ডানকান লিভিংস্টোন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ডানকান লিভিংস্টোন (Donnchadh MacDhunléibhe) (৩০ মার্চ ১৮৭৭ টর্লোইস্ক, আইল অভ মুল - ২৫ মে ১৯৬৪ প্রিটোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা) ছিলেন মুল দ্বীপে জন্ম নেওয়া একজন স্কটিশ গ্যালিক কথাসাহিত্যিক। তবে জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতে কাটিয়েছেন।

পারিবারিক পটভূমি[সম্পাদনা]

ডানকান লিভিংস্টোন ছিলো কবির দাদার-দাদার-দাদার-দাদার নাম, যিনি ১৭৪৬ সালে কালোডেনের যুদ্ধে টর্লোইস্কের অ্যালান ম্যাকলিনের অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন। ডানকানের সাথে তাঁর ভাই, শ্যালক এবং পিতাও ছিলেন যিনি যুদ্ধক্ষেত্রেই মারা গিয়েছিলেন। স্থানীয় মৌখিক লোককথা অনুসারে ডানকান লিভিংস্টোন অ্যানে ম্যাকলিনের সাথে পলাতক ছিলেন, যার বাবা হেক্টর ছিলেন কোলের ম্যাকলিন গোত্রের ১০তম গোত্রপ্রধান ডোনাল্ডের উত্তরাধিকার-বঞ্চিত বড় ছেলে এবং যার মা আইসোবেল ছিলেন ম্যাকলিয়ড গোত্রের ১৭তম গোত্রপ্রধান রুইয়েরি মিয়ারের একমাত্র কন্যা। পলায়নের পরে ডানকান এবং অ্যানকে দম্পতি হিসেবে মেনে নিয়েছিলো ম্যাকলিন। ডানকান তাঁর স্ত্রীর সম্মানে মো রন গিয়াল ডাইলিয়াস (Mo Rùn Geal Dìleas) গানটি রচনা করেছিলেন বলেও জানা যায়।[১]

কবির দাদা আলেকজান্ডার লিভিংস্টোন সম্পর্কে বলা হয় যে তিনি আফ্রিকান এক্সপ্লোরার এবং মিশনারি ডেভিড লিভিংস্টোন এর চাচা ছিলেন।[২]

জীবনগাঁথা[সম্পাদনা]

ডানকান লিভিংস্টোন আইল অফ মুলের টর্লোইস্কের কাছে রিডলে তার দাদার ছোট্ট গোলাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ডোনাল্ড লিভিংস্টোন (Dòmhnall Mac Alasdair 'ic Iain 'ic Dhòmhnall 'ic Dhonnchaidh) (১৮৪৩-১৯২৪) ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রী এবং প্রস্তর-রাজমিস্ত্রি। কবির মা জেন ম্যাকিন্ত্রে (Sine nighean Donnchaidh mhic Iain) (১৮৪৫-১৯৩৮) ব্যালাচুলিশের বাসিন্দা ছিলেন এবং যাকে বলা হয়ে থাকে গ্যালিক কবি ডানকান বান ম্যাকিন্ত্রের (১৭২৪-১৮১২) নাতি। কবি তার বাবামায়ের সাত সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান এবং তিনি যে বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে বাড়িটির রূপরেখা এখনও দেখা যেতে পারে।[৩]

ডানকানের বাবা-মা ১৮৭২ সালে গ্লাসগোতে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর মা গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করতেন। তাঁর বাবা কানাডায় থাকতেন এবং কাঠের ঘর নির্মাণে কাজ করতেন। ডানকান যখন ১৮-মাস বয়সী ছিলেন, তখন তার পরিবার আইল অভ মুলের টবারমারিতে চলে যায় এবং সেখানেই তিনি শিক্ষিত হন।[৪]

লিভিংস্টোন যখন ১৬ বছর বয়সী তখন তার পরিবার গ্লাসগোতে ১২৬ টলিসম্যান রোডে চলে যায়। ডানকান প্রথমে একজন কেরানী এবং তারপরে প্রস্তরবিদ্যালয়ের শিক্ষানবিশ হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বোয়ার যুদ্ধ শুরু হলে তিনি জানতে পেরেছিলেন যে টর্লোইস্কের লেয়ার্ড একটি অশ্বারোহী সৈন্যদল তৈরি করছে এবং তত্ক্ষণাত তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন।[৫]

