জন কার্টল্যান্ড রাইট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জন কার্টল্যান্ড রাইট (ইংরাজী: John Kirtland Wright) (১৮৯১-১৯৬৯) ছিলেন একজন আমেরিকান ভূগোলবিদ। তিনি তাঁর কার্টোগ্রাফি, জিওসোফি এবং ভৌগোলিক চিন্তার ইতিহাস অধ্যয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন শাস্ত্রীয় পণ্ডিত জন হেনরি রাইট-এর পুত্র এবং উপন্যাসিক মেরি ট্যাপান রাইট, এবং আইনি পণ্ডিত এবং ইউটোপিয়ান উপন্যাসিক অস্টিন ট্যাপান রাইট এর ভাই। ১৯২১ সালের ২১ জানুয়ারী তিনি নিউইয়র্ক নিবাসী ক্যাথরিন ম্যাকগিফার্টকে বিয়ে করেন। তাঁদের তিন সন্তান ছিলেন: অস্টিন ম্যাকগিফার্ট রাইট, গের্ট্রুড হান্টিংটন ম্যাকফারসন এবং মেরি ওলকোট টয়োনবি।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস-এ পিএইচডি করার পরে, ১৯২০ সালে রাইট গ্রন্থাগারিক হিসাবে আমেরিকান জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটিতে নিযুক্ত হন। ১৯২০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে তিনি এজিএস সম্পাদক, ব্যক্তিগত একাডেমিক অবদানকারী এবং শেষ পর্যন্ত ডাইরেক্টর হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর উজ্জ্বল একাডেমিক এবং পেশাদার জীবনের ফলাফল হিসাবে জন কে. রাইটের প্রকাশিত রচনায় তিনটি মূল ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। সে গুলি হল: ভূগোলের সাথে একাডেমিক শাখার (মূলত ইতিহাস) অধিক্রমণ, ভৌগোলিক গবেষণায় আত্মনিষ্ঠা তৈরিতে মানসিক শক্তি ও অতিপ্রাকৃত রাজত্ব এবং একাডেমিক জ্ঞান ভাগ করার গুরুত্ব।

ভৌগোলিক আত্মনিষ্ঠা[সম্পাদনা]

ভূগোলের একটি পর্যায়ে মানুষ ও শারীরিক নিদর্শনগুলিতে আত্মনিষ্ঠার প্রভাবকে উপেক্ষা করার সময় যখন জন কীর্টল্যান্ড রাইট একেবারে পুরোভাগে ছিলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে মন এবং কল্পনার তাৎপর্যকে তিনিই সামনে এনেছিল। বিশেষ করে তিনি মনের বাস্তবিকতা এবং মানসিকতা - উভয়েরই দ্বৈততার উপর জোর দিয়েছিলেন। অধ্যয়নের অঙ্গনে এই অন্তর্ভুক্তিতে তাঁর আগ্রহ ছিল ভৌগোলিক মহাজাগতিক এবং কসমোগ্রাফি বিষয়ে। এর দ্বারা ঐশ্বরিক রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত হ'য়ে "ঈশ্বরের অদৃশ্য সৃষ্টি"র সাথে মানুষ ও স্থানের মধ্যে একটি সংবেদনশীল বন্ধনের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। একেই তিনি তখন ভূমির প্রাকৃতিক ক্ষেত্র, জলবায়ু এবং কার্টোগ্রাফির সাথে তুলনা করেছিলেন (রাইট ১৯২৮)।

ভূগোলের ইতিহাস[সম্পাদনা]

