জাহাজডোবা নাবিকের উপাখ্যান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

"জাহাজডোবা নাবিকের উপাখ্যান" হল "রাজার খনি"-র উদ্দেশ্যে যাত্রার একটি প্রাচীন মিশরীয় গল্প। এই গল্পটি মধ্য রাজ্যের আমলে রচিত।

ঐতিহাসিক তথ্য[সম্পাদনা]

অন্ততপক্ষে একটি সূত্র থেকে জানা যায় যে সেন্ট পিটারসবার্গের সাম্রাজ্যিক জাদুঘরে রক্ষিত একটি প্যাপিরাসে গল্পটি গ্রন্থিত রয়েছে,[১] কিন্তু এটি কোথা থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল তার কোনও তথ্য জানা যায় না।[২] অপরদিকে এও বলা হয় যে, ১৮৮১ সালে ভ্লাদিমির গোলেনিশ্চেফ প্যাপিরাসটি আবিষ্কার করেছিলেন (এবং এটি মধ্য রাজ্যে লিখিত বলে উল্লেখ করেছিলেন)।[৩]

যে লিপিকর এটির প্রতিলিপি করেন তিনি নিজেকে "উন্নতমানের অঙ্গুলিসমূহ" (চতুর অঙ্গুলিসমূহ[৪]) বলে দাবি করেছিলেন। যদিও তিনি প্রতিলিপি করার সময় কয়েকটি ছোটোখাটো ভুল করেছিলেন। এই লিপিকরের নাম আমেনা[৫] বা আমেনি-আমেন্না।[৬] দ্য গিনেস বুক অফ রেকর্ডস-এর ১৯৮৭ সংস্করণে প্যাপিরাসের উপর প্রাচীনতম অদ্যাবধি বিদ্যমান সাক্ষর হিসেবে আমেনার সাক্ষরটির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।[৭]

কাহিনি-সারাংশ[সম্পাদনা]

উপাখ্যানের শুরুতে দেখা যায় এক অনুগামী (নাবিক) সমুদ্রযাত্রা থেকে প্রত্যাবর্তনের কথা ঘোষণা বা বর্ণনা করছেন।[৮][৯] তিনি স্পষ্টতই এক ব্যর্থ অভিযান থেকে ফিরছিলেন এবং রাজা কীভাবে তাঁকে গ্রহণ করবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এক অনুচর তাঁকে পুনরায় আশ্বস্ত করেন[১০] এবং রাজার সামনে কীভাবে আচরণ করতে হবে সে বিষয়ে উপদেশ দেন একটি প্রবাদ উল্লেখ করে "এক মানুষের মুখই তাকে রক্ষা করে।"[১১] প্রভুকে সাহস দিতে অনুচরটি তার আগের একটি সমুদ্রযাত্রার কাহিনি উল্লেখ করে, যে যাত্রায় সে এক বিপর্যয়কে অতিক্রম করেছিল, যার মধ্যে ছিল এক দেবতা ও রাজার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গও।

দেড়শো নাবিকের এক জাহাজের নাবিক হঠাৎ হাওয়ায় আট কিউবিট উচ্চতার এক ঢেউ উঠে জাহাজটি উল্টে যায় এবং নাবিকটি জলস্রোতে ভেসে উপস্থিত হয় এক দ্বীপে। নাবিকটি সেখানে আশ্রয় ও খাদ্য লাভ করেছিল (সে বলে "সেখানে এমন কিছুই ছিল না যা নেই")।[১২] দেবতাদের উদ্দেশ্যে অগ্নি উৎসর্গের সময় সে বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পেল, অনুভব করল পৃথিবী কেঁপে উঠল এবং দেখল এক দৈত্যাকার সর্প তার দিকে এগিয়ে আসছে। সাপটি তিনবার তাকে জিজ্ঞাসা করল কে তাকে সেই দ্বীপে নিয়ে এসেছে। নাবিকটি যখন উত্তর দিতে পারল না, তখন সাপটি তাকে নিজের বাসায় নিয়ে গেল এবং আবার তিনবার প্রশ্নটি করল। এইবার নাবিকটি নিজের কাহিনি বলল এবং এ-ও জানাল যে সে রাজার হয়ে এক অভিযানে বেরিয়েছিল।

