বিচ্ছুরক প্রিজম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ত্রিভুজ আকৃতির প্রিজমের মাধ্যমে যৌগিক আলোর বিচ্ছুরন ঘটিয়ে বিভিন্ন আলোক রশ্মির বর্ণালি সৃষ্টি।
প্রিজমের মাধ্যমে একটি যৌগিক আলোক উৎসের পরিদর্শন।

আলোকবিজ্ঞানে, বিচ্ছুরক প্রিজম হল একধরণের আলোকীয় প্রিজম যার জ্যামিতিক আকৃতি সাধারনতঃ ত্রিভুজের মত হয় এবং এই প্রিজমের সাহায্যে সাদা আলোক রশ্মির বিচ্ছুরণের মাধ্যমে বর্ণালী সৃষ্টি করা হয়। আলোকীয় প্রিজমের অন্যতম ধর্ম হল আলোকরশ্মির বিচ্ছুরন যদিও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বিচ্ছুরণের জন্য আলোকীয় প্রিজম খুব একটা ব্যবহার হয়না।

ত্রিভুজ আকৃতির প্রিজমের মাধ্যমে যৌগিক আলোর বিচ্ছুরন ঘটিয়ে বিভিন্ন আলোক রশ্মির বর্ণালি সৃষ্টি করে যৌগিক আলোর উপাদানস্বরূপ বিভিন্ন মৌলিক আলোর বর্ণালীকে আলাধা করা হয়। যৌগিক আলোর উপদানস্বরূপ বিভিন্ন মৌলিক আলোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিভিন্ন মানের হয় যা ত্রিভুজাকৃতি প্রিজমের মাধ্যমে বিচ্ছুরিত হয়ে বিভিন্ন কোনে পতিত হয়ে বিভিন্ন বর্ণযুক্ত বর্ণালীর সৃষ্টি করে। প্রিজমের উপাদানের প্রতিসরাঙ্ক -এর কারনেই বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য -এর মৌলিক আলোকরশ্মি বিভিন্ন কোনে বিচ্ছুরিত হয়। স্নেলের সূত্র অনুসারে আলোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং আলোকরশ্মি যে মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে গমন করে তার প্রতিসরাঙ্ক -এই দুই শর্তের উপর মৌলিক আলোকরশ্মির গতিপথ ও বিচ্ছুরণ কোন নির্ভর করে। এইভাবেই প্রিজমের উপাদানের প্রতিসরাঙ্ক এবং যৌগিক আলোর মধ্যস্থিত মৌলিক আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুসারে যৌগিক আলো বিচ্ছুরিত হয়ে বর্না‌লির সৃষ্টি করে। উচ্চ তরঙ্গদৈর্ঘ্য -এর আলোর (যেমন লাল বর্ণের আলো) বিচ্যুতি কম হয় এবং অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য -এর আলোর (যেমন নীল বর্ণের আলো) বেশি বিচ্যুতি ঘটে।

পদার্থবিদ বর্ন ‌এবং উল্ফ একক-প্রিজমের বিচ্ছুরন প্রক্রিয়ার গাণিতিক বিবরন দিয়েছেন।[১] পদার্থ‌বিদ ডুরাটে যৌগিক প্রিজমের বিচ্ছুরন প্রক্রিয়ার বিবরন দিয়েছেন।[২]

প্রিজমের মাধ্যমে সাদা আলোর বিচ্ছুরন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন -এই ধারণা করেন যে সাদা আলো বিবিধ বর্ণের আলোর সমষ্টি।

পরিদর্শন[সম্পাদনা]

পদার্থবিদ্যায়, সাধারনতঃ কোন বস্তুর প্রতিসরাঙ্ক সেই মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গমনকারী আলোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য -এর উপর নির্ভরশীল কিন্তু কিছু বিশেষ বস্তুর তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্ভরশীলতা অন্যান্য বস্তুর তুলনায় অনেক বেশি। দৃশ্যমান আলোর ক্ষেত্রে বিকে ৭ -এর ন্যায় ক্রাউন কাঁচ -এ আলোকরশ্মির বিচ্ছুরন কম এবং তুলনায় ফ্লিন্ট কাঁচে আলোকরশ্মি বেশি বিচ্ছুরিত হয়। সুতরাং বিচ্ছুরক প্রিজম প্রস্তুতিতে ফ্লিন্ট কাচ বেশি উপযোগী। অতিবেগুনী রশ্মি এবং অবলোহিত রশ্মির ক্ষেত্রে সাধারন কাচ অস্বচ্ছ হয়ে পরে তখন সেইসকল ক্ষেত্রে বিচ্ছুরণের জন্য সাধারণত ফিউজ্ড‌ সিলিকা বা ফিউজ্ড‌ কোয়ার্টজ নামক একধরনের বিশেষ যৌগের ব্যবহার করা হয়।

