প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনাটি হোল একটি শস্য বীমা যা ১৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১৬ সালে প্রথম ভারত সরকার দ্বারা চালু করা হয়েছিল। এই যোজনার মুখ্য উদ্দেশ্য হোল যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে ফসলের ক্ষতির হাত থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। ভারত সরকার এই যোজনায় ৮,৮০০ কোটি টাকা খরচ করার পরিকল্পনা করেছে।[১]

প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনাটি পূর্বের দুটি যোজনা যথাক্রমে, ‘জাতীয় কৃষি বীমা প্রকল্প’ এবং ‘সংশোধিত জাতীয় কৃষি বীমা প্রকল্প’ কে প্রতিস্থাপন করেছে। পূর্বের এই যোজনা দুটি যদিও একই উদ্দেশ্য নিয়ে গঠন করা হয়েছিল, তবে সরকারী ভর্তুকিতে ক্যাপিং এর ব্যবস্থা থাকায় কৃষকগণ সম্পূর্ণ দাবীর অর্থ অনেকাংশেই পেতেন না অথবা বীমার অর্থ পেতে অনেক সময় লেগে যেত।[২]

প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় এই অন্তর্নিহিত ত্রুটিগুলি দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং সরকারী ভর্তুকিতে ক্যাপিং না থাকায় কৃষকগণ এখন দাবিকৃত পরিমাণের সম্পূর্ণটাই লাভ করতে পারেন এবং বীমার অর্থ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের হাতে দ্রুত পৌছায় সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে।[৩]

উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

এই যোজনার মূল উদ্দেশ্যগুলি নিচে তালিকাভুক্ত করা হলঃ

  • এই যোজনার প্রধান উদ্দেশ্য হল ফসল বপনের সময় থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কীটপতঙ্গ বা রোগের কারনে ফসলের ক্ষতির হাত থেকে কৃষকদের নিরাপত্তা প্রদান করা।
  • কৃষকদের ক্ষতি পূরণের মাধ্যমে তাদের আয় স্থিতিশীল করা এবং কৃষি কাজে উৎসাহিত করা।
  • কৃষকদের উদ্ভাবনী ও আধুনিক কৃষি পদ্ধতি গ্রহণে উৎসাহিত করা।
  • ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে শস্য বৈচিত্র্য বজায় রাখা ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করা।[৪]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিচে উল্লেখ করা হলঃ

  • এই বীমার আওতায় সব ধরনের ফসল যেমন রবি, খরিফ, বাণিজ্যিক ও উদ্যানজাত ফসলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
  • এই যোজনায় কৃষকদের প্রিমিয়ামের হার খুবই কম রাখা হয়েছে। খরিফ ফসলের ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের হার হোল ২% এবং রবি ফসলের ক্ষেত্রে শুধু মাত্র ১.৫%৷ বার্ষিক বাণিজ্যিক এবং উদ্যান ফসলের ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের হার হোল ৫%।
  • এই বীমার সরকারি ভর্তুকির ক্ষেত্রে কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। ব্যালান্স প্রিমিয়াম ৯০ শতাংশ হলেও তা সরকার বহন করবে।
  • এই যোজনায় কৃষকদের সুবিধার্থে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে যার মাধ্যমে কৃষকরা অবিলম্বে শুধুমাত্র মোবাইলের মাধ্যমে তাদের ফসলের ক্ষতির মূল্যায়ন করতে পারবেন।[৫][৬][৭]

ঝুঁকি কভারেজ[সম্পাদনা]

এই যোজনায় কৃষকগণ কি ধরণের ঝুঁকির ক্ষেত্রে বীমা কভারেজ পাবেন তা নিচে বর্ণনা করা হলঃ

ফলনের ঝুঁকিঃ[সম্পাদনা]

এই বীমা ফসলের বপন থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত ক্ষতির ঝুঁকি বহন করে থাকে। এই বীমা অপ্রতিরোধযোগ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, প্লাবন, জলবদ্ধতা, খরা, শুষ্কতা, ভূমিধস, ঝড়, বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি বা দাবানলের মত প্রাকৃতিক আগুন, কীটপতঙ্গ বা রোগের আক্রমণের কারণে ফলনের ক্ষতির ঝুঁকি বহন করে। এই ধরনের ব্যাপক ক্ষতির ক্ষেত্রে এলাকা ভিত্তিক পদ্ধতিতে ক্ষতি কভার করা হয়ে থাকে।

রোপণের ঝুঁকিঃ[সম্পাদনা]

বীমাকৃত এলাকাটিতে যদি বৃষ্টিপাতের ঘাটতি বা প্রতিকূল মৌসুমী অবস্থার কারণে কৃষক ফসল রোপণ করতে না পারেন তবে কৃষকগণ বীমাকৃত ফসলটির ক্ষতিপূরণ দাবীর যোগ্য হবেন এবং বীমাকৃত রাশির সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত দাবী করতে পারেন।

