ফ্রাঙ্ক লুগার্ড ব্রাইন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ফ্রাঙ্ক লুগার্ড ব্রাইন (৬ জানুয়ারি ১৮৮২ - ৩ এপ্রিল ১৯৫২) ব্রিটিশ রাজ যুগে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের (আইসিএস) একজন প্রশাসক ছিলেন। লর্ড লুগার্ডের এক ভাগ্নে, যিনি "পশ্চাৎপদ" আফ্রিকাকে (দাসপ্রথা ও নরবলির বিরুদ্ধে লড়াই করে) উন্নত করার প্রচেষ্টায় উদগ্রীব ছিলেন, ব্রাইনেরও একই রকম ধর্মপ্রচারক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এবং আইসিএসে তিনি বাউণ্ডুলে হিসাবে বিবেচিত ছিলেন। তিনি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন যা তার সহকর্মী এবং ভারতীয় জনগণ উভয়েরই কুৎসা আকর্ষণ করেছিলো।[১]

জীবনক্রম[সম্পাদনা]

ফ্রাঙ্ক লুগার্ড ব্রাইন ১৮৮২ সালের ৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি রেভারেন্ড আর. টি. ডাব্লিউ ব্রাইনের পুত্র। তিনি প্রথমে মঙ্কটন কোম্বে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, তারপর পড়েছেন ক্যামব্রিজের পামব্রোক কলেজে, যেখান থেকে তিনি শিক্ষাবৃত্তি নিয়েছিলেন।[২]

১৯০৫ সালে আইসিএসে নিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।[৩] নিয়োগের পর তাকে পাঞ্জাব পাঠানো হয়েছিল, সেখানে তিনি দিল্লির পুরসভার সচিব হিসাবে কিছুকাল কাজ করেছিলেন যখন নয়াদিল্লির পরিকল্পনা চলছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৮তম ল্যান্সারের সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন যার বেশিরভাগটাই ছিলো মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রীক।[২] ১৯১৫ সালের জুনে তিনি অস্থায়ী লেফটেন্যান্ট নিযুক্ত হন[৪] এবং ১৯১৭ সালে সার্বিয়া কিংডম তাকে পঞ্চম শ্রেণির "অর্ডার অফ সেন্ট সাভা" পদক প্রদান করে।[৫]

মিশরে সামরিক লেফটেন্যান্ট হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি ১৯১৯ সালে মিলিটারি ক্রস প্রাপ্ত হন।[৬] এই পুরষ্কারের শংসাটি ছিল:

For conspicuous gallantry and initiative. On the morning of the 20th Sept. 1918, when ordered to take the hill south-east of Nazareth, commanding the Afuleh-Nazareth road, he captured the position under heavy machine-gun fire, and by his quick appreciation of the situation he captured, in addition, 350 prisoners, and a convoy of lorries, out of which he salved £20,000 in Turkish gold.[৭]

যুদ্ধের পরে ব্রাইন পাঞ্জাবে ফিরে আসেন এবং ১৯২০ সালে তিনি এডগার গোবলের কন্যা আইরিস গুডিভকে বিয়ে করেন। তিনি দিল্লী থেকে প্রায় ৪০ মাইল (৬৪ কিমি) দূরে গুরুগ্রামের জেলা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন যখন প্রায় ৭০০,০০০ জনসংখ্যার সমন্বিত অঞ্চলটি সাম্প্রতিক ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং যুদ্ধফেরত সেনাদের কারণে ভীষণ সংকটে ভুগছিল। যুদ্ধ বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্রাইন "গুরুগ্রাম স্কিম" নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছিলেন যেখানে তিনি স্বাবলম্বনের ধারণাটিকে উত্সাহিত ও সহজ করার মাধ্যমে গ্রামীণ লোকদের দুর্দশা লাঘবে হবে বলে আশা করেছিলেন। তিনি এ সম্পর্কে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে ভিলেজ আপ‌লিফ্‌ট ইন ইন্ডিয়া, সক্রেটিস ইন এন ইন্ডিয়ান ভিলেজ, সক্রেটিস পার্সিস্টস ইন ইন্ডিয়া এবং সক্রেটিস অ্যাট স্কুল, বইগুলোতে তিনি ইংল্যান্ডের সাথে ভারতীয় গ্রামীণ জীবনের তুলনা করেছিলেন। দুরাশার কথা যে তার "গুরুগ্রাম স্কিম" পরিকল্পনা সফল হয়নি।[২]

