ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৯৬

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৯৯৬ সালের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

২০ জানুয়ারি ১৯৯৬ ২০০৫ →
 
প্রার্থী ইয়াসির আরাফাত সামিহা খলিল
দল ফাতাহ ডিএফএলপি
শতকরা ৮৮.২% ১১.৫%

নির্বাচনের পূর্বে প্রেসিডেন্ট

কেউ না
ইয়াসির আরাফাত
পিএলওর চেয়ারম্যান
ফাতাহ

নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট

ইয়াসির আরাফাত
ফাতাহ

১৯৯৬ সালের ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচন ফিলিস্তিন জাতীয় কর্তৃপক্ষের (পিএনএ) রাষ্ট্রপতি এবং ফিলিস্তিন জাতীয় কর্তৃপক্ষের শাখা ফিলিস্তিন আইন পরিষদের (পিএলসি) সদস্য নির্বাচনের জন্য প্রথম নির্বাচন ছিল। এটি পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেমে ২০ জানুয়ারি ১৯৯৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের পরে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের রাষ্ট্রপতি ইয়াসের আরাফাতের নেতৃত্বে একটি সরকার গঠন করা হয়।

পটভূমি[সম্পাদনা]

ইস্রায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনকে একটি আশার আলো হিসেবে মনে করা হয়েছিল এবং অনেক ফিলিস্তিনি বিশ্বাস করতেন যে তারা যে সরকার নির্বাচন করছেন তা হবে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রথম সরকার। যাইহোক, পরবর্তী মাস এবং বছরগুলিতে ইস্রায়েলি এবং ফিলিস্তিনিরা তাদের মতপার্থক্য দূর করতে এবং একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তিতে আসতে ব্যর্থ হয় এবং সহিংসতার বৃদ্ধির অর্থ ইস্রায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত অব্যাহত থাকবে। এই অস্থিতিশীলতার ফলস্বরূপ প্রায় এক দশকের মধ্যে নতুন করে আর কোন রাষ্ট্রপতি এবং আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

নির্বাচনের আগে সত্যিকারের প্রচলিত শক্তিশালী কোন রাজনৈতিক দল ছিল না। নির্বাচনের ফলাফলে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন ফাতাহর আধিপত্য ছিল। ফাতাহ’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামপন্থি হামাস নির্বাচনে অংশ নিতে অস্বীকার করে; তারা মনে করেছিল যে এটি করলে পিএনএকে বৈধতা দেওয়া হবে, যারা ইস্রায়েলের সাথে অগ্রহণযোগ্য আলোচনা এবং সমঝোতা করেছে বলে অভিহিত করা হয়েছিল। স্বাধীন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে জানায়; তবে হামাস এবং বিরোধী দলগুলোর বয়কটের কারণে ভোটারদের পছন্দ সীমাবদ্ধ ছিল।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন[সম্পাদনা]

রাষ্ট্রপতি সাধারণ জনপ্রিয় ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আরাফাতের দীর্ঘকালীন আধিপত্য (তিনি পিএনএ গঠনের পর থেকেই সভাপতি ছিলেন এবং এর আগে দশক ধরে তিনি পিএলওর প্রধান ছিলেন) এবং বেশিরভাগ ফিলিস্তিনীয়রা তাকে যে উচ্চ সম্মানের চোঁখে দেখে, সেজন্য নির্বাচনের ফলাফল বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক একটি প্রাক্কলিত উপসংহার হিসাবে বিবেচনা করেছেন; তার একমাত্র প্রতিপক্ষ মহিলা রাজনীতিবিদ সামিহা খলিল মূলত একটি উপজীব্য হিসাবে বিবেচিত ছিলেন।[১] আরাফাত ৮৮.২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন আর খলিল পান মাত্র ১১.৫ শতাংশ ভোট।[২]

একনজরে ২০ জানুয়ারি ১৯৯৬ এর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল
প্রার্থী দল ভোট %
ইয়াসির আরাফাত ফাতাহ ৬৩১,৪৮২ ৮৮.২
সামিহা খলিল ডিএফএলপি ৮২,৩৩৬ ১১.৫
মোট বৈধ ভোট ৭১৫,৯৬৬ ৯৭
ভোটদানের হার ৭৩৬,৮২৫ ৭১.৬৬
নিবন্ধনকৃত ১,০২৮,২৮০ -
Source: Central Elections Commission, প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল, ১৯৯৬

আইনসভা নির্বাচন[সম্পাদনা]