বর্ণালীর বিস্তৃতি বাড়াতে প্রিজমের শীর্ষ কোণ আরও প্রশস্ত করা যেতে পারে। কিন্তু সাধারণত এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয় যাতে, প্রিজমের মধ্যে প্রবেশকারী রশ্মি ও প্রিজমের ভেতর থেকে বাইরে গমনকারী বহির্মুখী রশ্মি উভয়েই প্রিজমের পৃষ্ঠতলের সঙ্গে একটি বিশেষ কৌণিক অবস্থান বজায় রাখে এবং সেই বিশেষ কৌণিক মান ব্রিউস্টার কোন-এর সমান বা প্রায় তার মানের অনুরূপ হয়। -এই কৌণিক মান ব্রিউস্টার কোনের থেকে অধিক হয়ে গেলে আলোর প্রতিফলন ক্ষমতা অনেক কমে যায়। বিচ্ছুরক প্রিজম সাধারনতঃ সমপার্শ্ববিশিষ্ট হয় (৬০ ডিগ্রি শীর্ষ কোন যুক্ত)।

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

  • ত্রিভুজাকৃতি প্রিজম
  • আব্বে প্রিজম
  • পেলিন-ব্রোকা প্রিজম
  • আমিচি প্রিজম
  • যৌগিক প্রিজম
  • লিট্রোউ প্রিজম (বিপরীতমুখী প্রতিচ্ছবিযুক্ত পৃষ্ঠযুক্ত বিশেষ ত্রিভুজাকার প্রিজম)

গ্রিজম(গ্রেটিং ও প্রিজমের মিশ্রণ) এবং অন্যান্য ব্যবহার[সম্পাদনা]

অপবর্তন গ্রেটিং বা ডিফ্র্যাকশন গ্রেটিং হল আলোকবিজ্ঞানের এক বহুল প্রচলিত পর্যায়ক্রমিক গঠন (পিরিওডিক স্ট্রাকচার)-সম্পন্ন বস্তু যা যৌগিক আলোকরশ্মির বিভাজন ও অপবর্তন ঘটিয়ে তাকে বিভিন্ন দিকে প্রেরন করে। ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সুবিধার জন্য এই অপবর্তন গ্রেটিং -কে বিচ্ছুরক প্রিজমের তুলনায় বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। গ্রেটিং ও প্রিজমের সংমিশ্রন ঘটিয়ে আলোকবিজ্ঞানে গ্রিজ্ম‌ নামক একটি বস্তুর উদ্ভাবন হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানে নক্ষত্র এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুর বর্ণালি পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইক্ষেত্রে গ্রিজ্‌ম নামক এই বিশেষ আলোকীয় যন্ত্রের বিশেষ ব্যবহার দেখা গেছে।

বর্ণালী পর্যবেক্ষণকারী যন্ত্রে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ আলোকীয় যন্ত্রাংশের ব্যবহার হয় যার নাম অবগাঢ গ্রেটিং বা ইম্মারসড্‌ গ্রেটিং এবং এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ প্রস্তুতিতে বিচ্ছুরক প্রিজমের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ইম্মারসড্‌ গ্রেটিং -এর বিশেষতা হল এই যে এই বিশেষ আলোকীয় যন্ত্র অপবর্তন গ্রেটিং -এর ন্যায় আলোর অপবর্তন ঘটানোর জন্যও ব্যবহার হয়না বরঞ্চ এটা আলোর প্রতিফলন ঘটাতে ব্যবহৃত হয়।

গ্রেটিং এবং প্রিজম রূপরেখা[সম্পাদনা]

সাধারনত ৬ প্রকার গ্রেটিং/প্রিজম রূপরেখার প্রচলন আছে,[৩]

  • পাসচেন-রুঙ্গে
  • ঈগল
  • ওয়াডসওয়ার্থ
  • এব্রেট-ফাস্টি
  • ‌লিট্রোউ
  • পিফান্ড

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. M. Born and E. Wolf, Principles of Optics, 7 ed. (Cambridge University, Cambridge, 1999), pp. 190–193.
  2. F. J. Duarte, Tunable Laser Optics (Elsevier Academic, New York, 2003).
  3. George J . Zissis (1995). "Dispersive prisms and gratings ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ জুলাই ২০১৯ তারিখে" (pdf) in Michael Bass et al. (eds.) Handbook of Optics ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ জুলাই ২০১৬ তারিখে. Vol. 2, Ch. 5. McGraw Hill.