কাঁটায় কাঁটায় শিক্ষণ
কাঁটায় কাঁটায় শিক্ষণ একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে জনপ্রিয়তা লাভকারী একটি শিক্ষণ কৌশল যাতে ছাত্রছাত্রীদের করতে দেওয়া প্রাক-পাঠ অনুশীলনী থেকে প্রাপ্ত প্রত্যুত্তরগুলি পাঠ শুরুর অল্প কিছুক্ষণ আগে কাঁটায় কাঁটায় গ্রহণ করে ও সেগুলি স্বল্প সময়ে শেষ মুহূর্তে কাঁটায় কাঁটায় পর্যালোচনা করে শিক্ষক তাঁর পাঠের মধ্যে সূক্ষ্ম পরিবর্তন সাধন করেন, যাতে ছাত্রছাত্রীদের কোনও ভুল ধারণা, শেখার কোনও দুর্বলতা বা পাঠের বিষয়সবস্তু সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের অন্য কোনও উদ্বেগের ব্যাপারগুলি পাঠের শুরুতেই আলোচনা করা যায় এবং সেই আলোচনাকে ভিত্তি করে শ্রেণীকক্ষের পাঠে বিভিন্ন কার্যকরী ও সময়-বাঁচানো উপায়ে অগ্রসর হওয়া যায়।[১] একে ইংরেজিতে "জাস্ট-ইন-টাইম টিচিং" (Just-in-time Teaching) বলা হয়।
কাঁটায় কাঁটায় শিক্ষণের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা পাঠ শুরুর আগেই বাসাতেই পাঠ্যবস্তু সম্পর্কে এক ধরনের সক্রিয় প্রস্তুতি নিয়ে পাঠে অংশগ্রহণ করে, ফলে তারা শ্রেণীকক্ষের আলোচনাগুলিতে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ করে এবং শ্রেণীকক্ষে দেওয়া অনুশীলনীগুলি থেকে আরও বেশি শিখতে পারে। যেসব শিক্ষক কাঁটায় কাঁটায় শিক্ষণ কৌশলটি প্রয়োগ করেন, তারা ছাত্রছাত্রীদের অগ্রগতি সম্পর্কে অধিকতর অবহিত থাকেন। এভাবে তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী শ্রেণীকক্ষে প্রদত্ত পাঠ প্রস্তুত করেন এবং যেসব বিষয় ছাত্রছাত্রীরা ইতিমধ্যেই বুঝে গেছে, সেগুলির উপরে অহেতুক কালক্ষেপণ না করে শ্রেণীকক্ষের সময়ের সদ্ব্যবহার করেন। ছাত্রছাত্রীরাও এই কৌশলের সুবাদে কোনও বড় পরীক্ষার আগে শিক্ষকের কাছ থেকে একাধিকবার শিক্ষামূলক মতামত পায়, সে অনুযায়ী তাদের পড়াশোনার অভ্যাস পরিবর্তনের সুযোগ পায় এবং এভাবে তাদের শিখনের মান উন্নত হয়।[১]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই কৌশলটি ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকদের মধ্যে বিকাশ লাভ করে। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনৈতিহ্যবাহী ছাত্রছাত্রীদের চাহিদার কথা চিন্তা করেই প্রথএ এই কৌশলটির উদ্ভাবন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২১শ শতকে এসে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য ও অন্যান্য শাস্ত্রের শিক্ষণেও এই কৌশলটিকে গ্রহণ করা হয়। কাঁটায় কাঁটায় শিক্ষণের উদ্ভাবকেরা এটিকে শিক্ষার নির্মাণবাদী তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি করেন। যেহেতু সব ছাত্রছাত্রীই শ্রেণীকক্ষে প্রবেশের আগে এক ধরনের পটভূমিক জ্ঞান নিয়ে প্রবেশ করে এবং সেগুলিকে ব্যবহার করে নতুন জ্ঞান "নির্মাণ" করে, তাই ছাত্রছাত্রীদের এই প্রাকলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পাঠ্য বিষয়বস্তুর শিখন উন্নত করা যায়। তাছাড়া ছাত্রছাত্রীরা নিষ্ক্রিয় শিক্ষার্থীর তুলনায় সক্রিয়া অংশগ্রহণকারী হিসেবে অধিক শিখতে পারে এবং অধিক উদ্বুদ্ধ থাকে। তাই কাঁটায় কাঁটায় শিক্ষণের প্রবক্তারা এমন একটি কৌশল বানাতে চেয়েছিলেন, যা ছাত্রছাত্রীদেরকে পাঠ্যবস্তুর আরও কাছে নিয়ে আসবে, তাদেরকে শ্রেণীকক্ষের আলোচনার জন্য প্রস্তুত করবে, তাদেরকে শ্রেণীকক্ষের ভেতরে ও বাইরে উদ্বুদ্ধ করবে এবং পাঠ্যবস্তুর বিষয়ে আরও কৌতুহলী করে তুলবে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে আন্তর্জাল-ভিত্তিক প্রযুক্তিগুলি সুলভ হওয়া শুরু করলে তাঁরা সেটিকে পুঁজি করে শ্রেণীকক্ষের বাইরে ছাত্র-শিক্ষক যোগাযোগ আরও উন্নত করেন এবং কাঁটায় কাঁটায় শিক্ষণের কৌশলটি উদ্ভাবন করেন।[১]
কাঁটায় কাঁটায় শিক্ষণ এবং কাঁটায় কাঁটায় শিখন দুইটি পৃথক ধারণা। শেষোক্তটিতে শিক্ষার্থী ও শেখার বিষয়বস্তুর মধ্যে তাৎক্ষণিক সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারটির উপর জোর দেওয়া হয়।
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- The JiTT Page ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে
- JiTT in Geosciences
- JiTT in Economics
- The JiTT Digital Library Project ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে
- The WebScience Project ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে