জেলেকন্যা ও কাঁকড়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জেলেকন্যা ও কাঁকড়া হল মহাকোশলের লোক-কাহিনীতে ভেরিয়ার এলউইন কর্তৃক সংগৃহীত একটি ভারতীয় রূপকথা[১] এটি কুরুখের বস্তার রাজ্যের চিত্রকূটে বসবাসকারী একজন মানুষের গল্প।[২]:১৯

সারমর্ম[সম্পাদনা]

একটি নিঃসন্তান কুরুখ দম্পতি তাদের ধানের ক্ষেতে একটি লাউ খুঁজে পেয়ে তা খেতে শুরু করে। কিন্তু লাউটি তাদের অনুরোধ করেছিল যেন তারা লাউটিকে আলতো করে কাটে। লাউয়ের ভিতরে একটি কাঁকড়া ছিল যাকে এই দম্পতি দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মহিলাটি তার পেটে একটি ঝুড়ি বেঁধে গর্ভবতী হওয়ার ভান করে এবং তারপরে কাঁকড়াটির জন্ম দেওয়ার দাবি করে।

সময়ের সাথে সাথে দম্পতি তার বিয়ে দেয়। কিন্তু তার স্ত্রী একটি কাঁকড়ার সাথে বিবাহ পছন্দ করে নি। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঘুমিয়ে থাকার সময় সে লুকিয়ে বেরিয়ে পড়ে, কিন্তু কাঁকড়াটি তার আগেই বেরোয়। কাঁকড়াটি একটি বটগাছকে জিজ্ঞেস করে সে কার; বটগাছ উত্তর দেয় যে সে তার। কাঁকড়াটি বটগাছটিকে নিচে পড়ে যেতে আদেশ দেয়, তারপর গাছের ভেতর তার কাঁকড়ার আকৃতির পরিবর্তে মানুষের আকৃতি ধারণ করে। তার স্ত্রী অজান্তেই একটি নাচের অনুষ্ঠানে তার সাথে দেখা করে এবং তাকে তার অলঙ্কার উপহার দেয়। স্ত্রী আসার আগেই সে ফিরে এসে তার কাঁকড়া আকৃতি ধারণ করে সব অলঙ্কার ফিরিয়ে দেয়। যার ফলে তার স্ত্রী ভয় পেয়ে যায়।

তার স্ত্রী পুনরায় লুকিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করে কিন্তু কাঁকড়াটিকে লক্ষ্য করার জন্য পিছনে থেকে যায়। কাঁকড়া তার মানব আকৃতি ধারণ করার পর তার স্ত্রী বটগাছটিকে জিজ্ঞেস করল যে এটা কার? বটগাছ উত্তর দেয় যে এটা তার; তার স্ত্রী বটগাছটিকে নিচে পড়ে যেতে আদেশ দেয় এবং কাঁকড়ার আকৃতিকে পোড়ানোর আদেশ দেয়। তার স্বামী তাকে নাচের অনুষ্ঠানে খুঁজে না পেয়ে ফিরে আসে। স্ত্রী লাফ দিয়ে তার ওপর পড়ে এবং তাকে ধরে ঘরে নিয়ে যায়।

বিশ্লেষণ[সম্পাদনা]

গল্পের ধরন[সম্পাদনা]

লোকসাহিত্যিক স্টিথ থম্পসন এবং ওয়ারেন রবার্টস আন্তর্জাতিক আর্নে-থম্পসন সূচকের উপর ভিত্তি করে দক্ষিণ এশিয়ার লোককাহিনীগুলির জন্য একটি সূচক তৈরি করেছেন। তাদের যৌথ কাজ টাইপস অফ ইণ্ডিক ওরাল টেলস শিরোনামে তারা গল্পটিকে টাইপ ৪৪১ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। "হ্যান্স মাই হেজহগ" একটি বিবিধ টাইপ যা এখনো পতি হিসাবে বিভিন্ন প্রাণী চক্রের অন্তর্গত। একজন মনুষ্য কুমারী এবং একটি মন্ত্রশাপিত প্রাণীর মধ্যে বিবাহ নিয়ে গল্পগুলো এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। তবে হারিয়ে যাওয়া বা নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান সংক্রান্ত গল্পগুলো এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নয়।[৩]

মোটিফ[সম্পাদনা]

এলউইন উল্লেখ করেছেন যে কাঁকড়াকে একগামী এবং গার্হস্থ্য বিশ্বস্ততার উদাহরণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[২]:২৩২

গল্পটিতে বি৬৪৭.১.১ মোটিফ রয়েছে। যা "কাঁকড়া আকারের ব্যক্তির সাথে বিবাহ" নির্দেশ করে।[৪]

বিভিন্ন ধরণ[সম্পাদনা]

প্রফেসর স্টুয়ার্ট ব্ল্যাকবার্ন গল্পটির কাঁকড়া স্বামীর সাথে ভারতের উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলির মধ্যে (যেমন, গোন্ডি, কুরুক এবং সাঁওতাল), সেইসাথে বার্মা (শান) এবং উত্তর লাওসে (মিয়েন) প্রচলিত গল্পগুলোতে ভিন্নতা খুঁজে পান।[৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

  • বর হিসাবে পশু
  • গাধা
  • ছাগলের মেয়ে
  • গোল্ডেন ক্র্যাব
  • প্রিন্স ক্রাউফিশ
  • শূকর রাজা

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Elwin, Verrier. Folk-tales of Mahakoshal. [London]: Pub. for Man in India by H. Milford, Oxford University Press, 1944. pp. 134-135.
  2. Angela Carter, The Old Wives' Fairy Tale Book, Pantheon Books, New York, 1990 আইএসবিএন ০-৬৭৯-৭৪০৩৭-৬
  3. Thompson, Stith; Roberts, Warren Everett (১৯৬০)। Types of Indic Oral Tales: India, Pakistan, And Ceylon। Suomalainen Tiedeakatemia। পৃষ্ঠা 64–65। 
  4. Thompson, Stith; Balys, Jonas. The Oral Tales of India. Bloomington: Indiana University Press, 1958. p. 82.
  5. Blackburn, Stuart. "Coming Out of His Shell: Animal-Husband Tales in India". In: Syllables of Sky: Studies in South Indian Civilization. Oxford University Press, 1995. p. 46. আইএসবিএন ৯৭৮০১৯৫৬৩৫৪৯২.