সাপটি তাকে ভয় পেতে বারণ করল এবং বলল যে দেবতা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং সেই দ্বীপে নিয়ে এসেছেন। সাপটি এ-ও বলল যে, চার মাস পরে সেই নাবিকটির পরিচিত নাবিকেরাই তাকে উদ্ধার করতে এই দ্বীপে আসবে ও তাকে উদ্ধার করে দেশে নিয়ে যাবে। সাপটি তারপর নিজের একটি বেদনাদায়ক কাহিনি তাকে শোনালো। সে বলল যে, সে তার চুয়াত্তর জন আত্মীয় ও এক কন্যাকে নিয়ে এই দ্বীপে বাস করত। তারপর একটি নক্ষত্র সেখানে খসে পড়ল এবং "তারা সবাই তার আগুনে পুড়ে মারা গেল"।[১৩] কোনও কোনও অনুবাদে দেখা যায় যে, কন্যাটি রক্ষা পেয়েছিল; অন্যগুলিতে দেখা যায় কন্যাটিও অন্যদের সঙ্গে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। সাপটি নাবিকটিকে সাহসী হতে ও নিজের হৃদয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে উপদেশ দিল এবং বলল যে, সে তা করতে পারলে সে তার পরিবারের কাছে ফিরতে পারবে।

তখন নাবিকটি সাপটিকে কথা দিল যে সে সাপটির শক্তির কথা রাজাকে বলবে এবং সাপটিকে গন্ধরস ও অন্যান্য ধূপ সহ অনেক মূল্যবান উপহার প্রেরণ করবে, কিন্তু সাপটি হেসে বলল যে, নাবিকটি ধনী নয় কিন্তু সে (সাপটি) পুন্তের অধীশ্বর এবং দ্বীপটিও ধূপে সমৃদ্ধ। তাছাড়া চলে যাওয়ার পর নাবিকটি আর এই দ্বীপটিকে দেখতেও পাবে না। কারণ, এটি তখন জলে পরিপূর্ণ হবে। নাবিকের জাহাজটি তাকে উদ্ধার করতে উপস্থিত হল। সাপটি নাবিকটিকে বলল "তার শহরে আমার সুখ্যাতি করতে" এবং তাকে মশলা, ধূপ, গদদন্ত, শিকারী কুকুর ও বেবুনের মতো মূল্যবান উপহার দিতে।

নাবিকটি গৃহে প্রত্যাবর্তন করল এবং দ্বীপ থেকে আনা উপহারগুলি রাজাকে প্রদান করল। রাজাও তাকে নিজের অনুচর করে নিলেন এবং অনেক ভূমিদাস প্রদান করলেন। উপাখ্যানের অন্তে প্রভুটি কথককে বলছেন, "চমৎকার হতে যেও না (অর্থাৎ, উদ্ধত হয়ে কাজ কোরো না) বন্ধু; উষাকালে হাঁসকে (আক্ষরিক অর্থে, পাখিকে) কেন জল দেবে যখন সকালেই সেটিকে বলি দেওয়া হবে?"[১৪]

টীকা ও বিশ্লেষণ[সম্পাদনা]

For some, it is a transparent tale intended as a source of inspiration or reassurance for the noble mind, perhaps similar to something like a courtly creation intended for the royal ear or for the consideration of aristocrats.[১৫] Nevertheless, interpretation of the story has changed from the naive initial understanding of the story as a simplistic tale of the folk tradition, into a sophisticated analysis, in which the narrative is shown to have complexity and depth: a shipwrecked traveller engages upon a spiritual endeavour (or quest), journeying through the cosmos, to meet a primordial god, providing to the traveller a gift of moral vision with which to return to Egypt.[১৬] Further, Richard Mathews writes that this "oldest fantasy text contains archetypal narrative of the genre: an uninitiated hero on a sea journey is thrown off course by a storm, encounters an enchanted island, confronts a monster, and survives, wiser for the experience," commenting additionally that the monster (snake) is the prototype for "the greatest fantasy monster of all time – the dragon, sometimes called the 'wurm'."[১৭]