বোয়ার কমান্ডোদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়, ডানকান লিভিংস্টোন গোড়ালিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গ্লাসগোতে ফিরে এসেছিল। ওই সময়ে, তিনি গ্লাসগোর সেন্ট ভিনসেন্ট স্ট্রিটের সেন্ট কলম্বা চার্চ অভ স্কটল্যান্ডের প্রধান দরজার চৌকাঠে Tigh Mo Chridhe, Tigh Mo Gràidh ("আমার হৃদয়ের ঘর, আমার ভালবাসার ঘর") শিলালিপিটি খোদাই করেছিলেন।[৬]

১৯০৩ সালের ৩রা মার্চ, কবি এস.এস. স্টাফর্ডশায়ারের সমুদ্রযাত্রায় সাউদাম্পটন ছেড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরেন। তিনি কখনই স্কটল্যান্ডে ফিরে যাননি এবং শীঘ্রই তার ভাই জন এবং অ্যালেক্সও তার সাথে দক্ষিণ আফ্রিকাতে যোগ দিয়েছিলেন। তিন ভাই ছোট পরিসরে জোহানেসবার্গে একটি ভবন নির্মাণ সংস্থার মালিকানাধীন ছিলেন, তবে তাদের অংশীদারিত্ব ভেঙে দিয়েছিলেন এবং কবি গণপূর্ত বিভাগে যোগদান করেছিলেন। তাঁর ভাই জন সোনার খনির মাধ্যমে উন্নতি করতে গিয়েছিলেন, আর অ্যালেক্স নাটালে গিয়ে আখ চাষী হয়েছিলেন।[৭][৮]

১৯১১ সালে আইল অভ মুলের পেনিঘেলের ক্যাটরিওনা (কেটি) ম্যাকডোনাল্ড দক্ষিণ আফ্রিকা এসে কবির স্ত্রী হন। তবে তাদের কখনও সন্তান হয় নি।[৯]

প্রিটোরিয়ায় স্কটিশ গ্যালিকদের একটি সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। যখন কবি প্রথম সেখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন তখন তিনি, তার স্ত্রী এবং তার অন্য দুইভাইও স্কটিশ ও গ্যালিক উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে বেশ চেনাজানা ও সক্রিয় ছিলেন। ডানকান এবং অ্যালেক্স লিঙ্গস্টোন মিলে ক্যালিডোনিয়ান সোসাইটির জার্নালে একটি গ্যালিক পাতাও সম্পাদনা করেছিলেন। ডানকান প্রিটোরিয়ার সেল্টিক সোসাইটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এটি একটি সাহিত্যিক সমিতি ছিল যা স্কটিশ, আইরিশ এবং ওয়েলশ বংশোদ্ভূতসহ চল্লিশজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। এছাড়াও ডানকান প্রিটোরিয়ায় স্টেট লাইব্রেরিতে একটি সেল্টিক বিভাগও স্থাপন করেছিলেন।[১০]

ঐতিহাসিক রোনাল্ড ব্ল্যাকের মতে, ডানকান লিভিংস্টোন-এর কবিতাগুলো নিঃসন্দেহে ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিবিসির গ্যালিক সম্প্রচারের সহায়তায় শুরু করেছিলেন। ১৯৩৯ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "আ ফাগেইল আইফ্রিক" (A fàgail Aifric) প্রকাশিত হয়। তিনি যুদ্ধের বিষয়ে গ্যালিক ভাষায় আরও তিনটি কবিতা প্রকাশ করেছিলেন।[১১]

ক্যাটরিওনা ১৯৫১ সালের সেপ্টেম্বরে মারা যান এবং ডানকান তার পছন্দের মানুষটিকে হারানোর আঘাত থেকে কখনোই সেরে উঠেননি। এরপরে লেখালেখি ও বোলিং দুটো থেকেই অবসর গ্রহণ করেছিলেন তিনি।[১২]

লিভিংস্টোন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনকে উপহাসের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে রচনা করেন Feasgar an Duine Ghil ("শ্বেতাঙ্গদের সন্ধ্যা বেলা") কবিতাটি।[১৩]