রাইট ভূগোলের ইতিহাস এবং সঠিক ভৌগোলিক রেকর্ডগুলির সংরক্ষণাগারের গুরুত্ব সম্পর্কে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। তিনি ভৌগোলিক বিষয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবগুলি আবিষ্কার এবং নথিবদ্ধ করেছিলেন। খুব ঐকান্তিক আগ্রহের সাথে তিনি গথিক এবং মধ্যযুগীয় গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত ঐশ্বরিক এবং পার্থিব ভৌগোলিক সৌন্দর্যের পরিচয় দেয় এমন উপস্থাপনাগুলিকে নথিবদ্ধ করেন (রাইট ১৯৬৫)। বিশেষ করে এ গুলির মধ্যে ছিল মূলত পঞ্চদশ শতাব্দীর জিওভান্নি লেয়ার্ডোর বিশ্বের মানচিত্রের সাথে সম্পর্কিত বিষয় (রাইট, এজিএস, ১৯২৮)। ১৫ শ শতাব্দীর এই মানচিত্রটি বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং সেটি ১৯০৬ সালে এজিএসকে দেওয়া হয়েছিল। রাইটের পক্ষে এই ঐতিহাসিক এবং কার্টোগ্রাফিক মুগ্ধতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি ক্যালেন্ডার সহ মানচিত্রের অস্বাভাবিক, বিশদ বৈশিষ্ট্য। আমেরিকার প্রকৃত আবিষ্কারের আগের পৃথিবী পৃষ্ঠের চিত্রিত ধারণার এতে ছড়িয়ে রয়েছে। লেয়ার্ডোর পরিচিত পৃথিবীতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কেবল এশিয়া, আফ্রিকা, ভূমধ্যসাগর এবং ইউরোপ। গ্রীক ধারণায় ছিল যে পৃথিবী একটি সমতল ডিস্ক হিসাবে বিদ্যমান। গ্রীক এবং রোমান উৎসের মানচিত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল বিশেষ করে এই গ্রীক ধারণাটি। নথিতে অন্যান্য মধ্যযুগীয় মানচিত্রে শিল্পানুগ অঙ্কণের অভাব রয়েছে দেখা যায় এবং যা প্রাথমিকভাবে মানচিত্রের ফাঁকা স্থান পূরণ করতে ব্যবহৃত হত (বেশিরভাগ অঙ্কণে থাকত প্রাণী)। শেষ অবধি লেয়ার্ডো জেরুসালেমকে শহরের কেন্দ্রস্থল হিসাবে দেখিয়েছে (রাইট, এজিএস, ১৯২৮)। অবশেষে, রাইট ইঙ্গিত দেন যে ইতিহাস এবং ভূগোলের ঝাপসা ক্ষেত্রসমূহের বিষয়টি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ প্রতিটি বিষয়ের যথার্থতার জন্য একে অপরের উপর নির্ভর করে (রাইট, হেনরি হোল্ট, ১৯২৮)। আমেরিকান জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির ডাইরেক্টর পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর রাইট ঐতিহাসিক বর্ণনার জন্য তাঁর অনুসন্ধান চালিয়ে যান এবং রচনা করেন সমাজের ইতিহাস এবং ভূগোলের বিকাশের সাথে তার সংযোগের বিষয়ে (লাইট ১৯৫০)।

রাইট ১৯৩৮ সালে কোরোপ্লিথ মানচিত্র শব্দটি তৈরি করেছিলেন। যদিও ম্যাপিংয়ের কৌশলটি প্রথমে ১৮২৬ সালে চার্লস ডুপিন ব্যবহার করেছিলেন। রাইট কোরোপ্লিথ মানচিত্রের ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। পরিবর্তে ডিসাইমেট্রিক মানচিত্র এর গুণাবলীর প্রতি অনুসন্ধানের দৃষ্টি রাখতে বলেছেন। নয় বছর পরে ১৯৪৭ সালে রাইট জিওসোফি ধারণাটি চালু করেছিলেন। তাঁর মতে এটি হচ্ছে যে কোনও অথবা সমস্ত দৃষ্টিকোণ থেকে ভৌগোলিক জ্ঞানের অধ্যয়ন ক'রে ইতিহাসের ভৌগোলিক নিদর্শন বের করা যা অতীত এবং বর্তমান উভয় ক্ষেত্রেই ভৌগোলিক জ্ঞানের প্রকৃতি এবং প্রকাশের সাথে সম্পর্কিত (রাইট ১৯৪৭)।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