উপাখ্যানটির সূচনা এমন এক কাঠামো কৌশলের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে যেখানে এক অনুচর বা "অনুগামী" (প্রথাগতভাবে—প্যাপিরাসে উল্লিখিত না হলেও—যার মাধ্যমে "নাবিক—"-কে বোঝানো হয়েছে) তার প্রভুকে ("মেয়র", যদিও এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে তাদের পদমর্যাদা সমান[১৮]) সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। "অনুচর"-এর প্রভু স্পষ্টতই এক ব্যর্থ অভিযান থেকে ফিরছিলেন এবং রাজা কীভাবে তাকে গ্রহণ করবেন সেই বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. The Project Gutenberg EBook of The Literature of the Ancient Egyptians by E. A. Wallis Budge retrieved 17:21 29.9.11
  2. Lichtheim, Miriam Ancient Egyptian Literature. University of California Press, 1975 আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২০-০২৮৯৯-৯ p. 211. [১]
  3. The Red Land: the illustrated archaeology of Egypt's Eastern Desert; by Steven E. Sidebotham, Martin Hense, Hendrikje M. Nouwens retrieved approximately 16;16 29.9.11
  4. Fordham University ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ আগস্ট ২০১৪ তারিখে retrieved 16;36 29.9.11
  5. Parkinson, Richard B.; Stephen Quirke Papyrus University of Texas Press 1995 আইএসবিএন ৯৭৮-০-২৯২-৭৬৫৬৩-৪ p.29 [২]
  6. Fordham University ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ আগস্ট ২০১৪ তারিখে retrieved 16;36 29.9.11
  7. Alan Russell, সম্পাদক (১৯৮৬)। "Autographs and signatures"। The Guinness Book of Records 1987। Guinness Books। পৃষ্ঠা 86। আইএসবিএন 0-85112-439-9 
  8. University of St Andrews this reference address retrieved from external links-[The hieroglyphic of The Shipwrecked Sailor, following the transcription on pp. 41-48 of Blackman (1932)] at 19:37 29.9.11
  9. Egyptian Literary Compositions of the Middle Kingdom and Second Intermediate Period[৩]
  10. Parkinson, R.B. The Tale of Sinuhe and Other Ancient Egyptian Poems 1940-1640 B.C. Oxford University Press 1999 আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-২৮৩৯৬৬-৪ p89. [৪]
  11. Baines, John "Interpreting the Story of the Shipwrecked Sailor" The Journal of Egyptian Archaeology, Vol. 76 (1990), pp. 55-72 [৫]
  12. Lichtheim, Miriam Ancient Egyptian Literature University of California Press 1975 আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২০-০২৮৯৯-৯ p212 [৬]
  13. Lichtheim, Miriam Ancient Egyptian Literature University of California Press 1975 আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২০-০২৮৯৯-৯ p213 [৭]
  14. Rendsburg, Gary A. "Literary Devices in the Story of the Shipwrecked Sailor" Journal of the American Oriental Society, Vol. 120, No. 1 (Jan. - Mar., 2000), pp. 13-23
  15. Encyclopedia Britannica online retrieved prior to 19:19 29.9.11
  16. article by J. Baines interpreting the story of the shipwrecked sailor located at JStor retrieved approx 18:01 29.9.11
  17. Mathews, Richard Fantasy: The Liberation of Imagination Routledge 2002 আইএসবিএন ৯৭৮-০-৪১৫-৯৩৮৯০-৭ p6 [৮]
  18. Egyptian Literary Compositions of the Middle Kingdom and Second Intermediate Period[৯]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • George Bass (২০০৪)। A History of Seafaring। Walker and Company। আইএসবিএন 0-8027-0390-9 
  • Bradbury, Louise. (1984–1985). "The Tombos Inscription: A New Interpretation." Serapis, 8, 1–20.
  • Bradbury, Louise. (1996). "Kpn-boats, Punt Trade, and a Lost Emporium." Journal of the American Research Center in Egypt, 33, 37–60.
  • Kitchen, Kenneth A. (1993). "The Land of Punt." In Thurstan Shaw et al. (eds.), The Archaeology of Africa. London: Routledge, 587–608.
  • Segert, Stanislav. (1994). "Crossing the Waters: Moses and Hamilcar." Journal of Near Eastern Studies, 53, 195–203.
  • Redmount, Carol A. (1995). "The Wadi Tumilat and the 'Canal of the Pharaohs'." Journal of Near Eastern Studies, 54, 127–35.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]