আইনসভা নির্বাচনে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত প্রতিটি আসনের প্রতিনিধি সহ বহু সদস্যের নির্বাচনী এলাকা থেকে মোট ৮৮ জন পিএলসি সদস্য নির্বাচিত হন। খ্রিস্টান এবং সামারিতান সম্প্রদায়ের জন্য কিছু আসন বরাদ্ধ করা ছিল। পশ্চিম তীরের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫১ টি আসন, গাজা উপত্যকায় ছিল ৩৭ টি আসন। নির্বাচনে ২৫ জন মহিলা প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ জন মহিলা প্রার্থী জয়লাভ করতে সমর্থ হন। ফলাফল নিম্নরূপ ছিল:[২]

২০ জানুয়ারী ১৯৯৬ এর সংক্ষিপ্তসার
প্যালেস্টাইনের আইন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল (সম্পাদনা)
দল ভোট % আসন
ফাতাহ বা ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলন ( হারাকত আল-তাহরীর আল-ফিলিস্তিনি ) . ৫৫
স্বতন্ত্র ফাতাহ - .
স্বতন্ত্র ইসলামপন্থীরা - .
স্বতন্ত্র খ্রিস্টানরা - .
স্বতন্ত্র - . ১৫
শমরীয়রা - .
অন্যান্য - .
শূন্য - -
মোট আসন সংখ্যা ৮৮
Turnout  % ৭২
সূত্র: কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন, Results of first General election, 1996. এখানে সহজলভ্য

ইস্রায়েলি বাধা[সম্পাদনা]

ইসরায়েলিদের যথেষ্ট বাধা সত্ত্বেও[৩] পিসিবিএস প্রয়োজনীয় ভোটার নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়। বাধাগুলির মধ্যে মানচিত্র এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহে দীর্ঘ বিলম্ব অন্তর্ভুক্ত ছিল, কেবলমাত্র হিব্রু নথিগুলির প্রতি জোর দেওয়া হয়; "... তারা জেরুজালেমের বিষয়গুলিকে বাধা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল .."; গাজায়, ছয় টন ভোটার নিবন্ধন কার্ড ইরেজ সংযোগস্থলে রাখা হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তাদের "তল্লাশি চৌকির চারপাশে থাকা কংক্রিটের বাধাগুলি হাতে দিয়ে” অপসারণ করতে হয়েছিল।

নির্বাচনের গুরুত্ব[সম্পাদনা]

ওপিটি-তে নির্বাচন ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারের ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রয়োগ করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়, তবে তা ইস্রায়েলি দখলদারির প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হয়।[৪] নির্বাচনটি অসলো চুক্তির কাঠামোতে অনুষ্ঠিত হয়, যার অর্থ পিএনএর ক্ষমতা কেবলমাত্র সংস্কৃতি, শিক্ষা, পরিচয় পত্র এবং জমি ও পানি বিতরণের মতো বিষয়ে সীমাবদ্ধ ছিল (এবং আছে)।

যাইহোক, দখলদারিত্বের অধীনে নির্বাচন এবং নতুন রাজনৈতিক সত্তা গঠন সহ রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিবর্তনগুলি ওসলো চুক্তির মতো জেনেভা কনভেনশনের বিপরীতে এবং এইভাবে অবৈধ ছিল।[৫] কিছু ফিলিস্তিনি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ক্ষমতা প্রদানের কারণে নির্বাচনকে তারা প্রতীকীর চেয়ে কিছুটা বেশি দেখছেন।

ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলিতে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সীমিত; তল্লাশি চৌকি এবং পৃথকীকরণ দেওয়ালসমূহ ইতোমধ্যে সমস্ত সামাজিক কার্যকলাপকে বাধা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। সংসদ কাজ করতে পারে না, কারণ স্বাধীনভাবে চলাচল করা সম্ভব নয়, বিশেষ করে গাজা এবং পশ্চিম তীরের মধ্যে। এ ছাড়াও ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে শত্রুতা পার্লামেন্টে সঠিক ভাবে কাজ করতে বাধা দেয়।

তদুপরি, পিএনএ এবং সংসদ ফিলিস্তিনি প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করে না (যেখানে পিএলও অনুমোদিত)।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Nordlinger, Jay (২০১২-০৩-২০)। Peace, They Say: A History of the Nobel Peace Prize, the Most Famous and Controversial Prize in the Worldআইএসবিএন 9781594035999 
  2. Central Elections Commission (CEC), Results of first General election, 1996. Here available ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে
  3. Nigel Parsons (2005), The Politics of the Palestinian Authority, pp.200-201
  4. UN General Assembly, Resolution 58/292. Status of the Occupied Palestinian Territory, including East Jerusalem ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ আগস্ট ২০১২ তারিখে. 17 mei 2004 (doc.nr. A/RES/58/292).
  5. International Committee of the Red Cross (ICRC), Convention (IV) relative to the Protection of Civilian Persons in Time of War. Geneva, 12 August 1949 – Commentary ARTICLE 47. 2005

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:ফিলিস্তিনের নির্বাচন টেমপ্লেট:Palestinian governments