মাঝামাঝি মৌসুমের ঝুঁকিঃ[সম্পাদনা]

ফসল ফলনের সময় যদি প্রতিকূল মৌসুমী অবস্থার কারণে ফসলের ক্ষতি হয় যেমন বন্যা বা তীব্র খরা, দীর্ঘায়িত শুষ্কতা ইত্যাদির জন্য ফলন স্বাভাবিক ফলনের ৫০% এর কম হয়, সেক্ষেত্রে বীমাকৃত কৃষকদের অবিলম্বে ত্রাণ প্রদান করা হয়।

ফলন-পরবর্তী ঝুঁকিঃ[সম্পাদনা]

ফসল কাটার দুই সপ্তাহের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি বা অমৌসুমি ঝড়ের কারণে যদি ক্ষেতে শুকানোর জন্য কেটে রাখা ফসলের ক্ষতি হয় তবে কৃষকরা ক্ষতিপূরণ দাবী করতে পারবেন।

স্থানীয় দুর্যোগের ঝুঁকিঃ[সম্পাদনা]

বিভিন্ন স্থানীয় দুর্যোগ যেমন শিলাবৃষ্টি, ভূমিধস, জলাবদ্ধতা, মেঘ ফেটে যাওয়ার মতো দুর্যোগগুলির কারনে ফসলের ক্ষতিগুলিকেও এই যোজনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সাধারণ বর্জনঃ[সম্পাদনা]

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া অন্য কোন কারনে ফসলের ক্ষতি হলে যেমন দূষিত ক্ষতি, যুদ্ধ বা পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা এবং অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য কারনে সৃষ্ট ক্ষতিগুলি এই যোজনার অন্তর্ভুক্ত নয়।[৮][৯][১০]

বীমা কোম্পানির তালিকা[সম্পাদনা]

কৃষি ও কৃষক কল্যাণ বিভাগ এই ফসল বীমা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভারতের ‘কৃষি বীমা কোম্পানি’ এবং আর্থিক শক্তি, পরিকাঠামো, দক্ষতা প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে কিছু বেসরকারী বীমা কোম্পানিকে মনোনীত করেছে।

বীমা কোম্পানির তালিকাটি নিচে উল্লেখ করা হলঃ

  • এগ্রিকালচার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড
  • আইসিআইসিআই-লম্বার্ড জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
  • এইচডিএফসি-ইআরজিও জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
  • ইফকো-টোকিও জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
  • চোলামন্ডলাম এমএস জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
  • বাজাজ আলিয়াঞ্জ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
  • রিলায়েন্স জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
  • ফিউচার জেনারেল ইন্ডিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
  • টাটা-এআইজি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
  • এসবিআই জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
  • ইউনিভার্সাল সোম্পো জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড[১১][১২]

বীমার আবেদন[সম্পাদনা]

প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমার আবেদন অনলাইন, অফলাইন এবং অ্যাপের মাধ্যমে করা যায়। নিচে পদ্ধতিগুলি উল্লেখ করা হলঃ

অনলাইন আবেদন[সম্পাদনা]

  • অনলাইন আবেদনের জন্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে এবং হোম পেজে ‘ফার্মার কর্নার’ এ ক্লিক করতে হবে।
  • ‘গেস্ট ফার্মার্স’-এ ক্লিক করে গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ পূরণ করে একটি নতুন ব্যবহারকারী অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
  • নিউ ফার্মার ইউসার রেজিস্ট্রেশনের পর লগইন করে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার জন্য আবেদন করা যাবে।[১৩][১৪]

অফলাইন আবেদন[সম্পাদনা]

  • অফলাইন আবেদনের জন্য নিকটস্থ বীমা কোম্পানিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে।
  • ফর্মটি যথাযত পূরণ করে এবং সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযুক্ত করে সাথে প্রিমিয়াম পরিমাণ জমা করতে হবে।
  • আবদেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে একটি রেফারেন্স নম্বর দেওয়া হবে যার সাহায্যে আবেদনের স্থিতি জানা যাবে।[১৫]

অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন[সম্পাদনা]

  • মোবাইলের ‘প্লে স্টোর‘ এ গিয়ে ‘ক্রপ ইন্স্যুরেন্স’ লিখে সার্চ করতে হবে।
  • ‘ইন্সটল’ এ ক্লিক করলে অ্যাপ্লিকেশনটি মোবাইলে ইনস্টল হয়ে যাবে।
  • অ্যাপটি খুলে প্রথমে ‘রেজিস্টার অ্যাস ফার্মার’ থেকে রেজিস্ট্রেশন করার পর বীমার আবেদন করা যাবে।[১৬][১৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]