আংশিক গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • কেমব্রিজ হিস্টোরিক্যাল সোসাইটিতে "বিল্ডিংস অ্যান্ড পার্টস অফ ক্যামব্রিজ ইন লংফেলোজ পোয়েমস"। প্রকাশনা III। কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস সোসাইটি, ১৯০৮। (গুগল ই-টেক্সট)
  • জিওগ্রাফিকাল নলেজ ইন ওয়েস্টার্ণ ইউরোপ ফ্রম ১১০০ টু ১২৫০ (গবেষণা প্রবন্ধ) ১৯১৪।
  • এইডস টু জিওগ্রাফিকাল রিসার্চ: বিবলিওগ্রাফিস অ্যান্ড পিরিওডিক্যালস। নিউ ইয়র্ক, আমেরিকান জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি, ১৯২৩।
  • নোটস অন দি নলেজ অফ ল্যাটিটিউস অ্যান্ড লঙ্গিটিউডস ইন দি মিডল এজেস। আইএসআইএস ৫ (১) ৭৬-৯৮, ১৯২৩।
  • দি জিওগ্রাফিকাল লোর অফ দি টাইম অফ দি ক্রুসেডস; এ স্টাডি ইন দি হিস্ট্রি অফ মিডিয়াভেল সায়েন্স অ্যান্ড ট্র্যাডিসন ইন ওয়েস্টার্ণ ইউরোপ। নিউ ইয়র্ক, আমেরিকান জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি, ১৯২৫।
  • দি জিওগ্রাফিকাল বেসিস অফ ইউরোপিয়ান হিস্ট্রি। নিউ ইয়র্ক, এইচ. হল্ট অ্যান্ড কোম্পানি, ১৯২৮।
  • দি লিয়ার্ডো ম্যাপ অফ দি ওয়ার্ল্ড, ১৪৫২ অর ১৪৫৩, ইন দি কলেকশনস অফ দি আমেরিকান জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি। নিউ ইয়র্ক, আমেরিকান জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি, ১৯২৮।
  • সেকশনস অ্যান্ড ন্যাশনাল গ্রোথ: অ্যান এটলাস অফ দি হিস্টোরিকাল জিওগ্রাফি অফ দি ইউনাইটেড স্টেটস'। নিউ ইয়র্ক, আমেরিকান জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি, ১৯৩২।
  • "দি এক্সপ্লোরেশন অফ দি ফিয়োর্ড রিজিয়ন অফ ইস্ট গ্রীনল্যান্ড: এ হিস্টোরিকাল আউটলাইন" নিউ ইয়র্ক, এন.ওয়াই., আমেরিকান জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি, ১৯৩৫।
  • নোটস অন স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যাপিং, উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু দি ম্যাপিং অফ পপুলেশন ফেনোমেনা (উইথ লয়ড এ. জোন্স, লিওনার্ড স্টোন অ্যান্ড টি.ডব্লিউ.বার্চ)। নিউ ইয়র্ক, আমেরিকান জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি, ১৯৩৮।
  • দি ইউরোপিয়ান পজেসন্স ইন দি ক্যারিবিয়ান এরিয়া; এ কমপাইলেশন অফ ফ্যাক্টস কনসারনিং দেয়ার পপুলেশন, ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি, রিসোর্সেস, ইন্ডাসট্রিস, ট্রেড, গভর্ণমেন্ট, অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ইম্পর্টেন্স (উইথ রায়েন আর. প্ল্যাট, জন সি. ওয়েভার অ্যান্ড জনসন ই. ফেয়ারচাইল্ড)। নিউ ইয়র্ক, আমেরিকান জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি, ১৯৪১।
  • এইডস টু জিওগ্রাফিকাল রিসার্চ: বিবলিওগ্রাফিস, পিরিওডিক্যালস, অ্যাটলাস, গেজেটিয়ারর্স, অ্যান্ড আদার রেফারেন্স বুকস (উইথ এলিজাবেথ টি. প্লাট)। ২ডি এডি. নিউ ইয়র্ক, কলম্বিয়া ইউনিভ. প্রেস, ১৯৪৭।
  • জিওগ্রাফি ইন দি মেকিং; দি আমেরিকান জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি, ১৮৫১-১৯৫১। নিউ ইয়র্ক, দি সোসাইটি, ১৯৫২।
  • হিউম্যান নেচার ইন জিওগ্রাফি: ফর্টিন পেপার্স, ১৯২৫-১৯৬৫। কেম্ব্রিজ, হাভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৬৬।

পুরস্কার[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "List of Past Gold Medal Winners" (পিডিএফ)। Royal Geographical Society। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১৫