১৯৯৩ সালে ডিউয়ের বই প্রকাশের পরে টাইমস সাহিত্য ক্রোড়পত্র এবং টেলিগ্রাফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ব্রাইন-পুত্রদের একজন টমাস লুগার্ড ব্রাইন। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে ডিউয়ে তার বাবাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে তিনি আইসিএসের প্রসঙ্গ তুলেছেন যা ব্রাইন পরিবারকে বিব্রত করেছিল, ব্রাইনের ব্যক্তিগত কাগজপত্রের সংগ্রহও তিনি ব্যবহার করেছিলেন। এর জবাবে ডিউয়ে উল্লেখ করেছিলেন যে যখন তিনি ব্রাইনের কাগজপত্র ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিলেন, তখন তিনি মনে করেছিলেন যে ব্রাইনের গুরুগ্রাম পরীক্ষণটি সফল হয়েছিল, কারণ তার কাছে কেবল ব্রাইনের সফলতারই খোলামেলা বিবরণ ছিল; কিন্তু প্রচুর পরিমাণে ব্যর্থতার প্রমাণ পাওয়ার পরে ব্রাইনের "গ্রামীণ পুনর্গঠন" এর রূপরেখার উপর তিনি কেবলমাত্র আস্থা হারিয়েছিলেন। ব্রাইনকে নিজের মতো মূল্যায়ন করা অসম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সর্বোপরি, গুরুগ্রাম স্কিমটি কার্যকর সমাধান না দিয়ে কৃষকদের সমস্যা সম্পর্কে সরকারী সচেতনতা বাড়িয়েছিলো বলে তার ধারণা।

১৯৩৭ সালে ব্রাইন পাঞ্জাবের পল্লী পুনর্গঠনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন[৮] এবং ১৯৪০ সালে তিনি সেখানে ফিনান্সিয়াল কমিশনারের (উন্নয়ন) দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।[৯] ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে, তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন,[১০] আইসিএস থেকে অবসর নিয়ে তিনি কল্যাণ (ওয়েলফেয়ার) কর্মকর্তা এবং পাঞ্জাব সৈনিকদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[২]

ভারতের স্বাধীনতার আগে ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়েছিলেন ব্রাইন। ইংল্যান্ডে গিয়ে তিনি নরফোকের অ্যাশিলে দ্য গ্লেব নামক একটি ফার্মে বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং সেখানে ৪৫ একর (১৮ হেক্টর) এলাকাতে তার কৃষি-তত্ত্বগুলি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালের ৩রা এপ্রিল দ্য গ্লেবে মারা যান, সেই সময়ে তাকে সামরিক পদমর্যাদায় কর্নেল হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল।[১১] তিনি তার স্ত্রী, চার পুত্র ও দুই মেয়ে সন্তান রেখে গিয়েছিলেন।[২]

পদক ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

মিলিটারি ক্রস পুরস্কার প্রাপ্তির পাশাপাশি ব্রাইনকে ১৯৪১ সালে "অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পাইয়ার" সহচর [৯] এবং ১৯৩৭ সালে "অর্ডার অভ দ্য স্টার অভ দ্য ইন্ডিয়া" সহচর অভিধায় অভিষিক্ত করা হয়। এছাড়া তিনি ভলান্টিয়ার ডেকোরেশন (ভিডি) পদকও পেয়েছিলেন।[৮] তার স্ত্রী আইরিস গ‌ুডিভ ব্রাইন ১৯২৮ সালে কায়সার-ই-হিন্দ পদক পেয়েছিলেন।[১২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Zastoupil, Lynn (১৯৯৫)। "Review: Anglo-Indian Attitudes: The Mind of the Indian Civil Service by Clive Dewey"Victorian Studies38 (4): 598–599। জেস্টোর 3829387 
  2. "Mr. F. L. Brayne"। The Times (52278)। ৪ এপ্রিল ১৯৫২। পৃষ্ঠা 6। 
  3. "নং. 27850"দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ নভেম্বর ১৯০৫। 
  4. "নং. 29192"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ১১ জুন ১৯১৫। 
  5. "নং. 29977"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ৯ মার্চ ১৯১৭। 
  6. "নং. 31219"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ মার্চ ১৯১৯। 
  7. "নং. 31583"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ অক্টোবর ১৯১৯। 
  8. "নং. 34365"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ জানুয়ারি ১৯৩৭। 
  9. "নং. 35029"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪০। 
  10. "নং. 35471"দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২। 
  11. "নং. 39518"দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ এপ্রিল ১৯৫২। 
  12. "নং. 33390"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ জুন ১৯২৮। 

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]