাথে যে অক্ষাংশ থেকে স্যাম্পলটি সংগ্রহ করা হয়েছিল তার একটি সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন গবেষণায় প্রভাবটি পরিমাপ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পানি, লাইকেন ও গাছের ছালে পরিমাপকৃত পিসিবি, হেক্সাক্লোরোবেনজিন এবং লিন্ডেনের পরিমাণ উচ্চতর অক্ষাংশে অধিক দেখানো হয়েছে।[২]

প্রভাবটি আরও দেখায় যে, কেন আর্কটিক ও উচ্চ অলটিচিউড অঞ্চলগুলোর নমুনায় কিছু নির্দিষ্ট কীটনাশক পাওয়া যায় যেগুলোর কোনো কৃষি কার্যক্রম এই অঞ্চলগুলোতে নেই,[৩] এবং কেন আর্কটিকের আদিবাসীদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাপা কিছু নির্দিষ্ট পিওপির সর্বোচ্চ বডি বার্ডেন পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে, অধিকাংশ দূষণকারী পদার্থগুলোর অনুষ্ণ অঞ্চলে সঞ্চারিত হওয়ার ক্ষেত্রে, বৈশ্বিক পাতন অপেক্ষা শীতলতর অঞ্চলে তাদের ধীর অধঃপতন অধিকতর দায়ী। ক্লোরোফ্লোরোকার্বনের মতো উচ্চ উদ্বায়ী ও ধ্রুবক পদার্থগুলো এর ব্যতিক্রম।[৪][৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Ridding the world of POPs: A guide to the Stockholm Convention on Persistent Organic Pollutants" (পিডিএফ)United Nations Environment Programme। এপ্রিল ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-০৬ 
  2. Simonich SL, Hites RA (সেপ্টেম্বর ১৯৯৫)। "Global distribution of persistent organochlorine compounds"। Science269 (5232): 1851–4। ডিওআই:10.1126/science.7569923পিএমআইডি 7569923 
  3. "Western Airborne Contaminants Project - Results" (পিডিএফ)National Park Service Air Resources Division। ২০০৮। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০২১ 
  4. Schenker, Scheringer, Hungerbühler: Do Persistent Organic Pollutants reach a thermodynamic equilibrium in the global environment? Environmental Science & Technology, 2014, ডিওআই:10.1021/es405545w.
  5. Fabio Bergamin: The result of slow degradation, ETH News, 2014.

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]