ন্যাশনাল পার্টির উত্থান এবং বর্ণবাদ সংক্রান্ত নীতি লিভিংস্টোনকে গভীরভাবে সমস্যায় ফেলেছিল। কবির ভাইপো প্রফেসর ইয়ান লিভিংস্টোন স্মরণ করেছেন, "আমি ১৯৫৯ সালে ডানকানকে দেখতে (উগান্ডা থেকে) তার হোটেলে (ইউনিয়ন হোটেল, প্রিটোরিয়া) গিয়েছিলাম। তিনি সেখানকার বাসিন্দা ছিলেন। পরে আমি যখন উগান্ডায় ফিরে এসেছিলাম তখন তিনি আমাকে (১০ পৃষ্ঠার) দীর্ঘ একটি কবিতা পাঠিয়েছিলেন ইংরেজিতে শার্পেভিলি নিয়ে, যেখানে প্রায় ৭৭ জন আফ্রিকানকে পুলিশ (বেশিরভাগ পিছন দিকে) গুলি করে হত্যা করেছিল। এটি স্পষ্টতই তাকে চূড়ান্তভাবে প্রভাবিত করেছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, আমার কাছে কবিতার অনুলিপিটি নেই।"[১৪]

শার্পেভিলি গণহত্যা লিভিংস্টোনকে গ্যালিক ভাষায় Bean Dubha' Caoidh a Fir a Chaidh a Marbhadh leis a' Phoiles ("একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা তার স্বামীর জন্য শোক প্রকাশ করেছেন যাকে পুলিশেরা খুন করেছে") কবিতাটি লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল।[১৫]

তিনি ১৯৬৪ সালের ২৫ মে প্রিটোরিয়ায় মারা যান এবং রোসেটা স্ট্রিট কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।[১৬]

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

"আর্গিলের গ্যালিক সাহিত্য" ( The Gaelic Literature of Argyll) শিরোনামের একটি গবেষণাপত্রে ডোনাল্ড ই. মীক ডানকান লিভিংস্টোনকে একজন "খুব সূক্ষ্ম আধুনিক গ্যালিক কবি" হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে "তিনি বিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে বেশকিছু চমকপ্রদ ভবিষ্যদ্বাণীমূলক চরণ লিখেছিলেন যা ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের শাসনের বিরুদ্ধে একপ্রকার লড়াই। সুতরাং আফ্রিকার গ্যালিক সাহিত্যের যে কোনও উত্থানের জরিপে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবি রয়েছে তার!"[১৭]

একটি প্রবন্ধে, উইলসন ম্যাকলিয়ড ডানকান লিভিংস্টোনকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের "তাৎর্যপূর্ণ কবি যিনি সমালোচকের উপলব্ধি হয়েছিলেন" হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ম্যাকলিউড আরো যোগ করেছেন যে এই জাতীয় কবিদের অবশ্যই "বিচ্ছিন্ন কণ্ঠস্বর হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। আঠারো শতকের পর থেকে গ্যালিক শ্লোকের বেশিরভাগ অংশই দৃঢ়ভাবে ব্রিটিশপন্থী ও সাম্রাজ্যপন্থী ছিলেন, যার মধ্যে ছিলো অঙহেস মোইরিসডান এবং ডেমহ্নল ম্যাকএইডহ সহ বেশ কয়েক জন বিখ্যাত কবিও।[১৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 726.
  2. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 726.
  3. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 726.
  4. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, pages 726-727.
  5. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 727.
  6. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 727.
  7. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 727.
  8. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 727.
  9. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 727.
  10. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 727.
  11. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 727.
  12. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 727.
  13. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, pages 72-75.
  14. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, pages 728-729.
  15. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, pages 74-79, 728.
  16. Ronald Black (1999), An Tuil: Anthology of 20th Century Scottish Gaelic Verse, page 727.
  17. The Gaelic Literature of Argyll ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ আগস্ট ২০২০ তারিখে by Donald E. Meek.
  18. Theo van Heijnsbergen and Carla Sassi, Within and Without Empire: Scotland Across the (Post)colonial Borderline, page 75.